মাহে রজব ও তার প্রাসঙ্গিক আলোচনা

সংখ্যা: ১৪৪তম সংখ্যা | বিভাগ:

হিজরী সনের সপ্তম মাস রজব। আল্লাহ তায়ালা বছরের মাসগুলোকে চারটি হারাম বা সম্মানিত মাসের দ্বারা সৌন্দর্য দান করেছেন- যিলক্বদ, যিলহজ্জ, মুহররম ও রজব।

যেমন কালামুল্লাহ শরীফে ইরশাদ হয়েছে,

ان عدة الشهور عند الله اثنا عشر شهرا فى كتب الله يوم خلق السموت والارض منها اربعة حرم.

অর্থঃ- “নিশ্চয়ই আসমান ও যমীন সৃষ্টির দিন থেকে আল্লাহ পাক-এর বিধান ও গণনায় মাসের সংখ্যা বারটি। তন্মধ্যে চারটি সম্মানিত।” (সূরা তওবা-৩৬)

এ সম্মানিত মাসের তিনটি- যিলক্বদ, যিলহজ্জ ও মুর্হরম একসাথে। আর একটি পৃথক তা হচ্ছে রজব।

হযরত আনাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, যে ব্যক্তি হারাম মাসে (যিলক্বদ, যিলহজ্জ, মুহররম ও রজব) তিন দিন রোযা রাখবে, তার আমলনামায় নয় বছর ইবাদতের ছওয়াব লিখা হবে।

হাদীছ শরীফে ইরশাদ হয়েছে, আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, “যখন রজব মাস আগমন করে তখন তোমরা বেশী বেশী নফল ইবাদত-বন্দিগীতে মশগুল হও। এবং এ মাসের চাঁদ দেখলে তিনি নিজে নিম্নোক্ত দোয়াটি পড়তেন,

اللهم برك لنا فى رجب وشعبان وبلغنا رمضان.

উচ্চারণঃ ‘আল্লাহুম্মা বারিক্লানা ফী রজাবা ওয়া শা’বান, ওয়া বাল্লিগ্না রমাদ্বান।’

অর্থঃ- “আয় আল্লাহ্ পাক! আমাদেরকে রজব ও শা’বানে বরকত দান করুন এবং রমাদ্বান মাস পর্যন্ত পৌঁছার তাওফীক দিন।” (হিল্ইয়াতুল আওলিয়া, তবাকাতুল আছফিয়া)

হাদীছ শরীফে আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরো ইরশাদ করেছেন, “যে মুসলমান পুরুষ-মহিলা রজব মাসের পহেলা তারিখ দিনে রোজা রাখবে এবং রাত্রিতে নফল ইবাদত-বন্দেগীতে কাটিয়ে দিবে আল্লাহ্ পাক-এর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে, আল্লাহ্ পাক তার আমল নামায় এক বৎসর দিনে রোজা রাখার এবং রাত্রিতে ইবাদত-বন্দেগী করার ছওয়াব লিখে দিবেন।”

হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরো ইরশাদ করেন, আল্লাহ পাক-এর এই রজব মাসে একদিনও যে ব্যক্তি ঈমান ও ইখলাছের সাথে রোযা রাখবে, সে আল্লাহ তায়ালার চরম সন্তুষ্টি লাভ করবে।

বর্ণিত রয়েছে, একবার হযরত নবী পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কোন এক কবরস্থানে দেখতে পেলেন, এক মৃত ব্যক্তির উপর ভীষণ আযাব হচ্ছে এবং সে চিৎকার করে বলছে, ইয়া রসূলাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আমার কাফন, কবর সব আগুনে পরিণত হয়ে গিয়েছে। আমার জন্য দুয়া করুন, আমাকে রক্ষা করুন। তখন নবী পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, হে হতভাগা! তুমি যদি রজব মাসে একটি রোযাও রাখতে তাহলে তোমার প্রতি কখনই এত আযাব হতে পারতোনা। এই বলে তিনি একশত বার সূরা ইখলাছ পড়ে তার ছওয়াব লোকটির প্রতি বখশে দিলেন। আল্লাহ পাক-এর রহমতে সাথে সাথে কবর আযাব বন্ধ হয়ে গেল।

হাদীছ শরীফে বর্ণিত রয়েছে, “বেহেশ্তে ‘রজব’ নামে একটি ঝর্ণা আছে। এর পানি দুধের চেয়েও সাদা, মধুর চেয়েও মিষ্টি, বরফের চেয়েও ঠাণ্ডা। এ পানি পান করার সুযোগ একমাত্র সেই ব্যক্তিই পাবে, যে রজব মাসে রোযা রাখবে।”

উল্লেখ্য, মাহে রমাদ্বান শরীফ ব্যতীত অন্যান্য প্রতি মাসে নির্দিষ্ট সংখ্যক রোযা রাখা খাছ সুন্নত। শাওয়াল মাসে ৬টি,  যিলহজ্জ মাসে ৯টি এবং অন্যান্য মাসে ৩টি।

সুতরাং এ মাসে রোযার সুন্নতটি পালন করতে হলে উত্তম ও আফযল হলো, পহেলা তারিখ, পহেলা জুমুয়ার তারিখ এবং সাতাশ তারিখের দিন রোযা রাখা। কারণ উক্ত দিন তিনটি অন্যান্য দিন অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ ও সম্মানিত।

যেমন বর্ণিত রয়েছে যে, রজবের পহেলা রাতটি দোয়া কবুলের খাছ রাতে, পহেলা জুমুয়ার রাতটি হচ্ছে রাগায়িবের রাতে অর্থাৎ যে রাতে আখিরী রসূল হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁর আম্মার রেহেম শরীফে তাশরীফ নেন এবং সাতাশ তারিখের রাতটি হচ্ছে  মি’রাজ শরীফের রাতে।

অতএব, প্রত্যেকের উচিত এ মাসেই খালিছভাবে তওবা-ইস্তিগ্ফার করে যাথাসাধ্য আমলে নিবেদিত হওয়া এবং তাওফীক কামনা করা, আল্লাহ পাক যেন মাহে শা’বান অতঃপর মাহে রমাদ্বান শরীফের বারাকাত, ফুয়ুজাত, নিয়ামত, রহমত, মাগফিরাত ও নাজাতের পরিপূর্ণ হিস্সা নছীব করেন। (আমীন)

মাহে ছফর ও তার প্রাসঙ্গিক আলোচনা

 মাহে রবিউস্ সানী ও তার প্রাসঙ্গিক আলোচনা

মাহে জুমাদাল উলা ও তার প্রাসঙ্গিক আলোচনা

মাহে জুমাদাল উখরা ও তার প্রাসঙ্গিক আলোচনা

মাহে শা’বান ও তার প্রাসঙ্গিক আলোচনা