-হযরত মাওলানা মুফতী সাইয়্যিদ শুয়াইব আহমদ
মুহররমুল হারাম আরবী বছরের প্রথম মাস। কালামুল্লাহ শরীফ এবং হাদীছ শরীফে ঘোষণাকৃত চারটি হারাম বা সম্মানিত মাসের অন্যতম মাস এটি। বান্দা ও উম্মতের নাজাত ও মর্যাদা লাভ এবং আল্লাহ পাক ও তাঁর হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সন্তুষ্টি হাছিল করতে হলে ঈমান-আক্বীদা ও আমল-ইখলাছের বিষয়টি অপরিহার্য। এ সমূদয় বিষয়গুলির সাথে মুহররমুল হারাম মাস জড়িত।
এজন্য বলা হয়, এ মাস একদিক থেকে ঈমান-আক্বীদা শুদ্ধির মাস, আরেকদিকে ইখলাছের সাথে আমল করার মাস। খাঁটি ঈমান বা আক্বীদা শুদ্ধির দ্বারা বান্দার নাজাতের ফায়ছালা হবে। আর মর্যাদা হাছিল হবে ইখলাছ সম্পন্ন আমলের দ্বারা।
আক্বীদা কি? সংক্ষেপে আক্বীদা হলো “কুরআন ও সুন্নাহ তথা শরীয়তের বিষয়গুলি যেভাবে বিশ্বাস করতে বলা হয়েছে সেভাবে বিশ্বাস করার নাম আক্বীদা। কোন ব্যক্তি ঈমানদার হওয়ার জন্য শরীয়ত তথা দ্বীন ইসলামের সার্বিক বিষয়ে আক্বীদা শুদ্ধ থাকতে হবে। একটি বিষয়ের মধ্যেও যদি কারো আক্বীদা ত্রুটি থাকে তাহলে সে ঈমানদার হিসেবে গণ্য হবে না। এর উদাহরণ হচ্ছে কাদিয়ানী সম্প্রদায়। তারা আল্লাহ পাককে বিশ্বাস করে, আল্লাহ পাক-এর হাবীবকে বিশ্বাস করে, অন্যান্য নবী-রসূল আলাইহিমুস্ সালাম, ফেরেশতা, জান্নাত, জাহান্নাম, কবরের আযাব, হাশর, মীযান, পুলছিরাত ইত্যাদি সবকিছু বিশ্বাস করে। তারা নামায পড়ে, রোযা করে, হজ্জ করে, যাকাত দেয়, টুপি, পাগড়ী, লুঙ্গি, কোর্তা পরিধান করে অর্থাৎ ফরয, ওয়াজিব, সুন্নত, মুস্তাহাব সব আমলই করে, এরপরেও তারা কাট্টা কাফির ও চির জাহান্নামী। এর কারণ হলো, শরীয়তের একটি বিষয়ে তারা আহলে সুন্নাত ওয়াল জামায়াতের বিপরীত আক্বীদা তথা কুফরী আক্বীদা পোষণ করে থাকে। সেটা হলো, আল্লাহ পাক-এর হাবীব যিনি নবীদের নবী, রসূলদের রসূল হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি হচ্ছেন খাতামুন্ নাবিয়্যীন অর্থাৎ শেষ নবী। এই কাদিয়ানী সম্প্রদায় তারা আল্লাহ পাক-এর হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে নবী, রসূল, হাবীব সবই মানে ও স্বীকার করে। কিন্তু তিনি যে শেষ নবী অর্থাৎ তাঁর পরে আর কেউ নবী হবেন না এই বিষয়টা না মানার কারণে তারা ঈমান ও ইসলাম থেকে মু’মিন ও মুসলমান থেকে খারিজ।
তদ্রুপ যারা মুর্হরমের আলোচনা করতে গিয়ে হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম ও হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণ সম্পর্কে আহলে সুন্নত ওয়াল জামায়াতের আক্বীদার খিলাফ বক্তব্য প্রদান করবে এবং যারা সেটা শুনবে ও বিশ্বাস করবে তারা সকলেই ঈমান ও ইসলাম থেকে খারিজ হয়ে মুরতাদ ও কাফিরে পরিণত হবে।
নবীগণ সম্পর্কে আহলে সুন্নত ওয়াল জামায়াতের আক্বীদা হচ্ছে, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন্ নাবিয়্যীন,হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লৗাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামসহ সমস্ত নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম মা’ছূম বা নিষ্পাপ এবং উনারা প্রত্যেকেই শিরক, কুফর, কবীরা ছগীরা এমনকি অপছন্দনীয় কাজ থেকেও পবিত্র এবং উনাদের যাবতীয় বিষয় ওহীর দ্বারা নিয়ন্ত্রিত ছিল।
এর খিলাফ বা বিপরীত আক্বীদা পোষণ করে যারা বলবে, হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস্ সালাম-এর গুণাহ-খতা, দোষ-ত্রুটি থাকার কারণে উনারা তওবা-ইস্তিগফার করেছেন (নাউজুবিল্লাহ)। নূরে মুজাস্সাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হেরা গুহায় চিল্লা দেয়ার কারণে নুবুওওয়াত-রিসালাত লাভ করেছেন (নাউজুবিল্লাহ)। উনি নূরের তৈরী নন (নাউজুবিল্লাহ)। উনি ইলমে গইব জানতেন না (নাউজুবিল্লাহ)। উনি আমাদের মত সাধারণ মানুষ (নাউজুবিল্লাহ)। হযরত আদম আলাইহিস্ সালাম গন্ধম খেয়ে ভুল করেছিলেন (নাউজুবিল্লাহ)। হযরত ইউনুছ আলাইহিস্ সালাম দাওয়াতের কাজ বন্ধ করার কারণে আল্লাহ পাক-এর গযবে পড়েছিলেন (নাউজুবিল্লাহ)। হযরত যাকারিয়া আলাইহিস্ সালাম গাছের কাছে আশ্রয় চেয়েছিলেন (নাউজুবিল্লাহ) ইত্যাদি।
আর আমল কাকে বলে? আমল হচ্ছে নূরে মুজাস্সাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সুন্নত মুতাবিক যা করা হয়। যা সুন্নতের খিলাফ তা বিদয়াত, বদ রসম অথবা তা বিজাতীয়দের কর্মপদ্ধতি।
কাজেই, যারা ঈমানদার হবে, মুসলমান হবে তাদেরকে মাথার তালু থেকে পায়ের তলা, হায়াত থেকে মউত সব অবস্থায় সুন্নতের অনুকরণ করতে হবে। এ মর্মে আল্লাহ পাক ইরশাদ করেন, “নিশ্চয়ই তোমাদের জন্য আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর মধ্যেই রয়েছে উত্তম আদর্শ। সেই মহান আদর্শ অনুযায়ী যারা চলবে তারাই কামিয়াবী লাভ করবে। আল্লাহ পাক বলেন, “হে আমার হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আপনি বলে দিন, যদি তোমরা আল্লাহ তায়ালার মুহব্বত-সন্তুষ্টি লাভ করতে চাও তাহলে তোমরা আমার (সুন্নতের) অনুসরণ কর। তবেই আল্লাহ পাক তোমাদেরকে মুহব্বত করবেন, সন্তুষ্টি দান করবেন, তোমাদের গুণাহখতা ক্ষমা করে দিবেন এবং তিনি তোমাদের প্রতি দয়ালু হবেন।
উল্লেখ্য, মুহররমুল হারাম-এর দশ তারিখ আশুরা উপলক্ষে বিশেষ সুন্নত হলো ৯, ১০ অথবা ১০, ১১ তারিখ দু’দিন রোযা রাখা। সম্ভব হলে এ রোযা রাখবে। তাদের এক বা একাধিকজনকে ইফতার করানো। আশুরার দিনে সাধ্যমত পরিবারবর্গকে ভাল খাওয়ানো। গোসল করা। চোখে (মিশ্ক মিশ্রিত-ইসমিদ) সুরমা দেয়া। ইয়াতীমের মাথায় হাত বুলানো।
এ প্রতিটি সুন্নতের ফযীলত হাদীছ শরীফে বর্ণিত হয়েছে। তা জানতে হলে মাসিক আল বাইয়্যিনাত শরীফ ৮০তম সংখ্যা পাঠ করুন।
মাহে যিলক্বদ ও তার প্রাসঙ্গিক আলোচনা
মাহে যিলহজ্জ ও তার প্রাসঙ্গিক আলোচনা
মাহে মুহররমুল হারাম ও তার প্রাসঙ্গিক আলোচনা