আহলান-সাহলান হে মাহে রমাদ্বান। চন্দ্র মাসের নবম মাসের নাম রমাদ্বান। তামাম মাখলুকাতের মধ্যে খালিক্ব, মালিক, আল্লাহ পাক রব্বুল আলামীন যেরূপ মর্যাদাবান অন্যান্য মাসের তুলনায় রমাদ্বান মাস তদ্রুপ মর্যাদাবান। বারটি মাসের মধ্যে কেবল রমাদ্বান মাসের নামটি আল্লাহ পাক সরাসরি কুরআন শরীফে উল্লেখ করেছেন। হাদীছ শরীফে রমাদ্বান শরীফকে আল্লাহ্ পাক-এর মাস এবং শ্রেষ্ঠতম মাস হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।
رمضان ‘রমাদ্বান’ শব্দটি رمض ‘রমদ্ব’ শব্দমূল থেকে এসেছে। এর অর্থ হচ্ছে জ্বালিয়ে-পুঁড়িয়ে দেয়া। বান্দা এ মাসে রোযা রেখে নিজের কু-প্রবৃত্তিকে জ্বালিয়ে-পুঁড়িয়ে দেয়। উপরন্ত এ মাসে রোযা রাখার দ্বারা বান্দা তাক্বওয়া বা আল্লাহভীতি হাছিল করে। যে তাক্বওয়া হচ্ছে সমস্ত আমলের মূল।
হিজরী দ্বিতীয় সনে রমাদ্বান মাসের রোযা ফরয হয়। ছুবহে ছাদিক থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত দিনের বেলা রোযা রাখা ফরয সাব্যস্ত করেন আল্লাহ পাক জাল্লা শানুহু এবং রাতের বেলা তারাবীহ্র নামায পড়া সুন্নত (মুয়াক্কাদা) সাব্যস্ত করেন আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম।
রমাদ্বানের রোযার ফযীলত সম্পর্কে বহু হাদীছ শরীফ বর্ণিত রয়েছে। আল্লাহ্ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, “বান্দারা যদি রমাদ্বান মাসের ফযীলত সম্পর্কে জানতো তাহলে অবশ্যই তারা এ আকাঙ্খা করতো, যেন সারা বছরই রমাদ্বান হয়। (ইবনে খুজাইমা)
হাদীছ শরীফে হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি আরো ইরশাদ করেন, “যে ব্যক্তি ঈমান ও ইখলাছের সাথে রমাদ্বান শরীফের রোযা রাখবে তার পূর্বের গুণাহ্সমূহ ক্ষমা করা হবে এবং যে ব্যক্তি ঈমান ও ইখলাছের সাথে রমাদ্বান শরীফের রাত্রি ইবাদতে কাটাবে তারও পূর্বের গুণাহ্সমূহ ক্ষমা করা হবে এবং যে ব্যক্তি ঈমান ও ইখলাছের সাথে ক্বদরের রাত্রি ইবাদতে কাটাবে তারও পূর্বকৃত গুণাহ্সমূহ ক্ষমা করা হবে।” (বুখারী, মুসলিম)
হাদীছ শরীফে আরো ইরশাদ হয়েছে, “যখন রমাদ্বান মাসের প্রথম রাত্রি উপস্থিত হয় তখন জান্নাতের সমস্ত দরজা খুলে দেয়া হয় এবং পুরো মাস ব্যাপী তা আর বন্ধ করা হয়না। আল্লাহ্ পাক-এর তরফ হতে আদিষ্ট হয়ে একজন ঘোষণাকারী এই বলে ঘোষণা করেন যে, হে কল্যাণকামী অগ্রসর হও, হে অমঙ্গলকামী পিছে হঠো।” (মিশকাত শরীফ)
হাদীছ শরীফে আরো ইরশাদ হয়েছে, “যে ব্যক্তি এ মাসে একটি নফল ইবাদত করবে, সে অন্য মাসে একটি ফরয আদায়ের তুল্য ছওয়াব পাবে। আর যে এ মাসে একটি ফরয ইবাদত করবে, সে অন্য মাসে সত্তরটি ফরয আদায়ের সমতুল্য ছওয়াব লাভ করবে। এ মাস ছবরের মাস। ছবরের প্রতিদান জান্নাত। এ মাস পরস্পর সহানুভূতির মাস। এ মাসে মু’মিনদের রিযিক বৃদ্ধি করে দেয়া হয়।
যে ব্যক্তি কোন রোযাদারকে ইফতার করাবে, এর বরকতে তার যাবতীয় গুনাহ ক্ষমা করা হবে এবং তাকে জাহান্নাম থেকে নাজাত দেয়া হবে এতদ্ব্যতীত সে তার সমান ছওয়াব লাভ করবে, অথচ রোযাদার ব্যক্তির ছওয়াবে বিন্দুমাত্রও ঘাটতি হবে না। ছাহাবীগণ আরয করলেন, ইয়া রসূলাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আমাদের মধ্যে অনেকেরই সামর্থ্য নেই যে, সে অপরকে ইফতার করাবে। হযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, যে ব্যক্তি কাউকে এক চুমুক দুধ বা এক ঢোক পানি বা একটি খেজুর দ্বারা ইফতার করাবে, তাকেও আল্লাহ পাক সেই ছওয়াব দান করবেন। আর যে ব্যক্তি রোযাদারকে তৃপ্ত করে খাওয়াবে আল্লাহ্ পাক আমার হাউযে কাওছার থেকে তাকে এমন পানীয় পান করাবেন, এরপর জান্নাতে প্রবেশ করা পর্যন্ত সে কখনো পিপাসার্ত হবে না। যে ব্যক্তি এ মাসে আপন গোলাম ও কর্মচারীর (দায়িত্বের) বোঝা হালকা করে দিবে, আল্লাহ্ পাক তাকে জাহান্নাম থেকে পরিত্রাণ দিবেন।” (সুবহানাল্লাহ) (বাইহাক্বী, মিশকাত)
রমাদ্বান শরীফে শেষ দশদিনের বেজোর রাত্রিগুলোতে শবে ক্বদর নিহিত। এটি এমন একটি বরকতপূর্ণ রাত্রি যে রাত্রির ইবাদত এক হাজার মাসের (৮৩ বছর ৪ মাস) ইবাদত অপেক্ষা উত্তম।
রমাদ্বান শরীফের শেষ দশ দিন ই’তিফাফ করা সুন্নতে মুয়াক্কাদা কিফায়া। অর্থাৎ মসজিদের অধিবাসীদের মধ্যে কেউ তা করলে অপর লোকেরা গুণাহ হতে বেঁচে যাবে। আর কেউ না করলে সকলেই গুণাহ্গার হবে।
আল্লাহ পাক আমাদের সকলকে মাহে রমাদ্বান শরীফের যথাযথ হক্ব আদায় করতঃ তার রহমত, মাগফিরাত ও নাজাতের পরিপূর্ণ হিস্সা দান করুন। (আমীন)
মাহে শাওয়াল ও তার প্রাসঙ্গিক আলোচনা
মাহে যিলক্বদ ও তার প্রাসঙ্গিক আলোচনা