মহান আল্লাহ পাক তিনি উনার মহাসম্মানিত মহাপবিত্র হাবীব মাহবূব, সাইয়্যিদুল আম্বিয়া ওয়াল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সুমহান মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র শান মুবারক সম্পর্কে ইরশাদ মুবারক করেন-
وَرَفَـعْنَا لَكَ ذِكْرَكَ
অর্থ: হে আমার মহাসম্মানিত হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আপনার মহাসম্মানিত মহাপবিত্র আলোচনা মুবারক বুলন্দ থেকে বুলন্দতর করেছি। (সম্মানিত ও পবিত্র সূরা ইনশিরাহ শরীফ: সম্মানিত ও পবিত্র আয়াত শরীফ ৪)
মহান আল্লাহ পাক তিনি উনার মহাসম্মানিত মহাপবিত্র হাবীব মাহবূব, সাইয়্যিদুল আম্বিয়া ওয়াল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সুমহান মহাসম্মানিত শান মুবারক কতটুকু বুলন্দ করেছেন তার কোন সীমারেখা নেই। এক কথায় তিনি শুধুমাত্র মহান আল্লাহ পাক তিনি নন। এছাড়া সমস্ত শান-মান ফাযায়িল-ফযীলত, বুুযুর্গী ও সম্মান মুবারক উনাদের মালিক হচ্ছেন মহাসম্মানিত মহাপবিত্র হাবীব মাহবূব, সাইয়্যিদুল আম্বিয়া ওয়াল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি। সুবহানাল্লাহ! মহাপবিত্র কালিমা শরীফ-
لَا اِلٰهَ اِلَّا اللهُ مُحَمَّدٌ رَّسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ
উনার মধ্যে বিষয়টি সুস্পষ্ট ভাবেই পরিষ্ফুটিত হয়েছে- অর্থাৎ মহান আল্লাহ পাক রব্বুল আলামীন উনার সাথে মহাসম্মানিত মহাপবিত্র হাবীব মাহবূব, সাইয়্যিদুল আম্বিয়া ওয়াল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মহাপবিত্র নাম মুবারক উনাকে যুক্ত করে কুল কায়িনাতের মহাপবিত্র কালিমা শরীফ নির্ধারণ মুবারক করে দিয়েছেন। এমনকি মহাসম্মানিত জান্নাত উনার কোটি কোটি স্থানে উক্ত মহাপবিত্র কালিমা শরীফ উনাকে সংযুক্ত করে দিয়েছেন। মহাপবিত্র কালিমা শরীফ উনার মধ্যে যেমন মহাসম্মানিত মহাপবিত্র হাবীব মাহবূব, সাইয়্যিদুল আম্বিয়া ওয়াল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি মহান আল্লাহ পাক উনার সাথে পরিপূর্ণরূপে একাকার। অনুরূপভাবে সৃষ্টির সূচনা থেকেই মহাসম্মানিত মহাপবিত্র হাবীব মাহবূব, সাইয়্যিদুল আম্বিয়া ওয়াল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি মহান আল্লাহ পাক উনার সাথে সম্পূর্ণ ভাবে একাকার তথা আখাছ্ছুল খাছ দীদার মুবারকে মশগুল ছিলেন, আছেন ও থাকবেন। এ সম্পর্কে মহাসম্মানিত মহাপবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত হয়েছে-
قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لِـيْ مَعَ الله وَقْتٌ لَا يَسْعٰنِـيْ فِيْهِ مَلَكٌ مُّقَرَّبٌ وَلَا نَبِـيٌّ مُّرْسَلٌ
অর্থ: মহাসম্মানিত মহাপবিত্র হাবীব মাহবূব, সাইয়্যিদুল আম্বিয়া ওয়াল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন খ¦লিক্ব, মালিক, রব, মহান আল্লাহ পাক উনার সাথে আমার এমন দায়েমী নিসবত, তাআল্লুক বা সম্পক রয়েছেন, যার মধ্যে কোন নৈকট্যশীল ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম উনাদের ও কোন নবী রসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদের প্রবেশের অর্থাৎ অবস্থানের কোন সুযোগ নেই।
(আল জামেউস সগীর মিন হাদীসিল বাসীর ওয়ান নাযীর, তাফসীরে রুহুল মায়ানী, তাফসীরে রুহুল বায়ান, তাফসীরে মাযহারী, তাফসীর হাক্কী, তাফসীরে গরায়েবুল কুরআন ওয়া রগায়েবুল ফুরকান, লাতায়েফুল ইশারাত, বাহরুল ফাওয়ায়েদ আল মাশহূর বি মায়ানিল আখবার, কাশফুল খিফা, আশ শাকায়েকুন নু’মানিয়্যাহ, আল মাকাসেদুল হাসানা, আল মু’জামুস সূফী, আল মিলাল ওয়ান নাহল।)
উপরোক্ত মহাসম্মানিত মহাপবিত্র হাদীছ শরীফ থেকেও এ বিষয়টি সুস্পষ্ট ভাবেই প্রমাণিত যে- মহাসম্মানিত মহাপবিত্র হাবীব মাহবূব, সাইয়্যিদুল আম্বিয়া ওয়াল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি সৃষ্টির শুরু থেকেই খালিক, মালিক, রব, মহান আল্লাহ পাক উনার আখাছ্ছুল খাছ ও দায়েমী দীদার মুবারকে ছিলেন, আছেন ও থাকবেন। তবে মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মি’রাজ শরীফ সংঘটিত হওয়া এবং মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মি’রাজ শরীফে সরাসরী দীদার বা সাক্ষাত মুবারক লাভ করাও উল্লেখিত নিসবত মুবারকেরই বহিঃপ্রকাশ অর্থাৎ একটি শান মুবারক মাত্র।
অন্য মহাসম্মানিত মহাপবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে আরো বর্ণিত হয়েছে-
اَخْبَرَ النَّبِـىُّ صلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَنَّ حَضْرَتْ دَاوٗدَ عَلَيْهِ السَّلَامُ قَالَ يَا رَبِّ لِـمَاذَا خَلَقْتَ الْـخَلْقَ قَالَ كُنْتُ كَنْـزًا مَـخْفِيًّا فَأَحْبَـبْتُ أَنْ أُعْرَفَ فَخَلَقْتُ الْـخَلْقَ لِأُعْرَفَ
অর্থ: মহাসম্মানিত মহাপবিত্র হাবীব মাহবূব, সাইয়্যিদুল আম্বিয়া ওয়াল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, নিশ্চয়ই হযরত দাউদ খলীফাতুল্লাহ আলাইহিস সালাম তিনি প্রশ্ন মুবারক করলেন ইয়া রব্বাল আলামীন! আপনি কী কারণে মাখলূক্বাত সৃষ্টি মুবারক করলেন? তখন মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-আমি পুশিদা (গোপন অস্তিত্ব) ছিলাম। যখন আমার মুহব্বত মুবারক হলো যে, আমি প্রকাশিত হই, তখনই আমি সৃষ্টি মুবারক করলাম (আমার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে)। (তাফসীরে হাক্কী, তাফসীরে রুহুল মায়ানী, রুহুল বায়ান, তাফসীরে আবিস সাউদ, জামিউ লাতায়েফুত তাফসীর, আল মাকাসিদুল হাসানা ৮৩৮, কাশফুল খিফা/২০১৬, আসনাল মুত্বালিব/ ১১১০, তমীযুত তীব/১০৪৫, আসরারুল মারফুআ/৩৩৫, তানযিয়াতুশ শরীয়াহ ১/১৪৮, আদ্দুরারুল মুন্তাছিরা/৩৩০, আত্ তায্কিরা ফি আহাদীসিল মুশতাহিরা/১৩৬)
অর্থাৎ খালিক, মালিক, রব, মহান আল্লাহ পাক তিনি ব্যতিত কায়িনাতে যখন কোন কিছুই ছিলনা তখনই মহান আল্লাহ পাক তিনি মহাসম্মানিত মহাপবিত্র হাবীব মাহবূব, সাইয়্যিদুল আম্বিয়া ওয়াল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে সৃষ্টি মুবারক করেন। তিনিই হলেন সর্ব প্রথম সৃষ্টি মুবারক।
মহাসম্মানিত মহাপবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত হয়েছে-
عَنْ حَضْرَتْ اَبِىْ هُرَيْـرَةَ رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ كُنْتُ اَوَّلَ النَّبِيِّيْنَ فِى الْـخَلْقِ وَاٰخِرَهُمْ فِى الْبَعْثِ
অর্থ: হযরত আবূ হুরাইরা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, মহাসম্মানিত মহাপবিত্র হাবীব মাহবূব, সাইয়্যিদুল আম্বিয়া ওয়াল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, সৃষ্টির মধ্যে আমিই সর্ব প্রথম নবী হিসেবে সৃষ্টি হয়েছি। কিন্তু আমি প্রেরিত হয়েছি সব নবী আলাইহিমুস সালাম উনাদের শেষে। (তাফসীরে বাগবী ৫/২০২, দূররে মানছূর ৫/১৮৪, শেফা ১/৪৬৬, মানাহিলুচ্ছফা ৫/৩৬, কানযুল উম্মাল/৩১৯১৬, দায়লামী শরীফ /৪৮৫০)
অনেকে কলমকে, আবার অনেকে আক্বল ও আরশ ইত্যাদিকে সর্বপ্রথম সৃষ্টি হিসাবে বলে থাকে এটি সম্পূর্ণ ভুল বক্তব্য।
মহাসম্মানিত মহাপবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত হয়েছে-
عَنْ حَضْرَتْ عَبْدِ اللهِ بْنِ عُمَرَ رَضِىَ اللهُ تَـعَالٰى عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ اَوَّلُ شَىْءٍ خَلَقَ اللهُ الْقَلَمَ مِنْ نُّـوْرٍ وَّاحِدٍ
অর্থ: হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে উমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমা উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, মহাসম্মানিত মহাপবিত্র হাবীব মাহবূব, সাইয়্যিদুল আম্বিয়া ওয়াল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, মহান আল্লাহ পাক তিনি প্রথমে কলম সৃষ্টি করেছেন একখানা নূর মুবারক থেকে। (ইবনে আবি হাতিম ১/৪৯, আহমদ শরীফ ৫/৩১৭১, তিরমীযী শরীফ ২/২৩, দায়লামী শরীফ ২, আত্ তিয়ালিসি/৫৭৭)
অর্থাৎ আরশ, কুরসী, লওহ, কলম সহ সমস্ত কিছুর পূর্বেই হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে সৃষ্টি মুবারক করা হয়েছে।
অন্য মহাসম্মানিত মহাপবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে মহাসম্মানিত মহাপবিত্র হাবীব মাহবূব, সাইয়্যিদুল আম্বিয়া ওয়াল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-
اَوَّلُ مَا خَلَقَ اللهُ نُـوْرِىْ وَخَلَقَ كُلَّ شَيْءٍ مِّنْ نُّـوْرِىْ
অর্থ: ‘মহান আল্লাহ পাক তিনি সর্বপ্রথম আমার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র নূর মুবারক সৃষ্টি করেছেন এবং উনার থেকেই সমস্ত কায়িনাত সৃষ্টি করেছেন। (তাফসীরে হাক্বী, তাফসীরে রুহুল বায়ান, তাফসীরে নিশাপুরী, তাফসীরে গরায়িবুল কুরআন ওয়া রগায়েবুল ফুরক্বান, হাশিয়াতুশ শিহাব আলাল বায়দ্বাবী, মুসনাদে আব্দুর রাজ্জাক, মাকতুবাত শরীফ, আল মু’জামুস সূফী, আছ ছীরাতুল হালাবিয়্যাহ, নূরে মুহম্মদী, আল ইনসানুল কামীল, হাক্বীক্বতে মুহম্মদী)
আজ থেকে প্রায় ১১০০ বছর আগে লিখিত একখানা কিতাব সেখানে সনদসহ একটি মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাদীছ শরীফ বর্ণিত আছে (মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাদীছ শরীফ উনার সনদ দেখতে পবিত্র আল বাইয়্যিনাত শরীফ ২৭১তম সংখ্যা দেখুন)
عَنْ حَضْرَتْ عَلِىِّ بْنِ أَبِـىْ طَالِبٍ عَلَيْهِ السَّلَامُ أَنَّهٗ قَالَ اِنَّ اللهَ تَـبَارَكَ وَتَـعَالٰي خَلَقَ نُـوْرَ مُـحَمَّدٍ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَـبْلَ أَنْ يَّـخْلُقَ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضَ وَالْعَرْشَ وَالْكُرْسِيَّ وَاللَّوْحَ وَالْقَلَمَ وَالْـجَنَّةَ وَالنَّارَ
অর্থ: খলীফাতুল মুসলিমীন, আমীরুল মু’মিনীন হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহু আলাইহিস সালাম তিনি বর্ণনা করেন, নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ পাক তিনি মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাবীব, মাহবূব, সাইয়্যিদুল আম্বিয়া ওয়াল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র নূর মুবারক উনাকে সৃষ্টি করেছেন আসমান, যমীন, আরশ, কুরসী, লওহ, কলম, জান্নাত, জাহান্নাম ইত্যাদি সবকিছু সৃষ্টির পূর্বে।” (মা‘য়ানিল আখবার ৩০৬-৩০৭ পৃষ্ঠা, প্রকাশনা: দারুল মা’রিফা, বাইরুত, লেবানন; শরফুল মুস্তফা ১ম খন্ড ৩০৫-৩১১ পৃষ্ঠা, হাদীছ শরীফ নং ৭৯, সুলওয়াতুল আরেফীন ১ম খন্ড ৬৪ পৃষ্ঠা)
অন্যত্র আরো বর্ণিত হয়েছে- হযরত জাবির ইবনে আব্দুল্লাহ আনছারী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। হযরত জাবির রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বলেন, আমি আরয করলাম, ইয়া রসূলাল্লাহ! ইয়া হাবীবাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাাম! আমার পিতা-মাতা আপনার জন্য কুরবান হোক, আমাকে জানিয়ে দিন যে, মহান আল্লাহ পাক তিনি সর্বপ্রথম কোন জিনিস সৃষ্টি করেন? নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, হে হযরত জাবির রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু! মহান আল্লাহ পাক তিনি সবকিছুর পূর্বে আপনার যিনি মহাসম্মানিত মহাপবিত্র হাবীব মাহবূব, সাইয়্যিদুল আম্বিয়া ওয়াল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মহাসম্মানিত নূর মুবারক উনাকে সৃষ্টি করেন।
فَجَعَلَ ذٰلِكَ النُّـوْرُ يَدُوْرُ بِالْقُدْرَةِ حَيْثُ شَاءَ اللهُ تَـعَالٰى
অতঃপর সেই মহাসম্মানিত নূর মুবারক মহান আল্লাহ পাক উনার মুবারক ইচ্ছানুযায়ী উনার কুদরত মুবারকের মধ্যে (উনার বরকতময় নিয়ন্ত্রণের মধ্যে) অবস্থান মুবারক করছিলেন। (আল মাওয়াহেবুল্লাদুন্নিয়া ১ম খন্ড ৯ পৃষ্ঠা, শরহে মাওয়াহেব ৮৯ পৃষ্ঠা, আশরাফুল ওসাইল ৩৬ পৃষ্ঠা, আল মিনায়ুল মাক্কীয়া ফি শারহীল হামজিয়া ৯৩ পৃষ্ঠা, আল ফতওয়ায়ে হাদিছিয়্যাহ ৮৫ পৃষ্ঠা, আন নুরুস সাফির আন আখবারি কারনীল আশির ২২ পৃষ্ঠা, বাহাজাতুল মাহাফিল ওয়া বুগিয়াতুল আমাছিল ১ম খন্ড ২২ পৃষ্ঠা, আল মাওয়ারিদুর রাবী ২২ পৃষ্ঠায়, তাফসীরে রুহুল মায়ানী ১৭ খন্ড ১০৫ পৃষ্ঠায়, ‘সিরাজুমমুনীরা’ ৪৩ পৃষ্ঠায়, সিরাতে হলবীয়া ১/৩০, মাতালেউল মাসাররাত ২৬৫ পৃষ্ঠা, হাদ্বীকায়ে নদীয়া ২/৩৭৫, তারীখুল খমীস ১/২০, দুররুল মুনাজ্জাম ৩২ পৃষ্ঠা, কাশফুল খফা ১/৩১১, নুজহাতুল মাজালীস ১ খন্ড, নূরে মুহম্মদী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ৪৭ পৃষ্ঠা, মজমুয়ায়ে ফতোয়া লখনবী ২/২৬০)
অর্থাৎ সৃষ্টির সূচনাই হয়েছেন মহাসম্মানিত মহাপবিত্র হাবীব মাহবূব, সাইয়্যিদুল আম্বিয়া ওয়াল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মাধ্যমে। আর সূচনা থেকেই তিনি মহান আল্লাহ পাক উনার দায়ীমি দীদার মুবারক বা নিসবত মুবারকে ছিলেন, আছেন ও থাকবেন।
অন্য মহাসম্মানিত মহাপবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত হয়েছে-
عَنْ حَضْرَتْ مَيْسَرَةَ الْفَجْرِ رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ كُنْتُ نَبِيًّا وَّحَضْرَتْ اٰدَمُ عَلَيْهِ السَّلَامُ بَيْنَ الرُّوحِ وَالْـجَسَدِ
অর্থ: হযরত মাইসারাতুল ফজর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, মহাসম্মানিত মহাপবিত্র হাবীব মাহবূব, সাইয়্যিদুল আম্বিয়া ওয়াল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, আমি তখনও নবীই ছিলাম, যখন হযরত আবুল বাশার আলাইহিস্ সালাম তিনি রূহ ও জিসিম মুবারকে ছিলেন। (তারীখে বুখারী শরীফ, আহমদ শরীফ, কানযুল উম্মাল/৩১৯১৭, দায়লামী শরীফ /৪৮৫৫, ত্ববরানী শরীফ, আবূ নঈম, মিশকাত শরীফ, আলহাবী, ইত্তেহাফুচ্ছাদাত, তাযকেরাতুল মাউজুয়াত)
অর্থাৎ হযরত আবুল বাশার আলাইহিস্ সালাম উনাকে সৃষ্টি মুবারকের বহু পূর্ব থেকেই মহাসম্মানিত মহাপবিত্র হাবীব মাহবূব, সাইয়্যিদুল আম্বিয়া ওয়াল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি নবী হিসাবেই সৃষ্টি হয়েছেন এবং নবী হিসেবেই ছিলেন। এক কথায় সমস্ত প্রকার নিয়ামতের মালিকানাসহই উনাকে সৃষ্টি মুবারক করা হয়েছে। উনার থেকে কোন কিছুই সংযোজন বা বিয়োজন করার নেই। এমন কিছু নেই যাতে উনার শান-মান ও সম্মান মুবারক বৃদ্ধি পাবে বরং শ্রেষ্ঠ থেকে শ্রেষ্ঠতম, সর্বোচ্চ থেকে সবোচ্চতম বৃদ্ধিপ্রাপ্ত শান, সম্মান, ইজ্জত, হুরমতসহই তিনি সৃষ্টি হয়েছেন।
উপরোক্ত মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাদীছ শরীফ ও দলীলভিত্তিক আলোচনাসমূহ দ্বারা এ বিষয়টি সুস্পষ্টভাবেই প্রমাণিত যে, সমগ্র সৃষ্টি জগতে যা কিছুই আছে সবকিছুর পূর্বে মহাসম্মানিত মহাপবিত্র হাবীব মাহবূব, সাইয়্যিদুল আম্বিয়া ওয়াল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মহাসম্মানিত নূর মুবারক সৃষ্টি করা হয়েছে। অর্থাৎ সৃষ্টির শুরু থেকে মহাসম্মানিত মহাপবিত্র হাবীব মাহবূব, সাইয়্যিদুল আম্বিয়া ওয়াল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি মহান আল্লাহ পাক উনার দায়েমী দীদার মুবারকেই অবস্থান মুবারক করেছেন ও করছেন। সুবহানাল্লাহ!
অত:পর দুনিয়ার সাধারণ মানুষকে বিষয়টা আনুষ্ঠানিকভাবে বুঝানোর জন্যই উনাকে আনুষ্ঠানিকভাবে সম্মানিত মি’রাজ শরীফ হাদিয়া করা হয়েছে। যেখানে তিনি, উনার বিশেষ শান মুবারক প্রকাশার্থে বিশেষ ভাবে মহান আল্লাহ পাক উনার সরাসরী দীদার মুবারক লাভ করেছেন।
উল্লেখ্য যে, মহাপবিত্র মি’রাজ শরীফ উনার মধ্যে মহাসম্মানিত মহাপবিত্র হাবীব মাহবূব, সাইয়্যিদুল আম্বিয়া ওয়াল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি অবশ্যই খ¦লিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক রব্বুল আলামীন উনার বিশেষ দীদার মুবারক লাভ করেছেন তথা উনাকে সরাসরি দেখেছেন, তা অসংখ্য দলীল আদিল্লা দ্বারাও প্রমাণিত।
মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-
وَلَقَدْ رَاٰهُ نَـزْلَةً أُخْرٰى
অর্থ: অবশ্যই মহাসম্মানিত মহাপবিত্র হাবীব মাহবূব, সাইয়্যিদুল আম্বিয়া ওয়াল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি খ¦লিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক রব্বুল আলামীন উনাকে পুণরায় সরাসরি দেখেছেন। (মহাপবিত্র সূরা নজম শরীফ, মহাপবিত্র আয়াত শরীফ-৯)
উপরোক্ত মহাপবিত্র আয়াত শরীফ উনার মধ্যে نَزْلَةً أُخْرٰى শব্দ মুবারক উনার অর্থ হচ্ছেন “পুণরায় দেখেছেন” অর্থাৎ সৃষ্টির শুরু থেকেই দীদারে ইলাহী মুবারকে মশগুল আছেন। বিশেষ শান মুবারক প্রকাশার্থে পুণরায় মহাপবিত্র মি’রাজ শরীফে আখাচ্ছুল খাছ দীদার বা সাক্ষাত মুবারক লাভ করেছেন।
উপরোক্ত মহাপবিত্র আয়াত শরীফ উনার তাফসীরে মহাসম্মানিত মহাপবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে উল্লেখ করা হয়েছে-
عَنْ حَضْرَتْ اِبْنِ عَبَّاسٍ رَضِىَ اللهُ تَـعَالٰى عَنْهُ فِيْ قَـوْلِ اللهِ (وَلَقَدْ رَاٰهُ نَـزْلَةً أُخْرٰى عِنْدَ سِدْرَةِ الْمُنْـتَـهٰى فَأَوْحٰى إِلٰى عَبْدِهٖ مَاۤ أَوْحٰى فكَانَ قَابَ قَـوْسَيْنِ أَوْ أَدْنٰـى). قَالَ حَضْرَتْ اِبْنُ عَبَّاسٍ رَضِىَ اللهُ تَـعَالٰى عَنْهُ قَدْ رَاٰهُ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ
অর্থ: হযরত ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমা উনার থেকে বর্ণিত “মহান আল্লাহ পাক রব্বুল আলামীন উনার কালাম” অবশ্যই মহাসম্মানিত মহাপবিত্র হাবীব মাহবূব, সাইয়্যিদুল আম্বিয়া ওয়াল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি খ¦লিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক রব্বুল আলামীন উনাকে পুনরায় সরাসরী দেখেছেন সিদরাতুল মুনতাহা বা সর্বোচ্চ মনযিলে তখন উনার সম্মানিত হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে যা পবিত্র ওয়াহী মুবারক করার তা পবিত্র ওয়াহী মুবারক করলেন” তখন উনাদের মধ্যে ধনুকের দুই মাথা একত্রিত হওয়া পরিমাণ বা তারও কম ব্যবধান ছিল। (সম্মানিত ও পবিত্র সূরা নাজম শরীফ: সম্মানিত ও পবিত্র আয়াত শরীফ ৯- ১১) সম্মানিত ও পবিত্র আয়াত শরীফসমূহ প্রসঙ্গে হযরত ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমা তিনি বলেন, নিশ্চয়ই সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি মহান আল্লাহ পাক উনাকে প্রত্যক্ষ করেছেন তথা সরাসরি দেখেছেন। সুবহানাল্লাহ! (তিরমিযী শরীফ কিতাবুত তাফসীর, হাদীছ শরীফ নং ৩২৮০)
মহাসম্মানিত মহাপবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে আরো উল্লেখ করা হয়েছে-
عَنْ حَضْرَتْ اَنَسٍ رَضِىَ اللهُ تَـعَالٰى عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ اَوَّلُ عَيْنٍ تَـنْظُرُ اِلٰى اللهِ عَزَّ وَجَلَّ عَيْنِـىْ
অর্থ: হযরত আনাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বর্ণনা করেন। নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, আমার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র নূরুল মুনাওওয়ার শরীফ বা চক্ষু মুবারকই সর্ব প্রথম মহান আল্লাহ পাক উনাকে হাক্বীক্বীভাবে দেখেন। (দারিমী শরীফ, জামিউল আহাদীছ, আল জামিউল কাবীর লিস সুয়ুতী, কানযুল উম্মাল ৩২০৫০)
অর্থাৎ সৃষ্টির সূচনা থেকে মহান আল্লাহ পাক উনাকে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি দেখে আসছেন, দেখতেছেন ও দেখতে থাকবেন তথা আখাছ্ছুল খাছ ও দায়ীমি দীদার মুবারকেই রয়েছেন।
মহাসম্মানিত মহাপবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে আরো উল্লেখ করা হয়েছে-
عَنْ حَضْرَتْ أَبِي ذَرٍّ رَضِىَ اللهُ تَـعَالٰى عَنْهُ، قَالَ سَأَلْتُ النَّبِـىِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ هَلْ رَأَيْتَ رَبَّكَ؟ فَـقَالَ : قَدْ رَأَيْتُ نُورًا أَنَّـى أَرَاهُ
অর্থ: হযরত আবু যর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে জিজ্ঞাসা করেছি (হে মহান আল্লাহ পাক উনার রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম!) আপনি মহান আল্লাহ পাক উনাকে দেখেছেন কি? উত্তরে তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, আমি মহান আল্লাহ পাক উনাকে নূর-উনার ন্যয় উজ্জল আকারে দেখেছি। (মুসলিম শরীফ, তিরমীযী শরীফ, মুসনদে আহমদ শরীফ, ত্ববরানী শরীফ, ইবনু খুযাইমা, ইবনু হিব্বান, কানযুল উম্মাল/৬১৮৬১)
মহাসম্মানিত মহাপবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে আরো উল্লেখ করা হয়েছে-
عَنْ حَضْرَتْ اِبْنِ عَبَّاسٍ رَضِىَ اللهُ تَـعَالٰى عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ : رَأَيْتُ رَبِّيْ تَـبَارَكَ وَتَـعَالٰى
অর্থ: হযরত ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমা উনার থেকে বর্ণিত, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, আমি মহান আল্লাহ পাক তাবারাকা ওয়া তায়ালা উনাকে দেখেছি। (মুসনাদে আহমদ শরীফ ১/২৯০ : হাদীছ শরীফ ২৬৩৪)
মহাসম্মানিত মহাপবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে আরো উল্লেখ করা হয়েছে-
عَنْ حَضْرَتْ قَـتَادَةَ رَضِىَ اللهُ تَـعَالٰى عَنْهُ أَنَّ أنَسًا رَضِىَ اللهُ تَـعَالٰى عَنْهُ قَالَ: رَأٰى سَيِّدُنَا مُـحَمَّدٌ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ رَبَّهٗ
অর্থ: হযরত ক্বাতাদা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বর্ণনা করেন, হযরত আনাস ইবনে মালিক রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বলেন, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র রব তায়ালা উনাকে দেখেছেন। ( আস সুন্নাহ লি ইবনে আবি আছিম ১/১৮৯ : হাদীছ শরীফ ৪৩৫;
মহাসম্মানিত মহাপবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে আরো উল্লেখ করা হয়েছে-
سَأَلَ مَرْوَانُ حَضْرَتْ أَبَا هُرَيْـرَةَ رَضِىَ اللهُ تَـعَالٰى عَنْهُ: هَلْ رَأٰى سَيِّدُنَا مُـحَمَّدٌ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ رَبَّهٗ عَزَّ وَجَلَّ؟ فقَالَ: “نَـعَمْ قَدْ رَاٰهُ
অর্থ: হযরত আবূ হুরায়রা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার কাছে মারওয়ান জানতে চাইলো, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি সুমহান রব তায়ালা উনাকে দেখেছেন কিনা? তিনি জবাব দিলেন, হ্যাঁ নিশ্চয়ই তিনি সুমহান রব তায়ালা উনাকে দেখেছেন। সুবহানাল্লাহ! (আস সুন্নাহ লি আব্দিল্লাহ ইবনে আহমদ ১/১৭৬)
উপরোক্ত মহাপবিত্র সূরা নজম শরীফ উনার মহাপবিত্র আয়াত শরীফ উনার তাফসীরে কিতাবে উল্লেখ করা হয়েছে-
عَنِ الْمُبَارَكِ بْنِ فُضَالَةَ رَحْمَةُ اللهِ عَلَيْهِ قَالَ كَانَ الْـحَسَنُ الْبَصْرِىُّ رَحْمَةُ اللهِ عَلَيْهِ يَـحْلِفُ ثَلَاثَةً لَقَدْ رَأٰي سَيِّدُنَا مُـحَمَّدٌ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ رَبَّهٗ
অর্থ: হযরত মুবারক ইবনে ফুদ্বালা রহমতুল্লাহি আলাইহি বর্ণনা করেন, নিশ্চয়ই হযরত ইমাম হাসান বছরী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি তিনবার কসম করে বলেছেন, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি অবশ্যই মহান আল্লাহ পাক উনাকে দেখেছেন।” (তাফসীরে আব্দুর রাজ্জাক৩/২৫২হাদীছ শরীফ ৩০৩৩; তাফসীরে কুরতুবী ৭/৫৬, উমদাতুল ক্বারী ২২/৪৮৬, আশ শিফা ১/১৯৭)
উপরোক্ত মহাপবিত্র আয়াত শরীফ উনার তাফসীরে কিতাবে উল্লেখ করা হয়েছে-
قَالَ حَضْرَتِ الزُّهْرِيُّ رَحْمَةُ اللهِ عَلَيْهِ بِأَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ رَاٰي رَبَّهٗ لَيْـلَةَ الْمِعْرَاجِ
অর্থ: “হযরত ইমাম শিহাব যুহরী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, নিশ্চয়ই সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মি’রাজ শরীফ উনার রাতে উনার মহান রব তায়ালা মহান আল্লাহ পাক উনাকে দেখেছেন।” (ফতহুল বারী ৮/৪৭৪)
উপরোক্ত মহাপবিত্র আয়াত শরীফ উনার তাফসীরে কিতাবে উল্লেখ করা হয়েছে-
قَالَ حَضْرَتْ حَفْصُ بنُ عَبْدِ اللهِ: سَمِعْتُ إِبْرَاهِيْمَ بْنَ طَهْمَانَ رَحْمَةُ اللهِ عَلَيْهِ يَـقُوْلُ وَاللهِ الَّذِيْ لَا إِلٰهَ إِلَّا هُوَ، لَقَدْ رَاٰى سَيِّدُنَا مُحَمَّدٌ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ رَبَّهٗ
অর্থ: হযরত হাফস বিন আব্দুল্লাহ রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, আমি হযরত ইব্রাহীম ইবনে তহমান রহমতুল্লাহি আলাইহি উনাকে বলতে শুনেছি তিনি বলেন, মহান আল্লাহ পাক উনার কসম, যিনি ব্যাতীত কোন ইলাহ নেই, নিশ্চয়ই সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি মহান আল্লাহ পাক উনাকে দেখেছেন। (সিয়ারু আলামিন নুবালা ১৩/৪২৮, তারীখুল ইসলাম লি ইমাম যাহাবী ১০/৬২)
উপরোক্ত মহাপবিত্র আয়াত শরীফ উনার তাফসীরে কিতাবে উল্লেখ করা হয়েছে-
عَنْ حَضْرَتِ الْإِمَامِ أَحْمَدَ بْنِ حَنْـبَلٍ رَحْمَةُ اللهِ عَلَيْهِ أَنَّهٗ كَانَ يَـقُوْلُ : إِذَا سُئِلَ عَنِ الرُّؤْيَةِ رَاٰهُ رَاٰهُ حَتّٰـى يَـنْـقَطِعَ نَـفَسُهٗ
অর্থ: হযরত ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, উনাকে যদি কেউ কখনো জিজ্ঞাসা করত যে, মহান আল্লাহ পাক উনাকে সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি দেখেছেন কি? তখন তিনি বলতেন উনাকে দেখেছেন! বলতেন, তিনি উনাকে দেখেছেন! এভাবে বলতে থাকতেন এমনকি বলতে বলতে উনার শ্বাস বন্ধ হয়ে যেতো। (তাফসীরে রুহুল মা’য়ানী ১৪/৫৪)
উপরোক্ত মহাপবিত্র আয়াত শরীফ উনার তাফসীরে কিতাবে আরো উল্লেখ করা হয়েছে-
حَضْرَتِ الْإِمَامُ اِبْنُ خُزَيْـمَةَ رَحْمَةُ اللهِ عَلَيْهِ نَضَرَ فِيْ كِتَابِهِ التَّـوْحِيْدِ الْقَوْلَ بِأَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ رَاٰى رَبَّهٗ لَيْـلَةَ الْمِعْرَاجِ
অর্থ: হযরত ইবনে খুজাইমা রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি উনার কিতাব “কিতাবুত তাওহীদ” উনার মধ্যে বর্ণনা করেন, নিশ্চয়ই সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি পবিত্র মিরাজ শরীফ উনার রাতে মহান আল্লাহ পাক উনাকে দেখেছেন। সুবহানাল্লাহ! (কিতাবুত তাওহীদ ২/৪৭৭)
উপরোক্ত মহাপবিত্র আয়াত শরীফ উনার তাফসীরে কিতাবে উল্লেখ করা হয়েছে-
وَذَكَرَ اِبْنُ إِسْحَاقَ أَنَّ حَضْرَتْ اِبْنَ عُمَرُ رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ أَرْسَلَ إِلٰى حَضْرَتْ اِبْنِ عَبَّاسٍ رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ يَسْأَلُهٗ : هَلْ رَأٰى سَيِّدُنَا مُـحَمَّدٌ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ رَبَّهٗ ؟ فَـقَالَ : نَـعَمْ ، وَالْأَشْهُرُ عَنْهُ أَنَّهٗ رَأٰى رَبَّهٗ بِعَيْنِهٖ ، رُوِىَ ذٰلِكَ عَنْهُ مِنْ طُرُقٍ
অর্থ: হযরত ইবনে ইসহাক রহমাতুল্লাহি আলাইহি তিনি বর্ণনা করেন নিশ্চয়ই হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে উমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমা তিনি হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমা উনার নিকটে এক ব্যক্তিকে প্রেরণ করে জানতে চাইলেন যে, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি মহান আল্লাহ পাক উনাকে দেখেছেন কি না? উত্তরে হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমা তিনি বলেন- হ্যাঁ অবশ্যই তিনি মহান আল্লাহ পাক উনাকে দেখেছেন। তবে উনার থেকে বিশুদ্ধ বর্ণনা হচ্ছে- নিশ্চয়ই সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি মহান আল্লাহ পাক উনাকে সরাসরী বাহ্যিক চক্ষু মুবারক দ্বারাই দেখেছেন। আর ইহা বিভিন্ন সনদে বর্ণিত হয়েছে। (ইমতাউল আসমা’ বিমা লিন্নাবিয়্যি মিনাল আহওয়াল ওয়াল আমওয়াল)
উপরোক্ত মহাপবিত্র আয়াত শরীফ উনার তাফসীরে উক্ত কিতাবে আরো উল্লেখ করা হয়েছে-
وَحَكٰى أَبُو الْفَتْحِ الرَّازِيُّ ، وَأَبُو اللَّيْثِ السَّمَرْقَـنْدِىُّ الْـحِكَايَةَ عَنْ حَضْرَتْ كَعْبٍ رَضِىَ اللهُ تَـعَالٰى عَنْهُ، وَرَوٰى عَبْدُ اللهِ بْنُ الْـحَارِثِ قَالَ : اِجْتَمَعَ حَضْرَتْ اِبْنُ عَبَّاسٍ رَضِىَ اللهُ تَـعَالٰى عَنْهُ وَحَضْرَتْ كَعْبٌ رَضِىَ اللهُ تَـعَالٰى عَنْهُ، فَـقَالَ حَضْرَتْ اِبْنُ عَبَّاسٍ رَضِىَ اللهُ تَـعَالٰى عَنْهُ، أَمَا نَـحْنُ بَـنُـوْ هَاشِمٍ فَـنَـقُوْلُ : إِنَّ مُـحَمَّدًا صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَدْ رَأٰى رَبَّهٗ مَرَّتَـيْنِ، فَكَبَّـرَ حَضْرَتْ كَعْبٍ رَضِىَ اللهُ تَـعَالٰى عَنْهُ حَتّٰى جَاوَبَـتْهُ الْـجِبَالُ
অর্থ: হযরত আবুল ফাতাহ রাযী রহমাতুল্লাহি আলাইহি তিনি এবং হযরত আবু লাইস সমরকন্দী রহমাতুল্লাহি আলাইহি উনারা হযরত কা’ব রহমাতুল্লাহি আলাইহি থেকে একটি ঘটনা বর্ণনা করেন- হযরত আব্দুল্লাহ বিন হারিস রহমাতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমা এবং হযরত কা’ব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনারা একত্রিত হলেন, অতপর: হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমা তিনি বলেন, আমরা বনু হাশিম সম্প্রদায়, আমরা সকলেই বলি যে নিশ্চয়ই সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি মহান আল্লাহ পাক উনাকে সরাসরী বাহ্যিক চক্ষু মুবারক দ্বারাই একাধিকবার অর্থাৎ বহুবার অর্থাৎ সদাসর্বদা দেখেছেন, দেখছেন ও দেখবেন এবং দেখতেই থাকবেন। এতদশ্রবনে হযরত কা’ব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি উচ্চস্বরে তাকবীর ধ্বনী দিলেন এমনকি আশপাশের পাহাড় সমূহ থেকেও উচ্চস্বরে তাকবীরের আওয়াজ আসতে লাগল। (ইমতাউল আসমা’ বিমা লিন্নাবিয়্যি মিনাল আহওয়াল ওয়াল আমওয়াল)
উপরোক্ত মহাপবিত্র আয়াত শরীফ উনার তাফসীরে উক্ত কিতাবে আরো উল্লেখ করা হয়েছে-
وَقَالَ أَبُو الْـحَسَنِ عَلِىُّ بْنُ إِسْمَاعِيْلَ الْأَشْعَرِيُّ رَضِىَ اللهُ تَـعَالٰى عَنْهُ وَجـَمَاعَةٌ مِّنْ أَصْحَابِهٖ ، أَنَّهٗ رَأَى اللهَ تَـعَالٰى بِبَصَرِهٖ وَعَيْنَىْ رَأْسِهٖ ، وَقَالَ : كُلُّ اٰيَةٍ أُوْتِيْـهَا نَبِيٌّ مِّنَ الْأَنْبِيَاءِ عَلَيْهِمُ السَّلَامُ ، فَـقَدْ أُوْتِىَ مِثْـلُهَا نَبِيُّـنَا صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، وَخَصٌّ مِّنْ بَـيْـنَـهُمْ بِتَـفْضِيْلِ الرُّؤْيَةِ
অর্থ: হযরত আবুল হাসান আলী ইবনে ইসমাঈল আশয়ারী রহমাতুল্লাহি আলাইহি তিনি এবং উনার সঙ্গী সাথীদের অধিকাংশরাই বলেন, নিশ্চয়ই সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি মহান আল্লাহ পাক উনাকে সরাসরী বাহ্যিক চক্ষু মুবারক দ্বারাই দেখেছেন। তিনি আরো বলেন, মহান আল্লাহ পাক তিনি সমস্ত হযরত নবী রসূল আলাইহিমুস সালম উনাদেরকে অসংখ্য নিদর্শন মুবারক দান করেছেন। আর আমাদের মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র নবী, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে উক্ত সমস্ত বৈশিষ্ট মুবারক তো দিয়েছেনই সাথে সাথে আখাছ্ছুল খাছ দীদার মুবারক দান করেও উনার বিশেষ শান মুবারক প্রকাশ করেছেন। (ইমতাউল আসমা’ বিমা লিন্নাবিয়্যি মিনাল আহওয়াল ওয়াল আমওয়াল)
উপরোক্ত দলীল আদিল্লাহ সহ আরো অসংখ্য দলীলে ক্বি¡তয়ী দ্বারা প্রমাণিত যে, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি অবশ্যই খ¦লিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক রব্বুল আলামীন উনার দীদার মুবারক লাভ করেছেন তথা মহান আল্লাহ পাক উনাকে সরাসরী বাহ্যিক চক্ষু মুবারক দ্বারাই দেখেছেন।
সনদ সংক্রান্ত পর্যালোচনা
উল্লেখ্য যে, অনেকে নিম্নোক্ত মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাদীছ শরীফ দলীল হিসাবে পেশ করে উপরোক্ত বিষয়ে ভিন্নœমত পোষণ করে থাকে। অর্থাৎ সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি মহান আল্লাহ পাক রব্বুল আলামীন উনার দীদার মুবারক লাভ করেছেন তথা মহান আল্লাহ পাক উনাকে সরাসরী বাহ্যিক চক্ষু মুবারক দ্বারা দেখেছেন এ বিষযটি সঠিক নয় বলে বর্ণনা করে থাকে। অথচ তাদের এ বক্তব্যটি সম্পূর্ণরুপে ভুল ও অশুদ্ধ।
তিরমিযী শরীফে ( سنن الترمذي- شاكر + ألباني ৫/৩৯৪) উল্লেখ করা হয়েছে-
حَدَّثَـنَا ابْنُ أَبِيْ عُمَرَ، حَدَّثَـنَا سُفْيَانُ، عَنْ مُـجَالِدٍ، عَنِ الشَّعْبِيِّ، قَالَ لَقِيَ ابْنُ عَبَّاسٍ رَضِىَ اللهُ تَـعَالٰى عَنْهُ كَعْبًا بِعَرَفَةَ فَسَأَلَهٗ عَنْ شَيْءٍ، فَكَبَّـرَ حَتّٰى جَاوَبَـتْهُ الْـجِبَالُ فَـقَالَ ابْنُ عَبَّاسٍ رَضِىَ اللهُ تَـعَالٰى عَنْهُ إِنَّا بَـنُـوْ هَاشِمٍ . فَـقَالَ كَعْبٌ إِنَّ اللهَ قَسَمَ رُؤْيَـتَهٗ وَكَلاَمَهٗ بَيْنَ مُحَمَّدٍ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَمُوْسٰى عَلَيْهِ السَّلَامُ فَكَلَّمَ مُوسٰى عَلَيْهِ السَّلَامُ مَرَّتَـيْنِ وَرَاٰهُ مُحَمَّدٌ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مَرَّتَـيْنِ قَالَ مَسْرُوْقٌ فَدَخَلْتُ عَلٰى اُمِّ الْـمُؤْمِنِيْنَ الثَّالِثَةِ الصِّدِّيْـقَةِ عَلَيْهَا السَّلَامُ فَـقُلْتُ هَلْ رَأٰى مُحَمَّدٌ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ رَبَّهٗ فَـقَالَتْ لَقَدْ تَكَلَّمْتَ بِشَيْءٍ قَفَّ لَهٗ شَعْرِيْ قُـلْتُ رُوَيْدًا ثُمَّ قَـرَأْتُ (لَقَدْ رَأٰى مِنْ اٰيَاتِ رَبِّهِ الْكُبْـرَى) قَالَتْ أَيْنَ يَذْهَبُ بِكَ إِنَّمَا هُوَ جِبْرِيْلُ مَنْ أَخْبَـرَكَ أَنَّ مُحَمَّدًا صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ رَأٰى رَبَّهٗ أَوْ كَتَمَ شَيْـئًا مِمَّا أُمِرَ بِهٖ أَوْ يَعْلَمُ الْـخَمْسَ الَّتِيْ قَالَ اللهُ تَـعَالٰى إنَّ اللهَ عِنْدَهٗ عِلْمُ السَّاعَةِ وَيُـنَزِّلُ الْغَيْثَ) فَـقَدْ أَعْظَمَ الْفِرْيَةَ وَلٰكِنَّهٗ رَأٰى جِبْرِيْلَ لَمْ يَـرَهٗ فِيْ صُوْرَتِهٖ إِلاَّ مَرَّتَـيْنِ مَرَّةً عِنْدَ سِدْرَةِ الْمُنْـتَـهٰى وَمَرَّةً فِي جِيَادٍ لَهٗ سِتُّ مِائَةِ جَنَاحٍ
অর্থ: হযরত ইবনু আবি উমর রহমাতুল্লাহি আলাইহি তিনি হযরত ছুফিয়ান রহমাতুল্লাহি আলাইহি থেকে, তিনি মুজালিদ থেকে, তিনি হযরত শা’বি রহমাতুল্লাহি আলাইহি থেকে মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাদীছ শরীফ বর্ণনা করেন, তিনি বলেন হযরত ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমা তিনি হযরত কা’ব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার সাথে আরাফা নামক স্থানে সাক্ষাত করে কিছু বিষয় সুওয়াল করলেন। তখন তিনি উচ্চ স্বরে তাকবীর ধ্বনী দিলেন, এমনকি পাহাড়ের মধ্য থেকেও তাকবীর ধ্বনী আসতে লাগল। তখন হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমা তিনি বলেন, আমরা বনু হাশিম সম্প্রদায়, (আমরা সকলেই বলি যে নিশ্চয়ই সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি মহান আল্লাহ পাক উনাকে সরাসরী বাহ্যিক চক্ষু মুবারক দ্বারাই দেখেছেন।) তখন হযরত কা’ব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বলেন, মহান আল্লাহ পাক তিনি উনার দীদার মুবারক ও কালাম মুবারক কে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এবং হযরত মূসা কালীমুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনাদের দুজনের মধ্যে বন্টন করে দিয়েছেন। কাজেই হযরত মূসা কালীমুল্লাহ আলাইহিস সালাম তিনি মহান আল্লাহ পাক উনার সাথে দুবার কথা মুবারক বলেছেন। আর সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি মহান আল্লাহ পাক উনাকে একাধিকবার অর্থাৎ বহুবার অর্থাৎ সদাসর্বদা দেখেছেন, দেখছেন ও দেখবেন এবং দেখতেই থাকবেন। (দায়েমী দীদার মুবারকে রয়েছেন)। ইহা শ্রবন করার পর হযরত মাসরুক রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বলেন, আমি হযরত উম্মুল মু’মিনীন আছ ছালিছা ছিদ্দীক্বা আলাইহাস সালাম উনার কাছে গিয়ে উনাকে প্রশ্ন করেছিলাম যে, হে হযরত উম্মুল মু’মিনীন আলাইহাস সালাম, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি মহান আল্লাহ পাক উনাকে দেখেছেন কিনা? উত্তরে তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, আপনার কথা শুনে আমার চুল মুবারক শুকিয়ে গেল। আমি তখন সম্মানিত ও পবিত্র আয়াত শরীফ তিলাওয়াত করলাম “অবশ্যই তিনি (হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি) মহান আল্লাহ পাক উনার মহান নিদর্শন মুবারক (উনাকে সরাসরী) দেখেছেন।” তখন হযরত উম্মুল মু’মিনীন আলাইহাস সালাম তিনি প্রশ্ন করলেন আপনি ইহা কোথায় পেলেন? বরং তিনি হযরত জিবরীল আলাইহিস সালাম। (১) যে ব্যক্তি বলবে যে- হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি মহান আল্লাহ পাক উনাকে দেখেছেন, (২) তিনি সত্যকে গোপন করেছেন, (৩) আর পাচটি বিষয় যে সম্পর্কে মহান আল্লাহ পাক তিনি বলেছেন যে, তিনি ব্যাতিত অন্য কেউ তা জানেন না, সে বিষয় সমূহও হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি জানেন (যে ব্যাক্তি এ কথা বলবে), সে মহান আল্লাহ পাক উনার প্রতি মিথ্যা অপবাদ দিল। বরং হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি হযরত জিবরীল আলাইহিস সালাম উনাকেই দুইবার দেখেছেন। একবার সিদরাতুল মুন্তাহায়, আরেকবার জিয়াদ নামক স্থানে। উনার ছয়শত পাখা মুবারক রয়েছন। (তিরমিযী শরীফ)
উপরোক্ত হাদীছ শরীফ সর্ম্পকে কিতাবে
(سنن الترمذي- شاكر + ألباني- (৫/৩৯৪)
উল্লেখ করা হয়েছে-
قال الألباني : ضعيف الإسناد
অর্থ: ওহাবীদের গুরু নছীরুদ্দীন আলবানী বলেছে-এ হাদীছের সনদ যয়ীফ। (সুনানুত তিরমিযী ৫/৩৯৪)
উপরোক্ত হাদীছ শরীফ সর্ম্পকে কিতাবে
تحقيق كتاب البدور السافرة في أمور الاخرة للسيوطي- (১/ ৪৭৪) আরো এসেছে-
هٰذَا الْـحَدِيْثُ إِسْنَادُهٗ ضَعِيْفٌ ، لِأَنَّ فِيْهِ مُـجَالِدُ بْنُ سَعِيْدٍ وَهُوَ مُتَكَلَّمٌ فِيْهِ
অর্থ: এ হাদীছের সনদ যয়ীফ, কেননা এতে একজন রাবী মুজালিদ বিন ছায়ীদ, তার ব্যাপারে অনেক কিলকাল রয়েছে। (তাহক্বীকু কিতাবিল বুদূর ১ / ৪৭৪)
উপরোক্ত হাদীছ শরীফ সর্ম্পকে কিতাবে سنن الترمذي- شاكر + ألباني (৩/ ৩৯) উল্লেখ করা হয়েছে-
وَقَدْ ضَعُفَ مُجَالِدًا بَـعْضُ أَهْلِ الْعِلْمِ وَهُوَ كَثِيْـرُ الْغَلَطِ
অর্থ: অধিকাংশ মুহাদ্দিছগণ এ হাদীছের একজন রাবী মুজালিদ বিন ছায়ীদকে যয়ীফ বা দূর্বল রাবী বলেছেন, সে অনেক ভুল বর্ণনা করেছে। (সুনানুত তিরমিযী ৩/৩৯ )
উল্লেখ্য যে, বিশ্ব বিখ্যাত অধিকাংশ ইমাম মুজতাহিদ ও মুহাদ্দিসগণই উপরোক্ত রাবী সর্ম্পকে অনুরুপ বক্তব্য পেশ করেছেন। সুতরাং অধিক ভুলকারী ও দ্বয়িফ রাবী মুজালিদ কর্তৃক বর্ণিত উক্ত বর্ণনাটি যয়ীফ তো অবশ্যই বরং এটি মিথ্যা বা মাওজু এর অর্ন্তভুক্ত। কারণ উপরোক্ত বর্ণনায় যে সকল বিষয়ের আলোচনা করা হয়েছে তা সম্মানিত শরীয়ত উনার খিলাফ তথা মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র কুরআন শরীফ এবং মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র সুন্নাহ শরীফ উনার খিলাফ।
মূলত, হযরত উম্মুল মু’মিনীন আছ ছালিছাহ সাইয়্যিদাতুনা ছিদ্দীক্বাহ আলাইহাস সালাম উনার থেকে কোন অবস্থাতেই মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র কুরআন শরীফ এবং মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র সুন্নাহ শরীফ বিরোধী এরূপ বর্ণনা থাকতে পারেনা। বরং এটি উনার নাম মুবারকে চালিয়ে দেয়া একটি বানোয়াট বর্ণনা বা জাল হাদীছের অর্ন্তভুক্ত।
অনুরূপ আরো একটি বর্ণনা বুখারী শরীফে এভাবে এসেছে-
عَنْ مَسْرُوْقٍ رَضِيَ اللهُ تَـعَالٰى عَنْهُ قَالَ: قُـلْتُ لِاُمِّ الْـمُؤْمِنِيْنَ عَائِشَةَ عَلَيْهَا السَّلَامُ يَا أُمَّتَاهْ هَلْ رَأٰى مُحَمَّدٌ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ رَبَّهٗ فَـقَالَتْ لَقَدْ قَفَّ شَعَرِيْ مِمَّا قُـلْتَ أَيْنَ أَنْتَ مِنْ ثَلاَثٍ مَنْ حَدَّثَكَهُنَّ فَـقَدْ كَذَبَ مَنْ حَدَّثَكَ أَنَّ مُحَمَّدًا صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ رَأٰى رَبَّهٗ فَـقَدْ كَذَبَ ثُمَّ قَـرَأَتْ{لَا تُدْرِكُهُ الأَبْصَارُ وَهُوَ يُدْرِكُ الأَبْصَارَ وَهُوَ اللَّطِيْفُ الْخَبِيْـرُ}{وَمَا كَانَ لِبَشَرٍ أَنْ يُّكَلِّمَهُ االله إِلَّا وَحْيًا أَوْ مِنْ وَّرَاءِ حِجَابٍ}وَمَنْ حَدَّثَكَ أَنَّهٗ يَعْلَمُ مَا فِيْ غَدٍ فَـقَدْ كَذَبَ ثُمَّ قَـرَأَتْ {وَمَا تَدْرِيْ نَـفْسٌ مَّاذَا تَكْسِبُ غَدًا}، وَمَنْ حَدَّثَكَ أَنَّهٗ كَتَمَ فَـقَدْ كَذَبَ ثُمَّ قَـرَأَتْ {يَاۤ أَيُّهَا الرَّسُوْلُ بَلِّغْ مَاۤ أُنْزِلَ إِلَيْكَ مِنْ رَّبِّكَ} اَلْاٰيَةَ وَلٰكِنَّهٗ رَأٰى جِبْرِيْلَ عَلَيْهِ السَّلاَمُ فِيْ صُوْرَتِهٖ مَرَّتَـيْنِ
অর্থ: হযরত মাসরুক রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হতে বর্ণিত তিনি বলেন- আমি উম্মুল মু’মিনীন আছ ছালিছা হযরত ছিদ্দীক্বা আলাইহাস সালাম উনাকে প্রশ্ন করেছিলাম যে, হে হযরত উম্মুল মু’মিনীন আলাইহাস সালাম- নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি মহান আল্লাহ পাক উনাকে দেখেছেন কিনা? উত্তরে তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, আপনার কথা শুনে আমার চুল মুবারক শুকিয়ে গেল!। আপনি ইহা কোথায় পেলেন? যে ব্যক্তি তিনটি বিষয় আপনার কাছে বর্ণনা করবে সে মিথ্যা বলল। (১) যে ব্যক্তি বলবে যে- হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি মহান আল্লাহ পাক উনাকে দেখেছেন, সে মিথ্যা বলল। অত:পর তিনি মহাপবিত্র আয়াত শরীফ তিলাওয়াত করলেন “মহান আল্লাহ পাক উনাক কারো দৃষ্টি পরিবেষ্টন করতে পারে না এবং তিনিই সকল দৃষ্টিকে পরিবেষ্টন করে আছেন এবং তিনিই অতিশয় সূক্ষ্মদর্শী, সর্বজ্ঞ।” “কোন মানুষেরই অবস্থা এরুপ নয় যে, মহান আল্লাহ পাক তিনি তার সাথে ওহী-ইলহামের মাধ্যমে অথবা পর্দার অন্তরাল থেকে ব্যতীত কথা বলেন।
(২) যে ব্যক্তি বলবে যে- হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি আগামী কাল কি হবে তা জানেন, সে মিথ্যা বলল। অতঃপর তিনি মহাপবিত্র আয়াত শরীফ তিলাওয়াত করলেন, “কোন ব্যক্তি জানে না আগামীকাল সে কি উপার্জন করবে।”
(৩) আর যে ব্যক্তি বলবে যে, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি সত্যকে গোপন করেছেন সে মিথ্যা বলল। অত:পর তিনি মহাপবিত্র আয়াত শরীফ তিলাওয়াত করলেন, “আয় মহাসম্মানিত রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আপনার মহান রব তায়ালা উনার পক্ষ থেকে আপনার প্রতি যা নাযিল হয়েছে তা পৌঁছে দিন।”
বরং হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি হযরত জিবরীল আলাইহিস সালাম উনাকে দুইবার দেখেছেন। (বুখারী শরীফ)
উল্লেখ্য যে, বুখারী শরীফে বর্ণিত উপরোক্ত হাদীছের সনদ হলো-
(৯/ ১১৬) صحيح البخاري- ৭৩৮০
حَدَّثَـنَا مُـحَمَّدُ بْنُ يُوْسُفَ، حَدَّثَـنَا سُفْيَانُ، عَنْ إِسْمَاعِيْلَ، عَنِ الشَّعْبِيِّ، عَنْ مَسْرُوْقٍ، عَنْ حَضْرَتْ اُمِّ الْـمُؤْمِنِيْنَ الثَّالِثَةِ الصِّدِّيْـقَةِ عَلَيْهَا السَّلَامُ قَالَتْ
আর তিরমিযী শরীফে বর্ণিত উপরোক্ত হাদীছের সনদ হলো-
سنن الترمذي- شاكر + ألباني- (৫/৩৯৪)- ৩২৭৮- حَدَّثَـنَا اِبْنُ أَبِيْ عُمَرَ حَدَّثَـنَا سُفْيَانُ عَنْ مُـجَالِدٍ عَنِ الشَّعْبِيِّ قَالَ
বুখারী শরীফের উপরোক্ত বর্ণনায় সুফিয়ান রহমাতুল্লাহি আলাইহি তিনি বর্ণনা করেছেন ইসমাঈল রহমাতুল্লাহি আলাইহি থেকে। কিন্তু তিরমিযী শরীফের উপরোক্ত বর্ণনায় সুফিয়ান রহমাতুল্লাহি আলাইহি তিনি বর্ণনা করেছেন মুজালিদ থেকে। আর মুজালিদ সর্ব সম্মতিক্রমে রাবী হিসেবে দ্বয়ীফ বা দুর্বল এবং অধিক পরিমাণে ভুল বর্ণনাকারীদের অর্ন্তভুক্ত। সুতরাং উপরোক্ত বর্ণনা যে সন্দেহজনক, দ্বয়ীফ, মাওজু বা জাল তা আর বলারই অপেক্ষাই রাখেনা ।
এছাড়া অনুরূপ আরেকটি বর্ণনায় ইবরাহীম নখয়ী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার থেকে একজন বর্ণনা কারী হচ্ছে আবূ মা’শার। যার সনদটি নিম্নেরুপ
السنن الكبرى للنسائي (১০/৮৩১১০৮২) أَخْبَـرَنِي إِبْـرَاهِيْمُ بْنُ يَعْقُوْبَ، حَدَّثَـنَا جَعْفَرُ بْنُ عَوْنٍ، أَخْبَـرَنَا سَعِيْدُ بْنُ أَبِيْ عَرُوْبَةَ، عَنْ أَبِيْ مَعْشَرٍ، عَنْ إِبْـرَاهِيْمَ، عَنْ مَسْرُوْقٍ، عَنْ حَضْرَتْ اُمِّ الْـمُؤْمِنِيْنَ الثَّالِثَةِ الصِّدِّيْـقَةِ عَلَيْـهَا السَّلَامُ
এ বর্ণনায় আবূ মা’শর নামক রাবী সম্পর্কে কিতাবে উল্লেখ করা হয়েছে-
أَبُـوْ عِيْسَى التِّرْمِذِيُّ : قَدْ تَكَلَّمَ بَعْضُ أَهْلِ الْعِلْمِ فِيْهِ مِنْ قِبَلِ حِفْظِهٖ
অর্থ: হযরত ইমাম তিরমিযী রহমাতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন-অধীকাংশ মুহাদ্দিসগণ আবূ মা’শার এর ব্যাপারে, বিশেষ করে তার স্বরণশক্তি নিয়ে কিলকাল করেছেন। (সুনানে তিরমিযী-৪/৪৪১)
কিতাবে আরো উল্লেখ করা হয়েছে-
اَلدَّارُقُطْنِيْ : ضَعِيْفٌ لَيْسَ بِالْقَوِيِّ
অর্থ: হযরত ইমাম দারু কুতনী রহমাতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন- আবূ মা’শার শক্তিশালী রাবী নয় বরং সে দ্বয়ীফ বা দূর্বল। (দারু কুতনী শরীফ)
উপরোক্ত বর্ণনাটি যে অবশ্যই মিথ্যা বা মাওজু’ তার অন্যতম একটি প্রমাণ হলো উক্ত বর্ণনায় সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মহা সম্মানিত ইলমে গায়েবকে অস্বীকার করা হয়েছে। অথচ স্বয়ং উম্মুল মু’মিনীন আছ ছালিছা হযরত ছিদ্দীক্বা আলাইহাস সালাম উনারই বর্ণিত মহাসম্মানিত মহাপবিত্র হাদীছ শরীফ দ্বারা প্রমাণিত রয়েছে যে, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইলমে গায়েব সহ সমস্ত ইলম উনার মালিক। এ ছাড়া আরো অসংখ্য মহাপবিত্র আয়াত শরীফ ও অসংখ্য মহাসম্মানিত মহাপবিত্র হাদীছ শরীফ তথা অসংখ্য দলীলে ক্বিতয়ী দ্বারাও ইলমে গায়েব ছাবিত রয়েছে ।
আম্মাজান উম্মুল মু’মিনীন আছ ছালিছা হযরত ছিদ্দীক্বা আলাইহাস সালাম উনার থেকে ইলমে গায়েব সংক্রান্ত বর্ণনাটি হলো-
عَنْ حَضْرَتْ اُمِّ الْـمُؤْمِنِيْنَ الثَّالِثَةِ الصِّدِّيْـقَةِ عَلَيْـهَا السَّلَامُ قَالَتْ وَعَنْ حَضْرَتْ أَنَسٍ رَضِىَ اللهُ تَـعَالٰى عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لَا تَسْأَلُوْنِيْ عَنْ شَيْءٍ إِلٰى يَـوْمِ الْقِيَامَةِ إِلَّا حَدَّثْـتُكُمْ قَالَ فَـقَالَ عَبْدُ اللهِ بْنُ حُذَافَةَ رَضِىَ اللهُ تعَالٰى عَنْهُ : يَا رَسُوْلَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ ، مَنْ أَبِيْ ؟ قَالَ أَبُـوْكَ حُذَافَةُ
অর্থ: সাইয়্যিদাতুনা আম্মাজান উম্মুল মু’মিনীন আছ ছালিছা হযরত ছিদ্দীক্বা আলাইহাস সালাম এবং হযরত আনাস বিন মালিক রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হতে বর্ণিত উনারা বলেন- নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, “তোমরা আমাকে ক্বিয়ামত পর্যন্ত এমন কোন বিষয়ের প্রশ্ন করতে পারবে না যার জবাব আমি তোমাদেরকে দিতে পারবনা। (অর্থাৎ যে কোন বিষয়ের প্রশ্ন করনা কেন আমি অবশ্যই তার উত্তর দিয়ে দিব) বর্ণনাকারী বলেন- তখন হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে হুযাফা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি প্রশ্ন করলেন-ইয়া রসূলাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম (আপনি দয়া করে বলুন ! আমার পিতার নাম কি ? উত্তরে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন- আপনার পিতার নাম হুযাফা। (বুখারী শরীফ, মুসলিম শরীফ, মুসনদে আহমদ শরীফ, আব্দুর রাজ্জাক, ইবনু হিব্বান, জামিউল আহাদীছ, কানযুল উম্মাল (১১ / ৪২২/৩১৯৭৫)
অর্থাৎ এ মহাসম্মানিত মহাপবিত্র হাদীছ শরীফ খানা আম্মাজান উম্মুল মু’মিনীন আছ ছালিছা হযরত ছিদ্দীক্বা আলাইহাস সালাম তিনি নিজেই মারফু’ সনদে বর্ণনা করেছেন, এবং খাদিমু রসূলিল্লাহ হযরত আনাস বিন মালিক রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনিও মারফু’ সনদে বর্ণনা করেছেন। যার দ্বারা নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র ইলমে গায়ব তথা তিনি অতীত, বর্তমান ও ভবিষ্যত এককথায় কিয়ামত পর্যন্ত কায়িনাতে যত কিছু হয়েছে, হচ্ছে, ও হবে তা সবই তিনি জানেন বলে প্রমাণিত হয়েছে।
উল্লেখ্য যে, সাইয়্যিদাতুনা আম্মাজান উম্মুল মু’মিনীন আছ ছালিছা হযরত ছিদ্দীক্বা আলাইহাস সালাম এবং হযরত আনাস বিন মালিক রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনাদের দুজন কর্তৃক বর্ণিত মহাসম্মানিত মহাপবিত্র হাদীছ শরীফ সম্পর্কে কিতাবে উল্লেখ করা হয়েছে-
إِسْنَادُهٗ صَحِيْحٌ
অর্থ: এই মহাসম্মানিত মহাপবিত্র হাদীছ শরীফ উনার সনদ ছহীহ্। (মুসনাদুস সাহাবা ফী কুতুবিত তিছয়াহ ১৭/৩৩৭)
উল্লেখ্য যে, কোন একজন রাবী কর্তৃক বর্ণিত সমপর্যায়ের দুটি মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে যদি তায়ারুজ হয় তথা বিপরিতধর্মী বর্ণনা পাওয়া যায় তাহলে উসূলে হাদীছের মূলনীতীর ভিত্তিতে যেটি অন্যান্য দলীলের আলোকে বেশি শক্তিশালী হয় সেটিই গ্রহণযোগ্য, আর অন্যটি বাতিল হয়। কিন্তু এখানে সাইয়্যিদাতুনা আম্মাজান উম্মুল মু’মিনীন আছ ছালিছা হযরত ছিদ্দীক্বা আলাইহাস সালাম কর্তৃক বর্ণিত দুটি বর্ণনার (১) একটি হলো মাওকূফ হাদীছ, আর (২) অপরটি হলো মারফু’ হাদীছ শরীফ। আবার মাওকূফ হাদীছের সবগুলির সনদই দ্বয়িফ এবং সন্দেহযুক্ত। কিন্তু মারফূ’ হাদীছ শরীফ উনার সনদ ছহীহ। কাজেই মাওকূফ বর্ণনাটি অবশ্যই পরিত্যাজ্য ও বাতিল।
প্রকৃত পক্ষে দ্বয়ীফ রাবী কর্তৃক বর্ণিত উক্ত মাওকূফ বর্ণনাটি কোন মতেই গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। এছাড়া উক্ত বর্ণনায় আম্মাজান উম্মুল মু’মিনীন আছ ছালিছা হযরত ছিদ্দীক্বা আলাইহাস সালাম উনার নাম মুবারকও ষড়যন্ত্র মূলকভাবে ঢুকানো হয়েছে। কারণ কোন অবস্থাতেই বিপরিতধর্মী দুটি বর্ণনা উনার থেকে থাকতে পারেনা। আর উক্ত মাওকূফ বর্ণনার পবিত্র কুরআন শরীফ ও পবিত্র সুনাহ শরীফ বিরোধী বক্তব্যও তিনি পেশ করতে পারেন না। সুতরাং উক্ত মাওকূফ বর্ণনাগুলি নি:শন্দেহে মাওজু এর অর্ন্তভুক্ত। মূলত: উনার নাম মুবারকে যে কেউ মিথ্যা বা জাল হাদীছ বানিয়েছে ।
কাজেই নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মহান আল্লাহ পাক উনাকে না দেখা সংক্রান্ত যতগুলি বর্ণনাই রয়েছে তা সব গুলিই মাওজু বা জাল হাদীছের অর্ন্তভুক্ত।
তাছাড়া উক্ত বর্ণনায় যে বিষয়গুলি বর্ণিত হয়েছে সে বিষয়গুলি সম্মানিত শরীয়ত উনার খিলাফ।
অথচ হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মহান আল্লাহ পাক উনাকে দেখার বিষয়টি পবিত্র কালামুল্লাহ শরীফ উনার মহাপবিত্র আয়াত শরীফ দ্বারাই সুস্পষ্ট ভাবে প্রমাণিত এবং হযরত ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু, হযরত আনাস ইবনে মালিক রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু, হযরত আবূ হুরায়রা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু, হযরত আবূ উবাইদাহ ইবনে জাররাহ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু, হযরত ইবনে আইশ হাদ্বরামী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু, হযরত ইকরামা রহমতুল্লাহি আলাইহি, হযরত ইমাম হাসান বছরী রহমতুল্লাহি আলাইহি, হযরত ইব্রাহীম ইবনে তহমান রহমতুল্লাহি আলাইহি, হযরত ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল রহমতুল্লাহি আলাইহি, হযরত ইবনে খুজাইমা রহমতুল্লাহি আলাইহি সহ অসংখ্য হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম, হযরত তাবিয়ীন রহমতুল্লাহি আলাইহিম, হযরত তাবে তাবিয়ীন রহমতুল্লাহি আলাইহিম এবং অসংখ্য উলামায়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনারা বর্ণনা করেছেন এবং এ বিষয়ে ঐক্যমত পোষণ করেছেন যে, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি অবশ্যই মহান আল্লাহ পাক উনাকে সরাসরি নূরুল মুনাওওয়ার তথা বাহ্যিক চক্ষু মুবারক দ্বারাই দেখেছেন।
তাহলে এত সংখক নির্ভরযোগ্য বর্ণনার বিপরিতে কিভাবে শুধু মাত্র কয়েকজন দ্বয়ীফ রাবী কর্তৃক বর্ণিত বর্ণনা শুদ্ধ হতে পারে? আসলেই আম্মাজান উম্মুল মু’মিনীন আছ ছালিছা হযরত ছিদ্দীক্বা আলাইহাস সালাম উনার থেকে কোন অবস্থাতেই এরূপ বর্ণনা থাকতে পারেনা। কারণ উপরোক্ত দ্বয়িফ ও মাওকূফ বর্ণনার বক্তব্যগুলো সরাসরী ইসলামী শরীয়ত উনার খিলাফ। আবার উম্মুল মু’মিনীন আছ ছালিছা হযরত ছিদ্দীক্বা আলাইহাস সালাম তিনি নিজেই উক্ত বর্ণনার বিপরিতে সহীহ সনদে পবিত্র মারফু’ হাদীছ শরীফ বর্ণনা করেছেন। কাজেই উপরোক্ত বর্ণনাটি অবশ্যই মাওজু হাদীছের অর্ন্তভুক্ত।
একথা সর্বজন স্বীকৃীত যে অনেক বড় বড় তাফসীর শরীফ, হাদীছ শরীফ ও ফিক্বাহর কিতাব সমূহে অসংখ্য ইজরাঈলী রেওয়ায়েত পাওয়া যায়, যা সরাসরী পবিত্র ক্বুরআন শরীফ, পবিত্র সুন্নাহ শরীফ তথা আহলে সন্নাত ওয়াল জামায়ত উনার আক্বীদার খিলাফ। যা ইহুদী, নাসারা ও মুনাফিকরা গভীর ষরযন্ত্র করে বড় বড় কিতাব সমূহে ঢুকিয়ে দিয়েছে। যেমন: বুখারী শরীফে রয়েছে, হযরত উম্মাহাতুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম উনারা (حِزْبَيْنِ) দু-দলে বিভক্ত ছিলেন। নাঊযূবিল্লাহ! আর ছিহাহ ছিত্তাহ কিতাব সমূহে বর্ণিত হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহু আলাইহিস সালাম উনার শরাব পান সংক্রান্ত বর্ণনা, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার আত্মহত্যা করতে চাওয়া সংক্রান্ত বর্ননা উপরোক্ত মাওকূফ বর্ণনা এবং অনুরুপ আরো অনেক বর্ণনা।
কাজেই বহু সংখক নির্ভরযোগ্য রাবী কর্তৃক বর্ণিত ও নির্ভরযোগ্য বর্ণনার বিপরিতে যখনই কোন রেওয়ায়েত বা বার্ণনা পাওয়া যাবে তখনই বুঝতে হবে উক্ত বর্ণনাটি সন্দেহ যুক্ত এবং অগ্রহনযোগ্য। সুতরাং আম্মাজান উম্মুল মু’মিনীন আছ ছালিছা হযরত ছিদ্দীক্বা আলাইহাস সালাম উনার নাম মুবারকে জাল কৃত উক্ত বর্ণনাটি সরাসরী পবিত্র ক্বুরআন শরীফ উনার খিলাফ। সাথে সাথে অসংখ্য রাবী কতৃক বর্ণিত বর্ণনারও খিলাফ। যা নি:সন্দেহে কোন ষরযন্ত্র কারীদের ষরযন্ত্র মূলক বর্ণনা বা মাওজুর অর্ন্তভুক্ত।
উপরোক্ত বর্ণনাটি যে মাওজু’ তার অন্যতম একটি প্রমাণ হলো উক্ত বর্ণনায় সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার ইলমে গায়েবকে অস্বীকার করা হয়েছে। অথচ অসংখ্য সম্মানিত ও পবিত্র আয়াত শরীফ ও অসংখ্য মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাদীছ শরীফ তথা অসংখ্য দলীলে ক্বতয়ী দ্বারাই ইলমে গায়েব ছাবিত রয়েছে। এমনকি স্বয়ং আম্মাজান উম্মুল মু’মিনীন আছ ছালিছা হযরত ছিদ্দীক্বা আলাইহাস সালাম উনার নিজের থেকেও ইলমে গায়ব সংক্রান্ত মারফূ’ হাদীছ শরীফ বর্ণিত হয়েছে।
উপরোক্ত বর্ণনাটি যে মাওজু, তার আরো একটি প্রমাণ হলো- উক্ত বর্ণনায় সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি মহাপবিত্র মি’রাজ শরীফে গিয়ে হযরত জিবরীল আলাইহিস সালাম উনাকে দেখেছেন বলে বর্ণনা করা। কারণ হযরত জিবরীল আলাইহিস সালাম তিনি ২৩ বছর নবুওয়াতী জিন্দীগী মুবারকে ২৪ হাজার বার হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মুবারক সোহবত শরীফে এসেছেন ও সারা জীবন উনার মুবারক গোলামী করেছেন। অর্থাৎ হযরত জিবরীল আলাইহিস সালাম তিনি হচ্ছেন গোলাম। আর নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি হচ্ছেন মালিক। মালিক গোলামের সাক্ষাতের জন্য পবিত্র আরশে মুয়াল্লায় যাবেন এটা কোন অবস্থাতেই গ্রহনযোগ্য হতে পারে না। কাজেই উপরোক্ত কুরআন শরীফ ও সুন্নাহ শরীফ বিরুধী বর্ণনাটি আম্মাজান উম্মুল মু’মিনীন আছ ছালিছা হযরত ছিদ্দীক্বা আলাইহাস সালাম উনার কতৃক বর্ণিত রেওয়ায়েত নয় বরং ইহা উনার নাম মুবারকে বানানো একটি মিথ্যা বর্ণনা, যা ইজরাঈলী বর্ণনার অর্ন্তভুক্ত ।
উপরোক্ত বর্ণনাটি যে মাওজু, তার অরো একটি প্রমান হলো- উক্ত বর্ণনায় আম্মাজান উম্মুল মু’মিনীন আছ ছালিছা হযরত ছিদ্দীক্বা আলাইহাস সালাম উনার শান মুবারকে বলা হয়েছে যে তিনি প্রশ্ন করার পরে বলেছেন যে لَقَدْ قَفَّ شَعَرِيْ مِمَّا قُـلْتَ “আপনার কথা শুনে আমার চুল মুবারক শুকিয়ে গেল!” এ বক্তব্য। প্রশ্নকারী প্রশ্ন করবেন এটাই স্বভাবিক বিষয়, কিন্তু প্রশ্ন শুনেই আম্মাজান উম্মুল মু’মিনীন আছ ছালিছা হযরত ছিদ্দীক্বা আলাইহাস সালাম তিনি এরূপ কথা বলবেন বা এরূপ ব্যবহার করবেন এটা অবশ্যই উনার শান মুবারক উনার খিলাফ। কাজেই উপরোক্ত কুরআন শরীফ ও সুন্নাহ শরীফ বিরোধী বর্ণনাটি একটি মিথ্যা বর্ণনা, জাল হাদীছ বা ইজরাঈলী বর্ণনার অর্ন্তভুক্ত তা আর বলারই অপেক্ষা রাখে না।
উল্লেখ্য যে আম্মাজান উম্মুল মু’মিনীন আছ ছালিছা হযরত ছিদ্দীক্বা আলাইহাস সালাম উনার শান মুবারকে সরাসরী নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেছেন-
خُذُوْا نِصْفَ دِيْنِكُمْ عَنْ هٰذِهِ الْـحُمَيْـرَاءِ
অর্থ: তোমরা উম্মুল মু’মিনীন আছ ছালিছা হযরত ছিদ্দীক্বা আলাইহাস সালাম উনার কাছ থেকে সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার পরিপূর্ণ ইলম অর্জন করো। (তাফসীরুল মুরাগী ১৩/১১৪)
এ মহাসম্মানিত মহাপবিত্র হাদীছ শরীফ থেকে সুস্পষ্ট ভাবেই বুঝা যাচ্ছে যে, আম্মাজান উম্মুল মু’মিনীন আছ ছালিছা হযরত ছিদ্দীক্বা আলাইহাস সালাম তিনি সমস্ত ইলম উনার মালিকা বা অধীকারীনী। তাহলে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি যে মহান আল্লাহ পাক উনাকে সরাসরী দেখেছেন, এবং হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি যে সমস্ত ইলমে গায়েব উনার মালিক এ সংক্রান্ত সমস্ত ইলম অবশ্যই উনার ছিল। (যা উনার কর্তৃক মারফূ’ সনদে বর্ণিত হয়েছে)। কাজেই মহান আল্লাহ পাক উনাকে সরাসরী দেখার বিষয়ে এবং ইলমে গায়েব উনার বিষয়ে কোন মতেই তিনি ভিন্ন মত পোষন করতে পারেন না। সুতরাং এ মাওকূফ বর্ণনাটি উনার থেকে বর্ণিত নয় বরং ইহা অবশ্যই মাওজু বর্ণনা ।
মুত্বহহার, মুত্বহরি, আছছমাদ, আহলু বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাইয়্যিদুনা মামদূহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি মহাপবিত্র নূরুস সালাম মুবারকে ইরশাদ মুবারক করেন- “মহাসম্মানিত মহাপবিত্র হাবীব মাহবূব, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার, হযরত উম্মাহাতুল মুমিনীন আলাইহিন্নাস সালাম উনাদের এবং মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র শান মান মুবারক উনার খিলাফ বর্ননা যত বড় কিতাবেই থাকুক না কেন, যত বড় ইমাম মুজতাহিদ লিখুক না কেন, যত ছহীহ সনদণ্ডই থাকুক না কেন, যত ছিক্বাহ রাবীই বর্ণনা করুক না কেন; সেগুলো বর্ননা বাতিল, সেগুলো পরিত্যাজ্য, সেগুলো মাওযূ। পক্ষান্তরে মহাসম্মানিত শান মান মুবারক প্রকাশের বর্নণাগুলো দ্বয়ীফ হিসেবে বর্ননা থাকলেও সেগুলোই ছহীহ হিসেবে গ্রহণীয় হবে।”সুবহানাল্লাহ!
এটাই মহাসম্মানিত মহাপবিত্র হাদীছ শরীফ উনার বিশুদ্ধ একখানা উছূল মুবারক। সুবহানাল্লাহ!
সুতরাং যত বড় পণ্ডিত, মুফতী, মুহাদ্দিছ, জ্ঞানী, আলিম, ইমাম, খতীব, মুজতাহিদ, মুজাদ্দিদ, গউছ বা কুতূব বা যেকোন হক দাবীদার ওলীআল্লাহ; এককথায় যিনিই হোন না কেন, মহাসম্মানিত শান মানের খিলাফ যেকেউ বললে, লিখলে বা বর্ননা করলে সেটাই পরিত্যাজ্য, অগ্রহণযোগ্য ও মাওযূ হিসেবে সাব্যস্ত হবে।
উম্মুল মু’মিনীন আছ ছালিছা হযরত ছিদ্দীক্বা আলাইহাস সালাম উনার নাম মুবারকে বর্ণিত উক্ত বানানো মাওজু হাদীছ এর ব্যখ্যায় কিতাবে উল্লেখ করা হয়েছে
وَذَهَبَ حَضْرَتْ اِبْنُ عَبَّاسٍ رَضِىَ اللهُ تَـعَالٰى عَنْهُ وَأَكْثَـرُ الْعُلَمَاءِ إِلٰى إِثْـبَاتِ رُؤْيَتِهٖ لَهٗ وَحَضْرَتْ اُمِّ الْـمُؤْمِنِيْنَ الثَّالِثَةِ الصِّدِّيْـقَةِ عَلَيْـهَا السَّلَامُ لَـمْ تَـرَوْ ذٰلِكَ عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ
অর্থ: হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রাদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমা এবং অধিকাংশ উলামায়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনারা হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি যে মহান আল্লাহ পাক উনাকে সরাসরী দেখেছেন সে বিষয়েরই ইতিবাচক বর্ণনা করেছেন। আর উম্মুল মু’মিনীন আছ ছালিছা হযরত ছিদ্দীক্বা আলাইহাস সালাম উনার উক্ত বর্ণনাটি হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার থেকে সরাসরী (মারফু সনদে বর্ণিত) কোন বর্ণনা নয়। (এহইয়াউ উলুমিদ্দীন ৪/৩১২)
উক্ত বানানো মাওজু হাদীছ এর ব্যখ্যায় কিতাবে আরো উল্লেখ করা হয়েছে
قَالَ النَّـوَوِيُّ لَـمْ تَنِفْ حَضْرَتْ اُمُّ الْـمُؤْمِنِيْنَ الثَّالِثَةُ الصِّدِّيْـقَةُ عَلَيْـهَا السَّلَامُ وُقُـوْعَ الرُّؤْيَةِ بِـحَدِيْثٍ مَرْفُـوْعٍ
অর্থ: হযরত ইমাম নববী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন উম্মুল মু’মিনীন আছ ছালিছা হযরত ছিদ্দীক্বা আলাইহাস সালাম তিনি দীদারে ইলাহী সংক্রান্ত বিষয়ে হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার থেকে সরাসরী কোন মারফু সনদে বর্ণনা পেশ করেননি। (ফতহুল বারী ৮/৬০৭)
উক্ত বানানো মাওজু হাদীছ এর ব্যখ্যায় কিতাবে আরো উল্লেখ করা হয়েছে
وَلَـمْ تَـحِكْ حَضْرَتْ اُمُّ الْـمُؤْمِنِيْنَ الثَّالِثَةُ الصِّدِّيْـقَةُ عَلَيْـهَا السَّلَامُ أَنَّ النَّبِـيَّ صلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَخَبَـرَهَا أَنَّهٗ لَـمْ يَـرَ رَبَّهٗ وَإِنَّـمَا تَأَوَّلَتِ الْاٰيَةُ اِنْـتَـهٰى
অর্থ: (হযরত ইমাম ইবনু খুযায়মা রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন) উম্মুল মু’মিনীন আছ ছালিছা হযরত ছিদ্দীক্বা আলাইহাস সালাম তিনি এমন কোন ঘটনা বর্ণনা করেন নি যে, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি নিজেই উনাকে বলেছেন, যে মহান আল্লাহ পাক উনাকে তিনি দেখেন নি। বরং তিনি নিজের থেকেই মহাপবিত্র আয়াত শরীফ উনার ব্যাখ্যা করেছেন (ফতহুল বারী ৮/৬০৭, কিতাবুত তাওহীদ)
উক্ত বানানো মাওজু হাদীছ এর ব্যখ্যায় কিতাবে আরো উল্লেখ করা হয়েছে-
عَنِ الْـمَرُوْزِيِّ قُـلْتُ لِأَحْمَدَ إِنَّـهُمْ يَـقُوْلُوْنَ إِنَّ حَضْرَتْ اُمَّ الْـمُؤْمِنِيْنَ الثَّالِثَةَ الصِّدِّيْـقَةَ عَلَيْـهَا السَّلَامُ قَالَتْ مَنْ زَعَمَ أَنَّ سَيِّدَنَا مُـحَمَّدًا صلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ رَأَى رَبَّهٗ فَـقَدْ أَعْظَمَ عَلَى اللهِ الْفِرْيَةَ فَبِأَيِّ شَيْءٍ يَدْفَعُ قَـوْلُـهَا قَالَ بِقَوْلِ النَّبِـيِّ صلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ رَأَيْتُ رَبِّـيْ
অর্থ: হযরত ইমাম মারূযী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার থেকে বর্ণিত তিনি বলেন আমি হযরত ইমাম আহমদ বিন হাম্বল রহমতুল্লাহি আলাইহি উনাকে প্রশ্ন করেছিলাম যে, অনেকেই বলে থাকেন- উম্মুল মু’মিনীন আছ ছালিছা হযরত ছিদ্দীক্বা আলাইহাস সালাম তিনি বর্ণনা করেছেন-“ যে ব্যক্তি বলবে যে, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি মহান আল্লাহ পাক উনাকে দেখেছেন, সে ব্যক্তি মহান আল্লাহ পাক উনার প্রতি অপবাদ আরোপ করল”। কোন দলীলের ভিত্তিতে এ বিষয়টি রদ করবেন? উত্তরে হযরত ইমাম আহমদ বিন হাম্বল রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন- হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি নিজেই ইরশাদ মুবারক করেছেন- “আমি মহান আল্লাহ পাক উনাকে দেখেছি”। উনার এ মুবারক ক্বওল শরীফ দ্বারা (না দেখার বর্ণনাটি রদ হয়ে যায়)। (ফতহুল বারী ৮/৬০৮)
অর্থৎ উম্মুল মু’মিনীন আছ ছালিছা হযরত ছিদ্দীক্বা আলাইহাস সালাম উনার নাম মুবারকে চালিয়ে দেয়া উক্ত মাওকূফ বর্ণনাটি মারফূ’ হাদীছ শরীফ দ্বারা রদ বা বাতিল হয়ে যায়।
কিতাবে আরো বর্ণিত হয়েছে-
وَالْـحَاصِلُ أَنَّ الْـمُرَادَ بِالْاٰيَةِ الْاِحَاطَةُ بِهٖ عِنْدَ رُؤْيَتِهٖ، لَا نَـفٰي أَصْلُ رُؤْيَتِهٖ
অর্থ: মূল কথা হচ্ছে (পবিত্র কালামুল্লাহ শরীফে বর্ণিত لا تُدْرِكُهُ الْأَبْصارُ ৬ : ১০৩) (চক্ষুসমূহ উনাকে উপলব্ধি করতে পারবে না) এ মহাপবিত্র আয়াত শরীফ উনার মূল উদ্দেশ্য হলো মহান আল্লাহ পাক উনাকে বান্দা বান্দিরা হাক্বীক্বী বা পরিপূর্ণরূপে আয়ত্ব বা উপলব্ধি করতে পারবে না। মূলত: এ মহাপবিত্র আয়াত শরীফ উনার মধ্যে মহান আল্লাহ পাক উনার দীদার মুবারক লাভ করার বিষয়কে নফী করা হয়নি। (সুবুলুল হুদা ওয়ার রসাদ ফী সীরতি খইরুল ইবাদ ৩/৬১)
কিতাবে আরো বর্ণিত হয়েছে-
فَالْـحَاصِلُ: أِنَّ الرَّاجِحَ عِنْدَ أَكْثَرِ الْعُلَمَاءِ أَنَّ النَّبِيَّ صلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ رَأَى رَبَّهٗ بِعَيْـنَيْ رَأْسِهٖ لَيْـلَةَ الْإِسْرَاءِ
অর্থ: মূল কথা হচ্ছে অধিকাংশ উলামায়ে কিরাম গণের নিকট প্রাধান্য প্রাপ্ত মত হচ্ছে, নিশ্চয়ই সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি পবিত্র মিরাজ শরীফ উনার রাতে মহান আল্লাহ পাক উনাকে সরাসরী বাহ্যিক চক্ষু মুবারক দ্বারা দেখেছেন। (ফাতওয়া আশ শায়খ কাশক ১৬/৩)
কিতাবে আরো বর্ণিত হয়েছে-
رَوٰى اِبْنُ عَبَّاسٍ رَضِيَ اللهُ تَـعَالٰى عَنْهُ فِـيْ قَـوْلِهٖ تَـعَالٰى: (وَمَا جَعَلْنَا الرُّؤْيَا الَّتِي أَرَيْـنَاكَ إِلَّا فِتْـنَةً لِّلنَّاسِ) [سورة الإسراء: ৬০] قَالَ: هِيَ رُؤْيَا عَيْنٍ أُرِيْـهَا رَسُوْلُ اللهِ صلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لَيْـلَةَ أسْرٰي بِهٖ
অর্থ: হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রাদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমা তিনি বর্ণনা করেন (মহাপবিত্র সূরা বাণী ঈসরাঈল উনার ৬০ নং মহাপবিত্র আয়াত শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত-হে আমার হাবীব ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া ছাল্লাম আমি আপনাকে মহাপবিত্র মি’রাজ শরীফ উনার মধ্যে আমার দীদার মুবারক দান করেছি উহা দ্বারা মানুষকে পরীক্ষা করার জন্য) অত:পর হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রাদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমা তিনি বলেন, নিশ্চয়ই সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি পবিত্র মিরাজ শরীফ উনার রাতে মহান আল্লাহ পাক উনাকে সরাসরী বাহ্যিক চক্ষু মুবারক দ্বারাই দেখেছেন। (ফাতওয়া আশ শায়খ কাশক ১৬/২)
উপরোক্ত সকল দলীল ভিত্তিক বর্ণনা দ্বারা এ বিষয়টি সুস্পষ্ট ভাবেই প্রমাণিত যে, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি অবশ্যই খ¦লিক্ব, মালিক, রব, মহান আল্লাহ পাক রব্বুল আলামীন উনার দায়েমী দীদার মুবারক লাভ করেছেন তথা মহান আল্লাহ পাক উনাকে সরাসরী বাহ্যিক চক্ষু মুবারক দ্বারাই দেখেছেন।
এবং মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র আম্মাজান উম্মুল মু’মিনীন আছ ছালিছা হযরত ছিদ্দীক্বা আলাইহাস সালাম উনার নাম মুবারকে জাল কৃত উক্ত বর্ণনাটি সরাসরী পবিত্র ক্বুরআন শরীফ উনার খিলাফ, স্বয়ং উনার নিজের বর্ণিত মারফূ’ হাদীছ শরীফ উনার খিলাফ। সাথে সাথে অসংখ্য রাবী কতৃক বর্ণিত নির্ভরযোগ্য বর্ণনারও খিলাফ। যা নি:সন্দেহে কোন ষড়যন্ত্র কারীদের ষরযন্ত্র মূলক বর্ণনা তথা ইজরাঈলী রেওয়ায়েত বা মাওজু বর্ণনা এর অর্ন্তভুক্ত।
মহান আল্লাহ পাক তিনি এ বিষয়ে কুল-উম্মাহকে ছহীহ সমঝ এবং সর্বোচ্চ হুসনে যন নছীব করুন। (আমীন)
-হাফিযুল হাদীছ মুফতী মুহম্মদ ফদ্বলুল হক।