সব প্রশংসা মুবারক যিনি খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক উনার জন্য। সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়ীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রতি অফুরন্ত ছলাত শরীফ ও সালাম মুবারক।
মুসলমান হওয়াটা যে কত সর্বোত্তম, সম্মানিত, সমৃদ্ধ ও ছহীহ এবং অনিবার্য বিষয়- সে বোধ আজ মুসলমানদের মাঝে নেই। মুসলমান মানেই হচ্ছেন- উম্মতে হাবীবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। যাঁর উসীলায় মুসলমান লাভ করেন তাওহীদ শরীফ, রিসালত শরীফ উনার ইলম, হালাল-হারাম উনার ইলম, শরয়ী হুকুম আহকাম উনার ইলম, জাহান্নাম-জান্নাত সম্পর্কিত ইলম, মোয়ামেলাত, মোয়াশেরাত ইত্যাদি সব কিছুর ইলম ও আমল। এসব কিছুর লক্ষ্য মূলত মহান আল্লাহ পাক উনার মুহব্বত, মা’রিফাত ও সন্তুষ্টি মুবারক লাভের অভিপ্রায়। আর মহান আল্লাহ পাক উনার মুহব্বত, মা’রিফাত হাছিলের মূল মাধ্যম হচ্ছেন- আখিরী রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মুহব্বত, মা’রিফাত, নিসবত, তাওয়াল্লুক অর্জন। আর সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়ীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মুহব্বত-মা’রিফাত, নিসবত, তাওয়াল্লুক লাভের একমাত্র মাধ্যম হলেন- উনার মহাসম্মানিত আহলে বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালামগণ উনাদের প্রতি তা’যীম-তাকরীম, হুসনে যন, নিসবত, তাওয়াল্লুক, স্মরণ, মূল্যায়ন তথা মুহব্বত মা’রিফাত অর্জন।
মহান আল্লাহ পাক তিনি হযরত আহলে বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম ও আওলাদে রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের সুমহান ফযীলত সম্পর্কে ইরশাদ মুবারক করেন, “হে আমার হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আপনি (উম্মতদেরকে) বলুন, আমি তোমাদের নিকট কোনো প্রতিদান চাই না। (আর তোমাদের পক্ষে তা দেয়াও সম্ভব নয়) তবে যেহেতু তোমাদের ইহকাল ও পরকালে নাজাত লাভ করতে হবে, মুহব্বত-মা’রিফাত, রেযামন্দি মুবারক হাছিল করতে হবে সেহেতু তোমাদের দায়িত্ব কর্তব্য হচ্ছে- আমার নিকটজন তথা হযরত আহলে বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম ও আওলাদ আলাইহিমুস সালামগণ উনাদের প্রতি তোমরা সদাচরণ করবে।” (পবিত্র সূরা শূরা শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ২৩)
‘পবিত্র তিরমিযী শরীফ’ ও ‘পবিত্র মিশকাত শরীফ’ উনাদের মধ্যে বর্ণিত আছে, “হযরত জাবির রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বলেন, আমি সাইয়্যিদুনা রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে দেখেছি, তিনি পবিত্র বিদায় হজ্জে সম্মানিত আরাফা উনার দিন ‘কাসওয়া’ নামক উষ্ট্রীর উপর সওয়ার অবস্থায় খুতবা মুবারক প্রদান করছেন। আমি শুনেছি, তিনি খুতবা মুবারক উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক করেছেন, হে লোক সকল! আমি তোমাদের মাঝে এমন নিয়ামত মুবারক রেখে যাচ্ছি, তোমরা যদি শক্তভাবে ধরে রাখো, তবে কখনো গুমরাহ হবে না। তা হলেন- মহান আল্লাহ পাক উনার কিতাব মুবারক ও আমার ইতরাত তথা হযরত আহলে বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম।” সুবহানাল্লাহ!
পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে, “হযরত বারা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বলেন, আমি নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে দেখেছি যে, তিনি হযরত ইমামুছ ছানী মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে নিজের কাঁধ মুবারক অর্থাৎ উনার উপর রেখে বলছেন, আয় মহান আল্লাহ পাক! আমি উনাকে মুহব্বত করি, আপনিও উনাকে মুহব্বত করুন।” (মুত্তাফাকুন আলাইহি)
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, সুমহান ও মুবারক ১৫ই শা’বান শরীফ। এদিন হযরত আহলে বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনার অন্যতম হযরত ইমামুছ ছানী মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মহিমান্বিত পবিত্র বিলাদত শরীফ গ্রহণের সুমহান ও বরকতময় দিন।
হযরত ইমামুছ ছানী মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ৩য় হিজরী সনের ১৫ই শা’বান শরীফ ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) বাদ আছর পবিত্র বিলাদত শরীফ গ্রহণ করেন।
আখিরী রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি উনার পবিত্র বিলাদত শরীফ গ্রহণের পর উনাকে কোল মুবারক-এ তুলে নিয়ে উনার ডান কান মুবারকে আযান এবং বাম কান মুবারক-এ ইকামত দেন। অতঃপর মধু দিয়ে তাহনীক করান। এবং সপ্তম দিনে এক জোড়া দুম্বা কুরবানী করেন এবং উনার মাথা মুবারক-এর চুল মুবারক মু-ন করে উক্ত চুল মুবারক উনার ওজনে রূপা দরিদ্র ও অভাবীদের মাঝে বিতরণ করেন। আর তখন হতেই মাথার চুলের ওজনে ছদকা দেয়া ও আকীক্বা করা একটি সুন্নত মুবরকে পরিণত হয়।
আখিরী রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইমামুছ ছানী মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র নাম মুবারক রাখেন হযরত হাসান আলাইহিস সালাম। জাহিলিয়্যাতের যুগে যে নাম পূর্বে কখনো ব্যবহৃত হয়নি। কুনিয়াত হিসেবে ‘আবু মুহাম্মাদ’ নাম মুবরকটিকে উনার জন্য গ্রহণ করলেন। আর এটাই হলো উনার একমাত্র কুনিয়াত। উনার লক্বব বা উপাধি মুবারকসমূহের মধ্যে সিবতু রসূল্লিল্লাহ, সাইয়্যিদ, যাকি, মুজতবা উল্লেখযোগ্য; এরমধ্যে সবচেয়ে প্রসিদ্ধ লক্বব বা উপাধি মুবারকটি হচ্ছে মুজতবা।
হযরত ইমামুছ ছানী মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি শৈশবের প্রায় সাড়ে ৭টি বছর নিজের নানাজান নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মহিমান্বিত ছোহবতে কাটিয়েছেন। আখিরী রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি উনাকে বেমেছাল মুহব্বত করতেন। এমনভাবে যে, উনাকে কাঁধ মুবারক-এ নিয়ে বলতেন, “হে মহান আল্লাহ পাক! আমি উনাকে মুহব্বত করি আপনিও উনাকে মুহব্বত করুন। যে ব্যক্তি হযরত ইমামুছ ছানী মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে এবং হযরত ইমামুছ ছালিছ মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদেরকে মুহব্বত করে, তারা প্রকৃতপক্ষে আমাকে মুহব্বত করে। আর যে ব্যক্তি উনাদের সাথে হিংসা করবে এবং উনাদের সাথে শত্রুতা করবে তারা প্রকৃতপক্ষে আমার সাথে শত্রুতা করেছে।” নাঊযুবিল্লাহ!
যখন আমিরুল মু’মিনীন, ইমামুল আউওয়াল, আসাদুল্লাহিল গালিব হযরত হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম তিনি কুফায় পবিত্র মসজিদে আঘাত প্রাপ্ত হয়ে গুরুতর আহত হলেন, তখন হযরত ইমামুছ ছানী মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নির্দেশ মুবারক-এ পবিত্র নামায উনার ইমামতি করেন এবং তিনি জীবনের শেষ মুহূর্তেও হযরত ইমামুছ ছানী মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে নিজের স্থলাভিষিক্ত হিসেবে পরিচয় করিয়ে যান।
হযরত ইমামুছ ছানী মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ত্রিশ বছরের খাছ খিলাফত মুবারক উনার পঞ্চম খলীফা। তিনি উনার পিতা ইমামুল আউওয়াল সাইয়্যিদুনা হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম উনার পর প্রায় ৬ মাস খিলাফত পরিচালনা করেন।
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, পবিত্র দ্বীন ইসলাম উনার পঞ্চম খলীফা, সাইয়্যিদুশ শুহাদা, সাইয়্যিদু শাবাবি আহলিল জান্নাহ, আহলু বাইতিন নাবিইয়ি, আওলাদু রসূলিল্লাহ, সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুছ ছানী মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার আলোচনা মুবারক করলে উম্মাহর মাঝে তথা বাংলাদেশের ৯৭ ভাগ অধিবাসী মুসলমানের মাঝে উনার অব্যক্ত, অনুপম প্রভাব মুবারক পড়তো। প্রতিফলন হতো। অব্যক্ত অশেষ রহমত নাযিল হতো। তাতে করে এদেশবাসীর মাঝে দুর্নীতি থেকে সব সামাজিক ব্যাধি দূর হতো। ব্যক্তি, সমাজ ও সরকার কলুষমুক্ত হতো।
বলাবাহুল্য, এরকম সহজলভ্য এবং স্বতঃর্স্ফূত রহমত থেকে বঞ্চিত করে বিকৃত মানসিকতায় প্রবাহিত করার দায়ভার ৯৭ ভাগ মুসলমান অধ্যুষিত দেশের সরকার কিছুতেই এড়াতে পারে না।
৯৭ ভাগ মুসলমান অধ্যুষিত দেশ শুধু উৎপাদন, বণ্টন এবং কথিত মৌলিক চাহিদা পূরণ নিয়েই ব্যস্ত থাকতে পারে না। দেশের ৯৭ ভাগ অধিবাসী মুসলমান উনাদের মাঝে নিজেদের জীবনের মূল দর্শন বিস্তার করাও অবিচ্ছেদ্য ও অনিবার্য।
দেশের ৯৭ ভাগ অধিবাসী মুসলমান উনাদের মাঝে এ চেতনা বিস্তার করা জরুরী যে- মুসলমানের জীবন হলো মুহব্বতভিত্তিক। মুহব্বতে ফানা হয়ে বাক্বা লাভ করাই জীবনের ব্যাপকতা ও সফলতা।
আর তা অবশ্যই আখিরী রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার এবং হযরত আহলে বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম তথা আওলাদে রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের মাঝে। সুবহানাল্লাহ!
সঙ্গতকারণেই তাই বলতে হয়- ১৫ই শা’বান শরীফ পবিত্র দ্বীন ইসলাম উনার পঞ্চম খলীফা, সাইয়্যিদুশ শুহাদা, সাইয়্যিদু শাবাবি আহলিল জান্নাহ, আহলু বাইতিন নাবিইয়ি, আওলাদু রসূলিল্লাহ, সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুছ ছানী আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র বিলাদত শরীফ দিবস উপলক্ষে প্রত্যেক মুসলিম-অমুসলিম সরকারের জন্য দায়িত্ব-কর্তব্য হচ্ছে- উনার পবিত্র বিলাদত শরীফ দিবস উপলক্ষে বাধ্যতামূলক ছুটি ঘোষণা করা। এবং বিশেষ সরকারি খরচে ব্যাপক জওক-শওকের সাথে দিবস মুবারকটি যথাযথভাবে পালন করা।
মূলত, এসব দায়িত্ববোধ আসে পবিত্র দ্বীন ইসলামী অনুভূতি ও প্রজ্ঞা থেকে। আর তার জন্য চাই নেক ছোহবত তথা ফয়েজ-তাওয়াজ্জুহ মুবারক। যামানার ইমাম ও মুজতাহিদ, যামানার মুজাদ্দিদ, মুজাদ্দিদে আ’যম আলাইহিস সালাম উনার নেক ছোহবত মুবারক লাভে তথা উনার যথাযথ খিদমত ও তা’যীম তাকরীমেই সে মহান ও অমূল্য নিয়ামত হাছিল সম্ভব। কারণ বর্তমান যামানায় উনিই হচ্ছেন সাইয়্যিদু শাবাবি আহলিল জান্নাহ হযরত ইমামুছ ছানী আলাইহিস সালাম উনার লক্ষ্যস্থল আওলাদ শরীফ। সুবহানাল্লাহ!
খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক তিনি আমাদেরকে তা নছীব করুন। (আমীন)
-আল্লামা মুহম্মদ মাহবুবুর রহমান।
ব্রিটিশ গুপ্তচরের স্বীকারোক্তি ও ওহাবী মতবাদের নেপথ্যে ব্রিটিশ ভূমিকা-৫০