কুরআন শরীফে বলা হয়েছে, “মিথ্যাবাদীদের উপর আল্লাহ পাক-এর লা’নত।” হাদীছ শরীফে ইরশাদ হয়েছে, “মু’মিন কাপুরুষ হতে পারে কিন্তু কখনও মিথ্যাবাদী হতে পারে না।” আরো বলা হয়েছে, “মিথ্যা সব গুনাহ্র মা বা মূল।” অন্য হাদীছ শরীফে ইরশাদ হয়েছে, “ইহুদীদের মাঝে হয়েছিল ৭১ ফির্কা। খ্রিস্টানদের মাঝে ৭২ ফিরক্বা আর উম্মতে মুহম্মদীর মাঝে হবে ৭৩ ফিরক্বা। তার মধ্যে হক্ব হবে কেবল একটি। বাকি সবই বাতিল।” বলাবাহুল্য, বাতিল সব ফিরক্বাই মিথ্যার উপর। যা তাদের চেনার সহজ উপায় বটে। প্রসঙ্গত: বিভিন্ন স্থানে বোমা হামলাকারী সংগঠন, আহলে হাদীছ নামধারী লা-মাযহাবী বাতিল ফিরক্বাটি সম্পর্কে ইদানিংকালে মাত্র গোটা দেশবাসী জেনেছে। এ ব্যাপারে গত ২২শে ফেব্রুয়ারী স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক প্রেসনোটে বলা হয়, “সম্প্রতি দেশের বিভিন্ন স্থানে সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও ধর্মীয় অনুষ্ঠান এবং ব্র্যাক ও গ্রামীণ ব্যাংকের কয়েকটি শাখায় বোমা হামলা এবং বোমা বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। এসব ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে দেশের সর্বত্র পুলিশি তৎপরতা জোরদার করা হয়। এ প্রক্রিয়ায় বগুড়া, জয়পুরহাট, সিরাজগঞ্জ, গাইবান্ধা, মৌলভীবাজার, গোপালগঞ্জ, ঠাকুরগাঁও, ধামরাই ও সাভারে বেশ কয়েকজন জঙ্গিকে হাতেনাতে গ্রেফতার করা হয়েছে। তাদের কাছ থেকে উদ্ধার হয়েছে নাশকতার উদ্দেশ্যে আনা পেট্রোল বোমা, শাটারগান, পিস্তল, দেশে তৈরি রিভলবার, বিস্ফোরক দ্রব্য, হাতে তৈরি গ্রেনেড, বিভিন্ন ধরনের ধারালো অস্ত্র, ছুরি, চাকু, জঙ্গি কার্যক্রমের ে াগান ও গেরিলা হামলার নির্দেশনাবলী সংবলিত পুস্তক, বুকলেট, লিফলেট ও পত্রিকা। গ্রেফতারকৃতদের কয়েকজন তাদের স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে জানিয়েছে, তারা সবাই জাগ্রত মুসলিম জনতা বাংলাদেশ (জেএমজেবি) ও জামা’আতুল মুজাহেদীনের সক্রিয় সদস্য। ইসলামের নামে জিহাদ করার কথা বলে দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে তাদের দলে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। তাদের দিয়ে হত্যা, হামলা, চুরি, ডাকাতিসহ যেসব সন্ত্রাসী কার্যকলাপ চালানো হচ্ছে, সেগুলোকে ইসলামের জন্য জেহাদের অংশ হিসেবে তাদের শিক্ষা দেয়া হয়েছে। তারা বলেছে, লক্ষ্য অর্জনের জন্য এ ধরনের অপরাধমূলক কাজে তাদের লিপ্ত করা হয়েছে। তারা দাবি করেছে, সিদ্দিকুল ইসলাম ওরফে বাংলা সন্ত্রাসী এবং রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ডক্টর গালিব তাদের দলনেতা। প্রেসনোটে বলা হয়, সরকার উদ্বেগের সাথে লক্ষ্য করছে, এ সংগঠন দু’টির সদস্যরা দেশের বিভিন্ন স্থানে খুন, ডাকাতি,বোমা হামলা ও হুমকিসহ নানা সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড চালিয়ে শান্তিপ্রিয় জনগণের জীবন ও সম্পদহানি করে আসছে। এরা ধর্মীয় অনুভূতিকে কাজে লাগিয়ে একদল তরুণকে বিপথগামী করে সমাজে অশান্তি সৃষ্টি করতে চাইছে। (দৈনিক নয়াদিগন্ত, ২৪ ফ্রেব্রুয়ারি-২০০৫ ঈসায়ী) ড: গালিব জামা’আতুল মুজাহিদীন তথা লা-মাযহাবী নেতা। লামাযহাবীরা এদেশের মুসলমানদের মূলধারা থেকে বিচ্ছিন্ন অতি ক্ষুদ্র একটি বাতিল ফিরক্বা। এদেশের সিংহভাগ মুসলমান হানাফী মাযহাবের অনুসারী। কিন্তু লা-মাযহাবীরা হানাফী মাযহাব তো বটেই এমনকি পুরো চার মাযহাব বিদ্বেষী। সাহিত্যিক লা-মাযহাবী আবুল মনসুর আহমেদের ‘আত্মকথা’ অবলম্বনে জানা যায় যে, ‘হানাফীরা হিন্দোঁ ছে বদতর হ্যায়’ অর্থাৎ ‘হানাফীরা হিন্দুদের চেয়েও খারাপ’- এই আক্বীদায় বিশ্বাসী। প্রকৃতপক্ষে লা-মাযহাবী বা নামধারী আহলে হাদীছরা হানাফীদের তথা মাযহাবপন্থীদের মুসলমানই মনে করেনা। আবুল মনসুর আহমদের ‘আত্মকথায়’ একই পৃষ্ঠায় বলা হয়েছে, “লা-মাযহাবীরা মনে করে, হানাফীরা অর্থাৎ মাযহাবপন্থীরা হিন্দুদের আগেই দোজখে যাবে।” (আত্মকথা-১৬০ পৃষ্ঠা) ড “ওলীআল্লাহদের বিশ্বাস না করা, ড তারাবীহ্র নামায আট রাকায়াত পড়া, ড নামাযে জোড়ে আমীন বলা, ড নামাযে দু’পা ছড়িয়ে দাঁড়ানো, ড নামাযে বুকে হাত বাঁধা, ড নামাযে প্রথম রাকায়াত হতে দ্বিতীয় রাকয়াতে উঠবার সময় বসে নেয়া, ড ঈদের জামায়াতে সাত ও পাঁচ তাকবীর পড়া”- এসব আমলে অভ্যস্ত ক’জন বাংলাদেশী মুসলমান খুঁজে পাওয়া যাবে? বরং আহলে হাদীছ নামধারী বা লা-মাযহাবী এরকম মুসলমান যে রয়েছে তা এদেশের সিংহভাগ সাধারণ মুসলমানই জানে না। কিন্তু তারপরেও গত ১৭ই জুন ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউটে বাতিলপন্থী লা-মাযহাবী বা আহলে হাদীছ নামধারীরা তাদের নেতা বোমাবাজ গালিবের মুক্তির দাবীতে আশ্চর্য রকমের ডাহা মিথ্যা উচ্চারণ করে বলেছে, “সারাদেশের তিন কোটি আহলে হাদীছ আন্দোলনের কর্মী ঘরে বসে থাকবে না।” (দৈনিক যুগান্তর ১৮ই জুন, ২০০৫ ঈসায়ী) অর্থাৎ তাদের এ বক্তব্য দ্বারা প্রতিভাত হয় যে, এদেশের প্রায় ১৩ কোটি মুসলমানের মধ্যে তিন কোটিই আহলে হাদীছ। অপরদিকে রাজশাহীতে গত ৩রা জুন-২০০৫ ঈসায়ী বোমাবাজ গালিবের মুক্তির দাবী সভায় তারা বলেছে, আহলে হাদীছ আন্দোলনের সারাদেশে ১ কোটি ভোটার রয়েছে। সামনের নির্বাচনেই চার দলীয় জোটকে সমুচিত জবাব দেয়া হবে। অর্থাৎ সারাদেশে ৬ কোটি ভোটারের মধ্যে ১ কোটিই তাদের। এখানে উল্লেখ্য যে, ৩ই জুন ২০০৫ ঈসায়ী দেয়া এই ১ কোটি ভোটারই ১৭ই জুন ২০০৫ ঈসায়ী তারিখে বেড়ে গিয়ে ৩ কোটি কর্মীতে পরিণত হয়েছে। আর এর দ্বারা প্রতিভাত হয় যে, দেশের প্রতি ৬ জন ভোটারের মধ্যে ১ জন তাদের ভোটার এবং দেশের জনসংখ্যার প্রতি ১৪ জনে ৩ জন লামাযহাবী কর্মী। উল্লেখ্য, তাদের দেয়া হিসাব মতে অর্থাৎ ৩ কোটি কর্মী হিসেবে আহলে হাদীছ তথা লা-মাযহাবী দাবীদার ভোটারদের সংখ্যায় দাঁড়ায় প্রায় দেড় কোটির মত। অথচ তারাই দাবী করেছে যে, তাদের ভোটার সংখ্যা এক কোটির মত। অতএব, তাদের বক্তব্য দ্বারাই তারা মহা মিথ্যাবাদী প্রমাণিত হয়। প্রকৃতপক্ষে সারাদেশে ৩ লাখ লা-মাযহাবী রয়েছে কিনা তাই সন্দেহের বিষয়। অপরদিকে এর নিজেরাই বলেছে, “গত নির্বাচনে আওয়ামী লীগ গড় হিসাবে খুব কম ভোট পায়নি। লা-মাযহাবী নেতা-কর্মীরা ধর্মপ্রাণ মুসলমান হওয়ার কারণে আপনাদের (চারদলীয় ঐক্যজোটকে) ভোট দিয়েছিলো। এখনও সময় আছে, চিন্তা করেন, আগামী নির্বাচনে ক্ষমতায় আসবেন, না ক্ষমতায় থেকে বিতাড়িত হবেন। ক্ষমতায় থাকতে চাইলে লা-মাযহাবীদের প্রধান ড. গালিবসহ তার সহযোগীদের অবিলম্বে মুক্তি দেন, অন্যথায় লা-মাযহাবীরা আগামী নির্বাচনে আপনাদের সমুচিত জবাব দিবে।” (যুগান্তর, ৪ঠা জুন-২০০৫ ঈসায়ী) তাদের এই বক্তব্যে প্রতিভাত হয় যে, বর্তমান নারী নেতৃত্বের সরকারকে তারাই ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত করিয়েছে। এবং তাদের স্বার্থ রক্ষা করলে আগামীতেও তারা বর্তমান নারী নেতৃত্বকে ক্ষমতায় রাখতে বদ্ধপরিকর। অথচ এরা নিজেদের আহলে হাদীছ বলে দাবী করে থাকে। কিন্তু হাদীছ শরীফেই যে নারী নেতৃত্বের বিরুদ্ধে ইরশাদ হয়েছে, “একবার আখিরী রসূল, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হযরত আয়িশা ছিদ্দীকা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা-এর কোলে মাথা মুবারক রেখে শুয়েছিলেন। এক ছাহাবী এসে মুজাহিদ বাহিনীর বিজয়ের সু-সংবাদ দিলেন এবং জানালেন, কাফির বাহিনীর প্রধান ছিল মহিলা। হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাথে সাথে বলে উঠলেন, পুরুষরা মহিলাদের অনুসরণ করলে পুরুষ নামের কাপুরুষদের পরাজয় অনিবার্য হয়ে যায়।” (মুস্তাদারেকে হাক্বিম) অন্য হাদীছ শরীফে ইরশাদ হয়েছে, “যখন তোমাদের শাসন ক্ষমতা গিয়ে পড়বে নারীর উপর তখন তোমাদের জন্য মাটির তলদেশই উপরিভাগ অপেক্ষা উত্তম হবে। অর্থাৎ জীবিত থাকার চেয়ে মৃত্যুই শ্রেয়।” (তিরমিযী শরীফ, হাদীছ শরীফ নং- ২২৬৬) উম্মুল মু’মিনীন হযরত আয়িশা ছিদ্দীকা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা হতে বর্ণিত, মহিলার অনুসরণ পরিশেষে আফসুস ও লজ্জার কারণ হয়।” (তুহফাতুল আহওয়াযী) এছাড়া আল্লামা কুরতুবী বলেন, “হযরত ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে বর্ণিত, হযরত রসূলে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর নিকট পারস্যবাসী কেসরার মেয়েদের তাদের রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় বসিয়েছে বললে, তিনি বলেন, যে জাতি নারীর হাতে তাদের দায়িত্বভার অর্পণ করে তারা কখনো সফলকাম হতে পারে না।” অতএব, এত সব ছহীহ হাদীছ শরীফ থাকার পরও যারা নারী নেতৃত্বের পক্ষে নির্লজ্জ ওকালতি করে তারা কোন ধরনের আহলে হাদীছ তা বলার অপেক্ষা রাখেনা। মূলতঃ এরা লামাযহাবী বিদ্য়াতী ও গোমরাহ সম্প্রদায় তা সহজেই অনুমেয়। (২)
উল্লেখ্য, ইসলামের প্রথমকাল হতেই আহলে সুন্নত ওয়াল জামায়াত তথা মাযহাবপন্থীদের নিকট লামাযহাবী নামধারীরা গোমরাহ ও বিদ্য়াতী বলে গণ্য। বিশেষ করে লা-মাযহাবীরা যখন ‘হানাফীরা হিন্দোঁ ছে বদতর হ্যায়’- এ আক্বীদায় বিশ্বাসী তখন তাদেরকে মুসলমান বলেই বিবেচনা করা দায়। এ কারণে সুদূর অতীত হতেই মাযহাবপন্থীরা লা-মাযহাবীদের প্রতি ঘৃণা প্রকাশ করে আসছেন। আহলে সুন্নত ওয়াল জামায়াতের মতে আক্বীদার কারণে, লা-মাযহাবীদের সাথে উঠাবাসা করা আত্মীয়তা করা নাজায়িয। আর সে নাজায়িয কাজটিই ঢাকঢোল পিটিয়ে করেছেন তথাকথিত ইসলামী পত্রিকা সম্পাদক মাহিউদ্দীন ও তথাকথিত ইসলামী ঐক্য আন্দোলন প্রধান মাওলানা হাবীবুর রহমান এমনকি তথাকথিত ইসলামী ঐক্যজোট মহাসচিব মাওলানা আব্দুল লতিফ নেজামীও। তারা গত ১৭ জুন ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউট মিলানায়তনে লা-মাযহাবীদে সূরে সূর মিলিয়েছে। তাদের সমর্থন করে জোরালো বক্তব্য দিয়েছে। বলা চলে, “যে যে সম্প্রদায়ের সাথে মিল রাখে তার হাশর-নশর তাদের সাথেই হবে।”- এ হাদীছ শরীফ মোতাবিক তথাকথিত ইসলামী ঐক্যজোট ও ইসলামী ঐক্য আন্দোলনের নেতা কর্মীরাও এমন আহলে সুন্নত ওয়াল জামায়াত বিরোধী লা-মাযহাবী হয়ে গেছে।
উল্লেখ্য, এদের আকাবীর বা এদের নিজেদেরও কিছুদিন আগের লিখনী ও ওয়াজ পর্যালোচনা করলেও দেখা যাবে যে, এরাও লা-মাযহাবীদের প্রচণ্ড রকমের বিরোধিতা করেছে। কিন্তু নারী নেতৃত্বসহ অন্যান্য হারাম টোপ গেলার পাশাপাশিশেষ পর্যন্ত লা-মাযহাবীদের প্রলোভন থেকেও এদের লোভী আত্মা সংযত থাকতে পারলো না। মূলত: এদের প্রবৃত্তি, এদের নফস এখন দুনিয়ার মোহে এতই মোহগ্রস্ত হয়েছে যে, সাময়িক স্বার্থের খাতিরে জায়িয-নাজায়িয, হারাম-হালাল, নারী-পুরুষ, সিলসিলা, মাযহাব, আকাবির, শত্রু-মিত্র কোনকিছুই এখন এদের আটকায় না। স্বার্থের জন্য এরা নারী নেতৃত্ব জায়িয করেছে। স্বার্থের জন্য লা-মাযহাবীদের দলেও নাম লেখাচ্ছে। ধর্মের চেয়ে স্বার্থই এদের মুখ্য। এরাই হাদীছ শরীফে বর্ণিত নিকৃষ্ট শ্রেণী তথা উলামায়ে ‘ছূ’।
-মুহম্মদ তারীফুর রহমান, ঢাকা।
বৃটিশ গুপ্তচরের স্বীকারোক্তি এবং ওহাবী মতবাদের নেপথ্যে বৃটিশ ভূমিকা-১১