(ক) “আপনি কি ঐ ব্যক্তিকে দেখেননি যে, হযরত ইব্রাহীম আলাইহিস্ সালাম-এর সাথে তাঁর রব সম্পর্কে বিতর্কে লিপ্ত হয়েছিলো। যেহেতু আল্লাহ পাক তাকে কর্তৃত্ব দিয়েছিলেন।” (সূরা বাক্বারা-২৫৮) বর্ণিত আছে, চারজন ব্যক্তিকে তাবত দুনিয়ার কর্তৃত্ব বা রাজত্ব দেয়া হয়েছিলো। তন্মধ্যে দু’জন মুসলমান। হযরত সুলায়মান আলাইহিস্ সালাম ও বাদশাহ সিকান্দার যুলকারনাইন রহমতুল্লাহি আলাইহি। আর বাকি দু’জন কাফির। একজন বখতে নাসার। অপরজন উদ্ধৃত আয়াত শরীফে উল্লিখিত নমরূদ। ১৭শ’ বছর যে দৌদন্ড্য প্রতাপে সারা পৃথিবী রাজত্ব করেছিলো। এক পর্যায়ে সে নিজেকে খোদা দাবী করলো। কুরআন শরীফে বিষয়টি বর্ণিত হয়েছে। “যখন হযরত ইব্রাহীম আলাইহিস্ সালাম বললেন, তিনি আমার প্রতিপালক- যিনি জীবন দেন ও মৃত্যু ঘটান। সে বললো, আমিও তো জীবন দেই ও মৃত্যু ঘটাই। হযরত ইব্রাহীম আলাইহিস্ সালাম বললেন, আল্লাহ পাক সূর্যকে পূর্ব দিক হতে উদয় করেন। তুমি পশ্চিম দিক হতে উদয় করাও তো? অত:পর যে সত্য প্রত্যাখান করেছিলো সে হতবুদ্ধি হয়ে পড়লো। (সূরা বাক্বারা-২৫৮) ক্ষমতার দম্ভে সে এতই স্ফীত হয়েছিলো যে, শকুন বাহিত বাহনে সে ঊর্ধ্বযাত্রা করে আল্লাহ পাক-এর বিরুদ্ধে একটি তীর নিক্ষেপ করলো। আল্লাহ পাক-এর কুদরতে তা রক্তে রঞ্জিত হয়ে ফিরে আসলো। কিন্তু নমরূদও তখন পাকা কেশধারী বৃদ্ধে পরিণত হলো এবং মাটিতে নিক্ষিপ্ত হলো। তথাপি সে আল্লাহ পাককে হত্যা করেছে বলে গর্ব করতে লাগলো। আল্লাহ পাক-এর আরেক কুদরত তার ক্ষেত্রে জাহির হলো। আল্লাহ পাক এক ঝাঁক মশা প্রেরণ করলেন। মশারা নমরূদের লোকজনের রক্ত-গোশ্ত সাবাড় করে দিলো। একটি মশা নমরূদের নাক দিয়ে মাথার ভিতরে থেমে থেমে ঠোকর দিচ্ছিলো। যদিও মশাটি গঠনগত দিক থেকে ছিল অপূর্ণাঙ্গ। কিন্তু তার ঠোকড়েই নতজানু হয়ে পড়ছিলো নমরূদ। মশাকে নিস্তেজ রাখার জন্য সে এক বাদীকে নিয়োগ করলো। সে বাদী নমরূদের মাথায় লাঠি দিয়ে আঘাত করবে। মশা কামড় দিলে, নমরূদ বাদীকে আঘাত করতে বলে। বাদী আঘাত করলে মশা কিছুক্ষণ থেমে থাকে। আবার কামড় দিলে নমরূদ আবার আঘাত করতে বলে। এভাবে একবার মশা জোড়ে কামড় দিলে নমরূদও জোড়ে মাথায় আঘাত দিতে বলে। আর এবার বেশী জোড়ে আঘাত দিতেই নমরূদের মাথাও ফেটে দু’ভাগ হয়ে যায়। সাথে সাথে বের হয়ে যায় সে ল্যাংড়া, কানা মশা। ১৭শ’ বছর সারা পৃথিবী রাজত্বকারী, খোদা দাবীকারী নমরূদকে শেষ করে দিতে মহান আল্লাহ পাক-এর একটা আদনা কানা-খোড়া মশাও ব্যায় হলো না। (সুবহানাল্লাহ)
(খ)
সাম্রাজ্যবাদী মার্কিন যুক্তরাস্ট্র তথা প্রেসিডেন্ট বুশের ঔদ্ধত্ব যেন নমরূদের কাছাকাছি পর্যায়ে পৌঁছেছে। আজ একে হুমকি কাল ওকে ধাপকি, আজ এ মুসলিম রাষ্ট দখল কাল ও মুসলিম রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা এখন তার নিত্যনৈমিক্তিক ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। ইরাক দখল, আফগানিস্তান ধ্বংসের পর মক্কা শরীফে বোমা হামলার ঘোষণাও তারা দিয়েছে। সমস্ত মুসলিম বিশ্বকে করায়ত্ত করার হিংস্র আস্ফালনে তারা উম্মত্ত হয়েছে। কিন্তু মুসলমানরা যে আল্লাহ পাককে মানেন, সে আল্লাহ পাক যে নিমিষে তাদের সব মিথ্যা গর্ব আর হুমকি কিভাবে ধূলায় ধূসারিত করে দিতে পারেন; গত ২৯ আগস্ট-২০০৫ ঈসায়ী আঘাত হানা হ্যারিকেন ক্যাটারিনা এবং গত ২৪ সেপ্টেম্বর-২০০৫ ঈসায়ী আঘাত হানা হ্যারিকেন রিটা তার নগন্য উদাহরণ মাত্র।
(গ) হ্যারিকেন ক্যাটারিনা ও রিটা কি?
বাংলাদেশের মানুষ ঘুর্ণিঝড়ের সাথে পরিচিত। সামুদ্রিক ঘুর্ণিঝড়কে বিষুবরেখার কাছে প্রশান্ত মহাসাগর কিংবা আটলান্টিক মহাসাগরে হ্যারিকেন, ভারত মহাসাগরের সাইক্লোন আর পশ্চিম প্রশান্ত মহাসাগর কিংবা চীন সাগরে যে টাইফুন বলা হয়, সে কথা সবার জানা। প্রচন্ড ঘুর্ণিঝড়ের সাথে সামুদ্রিক জলোচ্ছাসের মিশ্রণকেই ইংরেজিতে হ্যারিকেন বলে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে আঘাত হানা হ্যারিকেনগুলো বিভিন্ন নামে উল্লিখিত হয়। কোন ঝড়কে সুনির্দিষ্ট করে চিনতে ঝড়ের এসব নামকরণ করা হয়।
ঝড়ের নাম নারীর নামে কেন?
যতুদূর জানা যায়, উনিশ শতকের শেষভাগে অস্ট্রেলীয় এক আবহাওয়াবিদ ঘুর্ণিঝড়কে নারী নামে চিহ্নিত করতে থাকেন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ-পরবর্তী সময়ে আবহাওয়াবিদরা এক্ষেত্রে নিজের স্ত্রী অথবা গালফ্রেন্ডের নাম ব্যবহার করতে থাকেন। যুক্তরাষ্টের ঝড়ের নামগুলো নারীর নামে নামকরণ হওয়ার কিছু সুনির্দিষ্ট কারণ রয়েছে। প্রথমত: একটি ঝড়কে সুর্নিদিষ্ট করে চিনতে ঝড়ের নাম দেয়া হয়। যুক্তরাষ্ট্র ১৯৫১ সাল থেকে বর্ণমালা অনুসারে ঝড়ের নাম রাখতে শুরু করে। এর দু’বছর পর আন্তজার্তিক বর্ণমালায় পরিবর্তন আসায় ঝড়ের নাম দেয়ার ক্ষেত্রে ওই পদ্ধতি বাতিল করা হয়। ১৯৫৩ সাল থেকে যুক্তরাষ্ট্র নারীর নাম অনুসারে হ্যারিকেনের নাম রাখতে শুরু করে। এর আগে পুরুষের নাম অনুসারে কয়েকটি ঝড়ের নাম অ্যাবেল, বাকের এবং চার্লি রাখা হয়েছিলো। যুক্তরাষ্ট্রে ঝড়ের নাম দেয়ার জন্য ২১টি নামের ছয়টি তালিকা রয়েছে। প্রতি ছয় বছর পর পর একটি তালিকা ব্যবহার করা হয়। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, ২০০৫ সালে যে দু’টি ঝড়ের নাম রাখা হয়েছে ক্যাটরিনা এবং রিটা ২০১১ সালের আগ পর্যন্ত আর কোন ঝড়ের এ নাম রাখা হবে না। ২০১১ সালে আবার যুক্তরাষ্ট্রে হ্যারিকেন আঘাত হানলে সে ক্ষেত্রে এ নাম ব্যবহার করা হবে। তবে কোন ঝড় যদি ব্যাপক ধ্বংসাত্মক হয়ে উঠে তাহলে পরবর্তী সময়ে নামকরণের ক্ষেত্রে ওই নামটি বাদ দেয়া হয় এবং তালিকা থেকে নামকরণের জন্য অন্য একটি নাম নেয়া হয়। তবে এখন পর্যন্ত তালিকার ওই ২১টি নাম ব্যবহারের প্রয়োজন পড়েনি। ১৯৩৩ সালে যুক্তরাষ্ট্রে এক মৌসুমে ২১টি ঝড় বা হ্যারিকেন আঘাত হানলেও ওই সময়ে নামকরণের প্রথা না থাকায় এক মৌসুমে ২১টি নাম ব্যবহারের প্রয়োজন পড়েনি। তবে ইংরেজী বর্ণমালা অনুসারে ঝড়ের নামকরণের ক্ষেত্রে ‘কিউ’ ‘ইউ’ ‘এক্স’ ‘ওয়াই’ এবং ‘জেড’ বর্ণ বাদ দেয়া হয়। এ বছর হ্যারিকেন রিটার আঘাতের আগে আটলান্টিক অববাহিকায় ১৬টি হ্যারিকেনের উৎপত্তি হওয়ায় এটির নাম দেয়া হয়েছে ইংরেজী বর্ণমালার ১৭তম বর্ণ ‘আর’ এর সঙ্গে মিলিয়ে ‘রিটা’। নামের ক্ষেত্রে বর্ণ ‘কিউ’কে গণনায় আনা হয়নি। এরপর যদি আরও একটি হ্যারিক্যান আঘাত হানে তবে সেটির নাম ১৯তম ‘টি’ বর্ণের সঙ্গে মিল রেখে ‘তানিয়া’ রাখা হবে। কিন্তু কোনও মৌসুমে ২১টির বেশি হ্যারিকেন হলে কি নামের সঙ্কট দেখা দেবে? এ ব্যাপারে মার্কিন কর্মকর্তাদের মত হচ্ছে, তেমনটি ঘটলে তারা গ্রিক বর্ণের দিকে ঝুঁকবেন। সেক্ষেত্রে ঝড়ের নাম হতে শুরু করবে আলফা, বেটা, গামা, ডেল্টা প্রভৃতি। নামকরণ যেভাবে হয়: বিশ্ব আবহাওয়া সংস্থার ‘অঞ্চল-৪’ (আটলান্টিক অববাহিকা অঞ্চল)-এর হ্যারিকেন কমিটি এ অঞ্চলের হ্যারিকেনের নাম ঠিক করে থাকে। অঞ্চলভেদে নামগুলো ইংরেজী, ফ্রেঞ্চ এবং স্প্যানিশ ভাষায় রাখা হয়। ঝড়টির যে দেশে আঘাত হানার সম্ভাবনা থাকে সেদেশের ভাষা অনুসারে রাখা হয় ঝড়ের নাম। কোনো ঝড়ের প্রতি ঘন্টায় ৬২ কিলোমিটারে পৌঁছে গেলেই মিয়ামিতে অবস্থিত ইউএস ন্যাশনাল হ্যারিকেন সেন্টার একটা নাম ব্যবহার করে। কোনো বছরে ব্যবহৃত তালিকাটি পরবর্তী ছয় বছরে আর ব্যবহার হয়না। এ বছরের ঝড়গুলোর মধ্যে রয়েছে আর্লনেট, ব্রেট, সিন্ডি, ডেনিস, এমিলি, ফ্রাঙ্কলিন, ক্যাটরিনা, ওকলিয়া ও রিটা। কোনো ঝড় ব্যাপক তাণ্ডব চালালে ক্ষতিগ্রস্ত দেশ ওই নামটিকে আর ব্যবহার করার অনুরোধ করতে পারে। (ইনশাআল্লাহ চলবে) -মুহম্মদ ওয়ালীর্উ রহমান, ঢাকা।
বিৃটিশ গুপ্তচরের স্বীকারোক্তি এবং ওহাবী মতবাদের নেপথ্যে বিৃটিশ ভূমিকা-১৫