–হযরত মাওলানা মুফতী সাইয়্যিদ শুয়াইব আহমদ
ঈদ মুবারক! ঈদ মুবারক! ঈদ মুবারক! মুসলিম উম্মাহর শ্রেষ্ঠতম ঈদ, সকল ঈদের সেরা ঈদ, সাইয়্যিদুল আ’ইয়াদ, সাইয়্যিদে ঈদে আ’যম, ঈদে আকবর, ঈদে মীলাদুন্ নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর মাস রবীউল আউয়াল শরীফ। এ মুবারক মাসের ১২ই তারিখ মুবারক দিনটি উম্মাহ্র জন্য শ্রেষ্টতম ঈদ উদ্যাপনের দিন। কারণ, এ মুবারক দিনটি যদি আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর শুভাগমনের অন্তর্ভুক্ত না হতো তাহলে শবে ক্বদর, শবে বরাত, ঈদুল ফিত্র্, ঈদুল আযহা, জুমুয়া ইত্যাদি ফযীলতপূর্ণ কোন দিন-রাতেরই আগমন ঘটতো না। শুধু তাই নয়, কুরআন শরীফ নাযিল হতো না, দ্বীন ইসলাম আসতো না এবং কোন মু’মিন-মুসলমানের অস্তিত্বও থাকতো না। ফলে, শরীয়ত এ মুবারক দিনটিকে নির্ধারণ করেছে ‘সাইয়্যিদুল আ’ইয়াদ’ হিসেবে এবং এ ঈদ পালন করাকে ফরয সাব্যস্ত করেছে। এ প্রসঙ্গে স্বয়ং আল্লাহ পাক রব্বুল আলামীন তাঁর কালাম পাকে ইরশাদ করেন,
قل بفضل الله وبر حمته فبذ لك فليفر حوا.
অর্থঃ- “হে হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আপনি উম্মাহকে জানিয়ে দিন, আল্লাহ পাক ফযল-করম হিসেবে তাদেরকে যে দ্বীন ইসলাম দিয়েছেন, কুরআন শরীফ দিয়েছেন এবং রহমত হিসেবে তাঁর প্রিয়তম হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে দিয়েছেন, সেজন্য তারা যেন খুশী প্রকাশ করে।” (সূরা ইউনুস-৫৮)
যারা আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর বিলাদত শরীফ তথা আগমন উপলক্ষে খুশী প্রকাশ করবে আল্লাহ পাক তাঁদেরকে অফুরন্ত নিয়ামত দান করবেন।
এ প্রসঙ্গে বিশ্বসমাদৃত ও সুপ্রসিদ্ধ “আন্ নি’মাতুল কুবরা আলাল আলাম” কিতাবে বর্ণিত রয়েছে, “হযরত আলী র্কারামাল্লাহু ওয়াজহাহু রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বলেন, যে ব্যক্তি মীলাদুন্ নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর প্রতি বিশেষ মর্যাদা প্রদান করলো সে ব্যক্তি অবশ্যই ঈমান নিয়ে দুনিয়া থেকে বিদায় নিবে এবং বিনা হিসেবে জান্নাতে প্রবেশ করবে।” (সুবহানাল্লাহ্)
আর যারা আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর বিলাদত শরীফ উপলক্ষে খুশী প্রকাশ করবেনা তাদের পরিণতি হবে অত্যন্ত ভয়াবহ। এ প্রসঙ্গে হযরত ঈসা আলাইহিস্ সালাম-এর সময় খাদ্যসহ খাঞ্চা নাযিলের ঘটনা বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। এ সম্পর্কে কালামুল্লাহ্ শরীফে ইরশাদ হয়েছে, হযরত ঈসা আলাইহিস্ সালাম দুয়া করেছিলেন,
ربنا انزل علينا مائدة من السماء تكون لنا عيدا لاولنا واخر نا واية منك وارز قنا وانت خير الرز قين. قال الله انى منز لها عليكم فمن يكفر بعد منكم فانى اعذ به عذا با لاا عذ به احدا من العلمين.
অর্থঃ- “আয় আমাদের রব আল্লাহ পাক! আমাদের জন্য আপনি আসমান হতে (বেহেশ্তী খাদ্যের) খাদ্যসহ একটি খাঞ্চা নাযিল করুন। খাঞ্চা নাযিলের উপলক্ষটি আমাদের জন্য, আমাদের পূর্ববর্তী ও পরবর্তী সকলের জন্য ঈদ (খুশী) স্বরূপ হবে এবং আপনার পক্ষ হতে একটি নিদর্শন হবে। আমাদেরকে রিযিক দান করুন। নিশ্চয় আপনিই উত্তম রিযিকদাতা। আল্লাহ পাক বললেন, নিশ্চয়ই আমি তোমাদের প্রতি খাদ্যসহ খাঞ্চা নাযিল করবো। অতঃপর যে ব্যক্তি সে খাদ্যসহ খাঞ্চা নাযিলের দিনকে ঈদ বা খুশীর দিন হিসেবে পালন করবেনা বরং অস্বীকার করবে আমি তাকে এমন শাস্তি দিব, যে শাস্তি সারা কায়েনাতের অপর কাউকে দিবনা।” (সূরা মায়িদা-১১৪, ১১৫)
হযরত ঈসা আলাইহিস্ সালাম-এর উক্ত দুয়ার পরিপ্রেক্ষিতে আল্লাহ পাক খাদ্যসহ খাঞ্চা নাযিল করেছিলেন। আর খাদ্যসহ খাঞ্চা নাযিলের দিনটিকে হযরত ঈসা আলাইহিস সালাম তাঁর উম্মতদেরকে নিয়ে খুশীর দিনরূপে উদ্যাপন করেছিলেন।
এখানে উল্লেখ্য, সামান্য খাদ্যসহ এক খাঞ্চা নাযিলের দিনটি যদি হযরত ঈসা আলাইহিস্ সালাম এবং তাঁর উম্মতের জন্য খুশীর দিন হয়ে যায় এবং সে দিনটিকে খুশীর দিন হিসেবে পালন না করলে কঠিন শাস্তির যোগ্য হয়, তাহলে যিনি সৃষ্টির মুল, যিনি সারা আলমের জন্য রহমত, যাকে সৃষ্টি না করলে কোন কিছুই সৃষ্টি করা হতোনা; সেই আল্লাহ পাক-এর হাবীব, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন্ নাবিয়্যীন, নূরে মুজাস্সাম, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর ‘বিলাদত শরীফ’-এর দিনটিকে কিরূপ খুশীর দিন হিসেবে উদ্যাপন করা উচিত এবং সেদিন যদি কেউ খুশী প্রকাশ না করে তাহলে সে কিরূপ কঠিন শাস্তির যোগ্য হবে তা চিন্তা-ফিকিরের বিষয়।
আয় আল্লাহ পাক! আমাদের প্রত্যেককে আপনার প্রিয়তম হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর বিলাদত শরীফ উপলক্ষে যথাযথ খুশী প্রকাশ করার তাওফীক দান করুন। আমীন।
স্মরনীয় যে, আসন্ন ঈদে মীলাদুন নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উপলক্ষে যামানার মুজাদ্দিদ, মুজাদ্দিদে আ’যম, আওলাদে রসূল, সাইয়্যিদুনা ইমাম রাজারবাগ শরীফের হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা মুদ্দা জিল্লুহুল আলী-এর দরবার শরীফে ২৪ দিন ব্যাপী প্রতিযোগিতা ও ওয়াজ মাহফিলের ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। উক্ত মাহফিলে আপনারা উপস্থিত হয়ে আল্লাহ পাক ও তাঁর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর মুহব্বত, মা’রিফাত, সন্তুষ্টি ও রিযামন্দি হাছিল করুন।
মাহে যিলক্বদ ও তার প্রাসঙ্গিক আলোচনা
মাহে যিলহজ্জ ও তার প্রাসঙ্গিক আলোচনা
মাহে মুহররমুল হারাম ও তার প্রাসঙ্গিক আলোচনা