মাহে শা’বান ও তার প্রাসঙ্গিক আলোচনা 

সংখ্যা: ১৩৩তম সংখ্যা | বিভাগ:

-হযরত মাওলানা মুফতী সাইয়্যিদ শোয়াইব আহমদ

মাহে রজবুল হারাম এবং মাহে রমাদ্বানুল মুবারক-এর মধ্যবর্তী মাস হচ্ছে মাহে শা’বান। ‘শা’বান’ অর্থ শাখা-প্রশাখা। বর্ণিত রয়েছে, অন্যান্য মাসের তুলনায় এ মাসে নেক আমলের শাখা-প্রশাখা বৃদ্ধি পাওয়ার কারণে এ মাসটিকে শা’বান নামে নামকরণ করা হয়েছে।     তত্ত্ববিদগণের মতে, পাঁচ অক্ষর বিশিষ্ট شعبان (শা’বান) শব্দটির ش (শীন) অক্ষরটি شرف (শরফ্) অর্থাৎ মর্যাদার, ع (আইন) অক্ষরটি علو (উলুউবু) অর্থাৎ মহত্ত্বের, ب (বা) অক্ষরটি بر (বার্র) অর্থাৎ অনুগ্রহের, ا (আলিফ) অক্ষরটি الفت (উলফত) অর্থাৎ মুহব্বতের এবং ن (নূন) অক্ষরটি نور (নূর) অর্থাৎ নূর বা হিদায়েতের প্রমাণ বহন করে।   আল্লাহ পাক বান্দাকে ক্ষমা করে কবুল করে নেয়ার জন্য যে বিশেষ মাস ও দিন নির্ধারণ করেছেন তন্মধ্যে শা’বান মাস এবং এতে অবস্থিত শবে বরাতের দিনটি উল্লেখযোগ্য। বস্তুতঃ এ মাসটি আল্লাহ্ তায়ালার পক্ষ হতে বান্দার প্রতি তথা উম্মতে মুহম্মদীর প্রতি এক মহান ইহ্সান।

হাদীছ শরীফে ইরশাদ হয়েছে, আল্লাহ্ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, আল্লাহ্ পাক শা’বানের পনের তারিখ রাত্রিতে (শবে বরাতে) বণী-কল্ব, বণী-মুদ্বার, বণী-রবী এই তিন গোত্রের বকরী ও ভেড়ার পশমের সমতুল্য আমার গুণাহ্গার উম্মতকে ক্ষমা করে দিবেন। বর্ণিত আছে, তাদের প্রত্যেক গোত্রে বিশ হাজারেরও অধিক বকরী ও ভেড়া ছিল। অর্থাৎ আল্লাহ পাক সকল উম্মতে মুহম্মদীকেই ক্ষমা করে দিবেন; যারা উক্ত রাত্রিতে খালিছভাবে ইস্তিগফার করবে।

হাদীছ শরীফে আরো ইরশাদ হয়েছে, আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, “যখন শা’বান মাসের পনের তারিখ উপস্থিত হয় তখন ঐ রাত্রিতে তোমরা নামায পড় এবং দিনে রোযা রাখ। কেননা আল্লাহ পাক ঐ দিন সূর্যাস্তের পর থেকে পৃথিবীর আসমানে অবতরণ করে ঘোষণা করতে থাকেন, “তোমাদের মধ্যে কেউ ক্ষমাপ্রার্থী আছ কি? তাকে আমি ক্ষমা করে দিব। কেউ রিযিকপ্রার্থী আছ কি? তাকে রিযিক দান করব। কেউ বিপদগ্রস্থ আছ কি? তার বিপদ দূর করে দিব। আল্লাহ পাক ফজর পর্যন্ত এভাবে প্রত্যেক হাজতমান্দকে ডেকে বলতে থাকেন।” (ইবনে মাজাহ শরীফ)    হাদীছ শরীফে আরো ইরশাদ হয়েছে, “যে ব্যক্তি শবে বরাতের রোযা রেখে ইফতার করার সময় আখিরী রসূল, হাবীবুল্লাহ্, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর প্রতি তিনবার দুরূদ শরীফ পাঠ করবে আল্লাহ পাক তার পূর্বের সমস্ত গুণাহ্ ক্ষমা করে দিবেন এবং তার রিযিকে বরকত দান করবেন।” (সুবহানাল্লাহ)   “নুযহাতুল মাজালিস” কিতাবে বর্ণিত রয়েছে, একদা হযরত জিবরীল আলাইহিস্ সালাম ১৪ই শা’বান দিবাগত রাত্রিতে (শবে বরাতে) হযরত রসূলে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর নিকট আগমন করে বললেন, আয় সরওয়ারে কায়েনাত  ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! এই রাত্রিতে সজাগ থেকে ইবাদত-বন্দিগী করুন, কেননা এই রাত্রিতে বান্দার যাবতীয় (নেক) আরজু পূরণ করা হয়।

অতঃপর হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইবাদত-বন্দিগীতে মশগুল হয়ে গেলেন। হযরত জিবরীল আলাইহিস্ সালাম পুনরায় এসে বললেন, আয় রহমতে আলম ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আপনি আপনার উম্মতদেরকে সুসংবাদ প্রদান করুন যে, এই মুবারক রাত্রিতে আল্লাহ পাক রব্বুল আলামীন মুশরিক ব্যতীত আপনার সকল উম্মতকে ক্ষমা করে দিবেন। অতঃপর হযরত জিবরীল আলাইহিস্ সালাম হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে সম্বোধন করে বললেন, ‘আপনি আপনার মাথা মুবারক উত্তোলন করুন।’ তিনি মাথা মুবারক উঠিয়ে দেখতে পেলেন, জান্নাতের দরজাসমূহ খুলে দেয়া হয়েছে। আরেক বর্ণনায়, আসমানের দরজাসমূহ খুলে দেয়া হয়েছে এবং প্রথম দরজার ফেরেশ্তাগণ উচ্চস্বরে ঘোষণা করছেন, ঐ সকল লোকদের জন্য সুসংবাদ যারা এ রাত্রিতে রুকু করবে।

দ্বিতীয় দরজার ফেরেশ্তাগণ উচ্চস্বরে ঘোষণা করছেন, এ রাত্রিতে যারা সিজদাকারী তাদের জন্য সুসংবাদ। তৃতীয় দরজার ফেরেশ্তাগণ উচ্চস্বরে ঘোষণা করছেন, এ রাত্রিতে দোয়াকারীগণের জন্য সুসংবাদ। চতুর্থ দরজার ফেরেশ্তাগণ উচ্চস্বরে ঘোষণা করছেন, এ রাত্রিতে আল্লাহ পাক-এর ভয়ে ক্রন্দনকারীগণের জন্য সুসংবাদ। পঞ্চম দরজার ফেরেশ্তাগণ উচ্চস্বরে ঘোষণা করছেন, এ রাত্রিতে দান-ছদকা ও অন্যান্য নেক কাজ সম্পাদনকারীদের জন্য সুসংবাদ। ষষ্ঠ দরজার ফেরেশ্তাগণ উচ্চস্বরে ঘোষণা করছেন, কোন আবেদনকারী আছে কি? যার আবেদন পুরা করে দেয়া হবে। সপ্তম দরজার ফেরেশ্তাগণ উচ্চস্বরে ঘোষণা করছেন, কোন ক্ষমা প্রার্থনাকারী আছে কি? যাকে ক্ষমা করে দেয়া হবে। আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, আমি হযরত জিবরীল আলাইহিস্ সালামকে জিজ্ঞাসা করলাম, এ দরজাসমূহ কোন সময় পর্যন্ত খোলা থাকবে? তিনি জবাবে বললেন, ফজর পর্যন্ত। আরো বললেন, এ রাত্রিতে আল্লাহ পাক বণী কলব্ সম্প্রদায়ের বকরী-ভেড়ার পশমের সমপরিমাণ জাহান্নামী লোকদেরকে মুক্তি দিয়ে থাকেন। (সুবহানাল্লাহ)   কাজেই এ বরকতপূর্ণ ক্ষমার রাত্রিতে প্রত্যেক মুসলমান নর-নারীর উচিত হবে সারা রাত্রি জেগে ইবাদত-বন্দিগী করা, ক্ষমা প্রার্থনা করা, দিনের বেলায় রোযা রাখা এবং ইফতার করার সময় তিনবার দুরূদ শরীফ পাঠ করে ইফতার করা।  আয় আল্লাহ পাক! আমাদের সকলকে তাওফীক দান করুন। (আমীন)

সম্মানিত জুমাদাল ঊলা শরীফ ও সম্মানিত জুমাদাল উখরা শরীফ মাস এবং উনাদের প্রাসঙ্গিক আলোচনা

মাহে রবিউস্ সানী ও তার প্রাসঙ্গিক আলোচনা

মাহে জুমাদাল উলা ও জুমাদাল উখরা

মাহে রজব ও তার প্রাসঙ্গিক আলোচনা

 মাহে রমাদ্বান শরীফ ও তার প্রাসঙ্গিক আলোচনা