মাহে শাওয়াল ও তার প্রাসঙ্গিক আলোচনা –

সংখ্যা: ১৩৫তম সংখ্যা | বিভাগ:

হযরত মাওলানা মুফতী সাইয়্যিদ শোয়াইব আহমদ

মাহে রমাদ্বান শরীফের পরবর্তী মাস মাহে শাওয়াল شوال ‘শাওয়াল’ শব্দটি شول ‘শাওলুন’ শব্দমূল হতে এসেছে। এটি ইসমে মুশতাক্ব তথা ইসমে ফায়িল মুবালাগা-এর একবচনের রূপ। এর অর্থ হচ্ছে অধিক পরিমাণে বরদাশ্তকারী বা ধৈর্যধারণকারী। হিজরী পঞ্চদশ শতাব্দীর মুজাদ্দিদ হযরত মুজাদ্দিদে আ’যম মুদ্দা জিল্লুহুল আলী বলেন, “পাঁচ অক্ষর বিশিষ্ট شوال (শাওওয়াল) শব্দটির ش (শীন) দ্বারা شريعة (শারীয়াতুন) অর্থাৎ শরীয়ত, و (ওয়াও) দ্বারা ورع (ওয়ারাউন) অর্থাৎ পরহেযগারী, পুনরায় و (ওয়াও) দ্বারা ورد (বিরদুন) অর্থাৎ নিয়মিত পাঠ করার ওযীফা, ا (আলিফ) দ্বারা الله (আল্লাহু) অর্থাৎ আল্লাহ পাক এবং ل (লাম) দ্বারা لطف (লুত্ফুন) অর্থাৎ অনুগ্রহ বা দয়ার প্রমাণ বহন করে। মোটকথা, যে ব্যক্তি শরীয়তের বিধানাবলী সঠিকভাবে পালন করার মধ্য দিয়ে পরহেযগার বা মুত্তাক্বী হিসেবে গণ্য হবে, সে আল্লাহ পাক-এর খাছ অনুগ্রহ বা দয়া লাভ করবে। বছরের যে পাঁচটি রাত্রি ও দিনে আল্লাহ পাক-এর দরবারে খাছভাবে দু’য়া কবুল হয় ঈদুল ফিতরের রাত ও দিনটি তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য।

এ মাসের প্রথম তারিখ পবিত্র ঈদুল ফিতরের দিন। রমাদ্বান শরীফের এক মাস রোযা রাখার পর মুসলমানগণ ঈদুল ফিতরের মাধ্যমে আনন্দ উদ্যাপন করেন। ঈদের দিনগুলোতে আল্লাহ পাক অগণিত নিয়ামত বর্ষণ করেন। এ কারণে মুসলমানগণ এ দিনগুলোর জন্যে অধীর আগ্রহে অপেক্ষমান থাকেন।  প্রকৃতপক্ষে এ মুবারক দিনটি নেক্কারদের জন্য খুশীর দিন। আর যারা পাপিষ্ঠ তাদের জন্য এ দিনটি খুশীর নয় বরং দুঃখের। যেমন বর্ণিত রয়েছে, “যে ব্যক্তি এ মাস (রমাদ্বান শরীফ) ইবাদত-বন্দিগীতে কাটিয়ে দিয়েছে তার জন্য এ দিন আনন্দ ও খুশীর। আর যে অন্যায় কাজে অতিবাহিত করেছে তার জন্য দুঃখ। যে ব্যক্তি ভাল ভাল পানাহার করেছে ঈদ তার জন্য নয়। ঈদ হলো, আল্লাহ পাক-এর সন্তুষ্টি লাভের জন্য যে ইবাদত করেছে। নতুন পোশাক-পরিচ্ছদ পরিধানকারীর জন্যও ঈদ নয়। ঈদ হলো, যে বিচার দিবসকে ভয় করে। উদ্-সুগন্ধী কাষ্ঠে নিজেকে সুগন্ধী করেছে তার জন্যও ঈদ নয়। বরং ঈদ হলো ঐ ব্যক্তির জন্য, যে একনিষ্ঠভাবে তওবা-ইস্তিগ্ফার করেছে। খাদ্য পাকানো ডেগচি যে উনানে দিয়েছে তার জন্যও ঈদ নয়। ঈদ হলো, যে সাধ্যমত পরিশ্রম করেছে। এভাবে যানবাহনে আরোহণকারীর জন্যও ঈদ নয়। প্রকৃত ঈদ হচ্ছে ঐ ব্যক্তির জন্য, যে গুণাহ্কে চিরতরে বর্জন করতে পেরেছে। হযরত আবূ হুরায়রা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হতে বর্ণিত আছে। তিনি বলেন, একদা ঈদুল ফিতরের দিনে আমি হযরত উমর ফারুক রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু-এর নিকট গেলাম। গিয়ে দেখলাম, ঘরের দরজা বন্ধ করে তিনি ক্রন্দন করছেন। আমি আরজ করলাম, হে আমীরুল মু’মিনীন! আপনি কাঁদছেন অথচ লোকেরা ঈদের আনন্দে মুখর। হযরত উমর ফারুক রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বললেন, আনন্দে মুখর ব্যক্তিরা যদি জানতো, তাহলে তারা আনন্দ-উৎসব করতো না। অতঃপর পুনরায় তিনি কাঁদতে কাঁদতে বললেন, তাদের আমল যদি কবুল হয়ে থাকে তবে তারা আনন্দ করুক। আর যদি কবুল না হয়ে থাকে তথা বর্জিত হয়ে থাকে তবে তারা কাঁদুক। কিন্তু আমি জানিনা, আমার আমল কবুলের পর্যায়ভুক্ত না বর্জিতের অন্তর্ভুক্ত।” ঈদের দিন অতিশয় সম্মান ও মর্যাদার দিন। এ দিন হতে কা’বা শরীফে হজ্বের প্রস্তুতি শুরু হয়। এ দিনে রোযার পূর্ণতার জন্য নির্ধারিত পন্থায় হামদ-তাকবীর পাঠ করার আর হালাল উপার্জিত মাল হতে ব্যয় করার নির্দেশ হয়েছে।  পহেলা শাওয়াল বাদ দিয়ে শাওয়ালের বাকী দিনগুলোতে ছয়টি রোযা সুন্নত সাব্যস্ত হয়েছে রমাদ্বানের ফরয রোযাকে পূর্ণতা ও সৌন্দর্য দানের উদ্দেশ্যে। এর দ্বারা আল্লাহ পাক উক্ত ফরয রোযার মধ্যে সংঘটিত ত্রুটি-বিচ্যুতি দূরীভূত করে পূর্ণতা দান করেন।” এ রোযার ফযীলত প্রসঙ্গে হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, “যে ব্যক্তি রমাদ্বান মাসের রোযা রাখার পর শাওয়াল মাসের ছয়টি রোযা রাখলো সে যেন পূর্ণ বছরই রোযা রাখলো।” (মুসলিম শরীফ) উল্লেখ্য, এ ছয়টি রোযা রাখার উত্তম বা মুস্তাহাব নিয়ম হচ্ছে ছয়টি রোযা একাধারা না রেখে বরং দু’একদিন বাদ দিয়ে রাখা। আল্লাহ পাক আমাদের সকলকে এ মুবারক মাসটির যথাযথ হক্ব আদায় করার তাওফিক দান করুন।। (আমীন)

সম্মানিত জুমাদাল ঊলা শরীফ ও সম্মানিত জুমাদাল উখরা শরীফ মাস এবং উনাদের প্রাসঙ্গিক আলোচনা

মাহে রবিউস্ সানী ও তার প্রাসঙ্গিক আলোচনা

মাহে জুমাদাল উলা ও জুমাদাল উখরা

মাহে রজব ও তার প্রাসঙ্গিক আলোচনা

মাহে শা’বান ও তার প্রাসঙ্গিক আলোচনা