-হযরত মাওলানা মুফতী সাইয়্যিদ শুয়াইব আহমদ
মাহে রমাদ্বান শরীফ শেষ হতে চলেছে। আসছে মাহে শাওওয়াল। পহেলা শাওওয়াল ঈদুল ফিতর। এ মুবারক দিনটি মু’মিন-মুসলমানদের জন্য ঈদের দিন, খুশীর দিন। এ দিনে গরীব-ধনী সকলেই যেন সমভাবে ঈদের আনন্দ পেতে পারে সেজন্য গরীবদের প্রাপ্য হক্ব হিসেবে ধনীদের প্রতি ছদ্ক্বাতুল ফিতির ওয়াজিব করা হয়েছে। ধনীদের প্রতি আরো ফরয করা হয়েছে যাকাত। এ যাকাত তারা সাধারণতঃ রমযান মাসে আদায় করেন এ কারণে যে, হাদীছ শরীফে রয়েছে, রমযান মাসে একটা ফরয আদায় করলে ৭০টি ফরয আদায়ের ফযীলত হাছিল হয়ে থকে। কিন্তু প্রশ্ন হলো ইখলাছের। অর্থাৎ ইখলাছ যদি না থাকে ফযীলত পাওয়া তো দূরের কথা উল্টা লা’নতের অধিকারী হবে।
ছহীহ মুসলিম শরীফে হযরত আবূ হুরায়রা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হতে বর্ণিত রয়েছে, আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন, হাশরের ময়দানে বিচারের জন্য সর্বপ্রথম তিন ব্যক্তিকে উপস্থিত করা হবে। তারমধ্যে একজন হলো সম্পদশালী। যাকে অনেক সম্পদ দান করা হয়েছে। আল্লাহ পাক তাকে বলবেন, হে ব্যক্তি! আমি তোমাকে দুনিয়াতে অনেক সম্পদের মালিক করেছিলাম, তার বিনিময়ে তুমি কি আমল করেছ? সে ব্যক্তি বলবে, “হে আল্লাহ পাক! আপনার পছন্দনীয় এমন কোন পথ নেই যে পথে আমি দান-খয়রাত করিনি। অর্থাৎ আপনি যতগুলো রাস্তা পছন্দ করতেন- মসজিদ, মাদ্রাসা, লঙ্গরখানা, ইয়াতীখানা, গরীব-মিসকীন, ফকীর-ফুক্বারা, ইয়াতীম-অনাথ, রাস্তা-ঘাট, পুল-ব্রীজ, পানির ব্যবস্থা ইত্যাদি সব জায়গায় আমি কম-বেশি দান করেছি। কাউকে খালি হাতে ফিরিয়ে দেইনি। সবাইকে দান করেছি একমাত্র আপনার সন্তুষ্টির জন্য।” আল্লাহ পাক বলবেন, মিথ্যা কথা। তুমি আমার জন্য করনি। বরং তুমি এজন্য করেছ যে, লোকেরা তোমাকে দানশীল বলবে। আর তোমাকে তা বলা হয়েছে। আল্লাহ পাক তখন ফেরেশ্তাদের আদেশ করবেন, হে ফেরেশ্তারা! এ দানশীল ব্যক্তিকে জাহান্নামে নিক্ষেপ কর। ফেরেশ্তারা তৎক্ষনাত তাকে চুলে ধরে উপুড় করে জাহান্নামে নিক্ষেপ করবেন। (নাউযুবিল্লাহ)
কাজেই, দান-ছদক্বা, যাকাত-ফিতরা সবকিছু করতে হবে একমাত্র আল্লাহ পাক-এর সন্তুষ্টি হাছিলের উদ্দেশ্যে। গইরুল্লাহ’র জন্য কোন আমল করা যাবে না। মানুষ দানশীল বলবে, দানবীর বলবে, দাতা বলবে, মানুষ জানবে, চিনবে, সমাজে নামধাম হবে, প্রচার-প্রসার ঘটবে, পরিচিতি হবে, যশ-খ্যাতি অর্জিত হবে, সমাজের অধিপতি হওয়া যাবে, নেতা-নেত্রী হওয়া যাবে, মসজিদের সেক্রেটারী, সভাপতি হওয়া যাবে, এলাকার চেয়ারম্যান, মেম্বার, মন্ত্রি-মিনিস্টার হওয়া যাবে ইত্যাদি সবই হলো গইরুল্লাহ। এই গইরুল্লাহ’র উদ্দেশ্য থাকার দরুণ দেখা যায়, বেশী লোককে যাকাত দেয়ার জন্য তারা কম দামের খদ্দরের পাতলা লুঙ্গি ও পাতলা শাড়ী দিয়ে থাকে যা সাধারণভাবে পড়ার উপযুক্ত নয়। কারণ সে লুঙ্গি ও শাড়ী যাকাত দানকারী ও কারিণী পরিধান করতে কখনই রাজী হবেনা বা পছন্দ করবে না। যদি তাই হয়, যেটা যাকাত দানকারী ও কারিণী নিজেরা গ্রহণ করতে রাজী নয় সেটা আল্লাহ পাক কি করে গ্রহণ করবেন? মূলতঃ সে দান আদৌ আল্লাহ পাক-এর নিকট গৃহীত হবে না। আল্লাহ পাক তা পরিষ্কার কালাম পাকে জানিয়ে দিয়েছেন। ইরশাদ হয়েছে, “তোমরা কখনই নেকী, কল্যাণ হাছিল করতে পারবে না যে পর্যন্ত না তোমরা তোমাদের প্রিয় বা পছন্দনীয় বস্তু দান করবে। এবং তোমরা যা কিছু দান কর সে সম্পর্কে আল্লহ পাক অবশ্যই পূর্ণ খবর রাখেন।” (সূরা আলে ইমরান-৯২)
আল্লাহ পাক আরো ইরশাদ করেন, “হে ঈমানদারগণ! তোমরা স্বীয় উপার্জন থেকে এবং যা আমি তোমাদের জন্য ভূমি থেকে উৎপন্ন করেছি তা থেকে উৎকৃষ্ট বস্তু ব্যয় কর এবং নিকৃষ্ট জিনিস ব্যয় করতে নিয়ত বা মনস্থ করোনা। কেননা তোমরা তা থেকে অনিচ্ছাকৃতভাবে ব্যতীত গ্রহণ করবে না। জেনে রাখ, নিশ্চয়ই আল্লাহ পাক অভাবমুক্ত, প্রশংসিত।” (সূরা বাক্বারা-২৬৭)
এখানে সম্পদের যাকাত, ফিত্রা ও জমির ফসলের ওশর ইত্যাদি ফরয, ওয়াজিব, নফল সকল প্রকার দান-ছদক্বার কথাই বলা হয়েছে। অর্থাৎ যেটা উত্তম, উৎকৃষ্ট, মূল্যবান সেটাই দিতে হবে। যেটা নিকৃষ্ট, নিম্নমানের, নিম্নমূল্যের সেটা দেয়া তো দূরের কথা সেটা দেয়ার কল্পনা বা চিন্তা করাও যাবে না। কেননা খারাপটা কেউই গ্রহণ করতে চায় না। তাহলে আল্লাহ পাক সেটা কি করে গ্রহণ করবেন। এখন কেউ যদি চোখ বন্ধ করে নিজের খেয়াল খুশী মত সেটা দিয়ে দেয় সেক্ষেত্রে আল্লাহ পাক জানিয়েছেন যে, আল্লাহ পাক তোমাদের এসব দানের মুখাপেক্ষী নন। তিনি গণী বা অভামুক্ত এবং হামীদ বা চরম প্রশংসিত।
কাজেই, যাকাতসহ শরীয়তের প্রতিটি আমল আল্লাহ পাক-এর নিকট কবুল হওয়ার জন্য শর্ত হলো ইখলাছ। আর ইখলাছ অর্জিত হয় ইলমে তরীক্বত বা তাছাউফের মাধ্যমে। আর ইলমে তরীক্বত বা তাছাউফ শিক্ষা দেন হক্কানী-রব্বানী শায়খ বা মুর্শিদগণ।
অতএব, হক্কানী-রব্বানী শায়খ বা মুর্শিদের নিকট বাইয়াত ও ছোহবত গ্রহণ করা ব্যতীত কস্মিনকালেও ইখলাছের সাথে আমল করা সম্ভব নয়। যে কারণে হানাফী মাযহাবের ইমাম হযরত ইমামে আ’যম আবু হানীফা রহমতুল্লাহি আলাইহিসহ অনুসরণীয় সকল ইমাম-মুজতাহিদ, আওলিয়ায়ে কিরাম হক্কানী-রব্বানী শায়খের নিকট বাইয়াত হয়েছেন এবং সকলকে হওয়ার জন্য ফতওয়াও দিয়েছেন।
মাহে যিলক্বদ ও তার প্রাসঙ্গিক আলোচনা
মাহে যিলহজ্জ ও তার প্রাসঙ্গিক আলোচনা
মাহে মুহররমুল হারাম ও তার প্রাসঙ্গিক আলোচনা