হযরত মাওলানা মুফতী সাইয়্যিদ শোয়াইব আহমদ
হিজরী সনের সপ্তম মাসের নাম রজব। ‘রজব’ শব্দটি বাবে তাফয়ীল ওজনে ‘তারজীব’ মাছদার বা ক্রিয়ামূল হতে এসেছে। এর অর্থ সম্মান প্রদর্শন করা। আল্লাহ পাক বছরের মাসগুলোকে চারটি মাসের দ্বারা সৌন্দর্য দান করেছেন- যিলক্বদ, যিলহজ্ব, মুর্হরম ও রজব। যে প্রসঙ্গে কুরআন শরীফে ইরশাদ হয়েছে,
ان عدة الشهور عند الله اثنا عشر شهرا فى كتب الله يوم خلق السموت والارض منها اربعة حرم.
অর্থঃ- “নিশ্চয়ই আসমান ও যমীন সৃষ্টির দিন থেকে মহান আল্লাহ পাক উনার বিধান ও গণনানুসারে মাসের সংখ্যা বারটি, তারমধ্যে চারটি মাস সম্মানিত।” (সূরা তওবা/৩৬) রজব মাসের প্রায় বিশটি নাম রয়েছে। তারমধ্যে অন্যতম একটি নাম হচ্ছে ‘আছব্ব’ অর্থাৎ প্রচন্ত উচ্ছ্বাস। কেননা, এ মাসে তওবাকারীদের প্রতি আল্লাহ্ পাক-এর প্রচুর রহমত নাযিল হয় এবং আরো নাযিল হয় ইবাদতগুজার বান্দাদের প্রতি কবুলিয়তের নূর, ফয়েয ও বরকত। তত্ত্ববিদগণের মতে, তিন অক্ষর বিশিষ্ট رجل (রজব) শব্দটির ر (রা) অক্ষর رحمة অর্থাৎ রহমতের, ج (জীম) অক্ষর جرم (জুরম্) অর্থাৎ বান্দার গুণাহ্র এবং ب (বা) অক্ষর جرم (বার্র) অর্থাৎ অনুগ্রহের সংকেত বহন করে। যেমন, আল্লাহ্ পাক হাদীছে কুদসী শরীফে বলেছেন, اجعل جرم عبدى بين رحمتى وبرى. অর্থঃ- “আমি আমার বান্দার গুণাহ্কে আমার রহমত ও অনুগ্রহের মাঝখানে রাখি।” (মুকাশাফাতুল কুলূব) এ মাসের পহেলা তারিখ রাত্রিটি আল্লাহ্ পাক-এর নিকট খাছভাবে দোয়া কবুলের রাত্রি। এ মর্মে হাদীছ শরীফে ইরশাদ হয়েছে,
عن ابى امامة رضى الله تعالى عنه عن رسول الله صلى الله عليه وسلم قال خمس لياس لاترد فيها دعوة اول ليلة من رجب وليلة النصف من شعبان وليلة الجمعة وليلتا العيدين.
অর্থঃ- “হযরত আবূ উমামা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বর্ণনা করেন, হযরত রসূলে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন, পাঁচটি রাত এমন রয়েছে সে গুলোতে কেউ দোয়া করলে তা রদ (প্রত্যাবর্তন) করা হয়না। ১। রজব মাসের প্রথম রাত্রি। ২। শা’বান মাসের মধ্য রাত্রি (১৪ই শা’বান দিবাগত রাত্রি)। ৩। জুমুয়ার রাত্রি। ৪। ঈদুল আযহার রাত্রি। ৫। ঈদুল ফিতরের রাত্রি।” (দাইলামী শরীফ) বর্ণিত রয়েছে, বেহেশ্তে ‘রজব’ নামে একটি ঝর্ণা আছে। এর পানি দুধের চেয়েও সাদা, মধুর চেয়েও মিষ্টি, বরফের চেয়েও ঠান্ডা। এ পানি পান করার সুযোগ একমাত্র সেই ব্যক্তিই পাবে, যে রজব মাসে রোযা রাখবে। উল্লেখ্য, মাহে রমাদ্বান শরীফ ব্যতীত অন্যান্য প্রতি মাসে নির্দিষ্ট সংখ্যক রোযা রাখা খাছ সুন্নত। শাওয়াল মাসে ৬টি, যিলহজ্ব মাসে ৯টি এবং অন্যান্য মাসে ৩টি। সুতরাং এ মাসে রোযার সুন্নতটি আদায় করতে হলে উত্তম ও আফযল হলো, পহেলা তারিখ, পহেলা জুমুয়ার তারিখ এবং সাতাশ তারিখের দিন রোযা রাখা। কারণ উক্ত দিন তিনটি অন্যান্য দিন অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ ও সম্মানিত। যেমন বর্ণিত রয়েছে যে, রজবের পহেলা রাতটি দোয়া কবুলের খাছ রাত্রি, পহেলা জুমুয়ার রাতটি হচ্ছে রাগায়িবের রাত্রি অর্থাৎ যে রাত্রিতে আখিরী রসূল হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁর আম্মার রেহেম শরীফে তাশরীফ নেন এবং সাতাশ তারিখের রাতটি হচ্ছে মি’রাজ শরীফের রাত্রি। আরো উল্লেখ্য, কেবল রোযার ক্ষেত্রে নয় বরং প্রতিক্ষেত্রেই সুন্নতের অনুসরণ করা বান্দা ও উম্মতের দায়িত্ব। মূলতঃ সুন্নতের অনুসরণের নামই আমল। এর খিলাফ যা কিছু করা হোক শরীয়তে তা আমলরূপে গণ্য নয়। বলাবাহুল্য, যিনি যত বেশী সুন্নতের অনুসরণ করবেন তিনি তত বেশী আল্লাহ্ পাক ও তাঁর হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মুহব্বত, মা’রিফত ও সন্তুষ্টি লাভ করবেন। যার অনুপম দৃষ্টান্ত যামানার ইমাম ও মুজাদ্দিদগণ। তাঁদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য একজন হলেন- সুলতানুল হিন্দ, গরীবে নেওয়াজ, হাবীবুল্লাহ হযরত খাজা মুঈনুদ্দীন চীশ্তী রহমতুল্লাহি আলাইহি। যিনি এ মাসের ছয় তারিখ সোমবার যমীনে তাশরীফ আনেন আবার এ মাসেরই ১৪ তারিখ সোমবার ৯৭ বছর বয়স মুবারকে যমীন থেকে বিদায় গ্রহণ করেন। আল্লাহ্ পাক আমাদেরকে প্রতিক্ষেত্রে সুন্নতের অনুসরণ করার তাওফীক দান করুন। (আমীন)
শাওয়াল মাস ও প্রাসঙ্গিক আলোচনা
যিলক্বদ মাস ও প্রাসঙ্গিক আলোচনা
যিলহজ্ব মাস ও প্রাসঙ্গিক আলোচনা
মুহররম মাস ও প্রাসঙ্গিক আলোচনা -হযরত মাওলানা মুফতী সাইয়্যিদ শোয়াইব আহমদ