আরবী মাসের অষ্টম মাস শা’বান। এর অর্থ শাখা-প্রশাখা। অন্যান্য মাস অপেক্ষা এ মাসে নেক আমলের শাখা-প্রশাখা বৃদ্ধির কারণে মাসটিকে ‘শাব’বান’ নামে নামকরণ করা হয়েছে।
উম্মতে মুহম্মদী যাতে আল্লাহ পাক-এর দরবারে খালিছভাবে তওবা-ইস্তিগফা করে, দুয়া-আরজু পেশ করে আল্লাহ পাক-এর মকবুল এবং খালিছ বান্দা হিসেবে গণ্য হতে পারে সেজন্য আল্লাহ পাক তাদেরকে যে বিশেষ বিশেষ রাত্রিসমূহ দান করেছেন শা’বানের চৌদ্দ তারিখ দিবাগত রাতটি তার মধ্যে অন্যতম। যেই রাত্রিকে কুরআন শরীফের ভাষায় ‘লাইলাতুন মুবারাকাহ’ বা বরকতময় রজনী বলা হয়েছে এবং হাদীছ শরীফে ‘লাইলাতুন নিছূফি মিন্্ শা’বান’ অর্থাৎ শা’বানের মধ্য রাত বলে উল্লেখ করা হয়েছে। যে রাতকে ফারসী ভাষায় বলা হয় ‘শবে বরাত’ বা ভাগ্য রজনী। এবং নামেই আমাদের উপমহাদেশে রাতটি প্রসিদ্ধ লাভ করেছে।
এ মুবারক রাতে দুনিয়ার সকল জীবের আগামী এক বছরের রুযী-রোযগার, হায়াত-মউত প্রভৃতি বিষয় লিপিবদ্ধ করা হয়। এ প্রসঙ্গে কালামুল্লাহ শরীফে ইরশাদ হয়েছে-
قیها یفرق کل امر حکیم.
অর্থঃ- “এটি (শবে বরাত) এমন এক রাত যে রাতে সমস্ত প্রজ্ঞাসম্পন্ন বিষয়ের ফায়ছালা করা হয়। (সূরা দুখান-৪)
এ আয়াত শরীফে ব্যাখ্যায় হাদীছ শরীফে ইরশাদ হয়েছে-
عن ابن عباس رضی الله تعالی عنه قال قال النبی صلی الله علیه وسلم ان الله یقضی الاقضیة فی لیلة النصف من شعبان ویسلمها الی اربابها فی لیلة القدر.
অর্থঃ- “হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বর্ণনা করেন, হযরত রসূলে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, অর্ধ শা’বানের রাতে তথা শবে বরাতে আল্লাহ পাক যাবতীয় বিষয়ের সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করেন। আর ক্বদর রাতে সেই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন বা কার্যকরী করার জন্য বাস্তবায়নকারী ফেরেশতাগণের নিকট তালিকা অপর্ণ করেন।” (তাফসীরে খাযিন)
হাদীছ শরীফে আরো ইরশাদ হয়েছে-
عن عائشة رضی الله تعالی عنها قالت قال رسول الله صلی الله علیه وسلم فیها ان یکتب کل مولود من بنی ادم فی هذه السنة وفیها انیکتب کل هالک من بنی ادم فی هذه السنة وفیها ترفع اعمالهم وفیها تنزل ارزا قهم.
অর্থঃ- “হযরত আয়িশা ছিদ্দীক্বা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা বর্ণনা করেন, আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, বরাতের রাতে ফায়সালা করা হয় কতজন সন্তান এক বৎসরে জন্ম গ্রহণ করবে এবং কতজন সন্তান মৃত্যবরণ করবে। এ রাত্রিতে বান্দাদের আমল (আল্লাহ পাক-এর নিকট) পেশ করা হয় এবং এ রাত্রিতে বান্দাদের রিযিকের ফায়সালা করা হয়।” (বায়হাক্বী মিশকাত)
তাই সকলের উচিত এ মুবারক রাতে সারা রাত সজাগ থেকে ইবাদত-বন্দিগী করা এবং দিনের বেলা রোযা রাখা। কেননা স্বয়ং আল্লাহ পাক-এর হাবীব, নবীদের নবী, রসূলদের রসূল, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলঅইহি ওয়া সাল্লাম এ মুবারক রাতটি ইবাদত-বন্দিগী করে কাটিয়েছেন এবং দিনের বেলায় রোযা রেখেছেন এবং উম্মতকেও এ রাতে সজাগ থেকে ইবাদত-বন্দিগী করার জন্য এবং দিনের বেলায় রোযা রাখার জন্য আদেশ করেছেন। যেমন, হাদীছ শরীফে ইরশাদ হয়েছে,
عن علی رضی الله عنه قال قال رسول الله صلی الله علیه وسلم اذا کانت لیلة النصف من شعبان فقوموا یومها الخ.
অর্থঃ- “হযরত আলী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, যখন অর্ধ শা’বানের রাত উপস্থিত হবে তখন তোমরা উক্ত রাতে নামায আদায় করবে এবং দিনে রোযা রাখবে। কেননা নিশ্চয়ই আল্লাহ পাক উক্ত রাতে সূর্যাস্তের সময় পৃথিবীর আকাশে আসেন অর্থাৎ রহমত খাছ নাযিল করেন। অতঃপর ঘোষণা করেন, কোন ক্ষমা প্রার্থনাকারী আছ কি? আমি তাকে ক্ষমা করে দিব। কোন রিযিক প্রার্থনাকারী আছ কি? আমি তাকে রিযিক দান করব। কোন মুছিবতগ্রস্ত ব্যক্তি আছ কি? আমি তার মুছিবত দূর করে দিব। এভাবে ফজর বা ছূবহে ছাদিক পর্যন্ত ঘোষণা করতে থাকেন।” (ইবনে মাজাহ্, মিশকাত)
অতএব, এ মুবারক রাত ও দিনটি কবুলিয়াতের সাথে অতিবাহিত করার জন্য প্রত্যেক মুসলমান নর-নারীর উচিত যামানার মহান মুজাদ্দিদ, মুস্্তাজাবুদ্্ দা’ওয়াত, আওলাদে রসূল, ইমাম রাজারবাগ শরীফের হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা মুদ্দা জিল্লুহুল আলী-এর দরবার শরীফে উপস্থিত হওয়া।
আল্লাহ পাক সকলকে তাওফিক দান করুন।
মাহে যিলক্বদ ও তার প্রাসঙ্গিক আলোচনা
মাহে যিলহজ্জ ও তার প্রাসঙ্গিক আলোচনা
মাহে মুহররমুল হারাম ও তার প্রাসঙ্গিক আলোচনা