-হযরত মাওলানা মুফতী সাইয়্যিদ শোয়াইব আহমদ
আহলান সাহলান-হে মাহে রমাদ্বান। আরবী নবম মাসের নাম রমাদ্বান। رمضان (রমাদ্বান) শব্দটি رمض (রমদ্ব) শব্দ হতে উদ্ভুত। এর অর্থ জ্বালিয়ে-পুঁড়িয়ে দেয়া। রমাদ্বান শরীফের রোযা মানুষের পাপসমূহকে জ্বালিয়ে দেয়। এ থেকেই এ মাসের নাম করণ হয় রমাদ্বান।
হিজরী পঞ্চদশ শতাব্দীর মুজাদ্দিদ হযরত মুজাদ্দিদে আ’যম মুদ্দা জিল্লুহুল আলী বলেন, رمضان (রমাদ্বান)-এর ر (রা) দ্বারা رحمة الهى (রহমতে ইলাহী) অর্থাৎ আল্লাহ পাক-এর রহমত, م (মীম) দ্বারা محبة الهى (মুহব্বতে ইলাহী) অর্থাৎ আল্লাহ পাক-এর মুহব্বত, ضا (দ্বা) দ্বারা ضامن الجن والانس (দ্বামিনুল জিন্নি ওয়াল ইনসি) অর্থাৎ জিন-ইনসানের জিম্মাদার এবং ن (নূন) দ্বারা نور الهى (নূরে ইলাহী) অর্থাৎ আল্লাহ পাক-এর নূর বা হিদায়েত। আর صيام (ছিয়াম) ক্রিয়ামূলটি صوم (ছওম) শব্দমূল থেকে উদ্ভুত। অর্থ- রোযা, পানাহার ও নির্জনবাস থেকে বিরত থাকা। صيام শব্দটির ص (ছোয়াদ) দ্বারা صحة قلوب (ছিহাতে কুলূব) অর্থাৎ অন্তরের বিশুদ্ধতা, يا (ইয়া) দ্বারা ياد الهى (ইয়াদে ইলাহী) অর্থাৎ আল্লাহ পাক-এর স্মরণ এবং م (মীম) দ্বারা معرفة الهى (মা’রিফাতে ইলাহী) অর্থাৎ আল্লাহ পাক-এর পরিচয় লাভের ইঙ্গিত বা প্রমাণ বহন করে। মোটকথা যে ব্যক্তি রমাদ্বান শরীফে রোযা, তারাবীহ, কুরআন শরীফ তিলাওয়াত, ই’তিকাফ ইত্যাদি ফরয, ওয়াজিব, সুন্নত, নফল ইবাদত-বন্দিগী যথাযথ সম্পাদন করার মাধ্যমে এর হক্ব আদায় করবে সে আল্লাহ পাক-এর খাছ রহমত, মুহব্বত, হিদায়েত লাভ করবে এবং সেটা তার নাজাতেরও জিম্মাদার হবে।
এছাড়া সঠিকভাবে রমাদ্বান শরীফের রোযা রাখার দ্বারা বান্দা অন্তরের বিশুদ্ধতা লাভ করে, এরপর দায়িমীভাবে আল্লাহ পাক-এর স্মরণে মশগুল হয়, অতঃপর আল্লাহ পাক-এর মা’রিফাত লাভে সক্ষম হয়। (সুবহানাল্লাহ্) হিজরী দ্বিতীয় সনে মাহে রমাদ্বানের রোযা ফরয হয়। আমলের দিক থেকে এ রোযা যেমন অত্যাবশ্যকীয়, আক্বীদাগত দিক থেকেও এ রোযার ফরযিয়াতের প্রতি বিশ্বাস রাখা অপরিহার্য। সুতরাং এর ফরযিয়াতের অস্বীকারকারী ব্যক্তি কাফিরের অন্তর্ভুক্ত।
রমাদ্বান শরীফের ফযীলত সম্পর্কে বহু হাদীছ শরীফ বর্ণিত রয়েছে। আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, “বান্দারা যদি রমাদ্বান শরীফের ফযীলত সম্পর্কে জানতো তাহলে অবশ্যই তারা এ আকাঙ্খা করতো, যেন সারা বছরই রমাদ্বান শরীফ হয়। (ইবনে খুজাইমা
হাদীছ শরীফে হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ইরশাদ করেন, “যে ব্যক্তি ঈমান ও ইখলাছের সাথে রমাদ্বান শরীফের রোযা রাখবে তার পূর্বের গুণাহ্সমূহ ক্ষমা করা হবে এবং যে ব্যক্তি ঈমান ও ইখলাছের সাথে রমাদ্বান শরীফের রাত্রি ইবাদতে কাটাবে তারও পূর্বের গুণাহ্সমূহ ক্ষমা করা হবে এবং যে ব্যক্তি ঈমান ও ইখলাছের সাথে ক্বদরের রাত্রি ইবাদতে কাটাবে তারও পূর্বকৃত গুণাহ্সমূহ ক্ষমা করা হবে।” (বুখারী, মুসলিম) হাদীছ শরীফে ইরশাদ হয়েছে, “যে ব্যক্তি রমাদ্বান শরীফের শুরু হতে শেষ পর্যন্ত রোযা রাখবে সে ঐ দিনের মত নিস্পাপ হবে যেদিন সে জন্মগ্রহণ করেছে।” (মুসলিম) হাদীছ শরীফে ইরশাদ হয়েছে, রোযাদারের ঘুম ইবাদতের শামিল, রোযাদারের নিশ্চুপ থাকা তাছবীহ্ পাঠের মধ্যে পরিগণিত, রোযাদারের দোয়া নির্ঘাত কবুলযোগ্য এবং রোযাদারের আমলের ছওয়াব দ্বিগুণ-বহুগুণে বাড়িয়ে দেয়া হয়।” (কানযুল উম্মাল)
অতএব, রহমত, মাগফিরাত ও নাজাত লাভের মহিমান্বিত রমাদ্বান শরীফে দিনের বেলা রোযা রেখে আর রাতের বেলা তারাবীহ্ ও তাহাজ্জুদ নামায পড়ে এবং কুরআন শরীফ তিলাওয়াত করে এর হক্ব আদায় করা উচি
আয় আল্লাহ্ পাক! আমাদের সকলকে মাহে রমাদ্বান শরীফের যথাযথ হক্ব আদায় করতঃ তার রহমত, বরকত, সাকীনা, মাগফিরাত ও নাযাতের পরিপূর্ণ হিস্সা দান করুন। (আমীন)
সম্মানিত জুমাদাল ঊলা শরীফ ও সম্মানিত জুমাদাল উখরা শরীফ মাস এবং উনাদের প্রাসঙ্গিক আলোচনা
মাহে রবিউস্ সানী ও তার প্রাসঙ্গিক আলোচনা
মাহে জুমাদাল উলা ও জুমাদাল উখরা