মাহে রবীউছ ছানী ও তার প্রাসঙ্গিক আলোচনা -হযরত মাওলানা মুফতী সাইয়্যিদ শুয়াইব আহমদ

সংখ্যা: ১৭৬তম সংখ্যা | বিভাগ:

আরবী মাসের চতুর্থ মাস মাহে রবীউছ ছানী। এ মাস আল্লাহ পাক-

এর যাঁরা ওলী বা বন্ধু এবং আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর যাঁরা নায়িব বা ওয়ারিছ তাঁদের সম্পর্কে আলোচনার খাছ মাস। কারণ এ মাসে আল্লাহ পাক-এর লক্ষ্যস্থল ওলী, সাইয়্যিদুল আওলিয়া, গওছুল আ’যম, বড় পীর, হযরত শায়খ সাইয়্যিদ মুহিউদ্দীন আব্দুল ক্বাদির জিলানী রহমতুল্লাহি আলাইহি নব্বই বছর বয়স মুবারকে সোমবার দিনে বিছাল শরীফ প্রাপ্ত হন।

আল্লাহ পাক রব্বুল আলামীন তাঁর মনোনীত বান্দা হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস্ সালামগণের মত তাঁর যারা মনোনীত ওলী-আওলিয়ায়ে কিরাম তাঁদের মর্যাদা-মর্তবার কথাও কুরআন শরীফে এবং হাদীছ শরীফে

বর্ণনা করেছেন। আল্লাহ পাক তাঁর কালাম পাকে ইরশাদ করেন-

اَلَاۤ اِنَّ اَوْلِيَآءَ اللّٰهِ لَا خَوْفٌ عَلَيْهِمْ وَلَا هُمْ يَحْزَنُوْنَ ۝

অর্থঃ সাবধান! নিশ্চয়ই যাঁরা আল্লাহ পাক-এর ওলী তাঁদের কোন ভয় নেই এবং তাঁদের কোন চিন্তা-পেরেশানীও নেই। (সূরা ইউনুস- ৬২)

আয়াত শরীফের ব্যাখ্যায় হাদীছে কুদসী শরীফে বর্ণিত রয়েছে- আল্লাহ পাক বলেন, নফল তথা সুন্নত আমলের দ্বারা বান্দা আমার এমন নৈকট্য লাভ করে যে, আমি তাঁকে মুহব্বত করি বা ভালবাসি। যখন আমি তাঁকে ভালবাসি তখন আমি তাঁর কান হয়ে যাই, সে আমার কানে শ্রবণ করে। আমি তাঁর চক্ষু হয়ে যাই, সে আমার চোখ দ্বারা দেখে থাকে। আমি তাঁর জবান হয়ে যাই, সে আমার জবানে কথা বলে। আমি তাঁর হাত হয়ে যাই, সে আমার হাত দ্বারা ধরে থাকে। আমি তাঁর পা হয়ে যাই, সে আমার পায়ে হেটে থাকে। সে যদি আমার কাছে কিছু চায় তখন আমি তাকে সাথে সাথে তা দিয়ে থাকি। এবং সে যদি আমার নিকট কোন বিষয় প্রার্থনা করে আমি তাঁর প্রার্থিত বিষয় সাথে সাথেই দিয়ে দেই। (বুখারী শরীফ)

অর্থাৎ বান্দা কখনও আল্লাহ পাক হয়ে যান না। আর আল্লাহ পাকও কখনও বান্দা হন না। তবে বান্দা তথা আল্লাহ পাক-এর যারা ওলী তাঁরা নিজের মত-পথ বিসর্জন দিয়ে পরিপূর্ণরূপে আল্লাহ পাক ও তাঁর হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর মত ও পথের অনুসারী হয়ে যান। ফলে তাঁরা যা করেন সবই আল্লাহ পাক-এরই কাজ বলে গণ্য হয়।

মূলতঃ আল্লাহ পাক-এর যাঁরা ওলী তাঁরা আল্লাহ পাক ও তাঁর হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উভয়ের তরফ থেকে খিলাফতপ্রাপ্ত। আল্লাহ পাক ও তাঁর হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর আদেশ-নিষেধের খিলাফ তাঁরা কোন কাজ করেন না। তাঁরা ঈমান-আক্বাইদে, আমলে-আখলাক্বে, ছূরতে-সীরতে সবদিক থেকে আল্লাহ পাক-এর হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর মিছাল বা নমূনা। ফলে স্বয়ং আল্লাহ পাক তাঁর হাবীব আখিরী রসূল হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর পরে তাঁর যাঁরা ওলী তথা উলিল আমর তাঁদেরকে ইতায়াত বা অনুসরণ-অনুকরণ করার জন্য আদেশ করেছেন। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ পাক ইরশাদ করেন-

يٰۤاَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوْا اَطِيْعُوا اللهَ وَاَطِيْعُوا الرَّسُوْلَ وَاُولِى الْاَمْرِ مِنْكُمْ.

অর্থঃ হে ঈমানদারগণ! তোমরা আল্লাহ পাক-এর ইতায়াত কর এবং আল্লাহ পাক-এর হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর ইতায়াত কর এবং তোমাদের মধ্যে যাঁরা উলিল আমর রয়েছেন তাঁদের ইতায়াত কর। (সূরা নিসা-৫৯)

এ বিষয়টি আল্লাহ পাক ‘সূরা ফাতিহা’র’ মধ্যেই বলে দিয়েছেন। সূরা ফাতিহা; যাকে উম্মুল কুরআন বলা  হয় এবং আরো বলা হয় সমগ্র কুরআন শরীফ-এর সার সংক্ষেপ হচ্ছে সূরা ফাতিহা। নামাযের প্রত্যেক রাকায়াতে সূরা ফাতিহা পাঠের আদেশ করা হয়েছে। এই সূরার মধ্যে আল্লাহ পাক তাঁর নিজের পরিচয় বর্ণনার পাশাপাশি তাঁর নবী ও ওলীগণের পরিচয় বর্ণনা করে তাঁদের পথে চলার জন্য নির্দেশ করেছেন। যেমন ইরশাদ হয়েছে-

اِهْدِنَـا الصِّرَاطَ الْـمُسْتَقِيْمَ ۝    صِرَاطَ الَّذِيْنَ اَنْعَمْتَ عَلَيْهِمْ.

অর্থঃ “হে বারে ইলাহী! আমাদেরকে সরল-সঠিক পথে পরিচালিত করুন। ঐ সকল বান্দাদের পথ যাঁদেরকে আপনি নিয়ামত দান করেছেন।”

আল্লাহ পাক কাদেরকে নিয়ামত দিয়েছেন সে প্রসঙ্গে কালাম পাক-এর

অন্যত্র ইরশাদ হয়েছে-

اَنْعَمَ اللهُ عَلَيْهِمْ مِّنَ النَّبِيّٖنَ وَالصِّدِّيْقِيْنَ وَالشُّهَدَآءِ وَالصَّالِحِيْنَ.

অর্থঃ “আল্লাহ পাক নিয়ামত দিয়েছেন নবীগণ, ছিদ্দীক্বগণ, শহীদগণ এবং ছালিহীনগণকে। অর্থাৎ নবীগণ হলেন এক স্তর। আর ছিদ্দীক্ব, শহীদ ও ছালিহগণ হলেন উম্মতের স্তর তথা আওলিয়ায়ে কিরামগণের স্তর। (সূরা নিসা-৬৯)

কাজেই, নবী অর্থাৎ আখিরী নবী হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর পথ এবং উনার বিছাল শরীফের পর উনার যাঁরা সত্যিকার ওয়ারিছ ও নায়িব হযরত আওলিয়ায়ে কিরাম বা উলিল আমর তাঁদের পথ অনুসরণ করতে হবে।

বলার অপেক্ষা রাখে না, হাল যামানার যিনি মুজাদ্দিদ ও ইমাম তাঁর পক্ষেই পরিপূর্ণরূপে আল্লাহ পাক-এর মতে মত এবং আল্লাহ পাক-এর হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর পথে পথ হওয়া সম্ভব এবং তিনিই সত্যিকারের উলিল আমর। সুতরাং তাঁকে অনুসরণ করা ব্যতীত সরল-সঠিক পথ তথা ইসলামের পথে চলার দাবি একেবারেই মিথ্যা।

স্মরণীয় যে, গাউছুল আ’যম, সাইয়্যিদুল আওলিয়া, আওলাদে রসূল, হযরত বড় পীর ছাহেব রহমতুল্লাহি আলাইহি ছিলেন ষষ্ঠ হিজরী শতাব্দীর মুজাদ্দিদ ও ইমাম। আর বর্তমান পঞ্চদশ হিজরী শতাব্দীর মুজাদ্দিদ ও ইমাম হচ্ছেন মুজাদ্দিদে আ’যম, আওলাদে রসূল, খলীফাতুল্লাহ, খলীফাতু রসূলিল্লাহ, ইমাম রাজারবাগ শরীফ-এর মামদূহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা মুদ্দা জিল্লুহুল আলী।

 মাহে রমাদ্বান শরীফ ও তার প্রাসঙ্গিক আলোচনা

মাহে শাওয়াল ও তার প্রাসঙ্গিক আলোচনা –

 মাহে যিলক্বদ ও তার প্রাসঙ্গিক আলোচনা

 মাহে যিলহজ্জ ও তার প্রাসঙ্গিক আলোচনা

মাহে মুহররমুল হারাম ও তার প্রাসঙ্গিক আলোচনা