মাহে শাওয়াল ও তার প্রাসঙ্গিক আলোচনা

সংখ্যা: ১৪৭তম সংখ্যা | বিভাগ:

-হযরত মাওলানা মুফতী সাইয়্যিদ শুয়াইব আহমদ

 আরবী বছরের দশম মাস শাওয়াল। শাওয়াল মাসের  বহু মরতবার মধ্যে একটি বিশেষ মরতবা হচ্ছে এই যে, এ মাসের পহেলা তারিখে সারা মুসলিম জাহানে আনন্দের অনুষ্ঠান ‘ঈদুল ফিতর’ উদযাপিত হয়।  মাহে রমাদ্বান শরীফের এক মাস রোযা রাখার পর মুসলমানগণ ঈদুল ফিতরের মাধ্যমে আনন্দ উদ্যাপন করেন।  ঈদুল ফিতরের রাত ও দিন উভয়টি অতিশয় ফযীলত ও মর্যাদার। হাদীছ শরীফে ইরশাদ হয়েছে, আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, ঈদুল ফিতরের রাতে একদল ফেরেশ্তা আসমান হতে যমিনে আগমন করে উচ্চস্বরে ঘোষণা করতে থাকেন, হে আল্লাহ পাক-এর প্রিয় বান্দাগণ! তোমরা আল্লাহ পাক-এর রিযামন্দির জন্য এক মাস রোযা রেখেছ, বিনিময়ে আল্লাহ পাক তোমাদেরকে ক্ষমা করে দিয়েছেন। তোমাদের জন্য আল্লাহ পাক জান্নাতে এমন সব বালাখানা তৈরি করে দিবেন, যা অন্য কারো পক্ষে লাভ করা সম্ভব হবেনা। শুধুমাত্র যারা তোমাদের মত নেক আমল করবে তারাই সে মর্যাদা লাভে সক্ষম হবে। হাদীছ শরীফে আরো ইরশাদ হয়েছে, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, ঈদুল ফিতরের দিন যখন মুছল্লিগণ ঈদের নামায আদায় করার জন্য ঈদগাহে জমায়েত হন তখন আল্লাহ পাক-এর তরফ থেকে ঘোষণা করা হয়, “হে আমার বান্দাগণ! তোমরা আমারই রিযামন্দি লাভের আশায় এক মাস রোযা রেখেছ এবং আজ আমার সন্তুষ্টি লাভের আশায় ময়দানে সমবেত হয়েছ। কাজেই, আমি আজ তোমাদেরকে ক্ষমা করে দিলাম। যাও, তোমরা আজ চিরমুক্ত ও নির্মল। শাওয়াল মাসের অপর একটি মরতবার বিষয় হচ্ছে, এ মাসে ছয়টি রোযা পালন করা। এ রোযা সুন্নত। এ রোযার ফযীলত সম্পর্কে হাদীছ শরীফে ইরশাদ হয়েছে, আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, “যে ব্যক্তি রমাদ্বান মাসের রোযা রাখার পর শাওয়াল মাসের ছয়টি রোযা রাখলো সে যেন পূর্ণ বছরই রোযা রাখলো।” (মুসলিম শরীফ) অপর রিওয়ায়েতে বর্ণিত হয়েছে, শাওয়াল মাসে ছয়টি রোযা পালনকারীকে আল্লাহ পাক সম্বোধন করে বলেন, “হে আমার বান্দা! তোমরা আমার সন্তুষ্টির আশায় রমাদ্বান মাসের রোযা পালন করেছ এবং শাওয়াল মাসের ছয়টি রোযাও পালন করেছ। সুতরাং তোমাদেরকে ক্ষমা করে দেয়া আমার উপর আবশ্যক হয়ে পড়েছে।”  উল্লেখ্য, এ ছয়টি রোযা রাখার উত্তম বা মুস্তাহাব নিয়ম হচ্ছে- ছয়টি রোযা একাধারা না রেখে বরং দু’একদিন বাদ দিয়ে রাখা। স্মরনীয় যে, রমাদ্বান শরীফের পরবর্তী এ মাসটিতে বান্দার গুণাহ করার আশঙ্কা খুব বেশি থাকে। কারণ, রমাদ্বান মাসে আবদ্ধ থাকার পর শয়তান এবং সদ্যমুক্ত কুরিপুগুলি দ্বিগুণভাবে উত্তেজিত হয়ে মানুষকে কুপথে পরিচালনার জন্য উঠে পড়ে লেগে যায়। সুতরাং এ মাসে গুণাহ হতে বেচেঁ থাকা খুবই কঠিন কাজ। এ জন্যেই আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এক হাদীছ শরীফে ইরশাদ করেন, যে ব্যক্তি শাওয়াল মাসে নিজেকে গুণাহ থেকে হিফাযত করে তার জন্য আল্লাহ পাক বেহশ্ত নির্দিষ্ট করে রাখেন। জানা আবশ্যক, বান্দার গুণাহ থেকে বাঁচার উপায় কি? এর জাওয়াবে হযরত মুজাদ্দিদে আ’যম মুদ্দা জিল্লুহুল আলী বলেন, আল্লাহ পাক-এর রহমত ব্যতীত কারো পক্ষে পাপ কাজ থেকে বেঁচে থাকা সম্ভব নয়। এখন মানুষ রহমত পাবে কোথায়? এর জাওয়াবে তিনি কালামুল্লাহ শরীফের আয়াত শরীফ পেশ করেন,

ان رحمت الله قريب من المحسنين.

“নিশ্চয়ই আল্লাহ পাক-এর রহমত ওলীগণের নিকটে।” তিনি বলেন, হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণ রহমাতুল্লিল আলামীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর ছোবহতে গিয়ে, তাঁর নিকট বাইয়াত হয়ে রহমত হাছিল করেছেন। কিন্তু পরবর্তী উম্মতকে সেই রহমত হাছিল করতে হলে অবশ্যই যিনি আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর খাছ নায়িব বা ওয়ারিছ তথা যিনি হক্কানী ওলী তাঁর ছোহবতে যেতে হবে, তাঁর নিকট বাইয়াত হতে হবে। আল্লাহ পাক সকলকে তাওফীক দান করুন।। (আমীন)

মাহে ছফর ও তার প্রাসঙ্গিক আলোচনা

 মাহে রবিউস্ সানী ও তার প্রাসঙ্গিক আলোচনা

মাহে জুমাদাল উলা ও তার প্রাসঙ্গিক আলোচনা

মাহে জুমাদাল উখরা ও তার প্রাসঙ্গিক আলোচনা

মাহে রজব ও তার প্রাসঙ্গিক আলোচনা