-হযরত মাওলানা মুফতী সাইয়্যিদ শোয়াইব আহমদ
আরবী মাসের চতুর্থ মাস রবিউস্ সানী। এ মাসের এগার তারিখ দিনটি ফাতিহা-ই-ইয়ায্দাহাম নামে সারা বিশ্বে মশহুর। অর্থাৎ এ মুবারক দিনটিতে সাইয়্যিদুল আউলিয়া, গউছে আ’যম, আওলাদে রসূল হযরত বড় পীর শায়খ সাইয়্যিদ মুহিউদ্দীন আব্দুল কাদির জিলানী রহমতুল্লাহি আলাইহি একানব্বাই বছর বয়স মুবারকে আল্লাহ পাক-এর সাক্ষাতে মিলিত হন। তাঁর মর্যাদা-মর্তবা বর্ণনার অপেক্ষা রাখেনা। “ফাযায়িলে গওছিয়াহ” নামক কিতাবে হযরত আলী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হতে বর্ণিত রয়েছে যে, আখিরী রসূল, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হযরত গওছুল আ’যম রহমতুল্লাহি আলাইহি সম্পর্কে এরূপ দোয়া করেছিলেন যে, ‘আয় আল্লাহ পাক! আপনি আমার সেই নায়িবের প্রতি রহমত নাযিল করুন, যিনি আমার পরে দুনিয়ার বুকে আবির্ভূত হবেন এবং আমার হাদীছ শরীফসমূহ বর্ণনা করে আমার (উম্মতগণকে) শরীয়তের পথে পরিচালিত করবেন।” বান্দার সৃষ্টির উদ্দেশ্য হচ্ছে আল্লাহ পাক-এর মুহব্বত, মা’রিফাত ও সন্তুষ্টি হাছিল করা। এ মুবারক উদ্দেশ্যে আল্লাহ পাক তাঁর সর্বাধিক পেয়ারা বান্দা হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস্ সালামগণকে যুগে যুগে যমীনে প্রেরণ করেছেন। তাঁদের বিদায়ের পর তথা আখিরী রসূল হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর বিছাল শরীফের পর তাঁর যারা নায়িব বা ওয়ারিছ তথা ওলীআল্লাহ তাঁদেরকে যমীনে প্রেরণ করেন। অতএব, বান্দার দায়িত্ব-কর্তব্য হলো ওলীআল্লাহগণের নিকট বাইয়াত হওয়া, ছোহবত গ্রহণ করা এবং তাঁর অনুসরণ-অনুকরণ করা। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ পাক ইরশাদ করেন,
اطيعوا الله واطيعوا الرسول واولى الامر منكم.
অর্থঃ- “তোমরা আল্লাহ পাক-এর ইতায়াত কর, রসূলে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর ইতায়াত কর এবং তোমাদের মধ্যে যাঁরা উলীল আমর রয়েছেন তাঁদের ইতায়াত কর।” (সূরা নিসা/৫৯) এ আয়াত শরীফের ব্যাখ্যায় যামানার মুজাদ্দিদ, মুজাদ্দিদে আ’যম, রাজারবাগ শরীফের হযরত পীর ছাহেব ক্বিবলা মুদ্দা জিল্লুহুল আলী বলেন, আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আল্লাহ পাককে দেখেছেন, আল্লাহ পাক-এর নিকট থেকে জেনে, শুনে, বুঝে আমল করেছেন, আর হযরত ছাহাবা-ই-কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে দেখেছেন, তাঁর নিকট থেকে জেনে, শুনে, বুঝে আমল করেছেন, কিন্তু পরবর্তী উম্মত তো আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে পায়নি তাহলে তারা কাকে দেখে এবং কার নিকট থেকে জেনে, শুনে, বুঝে আমল করবে? তাদেরকে আমল করতে হলে যারা উলীল আমর তথা ওলীআল্লাহ রয়েছেন তাঁদের ছোহবতে গিয়ে তাঁদের নিকট থেকে জেনে, শুনে, বুঝে আমল করতে হবে। তাই হাদীছ শরীফ, তাফসীর, ফিক্বাহ, তাছাউফ, মানতিক ইত্যাদি সকল শাস্ত্রের অনুসরণীয় ইমাম-মুজতাহিদ ও আউলিয়ায়ে কিরামগণ প্রত্যেকেই ওলীআল্লাহর নিকট বাইয়াত হয়েছেন এবং ওলীআল্লাহর নিকট বাইয়াত হওয়া ফরয ফতওয়া দিয়েছেন। যার সবচেয়ে বড় উদাহরণ হচ্ছেন আমাদের হানাফী মাযহাবের ইমাম যিনি ইমামে আ’যম, ইলমের তুলনায় সমস্ত আলিম ও ফক্বীহগণ যার সন্তান তুল্য তিনিও পীর ছাহেবের নিকট বাইয়াত গ্রহণ করেছেন। তাঁর দু’জন পীর ছাহেব ছিলেন। প্রথম পীর ছাহেব আওলাদে রসূল হযরত ইমাম বাকির রহমতুল্লাহি আলাইহি এবং তিনি বিদায় নেয়ার পর দ্বিতীয় পীর ছাহেব হিসেবে তাঁরই ছেলে হযরত ইমাম জাফর ছাদিক রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর নিকট বাইয়াত গ্রহণ করেন এবং দু’বছর তাঁর ছোহবত ইখতিয়ার করে ইলমে তাছাউফ অর্জণের মাধ্যমে ইখলাছ হাছিল করেন অত:পর বলেন,
لولا سنتان لهلك ابو نعمان.
অর্থাৎ- “যদি দু’বছর না হতো তাহলে আবু নু’মান ইমাম আবূ হানীফা হালাক হয়ে যেত। ” মূলতঃ কোন ওলীআল্লাহই ততক্ষণ পর্যন্ত ওলীআল্লাহ হতে পারেননি যতক্ষণ না তিনি আরেকজন ওলীআল্লাহর নিকট বাইয়াত হয়েছেন। এ কারণে বিশ্বখ্যাত ফার্সী কবি হযরত মাওলানা রুমী রহমতুল্লাহি আলাইহি যিনি রোম সাম্রাজ্যের সবচেয়ে বড় আলিম ছিলেন তিনি বলেছেন,
উদূ লেখা ঢুকবে………………………………..
অর্থঃ- “আমি মাওলানা রুমী নিজে নিজেই কামিল মু’মিন বা আল্লাহ পাক-এর ওলী হতে পারিনি, যতক্ষন না আল্লাহ পাক-এর ওলী হযরত শামছে তাবরীজি রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর গোলাম (মুরীদ) হয়েছি।” অতএব, আল্লাহ পাক ও তাঁর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সন্তুষ্টি-রেযামন্দি হাছিল করতে হলে অবশ্যই ওলীআল্লাহর নিকট বাইয়াত হতে হবে।
সম্মানিত জুমাদাল ঊলা শরীফ ও সম্মানিত জুমাদাল উখরা শরীফ মাস এবং উনাদের প্রাসঙ্গিক আলোচনা
মাহে জুমাদাল উলা ও জুমাদাল উখরা
মাহে রজব ও তার প্রাসঙ্গিক আলোচনা