হযরত মাওলানা মুফতী সাইয়্যিদ শোয়াইব আহমদ
হিজরী সনের সপ্তম মাসের নাম রজব। বছরের যে পাঁচটি রাত্রিতে বিশেষভাবে দোয়া কবুল হয় রজব মাসের পহেলা রাত্রিটি তার মধ্যে সর্বপ্রথম। এ প্রসঙ্গে হাদীছ শরীফে ইরশাদ হয়েছে, “নিশ্চয়ই পাঁচ রাতে খাছভাবে দোয়া কবুল হয়। প্রথম হচ্ছে রজব মাসের পহেলা রাত, শা’বান মাসের পনের তারিখ বরাতের রাত, ক্বদরের রাত এবং দু’ঈদের দু’রাত।” হাদীছ শরীফে আরো ইরশাদ হয়েছে, “রজব হচ্ছে বীজ বপনের মাস। শা’বান হচ্ছে পানি সেঁচ করার মাস এবং রমাদ্বান শরীফ হচ্ছে ফসল কাটার মাস। যে ব্যক্তি রজব মাসে ইবাদত-বন্দিগীর বীজ বপন করবেনা এবং শা’বান মাসে চোখের পানি দ্বারা তাতে পানি সেঁচ করবেনা, সে কি করে রমাদ্বান শরীফে রহমতের ফসল কাটার আশা করতে পারে?” অর্থাৎ সে ব্যক্তির পক্ষে হাক্বীক্বীভাবে রমাদ্বান মাসের রহমত, বরকত, সাকীনা, মাগফিরাত, নাযাত লাভ করা সম্ভব হবেনা। যার কারণে আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন, “যখন রজব মাস আগমন করে তখন তোমরা বেশী বেশী নফল ইবাদত-বন্দিগীতে মশগুল হয়ে যাও এবং এ মাসের চাঁদ দেখলে তিনি নিম্নোক্ত দোয়াটি পড়তেন,
اللهم بارك لنا فى رجب وشعبان وبلغنا رمضان.
উচ্চারণঃ ‘আল্লাহুম্মা বারিক্লানা ফী রজাবা ও শা’বান, ওয়া বাল্লিগ্না রমাদ্বান।’ অর্থঃ- “আয় আল্লাহ্ পাক! আমাদেরকে রজব ও শা’বানে বরকত দান করুন এবং রমাদ্বান মাস পর্যন্ত পৌঁছার তাওফীক দিন।” (হিল্ইয়াতুল আওলিয়া, তবাকাতুল আছফিয়া) হযরত আয়িশা ছিদ্দীক্বা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা বর্ণনা করেন, হযরত রসূলে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, “আল্লাহ পাক চারটি রাত্রিতে প্রচুর পরিমাণে রহমত নাযিল করেনঃ ১. ঈদুল আযহার রাতে, ২. ঈদুল ফিত্রের রাতে, ৩. শা’বানের অর্ধ রাতে, ৪. রজবের প্রথম রাতে।” হযরত আনাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, হযরত রসূলে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, “যে ব্যক্তি হারাম মাসে (যিলক্বদ, যিলহজ্জ, মুর্হরম ও রজব) তিন দিন রোযা রাখবে, তার জন্য নয় বৎসর ইবাদতের ছওয়াব লিখা হবে। হযরত আনাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বলেন, বর্ণনাটি আমি নিজ কানে হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে শুনেছি।” বর্ণিত আছে, “যারা রজব মাসে রোযা রাখে, তাদের গুণাহ মাফের জন্য ফেরেশ্তাকুল রজবের প্রথম জুমুয়ার রাত্রির শেষ তৃতীয়াংশে দোয়ায় মশগুল থাকেন।”
উল্লেখ্য, মাহে রমাদ্বান শরীফ ব্যতীত অন্যান্য প্রতি মাসে নির্দিষ্ট সংখ্যক রোযা রাখা খাছ সুন্নত। শাওয়াল মাসে ৬টি, যিলহজ্ব মাসে ৯টি এবং অন্যান্য প্রতি মাসে ৩টি।
সুতরাং এ মাসে রোযার সুন্নতটি আদায় করতে হলে উত্তম ও আফযল হলো, পহেলা তারিখ, পহেলা জুমুয়ার তারিখ এবং সাতাশ তারিখের দিন রোযা রাখা। কারণ উক্ত দিন তিনটি অন্যান্য দিন অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ ও সম্মানিত।
যেমন বর্ণিত রয়েছে যে, রজবের পহেলা রাতটি দোয়া কবুলের খাছ রাত্রি, পহেলা জুমুয়ার রাতটি হচ্ছে রাগায়িবের রাত্রি অর্থাৎ যে রাত্রিতে আখিরী রসূল, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁর আম্মার রেহেম শরীফে তাশরীফ নেন এবং সাতাশ তারিখের রাতটি হচ্ছে মি’রাজ শরীফের রাত্রি।
বর্ণিত রয়েছে, “এক মহিলা রজব মাসে প্রতিদিন বাইতুল মুকাদ্দাস মসজিদে বার হাজার বার সূরা ইখলাছ পাঠ করতেন। তাঁর আদত ছিল, রজব মাসে তিনি নিয়মিত পশমের কাপড় পরিধান করতেন। একদা তিনি অসুস্থ হয়ে যান এবং পুত্রকে তিনি ওছিয়ত করেন যে, মৃত্যুর পর তাঁর পশমের পোশাকটিও যেন তাঁর সাথে দাফন করে দেয়। কিন্তু পুত্র সেই ওছিয়ত পালন না করে মৃত্যুর পর তাঁকে উৎকৃষ্ট কাপড়ে দাফন করে। অতঃপর সে এক রাত্রিতে স্বপ্নে দেখলো, তার মা তাকে বলছেন, ‘আমি তোমার প্রতি অসন্তুষ্ট, তুমি আমার ওছিয়ত পালন করনি।’ পুত্র চিন্তান্বিত হয়ে মায়ের পশমের লেবাসখানি কবরে রাখার জন্য আবার কবর খুঁড়লো, কিন্তু কি আশ্চর্য! মা কবরে নেই। এমন সময় গায়েব থেকে আওয়াজ আসলো, ‘ওহে! তুমি কি জাননা, রজব মাসে যে আমার ইবাদত করে আমি তাকে নির্জন একাকীত্বে ফেলে রাখিনা।” (মুকাশাফাতুল কুলূব)
অতএব, প্রত্যেকের উচিৎ এ মাস থেকেই ইবাদতের জন্য যথাসাধ্য নিবেদিত হওয়া এবং এজন্য আল্লাহ পাক-এর নিকট আরজু পেশ করা। আল্লাহ পাক আমাদেরকে তাওফীক দান করুন। (আমীন)
সম্মানিত জুমাদাল ঊলা শরীফ ও সম্মানিত জুমাদাল উখরা শরীফ মাস এবং উনাদের প্রাসঙ্গিক আলোচনা
মাহে রবিউস্ সানী ও তার প্রাসঙ্গিক আলোচনা
মাহে জুমাদাল উলা ও জুমাদাল উখরা