“তোমরা ঐ মহিলার মত হয়ো না, যে পরিশ্রমের পর কাটা সুতা টুকরো টুকরো করে ছিড়ে ফেলে”- সূরা নহলের ৯৩নং আয়াত শরীফ- মহান আল্লাহ পাক তিনি এই উপমা দিয়েছেন।
মহিলা জামায়াতে উদ্বুদ্ধ করে তাবত ধর্মব্যবসায়ীরা এযাবত যা করেছেন তাতে তারা সুফল পাওয়ার পরিবের্ত আয়াত শরীফ-এ বর্ণিত মহিলার মতই নিষ্ফলা হয়েছেন। আজকে মহিলা জামায়াতের দ্বারা ইসলামের কাজ হওয়ার পরিবর্তে খোদ ইহুদী মহিলা জুমুয়ার ইমামতির সুযোগ পেয়েছে।
“মহিলাদের জন্য মসজিদে যাওয়া হারাম ও কুফরী”-এ ধারণা এখনও অধিকাংশ মুসলমান নর-নারীর অন্তরের বদ্ধমূল বিশ্বাস।
ইসলাম বিকশিত হওয়ার ধারাবাহিকতায় হযরত উমর ফারুক রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি মহিলা জামায়াত নিষিদ্ধ করেন। উম্মুল মু’মিনীন হযরত আয়িশা ছিদ্দীক্বা আলাইহাস সালাম তিনি তা সমর্থন করেন। হাদীছ শরীফ-এ পূর্ব থেকেই মহিলাদের জন্য ঘরের গোপন প্রকোষ্ঠে নামায পড়লে পঁচিশ গুণ ছওয়াব বেশি বলা হয়েছে।
উল্লেখ্য, কুরআন শরীফ-এ পর্দা পালন করাকে মহিলাদের জন্য একটি মূল ফরয ঘোষণা করা হয়েছে। সে হিসেবে ঘরে আবদ্ধ থাকাই মহিলাদের জন্য পর্দার সহায়ক। কিন্তু তাতে করে ইসলামের নামধারী জামায়াতটির বড়ই অসুবিধা হয়। এতে করে মহিলাদের উক্ত জামায়াতের চেতনামুখী করা, তাদের সাথে গণসংযোগ করা তথা মহিলাদেরকে মিছিল-মিটিংএ জড়ো করা অসম্ভব হয়।
সুতরাং নেকীর ছূরতে শয়তানের ওয়াসওয়াসার মতই তারা মসজিদে জামায়াতের নামে মিহলঅদের উদ্বুদ্ধ করেছে। রাস্তা-ঘাটে, অফিস-আদালতে চোখের ব্যভিচারের পরও শয়তান ও সুযোগে মসজিদেও সে অপকর্ম করার নির্বিঘœ সুযোগ পেয়েছে। সুস্থির চিত্তে মুছল্লীদের ইবাদত করাটাও রহিত হয়েছে। কিন্তু তারপরেও মসজিদে মহিলা জামায়াতের জন্য গো ধরে ইসলামের নাম ব্যবহারকারী জামাত গং।
পুরুষদের পাশাপাশি নারীদের দ্বীনি শিক্ষায়, দ্বীনি তরবিয়াতে দক্ষ করার নামে মহিলাদের মসজিদে, ঈদগাহে জামায়াত করানোর জন্য তারা এখনো বদ্ধ পরিস্কার। মূলত: তাদের অপতৎপরতায় ইসলামের মৌলিক বৈশিষ্ট্য এহেন তাদেরকে বিশেষ অজ্ঞ মনে হয়।
কারণ, ইসলামের মূল কথা হলো, পুরুষের কর্মক্ষেত্র বাইরে আর নারীর ভিতরে। স্বামী, সংসার, সন্তান লালন-পালন একজন নারীর মূল কর্তব্য তথা ফরয।
এখন পুরুষের পাশাপাশি নারীকেও যদি যোহরের জামায়াতের জন্য দুপুর দেড়টায় মসজিদে যেতে হয় তাহলে একটার আগেই তাকে রান্নাবান্না তথা ঘরসংসারের কাজ ছাড়তে হবে। এরপর নামায আদায় করে আসতে বেলা দু’টোও অতিক্রম করবে। তারপর পরিশ্রান্ত শরীরে দুপুরের খাবার তৈরি করা ও পরিবারের সবাইকে খাওয়াতে না খাওয়াতেই আছরের আযান দিয়ে দিবে। আর এভাবে মাগরিব, ইশা ও ফজরের নামাযে যদি প্রতিটি মুসলিম নারীকে মসজিদে হাজিরা দিতে হয় তাহলে মুসলমানদের পারিবারিক বন্ধন, ঘরসংসারের শৃঙ্খল কোথায় দিয়ে ঠেকবে তা ভাবতেও গা শিউরে উঠে।
অর্থাৎ মহিলা জামায়াতের নামে যে গোটা ঘরসংসারই উচ্ছন্নে যাবে তা বলাই বাহুল্য। উল্লেখ করা যেতে পারে, মুসলমানদের পারিবারিক বন্ধন, বাবা, মা, ভাই, বোনের সমন্বয়ে সম্প্রীতি ইসলামী যিন্দীগির তথা শান্তি ও সভ্যতার ভিত্তি। যা আজকে বগ্লাহারা জীবনে অভ্যস্ত ইউরোপ আমেরিকায় নেই বললেই চলে। সে জন্য তারা আজ চরম ধ্বংসের মুখোমুখি।
সেক্ষেত্রে ইসলামী মূল্যবোধ ও মুসলমানদের শৃঙ্খলিত পারিবারিক যিন্দীগি ধ্বংসে তারা বদ্ধপরিকর। মহিলা জামায়াতের নামে মুসলিমা নারীদের ঘরসংসার থেকে বের করে মসজিদে ও ঈদগাহে হাজির করার প্রচেষ্টা ইহুদী-খ্রীস্টানদের সে ষড়যতেন্ত্ররই সহায়ক কর্মসূচী।
যদিও আমাদের দেশের নামধারী জামায়াতে গং মহিলাদের জামায়াতে হাজির করার পিছনে তাদের রাজনৈতিক ভিতকেই শক্তিশালী করার কৌশলকে দেখেছিলো কিন্তু এর দ্বারা তারা তাদের অজান্তেই ইহুদী-খ্রীস্টান গংদের কুট বাসনাও বাস্তবায়িত হওয়ার পথ সুগম করে দিয়েছে।
সম্প্রতি নিউইয়র্ক সিটিতে ড. কমিনার জুমুয়ার ইমামতি করার পদক্ষেপ এরই জ্বলন্ত প্রমাণ। উল্লেখ্য, এখানে ইসলামের নামে জামায়াতে গং যেমন পুরুষের পাশাপাশি নারীর ইসলাম পালনের জন্য মসজিদে পুরুষের সাথে নারীরও দাঁড়ানোর কথা বলেন। তেমনি ড. কমিনাও ইমামতির ক্ষেত্রে পুরুষের পাশাপাশি নারীর দাঁড়ানোর ক্ষেত্রেও দাবী তুলেছেন, সমতার কথা বলেছেন।
তার প্রশ্œ নারী-পুরুষ এক কাতারে দাঁড়াতে পারলে আরেক ধাপ এগিয়ে ইমামের কাতারেও পুরুষের পরিবর্তে নারী দাঁড়াতে পারবে না কেন? অর্থাৎ বলা চলে, ইসলামী নামধারী যেসব জামায়াতে গং পুরুষের পাশাপাশি মহিলাদের জামায়াতের জন্য ওকালতি করেছেন তারাই ভার্জিনিয়া কমনওয়েলথ ইউনিভার্সিটির ইসলামিক স্টাডিজের অধ্যাপিকা ড. কমিনার নিউইয়র্ক সিটিতে ডাউন জুমুয়ার ইমামতির পটভূমিকা তৈরি করেছেন।
উল্লেখ্য, ইসলামের দৃষ্টিতে পর্দা একটি অলঙ্ঘনীয় ফরয। এ সম্পর্কে সূরা আহযাব ৩২-৩৬, ৫৩, ৫৪-৫৯, সূরা নূর, ৩১, ৩২, সূরা নিসা ২২, ২৩, ২৪ নং আয়াত শরীফ-এ নারী-পুরুষের পরস্পরের পর্দার কথা শক্ত ভাবে বলা হয়েছে। এমনকি হাদীছ শরীফ-এ অন্ধ লোকের দিকেও মহিলাদের বা অন্ধ পুরুষের দিকে মহিলাদের তাকানো নিষেধ করা হয়েছে। এ কারণে ফুক্বাহায়ে কিরামগণ একমত যে, কোন মতেই কোন মহিলা, পুরুষের ইমাম হতে পারে না। তদুপোরি মহিলাকণ্ঠের আওয়াজও পুরুষের জন্য পর্দা। এজন্য মহিলা কণ্ঠের খুৎবা শোনাও জায়িয নয়।
মুসনদে আহমদ, তিরমিযী, আবূ দাউদ, বুখারী, মিশকাত, মুসলিম ইত্যাদি ছহীহ হাদীছ শরীফ উনার কিতাবে এ সম্পর্কে শত শত হাদীছ শরীফ রয়েছে। এছাড়াও সমস্ত ফিক্বাহর কিতাবেও একই অভিমত ব্যক্ত করা হয়েছে।
বিশেষভাবে উল্লেখ্য যে, কুরআন শরীফ-এ জুমুয়া ফরয হওয়ার আয়াত শরীফ-এ মহিলা-শিশুদের কথা আদৌ উল্লেখ নেই। অর্থাৎ মহিলাদের জন্য জুমুয়াই জায়িয নয়। এতদ্বপ্রেক্ষিতে ড. কমিনার জুমুয়ার নামাযে ইমামতি করার প্রচেষ্টা মূলত: তাকে ইহুদী সম্প্রদায়ের চর হিসেবে সাব্যস্ত করা।
একথা আজ সর্বজনবিদিত যে, অনেক ইহুদী মুসলিম পরিচয়ে, ইসলামী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ডিগ্রী হাছিল করে সে ডিগ্রীর পরিচয় দিয়ে ইসলাম ধর্মের মাঝে অনৈসলামী তথা বিদয়াতী আক্বীদার প্রসার ঘটায়। ইসলাম ও মুসলমানদের মাঝে নতুন ফিৎনা তৈরি করে দ্বিধাবিভক্ত করতে চায়।
মূলত: ড. কমিনার এ ধরনের পদক্ষেপ ধর্মের মধ্যে কুফরী ও হারাম বলে গণ্য; এবং কুরআন শরীফ ও সুন্নাহ শরীফ উনাদের সরাসরি খেলাফ মত প্রচার করায় ড. কমিনা ইসলামের দৃষ্টিতে মুরতাদ বলে গন্য। পাশাপাশি ওহীর দরজা বন্ধ হয়ে যাওয়ার পরও নতুন করে বিধান জারী করার অর্থ হলো নতুন নবী দাবী করা তথা কাদিয়ানীদের পর্যায়ভুক্ত হওয়া।
আমরা ভেবে আশ্চর্য্যবোধ করি যে, এদেশে অনেক ইসলামী আন্দোলনকারী দাবীদার থাকার পরও তারা এ ব্যাপারে চরম নির্লিপ্ততা দেখাচ্ছেন। মূলত: ইসলামের নামে হারাম নারী নেতৃত্ব জায়িয করা তথা মসজিদে ও ঈদগাহে মহিলা জামাত জায়িয করার কারণেই এহেন সব কুফরী ও হারাম কাজের প্রতিবাদের যোগ্যতা তারা হারিয়ে ফেলছেন। এতে করে মূলত: তারা বোবা শয়তানের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছেন।
স্মর্তব্য, এ ধরণের নব্য বিদয়াত, হারাম ও কুফরী প্রথা উদয়কারীদের সম্পর্কেই হাদীছ শরীফ-এ ইরশাদ মুবারক হয়েছে, “আখিরী যামানায় এক শ্রেণীর মিথ্যাবাদী দাজ্জাল বের হবে, তারা এমন সব কথা বলবে যা তোমরা শোননি, তোমাদের বাদ-দাদা চৌদ্দ-পুরুষ শোনেনি। তোমরা এদের কাছে যেয়ো না। তাদেরকে তোমাদের কাছে আসতে দিয়ো না, তবে তারা তোমাদের গোমরাহ করতে পারবে না।”
-মুহম্মদ তা’রিফুর রহমান, ঢাকা।
বৃটিশ গুপ্তচরের স্বীকারোক্তি এবং ওহাবী মতবাদের নেপথ্যে বৃটিশ ভূমিকা-১১