মাহে রবিউস্ সানী ও তার প্রাসঙ্গিক আলোচনা

সংখ্যা: ১৪১তম সংখ্যা | বিভাগ:

-হযরত মাওলানা মুফতী সাইয়্যিদ শোয়াইব আহমদ

আরবী মাসের চতুর্থ মাস রবিউস সানী। এ মাসের এগার তারিখ দিনটি ফাতিহায়ে ইয়ায্দাহাম নামে সারা বিশ্বে মাশহুর হয়ে আছে। অর্থাৎ এ মুবারক দিনটিতে ওলীগণের সর্দার সাইয়্যিদুল আওলিয়া হযরত বড় পীর ছাহেব রহমতুল্লাহি আলাইহি আল্লাহ পাক-এর সাক্ষাতে মিলিত হন।

আল্লাহ পাক ও তাঁর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁকে “সাইয়্যিদুল আওলিয়া” হিসেবে কবুল করেছেন।       এরপর তিনি হচ্ছেন আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর আওলাদ। যামানার ইমাম। যামানার মুজাদ্দিদ। যামানার গাউছ, কুতুব ও আবদালগণের প্রধান। এমনিভাবে শত শত লক্বব মুবারক তাঁর বেমেছাল বুযুর্গী ও সম্মানের বহিঃপ্রকাশ। এ উপমহাদেশে ‘বড় পীর’ হিসেবে তিনি সকলের নিকট পরিচিত।

উল্লেখ্য, কারামত হচ্ছে ওলীগণের সম্মান। আল্লাহ পাক-এর কুদরত এবং নবী-রসূল আলাইহিমুস সালামগণের মু’জিযা-এর ন্যায় ওলীগণের কারামত সত্য এবং তা বিশ্বাস করা ফরয। কারণ তা ঈমানী আক্বীদার অন্তর্ভুক্ত।

ওলী-আওলিয়াগণের প্রত্যেকেরই কম-বেশি কারামত থেকে থাকে। তবে সাইয়্যিদুল আওলিয়া হযরত বড় পীর ছাহেব রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর এত অধিক সংখ্যক কারামত প্রকাশিত হয়েছে তা আর অন্য কোন ওলীয়ে কিরামের প্রকাশ  দ্বারা হতে দেখা যায় না। তাঁর কারামতের মধ্যে মৃত ব্যক্তিকে জীবিত করা, কন্যা সন্তানকে পুত্র সন্তানে পরিণত করা, চোরকে মুহূর্তের মধ্যে কুতুব বানিয়ে দেয়া ইত্যাদি  ইত্যাদি অসংখ্য কারামত প্রকাশিত হয়েছে।

এখানে মনে রাখতে হবে যে, যদিও ওলীগণের কারামত থাকে। কিন্তু কারামত ওলীত্বের প্রমাণ নয়। কেননা অনেক অলৌকিক ক্রিয়াকলাপ কাফির বে-দ্বীন দাজ্জাল দ্বারাও প্রকাশিত হতে দেখা যাবে। দাজ্জাল বের হয়ে বৃষ্টি হতে বললে বৃষ্টি আরম্ভ হবে। আবার বন্ধ হতে বললে বন্ধ হবে। ধন-দৌলত তার সাথে সাথে ঘুরে বেড়াবে। তার হুকুমে মৃত ব্যক্তি জীবিত হবে ইত্যাদি।

এ কারণেই বুযুর্গানে দ্বীন শুধু কারামত বা অলৌকিক কার্য দেখে কাউকে ওলীয়ে কামিল বলে বিশ্বাস বা অনুসরণ করতে নিষেধ করেছেন।

সুলতানুল আওলিয়া হযরত বায়েযীদ বোস্তামী রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন, কাউকে শত শত মাইল দূরের পথ নিমিষে অতিক্রম করতে দেখে ধোকায় পতিত হয়ো না এবং তাকে কামিল ওলী বলে মনে করো না। কেননা শয়তান এক পলকে সারা দুনিয়া ঘুরে আসতে পারে। অথচ আল্লাহ পাক-এর দরবারে সে অভিশপ্ত ও বিতারিত।

তিনি আরো বলেন, কোন ব্যক্তিকে শুণ্যে উড়তে দেখলে তাকে বুযুর্গ বলে মনে করবে না। কারণ পাখিওতো আকাশে উড়ে বেড়াচ্ছে। তাহলে পাখিও কি বুযুর্গ হিসেবে পরিণত হবে? কখনোই না।

প্রকৃত বুযুর্গীর নিদর্শন হচ্ছে এই যে,  কুরআন শরীফ ও সুন্নাহ শরীফ-এর আহকাম যথাযথভাবে ও পূর্ণরূপে পালন করা। এককথায় শরীয়তের বর্ণিত যাবতীয় আহকাম ও আদর্শকে যে নিজের মধ্যে প্রতিফলিত করেছে এরূপ ব্যক্তির দ্বারা কোন কারামত প্রকাশ না পেলেও তাঁকে বুযুর্গ ও কামিল মনে করে তার অনুসরন করবে। তাঁর ছোহবতে গিয়ে তাঁর নিকট হতে যাহিরী ও বাতিনী শিক্ষা দীক্ষা লাভ করবে। আর যে ব্যক্তির মধ্যে শরীয়তের পূর্ণ অনুসরণ নেই তার দ্বারা শত শত অলৌকিক কার্য প্রকাশ পেতে দেখলেও তার নিকট হতে দুরে থাকবে। কেননা সে হয়ত জাদুকর, ভেল্কীবাজ, দাজ্জাল কিংবা দাজ্জালের চেলা।

সাইয়্যিদুত্ তায়িফা হযরত জুনাইদ বাগদাদী রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর নিকট এসে এক ব্যক্তি বললো, হুযূর! কেউ কেউ বলে থাকে, আমরা লক্ষ্যস্থলে পৌঁছে গেছি। এখন আর শরীয়ত মেনে চলা আমাদের জন্য আবশ্যক নয়। সাইয়্যিদুত্ তায়িফা রহমতুল্লাহি আলাইহি বললেন, তারা লক্ষ্যস্থলে পৌছেছে সত্যিই; তবে তারা জাহান্নামে পৌঁছেছে। আল্লাহ পাক-এর দীদারে বা জান্নাতে পৌঁছেনি।

হুজ্জাতুল ইসলাম হযরত ইমাম গাজ্জালী রহমতুল্লাহি আলাইহি তাঁর বিখ্যাত কিতাব ‘কিমিয়ায়ে সা’আদাতে’ হযরত শায়খ আবুল কাসিম জুরজানী রহমতুল্লিাহি আলাইহি-এর বাণী নকল করে বলেন, “পানির উপর দিয়ে হেঁটে যাওয়া, বায়ু মণ্ডলে উড়া, গুপ্ত বিষয় সম্বন্ধে সংবাদ প্রদান করা ইত্যাদি অস্বাভাবিক ও অলৌকিক কার্যাবলী ‘কারামত নয়; বরং সম্পূর্ণরূপে শরীয়তের অনুসারী হয়ে যাওয়া এবং কোন বিষয়ে শরীয়তের বিন্দুমাত্র বিরুদ্ধাচরণ না করাই প্রকৃত কারামত।

এরূপ কারামত সম্পন্ন ওলীর নিকট বাইয়াত হয়ে যাহির-বাতিন ইছলাহ করে নেয়াকে যামানার সকল হক্কানী ওলীগণ ফরয ফতওয়া দিয়েছেন। (আমীন)

মাহে শাওয়াল ও তার প্রাসঙ্গিক আলোচনা –

 মাহে যিলক্বদ ও তার প্রাসঙ্গিক আলোচনা

 মাহে যিলহজ্জ ও তার প্রাসঙ্গিক আলোচনা

মাহে মুহররমুল হারাম ও তার প্রাসঙ্গিক আলোচনা

মাহে ছফর ও তার প্রাসঙ্গিক আলোচনা