মাহে রমাদ্বান শরীফ ও তার প্রাসঙ্গিক আলোচনা

সংখ্যা: ১৪৬তম সংখ্যা | বিভাগ:

আরবী বছরের নবম মাস রমাদ্বান। এ মাসের ফযীলতের সাথে অন্য কোন মাসের ফযীলতের তুলনা হয়না। এ মাসকে আল্লাহ পাক খাছ ফযীলত দান করেছেন। এক হাদীছ শরীফে বর্ণিত হয়েছে, একবার হযরত মূসা আলাইহিস সালাম আল্লাহ পাক-এর নিকট আরজ করলেন, হে পরওয়ারদিগার, আপনি উম্মতে মুহম্মদীর জন্য ফযীলতের মাস হিসেবে কোনটিকে নির্দিষ্ট করেছেন? আল্লাহ পাক বললেন, আমি তাদেরকে ফযীলতের মাস হিসেবে রমাদ্বান মাস দান করেছি। হযরত মূসা আলাইহিস সালাম পূনরায় আরজ করলেন, বারে ইলাহী, রমাদ্বান মাসের ফযীলত কিরূপ? আল্লাহ পাক বললেন, সমগ্র সৃষ্টি জগতের উপর আমার যেরূপ শ্রেষ্ঠত্ব বিদ্যমান, অন্যান্য মাস অপেক্ষা রমাদ্বান মাসেরও তদ্রুপ শ্রেষ্ঠত্ব বিদ্যমান। অপর এক হাদীছ শরীফে বর্ণিত রয়েছে, খলীফাতুল মুসলিমীন, আমীরুল মু’মিনীন হযরত উমর ফারূক রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বলেন, আমি একবার রসূলে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম- এর নিকট রমাদ্বান শরীফের ফযীলত সম্পর্কে আরজ করলাম, তখন তিনি ইরশাদ করলেন, চারটি কিতাবে রমাদ্বানের চারটি পরিচয় বর্ণিত হয়েছে। যথাঃ ১. তাওরাত শরীফে রমাদ্বানকে বলা হয়েছে ‘হাত’-এর অর্থ গুণাহ ধ্বংস করা, অর্থাৎ এ মাসে বান্দার গুণাহসমূহ মিটিয়ে দেয়া হয়। ২. যাবূর শরীফে বলা হয়েছে ‘কুরবত’-এর অর্থ নৈকট্য। অর্থাৎ এ মাসে আল্লাহ পাক-এর সাথে বান্দার নৈকট্য লাভ হয়। ৩. ইন্জীল শরীফে বলা হয়েছে, ‘ত্বাব’- এর অর্থ পবিত্র হওয়া। অর্থাৎ এ মাসে রোযাদার পাপ হতে পবিত্র হয়ে যায়। ৪. কুরআন শরীফে বলা হয়েছে, ‘রমাদ্বান’- এর অর্থ জ্বালিয়ে দেয়া। অর্থাৎ রমাদ্বানের রোযা মানুষের কু-রিপুসমূহকে জ্বালিয়ে দেয়। হাদীছ শরীফে ইরশাদ হয়েছে, “যখন রমাদ্বান মাসের প্রথম রাত্রি উপস্থিত হয় তখন জান্নাতের সমস্ত দরজা খুলে দেয়া হয় এবং পুরো মাস ব্যাপী তা আর বন্ধ করা হয়না। আল্লাহ পাক-এর তরফ হতে আদিষ্ট হয়ে একজন ঘোষণাকারী এই বলে ঘোষণা করেন যে, হে কল্যাণকামী অগ্রসর হও, হে অমঙ্গলকামী পিছে হট।” আরো ঘোষণা করেন, কোন ক্ষমাপ্রার্থী আছে, তাকে ক্ষমা করা হবে। কোন প্রার্থনাকারী আছে, তার প্রার্থনা কবুল করা হবে। কোন তওবাকারী আছে, তার তওবা কবুল করা হবে। সকাল পর্যন্ত এই আহ্বান অব্যাহত থাকে। (মিশকাত, মুকাশাফাতুল কুলূব)  হাদীছ শরীফে আরো ইরশাদ হয়েছে, “যে ব্যক্তি ঈমান ও ইখলাছের সাথে রমাদ্বান শরীফের রোযা রাখবে তার পূর্বের গুণাহ্সমূহ ক্ষমা করা হবে এবং যে ব্যক্তি ঈমান ও ইখলাছের সাথে রমাদ্বান শরীফের রাত্রি ইবাদতে কাটাবে তারও পূর্বের গুণাহ্সমূহ ক্ষমা করা হবে এবং যে ব্যক্তি ঈমান ও ইখলাছের সাথে ক্বদরের রাত্রি ইবাদতে কাটাবে তারও পূর্বকৃত গুণাহ্সমূহ ক্ষমা করা হবে।” (বুখারী, মুসলিম) বর্ণিত রয়েছে, এ মুবারক মাসে আল্লাহ্ পাক-এর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে একটি নফল আমল অন্যান্য মাসে একটি ফরয আমলের নেকীর সমান এবং একটি ফরয আমল অন্যান্য মাসের সত্তরটি ফরয আমলের নেকীর সমান। কিন্তু একটি পাপের ক্ষেত্রে একটি পাপই লিখা হয়ে থাকে। এ মাসটি পরস্পর সহানুভূতির মাস। এতে মু’মিনের রিযিক বৃদ্ধি করে দেয়া হয়। এ মাসে যে ব্যক্তি কোন রোযাদারকে শুধু এক চুমুক দুধ অথবা একটি খেজুর অথবা এক ঢোক পানি দ্বারা ইফতার করাবে এটা তার গুণাহ্সমূহ ক্ষমা ও দোযখের আগুন হতে মুক্তির কারণ স্বরূপ হবে এবং তার ছওয়াব হবে উক্ত রোযাদারের সমান। (সুবহানাল্লাহ)

আর যে ব্যক্তি এ মাসে কোন রোযাদারকে তৃপ্তি সহকারে পানাহার করাবে আল্লাহ্ পাক তাকে হাউযে কাওছার হতে পানিয় পান করাবেন, জান্নাতে প্রবেশ করা পর্যন্ত সে কখনো তৃষ্ণার্ত হবে না। আর যে ব্যক্তি এ মাসে আপন দাস-দাসী বা অধীনস্থ কর্মচারীর কার্যভার হালকা করে দিবে আল্লাহ পাক তাকে ক্ষমা করে দিবেন এবং তাকে দোযখ থেকে মুক্তি দান করবেন। এ মাসের প্রথম দশদিন রহমতের, দ্বিতীয় দশদিন মাগফিরাতের এবং তৃতীয় দশদিন জাহান্নাম হতে মুক্তি বা নাজাত লাভ করার। (বাইহাক্বী, মিশকাত)

অতএব, রহমত, মাগফিরাত ও নাজাত লাভের মহিমান্বিত রমাদ্বান শরীফে দিনের বেলা রোযা রেখে আর রাতের বেলা তারাবীহ্ ও তাহাজ্জুদ নামায পড়ে এবং কুরআন শরীফ তিলাওয়াত করে এর হক্ব আদায় করা উচিত। আয় আল্লাহ পাক, আমাদের সকলকে মাহে রমাদ্বান শরীফের যথাযথ হক্ব আদায় করার তাওফিক দান করুন। আমীন।

মুহররম মাস ও প্রাসঙ্গিক আলোচনা -হযরত মাওলানা মুফতী সাইয়্যিদ শোয়াইব আহমদ

ছফর মাস ও প্রাসঙ্গিক আলোচনা

মাহে রবিউল আউয়াল শরীফ ও তার প্রাসঙ্গিক আলোচনা -হযরত মাওলানা মুফতী সাইয়্যিদ শোয়াইব আহমদ

মাহে রবিউস্ সানী মাস ও তার প্রাসঙ্গিক আলোচনা

মাহে জুমাদাল উখরা ও তার প্রাসঙ্গিক আলোচনা -হযরত মাওলানা মুফতী সাইয়্যিদ শোয়াইব আহমদ