মুর্শিদ ক্বিবলা ও মুরীদের সম্পর্ক প্রসঙ্গে (৯৯)

সংখ্যা: ১৫০তম সংখ্যা | বিভাগ:

হযরত মাওলানা মুফ্তী সাইয়্যিদ মুহম্মদ আব্দুল হালীম

 

 

প্রসঙ্গঃ মুর্শিদ ক্বিবলা’র আওলাদ, ফরজন্দকে তাঁরই জাত হিসেবে তাঁর তুল্য সম্মান করবে। তাঁর আত্মীয়দেরকেও পরম ভক্তি-শ্রদ্ধা করবে। মুর্শিদ ক্বিবলা তদ্বীয় আওলাদ ফরজন্দদেরকে কিরূপ মুহব্বত করেন, তাঁদের সাথে তাঁর নিসবত (সম্পর্ক) কিরূপ। আওলাদ ফরজন্দদেরকে মুহব্বত করলে মুর্শিদ ক্বিবলার কি পরিমাণ সন্তুষ্টি ও নৈকট্য পাওয়া যেতে পারে তা জানতে হলে সর্ব প্রথম আহলে বাইত এবং আওলাদে রসূলগণ সম্পর্কে জানতে হবে। তাঁদের মর্যাদা মরতবা সম্পর্কে জ্ঞান হাছিল করা আবশ্যক। তাহলে মুর্শিদ ক্বিবলার আওলাদ-ফরজন্দদের হক্ব আদায় করা তাদের যথাযথ তাজিম-তাকরীম করা সহজ ও সম্ভব হবে ইনশাআল্লাহ।

আহলে বাইতগণের ফযীলত

আল্লাহ পাক তাঁর কালাম পাকে ইরশাদ করেন,

قل لا اسئلكم عليه اجرا الا المودة فى القربى.

অর্থঃ- (হে রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম!) আপনি বলুন, আমি তোমাদের কাছে আমার আত্মীয়তার সৌহার্দ্য তথা আহলে বাইত ও আওলাদে রসূলগণের প্রতি গভীর মুহব্বত রাখা ব্যতীত অন্য কোন প্রতিদান চাই না।” (সূরা শুরা-২৩) তোমরা আহলে বাইত ও আওলাদে রসূলগণের প্রতি গভীর মুহব্বত রাখবে, তাঁদের যথাযথ তাজীম-তাকরীম করবে সেটাই কাম্য। আর কাম্যটাও উম্মতের কল্যানের জন্যই।

আখিরী রসূল, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন

ان مثل اهل بيتى فيكم مثل سفينة نوح من ركبها نجا وتخلف عنها هلك.

অর্থঃ- “আমার আহলে বাইতগণ হলেন তোমাদের জন্য হযরত নূহ আলাইহিস্ সালাম-এর নৌকার মতো। যে তাতে আরোহণ করলো সে রক্ষা পেলো। আর যে পশ্চাতে থাকলো, আরোহণ করলো না সে ধ্বংস হলো।” (আহমদ, মিশকাত শরীফ)

তিনি আরো বলেন,

يا ايها الناس انى تركت فيكم ما ان اخذتم به لن تضلوا كتاب الله وعترتى اهل بيتى.

অর্থঃ- “হে লোক সকল! আমি তোমাদের জন্য এমন দু’টি জিনিস রেখে যাচ্ছি, যদি তাকে শক্তভাবে ধারণ করো, তাহলে কখনও গোমরাহ (পথভ্রষ্ট) হবে না। আর তাহলো- আল্লাহ পাক-এর কিতাব ও আমার ইতরাত অর্থাৎ আহলে বাইত।” (তিরমিযী শরীফ, মিশকাত শরীফ) হাদীছ শরীফে ইরশাদ হয়েছে,

ان رسول الله صلى الله عليه وسلم قال لعلى وفاطمة والحسن والحسين رضى الله تعالى عنهم انا حرب لمن حاربهم وسلم لمن سالمهم.

অর্থঃ- “সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হযরত আলী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু, হযরত ফাতিমা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা, হযরত ইমাম হাসান রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু ও হযরত ইমাম হুসাইন রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু সম্পর্কে বলেন, “যে ব্যক্তি তাঁদের সাথে বিদ্বেষ রাখে মূলত: আমিই তার শত্রু। পক্ষান্তরে যে ব্যক্তি তাঁদের সাথে সদাচারণ করে মূলত: সে আমার সাথেই সদাচারণ করে।” (তিরমিযী শরীফ, মিশকাত শরীফ) সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,

فاطمة بضعة منى فمن اغضبها اغضبنى وفى رواية يريبنى ما ارابها ويؤذينى ما اذاها.

অর্থঃ- “হযরত ফাতিমা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা আমার দেহ মুবারকেরই একটা অংশ। যে তাঁকে রাগান্বিত করে নিশ্চয়ই সে আমাকে রাগান্বিত করে।” অপর একটি বর্ণনায় এসেছে, “সে ব্যক্তি আমার সাথেই শত্রুতা পোষণ করে যে তাঁর (ফাতিমা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা) সাথে শত্রুতা রাখে। আর ঐ জিনিস আমাকে কষ্ট দেয় যে জিনিস তাঁকে (ফাতিমা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা) কষ্ট দেয়।” (বুখারী শরীফ, মুসলিম শরীফ)

احبوا الله لما يغذوكم من نعمة واحبونى لحب الله واحبوا اهل بيتى لحبى.

অর্থঃ- “তোমরা আল্লাহ পাককে মুহব্বত কর। কেননা, তিনি তোমাদেরকে তাঁর নিয়ামতরাজী থেকে খাদ্যসামগ্রী দান করেন। আমাকে মুহব্বত করো আল্লাহ পাক-এর মুহব্বতে। আর আমার মুহব্বতে আহলে বাইতকে মুহব্বত করো।” (তিরমিযী শরীফ, মিশকাত শরীফ) হযরত বারা ইবনে আযিব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বলেন,

رايت النبى صلى الله عليه وسلم والحسن بن على على عاتقه يقول اللهم انى احبه فاحبه.

অর্থঃ- “আমি সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে এমতাবস্থায় দেখলাম যে, তিনি হযরত হাসান ইবনে আলী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুকে স্বীয় কাঁধ মুবারকের উপর রেখে বলতেছেন, “আয় আল্লাহ পাক! আমি তাঁকে মুহব্বত করি, আপনিও তাঁকে মুহব্বত করুন।” (বুখারী শরীফ, মুসলিম শরীফ) অপর বর্ণনায় রয়েছে,

اللهم انى احبهما فاحبهما واحب من يحبهما.

অর্থঃ- “আয় আল্লাহ পাক! আমি তাঁদেরকে (হযরত ইমাম হাসান রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু এবং হযরত ইমাম হযরত হুসাইন রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুকে) মুহব্বত করি, আপনি তাঁদেকে মুহব্বত করুন। আর তাকেও মুহব্বত করুন, যে ব্যক্তি তাঁদের সাথে মুহব্বত রাখে।” (তিরমিযী মরীফ, মিশকাত শরীফ) সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরছালীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,

حسين منى وانا من حسين احب الله من احب حسينا.

অর্থঃ- “হযরত হুসাইন (রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু) আমা হতে আর আমি হযরত হুসাইন রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হতে। মুলতঃ আল্লাহ পাক তাকে মুহব্বত করেন, যে ব্যক্তি হযরত হুসাইন রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুকে মুহব্বত করে।” (তিরমিযী শরীফ, মিশকাত শরীফ) হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বলেন, একদিন আখিরী রসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হযরত ইমাম হাসান ইবনে আলী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুকে স্বীয় কাঁধ মুবারকের উপর বসিয়ে রেখেছিলেন।  তা দেখে এক ব্যক্তি বললেন, হে প্রিয় বৎস! আপনি কতই না উত্তম সাওয়ারীতে আরোহণ করেছেন? তখন আখিরী রসূল, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, আরোহীও তো কতইনা উত্তম।” (তিরমিযী শরীফ, মিশকাত শরীফ) হযরত বুরাইদা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বলেন, একদিন আখিরী রসূল, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাদের সম্মুখে ভাষণ দিচ্ছিলেন। এমতাবস্থায় হঠাৎ হযরত ইমাম হাসান রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু এবং হযরত ইমাম হুসাইন রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু এসে উপস্থিত হলেন। তাঁরা এমনভাবে চলতেছিলেন যেন পড়ে যাচ্ছিলেন। তখন আল্লাহ পাক-এর হাবীব, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম স্বয়ং নিজেই মিম্বর শরীফ হতে নেমে গেলেন এবং তাঁদেরকে উঠিয়ে এনে নিজের সামনে বসালেন।” (সুবহানাল্লাহ) (তিরমিযী শরীফ, আবূ দাউদ শরীফ, নাসায়ী শরীফ, মিশকাত শরীফ) আহলে বাইত এবং আওলাদে রসূলগণ আখিরী রসূল সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর জাতি বা সত্ত্বাগত মুহব্বত প্রাপ্ত। তাঁদের সাথে রয়েছে জাতি বা সত্ত্বাগত নিসবত, সম্পর্ক। যেখানে কারো প্রবেশের কোন সুযোগ নেই। সেই মর্যাদা-মর্তবায় উন্নিত হওয়াও সম্ভব নয়। তবে আহলে বাইত এবং আওলাদে রসূলগণের সাথে যারা তায়াল্লুক রেখেছেন তাঁদেরকে মুহব্বত করেছেন সম্মান ও শ্রদ্ধা করেছেন এবং করবেন তারা তার হিস্সা পেয়েছেন এবং পাবেন। সেক্ষেত্রে যার তায়াল্লুক নিসবত যে পরিমাণ মর্যাদা মর্তবা ও ঠিক সেই পরিমাণ। স্বীয় মুর্শিদ ক্বিবলা’র আওলাদ ফরজন্দের বিষয়টিও অনুরূপ। মুর্শিদ ক্বিবলা’র সাথে তাঁদের রয়েছে জাতি বা সত্ত্বাগত নিছবত। মুহব্বত প্রাপ্তিটাও জাতিগত। কাজেই তাঁদের সাথে যে মুরীদের যেরূপ তায়াল্লুক ও নিছবত পয়দা হবে তার মর্যাদা-মর্তবাও ঠিক সেই পরিমান হবে।

ফিক্বহুল হাদীছ ওয়াল আছার পীর ছাহেব ও মুরীদের সম্পর্ক প্রসঙ্গে (৮৭)

ফিক্বহুল হাদীছ ওয়াল আছার পীর ছাহেব ও মুরীদের সম্পর্ক প্রসঙ্গে (৮৯)

ফিক্বহুল হাদীছ ওয়াল আছার পীর ছাহেব ও মুরীদের সম্পর্ক প্রসঙ্গে (৯০)

ফিক্বহুল হাদীছ ওয়াল আছার পীর ছাহেব ও মুরীদের সম্পর্ক প্রসঙ্গে (৯১)

ফিক্বহুল হাদীছ ওয়াল আছার পীর ছাহেব ও মুরীদের সম্পর্ক প্রসঙ্গে (৯২)