আরবী বছরের অষ্টম মাস শা’বান । এ মাসটি বছরের বারো মাসের মধ্যে একটি উল্লেখযোগ্য ফযীলতের মাস। বিশেষতঃ এ মাসের চৌদ্দ তারিখ দিবাগত অর্থাৎ পনের তারিখ রাতটিই শবে বরাত নামে পরিচিত। এই রাতে দুনিয়ার সকল জীবের আগামী বছরের রুজী-রোজগার, হায়াত-মউত প্রভৃতি যাবতীয় বিষয় লিপিবদ্ধ করা হয়। এ কারণেই এ রাতের বৈশিষ্ট্য এবং ফযীলত অফুরন্ত, যা বর্ণনা করে শেষ করা সম্ভব নয়। সারা বছরে এ রাতের তুল্য মরতবার রাত আর মাত্র একটিই আছে। তা মাহে রমযানের শেষ দশকের বিজোড় রাতসমূহের মধ্যে অবস্থিত, যা শবে ক্বদর নামে পরিচিত। শবে বরাতের ফযীলত সম্পর্কে অসংখ্য হাদীছ শরীফ বর্ণিত রয়েছে। এক হাদীছ শরীফে ইরশাদ হয়েছে, আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন,
طوبى لمن يعمل فى ليلة النصف من شعبان.
অর্থাৎ- “সুসংবাদ ঐ ব্যক্তির জন্য যে শা’বানের মধ্যম রাতে ইবাদতে মশগুল থাকে।” অপর এক হাদীছ শরীফে হযরত রসূলে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, “হে মু’মিনগণ! তোমরা শা’বান মাসের মধ্যম রাতে জাগ্রত থাক। কেননা, এ রাত অতিশয় বরকতময়। এ রাতে স্বয়ং আল্লাহ পাক রব্বুল আলামীন বলতে থাকেন, হে বান্দাগণ! তোমাদের মধ্যে ক্ষমা প্রার্থনাকারী কেউ আছে কি? আমি তাকে ক্ষমা করে দিব। কেউ রিযিক প্রার্থী আছে কি? তাকে রিযিক দান করবো। কেউ বিপদ মুক্তিকামী আছে কি? তার বিপদ দূর করে দিব।” হাদীছ শরীফে আরো বর্ণিত আছে, হযরত রসূলে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, “এ রাতে ইবাদতকারীগণের যাবতীয় গুনাহ্-খতা আল্লাহ পাক মাফ করে দেন। তবে যাদুকর, গণক, শিরককারী, বখীল, সুদখোর, শরাবখোর, ব্যভিচারী, ছবি অঙ্কনকারী, পিতা-মাতাকে কষ্ট দানকারী ইত্যাদি বিদয়াতী বেশরাকে ক্ষমা করেননা খালিছভাবে তওবা-ইস্তিগফার না করা পর্যন্ত।”
من صام يوم الخامس عشر من شعبان لم تمسسه النار ابدا.
অর্থঃ “যে ব্যক্তি শা’বান মাসের পনের তারিখে রোযা রাখবে, তাকে কখনো দোযখের আগুন স্পর্শ করবে না।” হাদীছ শরীফে আরো ইরশাদ হয়েছে, হযরত রসূলে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, “যে ব্যক্তি শা’বান মাসের পনের তারিখে দিনের বেলায় রোযা রাখে, কোনক্রমেই দোযখ তার নাগাল পাবে না।” অতএব, প্রত্যেকের উচিত এ মুবারক রাতে সারা রাত জেগে ইবাদত-বন্দিগী করা এবং দিনের বেলায় রোযা রাখা। সেজন্য নিয়ম হচ্ছে- পুরুষেরা ইশার নামায আদায় করবে মসজিদে গিয়ে জামায়াতের সাথে। আর মেয়েরা নামায আদায় করবে নিজ ঘরে। অতঃপর ছওয়াব রেছানী করতঃ ১০০ থেকে ৫০০ বার দুরূদ শরীফ পাঠ করবে। অতঃপর কমপক্ষে এক ঘন্টা যিকির করবে। তরীক্বতপন্থীগণ নিজ নিজ তরীক্বার সবক অনুযায়ী যিকির করবে আর যারা তরীক্বতপন্থী নয় তারা আল্লাহ্ পাক-এর নাম মুবারকের যিকির অর্থাৎ ‘আল্লাহ্-আল্লাহ্’ যিকির করবে এবং নফী ইছবাত অর্থাৎ ‘লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু’ যিকির করবে। অতঃপর লাইলাতুল বরাতের নিয়তে দুই দুই রাকায়াত করে কমপক্ষে বার রাকায়াত নামায আদায় করবে। অতঃপর চার রাকায়াত ‘ছলাতুত্ তাসবীহ্’-এর নামায আদায় করবে। অতঃপর মীলাদ শরীফ পাঠ করে দুয়া-মুনাজাত করবে। এতে যার যা নেক আরজু রয়েছে তা আল্লাহ পাক-এর নিকট চাইবে। সর্বোপরি আল্লাহ্ পাক ও তাঁর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সন্তুষ্টি-রিযামন্দী তলব করবে। মুনাজাত শেষ করার পর পুরুষগণ নিকটস্থ কোন কবরস্থান যিয়ারত করবে। আর মহিলাগণ ঘরে মুনাজাতের মধ্যে মৃত পূর্বপুরুষগণের মাগ্ফিরাতের জন্য দুয়া করবে। অতঃপর আট বা বার রাকায়াত তাহাজ্জুদ নামায আদায় করে বিত্র নামায আদায় করবে এবং বিত্র নামাযের পর বসে দু’রাকায়াত নফল নামায আদায় করবে যাকে হালকী নফল বলা হয়। অতঃপর কিছু সময় কুরআন শরীফ তিলাওয়াত করবে। আর তিলাওয়াত জানা না থাকলে তিলাওয়াত শ্রবণ করবে। অতঃপর ছুবহে ছাদিকের পূর্বেই আখিরী মুনাজাত করবে। অতঃপর দিনে রোযা রাখার জন্য সাহ্রী খাবে। সাহ্রী খাওয়ার পর ছুবহে ছাদিক হতে যে দশ/পনের মিনিট বাকি থাকে তাতে চুপে চুপে ইস্তিগফার ও দুরূদ শরীফ পাঠ করতে থাকবে। অতঃপর ছুবহে ছাদিক হলে ফজরের নামায আদায় করবে। আল্লাহ পাক সকলকে তাওফীক দান করুন। (আমীন)
মাহে ছফর ও তার প্রাসঙ্গিক আলোচনা
মাহে রবিউস্ সানী ও তার প্রাসঙ্গিক আলোচনা
মাহে জুমাদাল উলা ও তার প্রাসঙ্গিক আলোচনা