-হযরত মাওলানা মুফতী সাইয়্যিদ শোয়াইব আহমদ
মাহে রমাদ্বান শরীফের পরবর্তী মাস মাহে শাওয়াল। شوال ‘শাওয়াল’ শব্দটি شول ‘শাওলুন’ শব্দমূল হতে এসেছে। এটি ইসমে মুশতাক্ব তথা ইসমে ফায়িল মুবালাগা-এর একবচনের রূপ। এর অর্থ হচ্ছে অধিক পরিমাণে বরদাশ্তকারী বা ধৈর্যধারণকারী। আরবগণ এ মাসে ছফর করতেন ও শিকার করতেন এ দু’য়ের কারণে তাদেরকে কষ্ট-ক্লেশ বরদাশ্ত করতে হতো এবং ধৈর্যও ধারণ করতে হতো। এ অর্থের সাথে সামঞ্জস্য রেখে এ মাসটির নামকরণ করা হয় শাওয়াল। এ মাসের প্রথম তারিখ পবিত্র ঈদুল ফিতরের দিন। বর্ণিত আছে, ঈদুল ফিতরের দিন সকালে আল্লাহ পাক ফেরেশ্তাদের পাঠিয়ে দেন, তাঁরা যমীনে এসে গলি-পথের মুখে দাঁড়িয়ে সজোরে আওয়ায করে ঘোষণা করতে থাকেন যা মানব ও জিন ব্যতীত অন্যান্য সকল মাখলুকাত শুনতে পায়- “হে উম্মতে মুহম্মদী! তোমরা তোমাদের দয়াময় রবের প্রতি ঝুকে পড়, অফুরন্ত ভান্ডার থেকে তিনি তোমাদেরকে দান করবেন, তোমাদের বড় বড় গুণাহসমূহ ক্ষমা করে দিবেন। লোকেরা যখন নামাযের স্থানে পৌঁছে, তখন আল্লাহ পাক ফেরেশতাদেরকে সম্বোধন করে বলেন, ঐ মজদূরের কী বিনিময় হতে পারে, যে তার কাজ সম্পন্ন করেছে? ফেরেশ্তাগণ বলেন, তার বিনিময় হচ্ছে তাকে পূর্ণ প্রাপ্য দিয়ে দেয়া। আল্লাহ পাক বলেন, তোমরা সাক্ষী থাক, বিনিময়ে আমি তাদেরকে আমার মাগফিরাত (ক্ষমা) ও সন্তুষ্টি দান করলাম।” (সুবহানাল্লাহ) আমিরুল মু’মিনীন, খলীফাতুল মুসলিমীন, হযরত উমর ইবনুল খত্তাব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু ঈদের দিন তাঁর পুত্রের পরিধানে জীর্ণ পোশাক দেখে কেঁদে ফেললেন। পুত্র কারণ জিজ্ঞাসা করলে তিনি বললেন, বৎস! অন্যান্য কিশোর-বালকরা ঈদের দিনে তোমাকে এ পোশাক পরিহিত দেখবে, আমার ভয় হয়- এতে তোমার দিল্ ভাঙ্গতে পারে। পুত্র জাওয়াবে বললেন, আব্বাজান! দিল্ ঐ ব্যক্তিরই ভাঙ্গতে পারে, যে আল্লাহ পাক-এর সন্তুষ্টি হাছিল করতে পারেনি কিংবা যে সন্তান তার পিতা-মাতার সন্তুষ্টি লাভ করতে পারেনি। আমি তো আশা করি, আপনার সন্তুষ্টি আমার উপর রয়েছে এবং এ ওছীলায় আল্লাহ পাকও আমার প্রতি সন্তুষ্ট রয়েছেন। (মুকাশাফাতুল কুলূব) প্রকাশ থাকে যে, মহান আল্লাহ পাক সুন্নত আমলের দ্বারা প্রতিটি ফরয আমলকে পূর্ণতা দান ও সৌন্দর্য মন্ডিত করেছেন। মাহে রমাদ্বানুল মুবারকের ফরয রোযার ক্ষেত্রেও এই নিয়মই বলবৎ রয়েছে। যেমন, পহেলা শাওয়াল বাদ দিয়ে শাওয়ালের বাকী দিনগুলোতে ছয়টি রোযা সুন্নত সাব্যস্ত করা হয়েছে উক্ত ফরয রোযাকে পূর্ণতা ও সৌন্দর্য দানের উদ্দেশ্যে। এ প্রসঙ্গে কিতাবে উল্লেখ করা হয়েছে যে, “শাওয়ালের ছয়টি রোযা ফরয নামাযের পরবর্তী সুন্নত নামাযের ন্যায় ফযীলতপূর্ণ। এর দ্বারা আল্লাহ পাক ফরযে সংঘটিত ত্রুটি-বিচ্যুতি, ক্ষয়-ক্ষতি দূরীভূত করে পূর্ণতা দান করেন। আর নিশ্চয়ই ক্বিয়ামত দিবসে ফরযসমূহ নফলসমূহের দ্বারা পূর্ণতা লাভ করবে।” এ রোযার ফযীলত প্রসঙ্গে হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন,
من صام رمضان ثم اتبعه ستا من شوال كان كصيام الدهر.
অর্থঃ- “যে ব্যক্তি রমাদ্বান মাসের রোযা রাখার পর শাওয়াল মাসের ছয়টি রোযা রাখলো সে যেন পূর্ণ বছরই রোযা রাখলো।” (মুসলিম শরীফ) অপর রিওয়ায়েতে বর্ণিত হয়েছে, শাওয়াল মাসে ছয়টি রোযা পালনকারীকে আল্লাহ পাক সম্বোধন করে বলেন, “হে আমার বান্দা! তোমরা আমার সন্তুষ্টির আশায় রমাদ্বান মাসের রোযা পালন করেছ এবং শাওয়াল মাসের ছয়টি রোযাও পালন করেছ। সুতরাং তোমাদেরকে ক্ষমা করে দেয়া আমার উপর আবশ্যক হয়ে পড়েছে।” উল্লেখ্য, এ ছয়টি রোযা রাখার উত্তম বা মুস্তাহাব নিয়ম হচ্ছে- ছয়টি রোযা একাধারা না রেখে বরং দু’একদিন বাদ দিয়ে রাখা। অতএব, প্রত্যেকের উচিত এ মাসের বর্ণিত ইবাদত-বন্দিগী যথাযথভাবে পালন করে আল্লাহ পাক ও তাঁর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি-এর সন্তুষ্টি-রেযামন্দী হাছিল করা। আল্লাহ পাক আমাদেরকে তাওফীক দান করুন।। (আমীন)
মাহে রমাদ্বান শরীফ ও তার প্রাসঙ্গিক আলোচনা
মাহে যিলক্বদ ও তার প্রাসঙ্গিক আলোচনা