প্রথমেই বলে রাখা যায়, তথাকথিত খতীব উবাইদুল হক্ব যারা সর্বজন শ্রদ্ধেয় বলতেন খতীবের নিজস্ব ঘরানার লোক হওয়া সত্ত্বেও ইদানিংকালে তারাও খতীবের কাছ থকে দূরে সরে গেছেন। মুরতাদ মতিকে নিজস্ব ইখতিয়ারে ক্ষমাসহ সমালোচনার বিভিন্ন কারণ দেখিয়েছেন। এদিকে খতীব নিজেও তাদেরকে হিটলার বলেছেন। মন্তব্য করেছেন, “ইসলামী দলের নেতারা একেকজন হিটলার ও একক ক্ষতালোভী। তারা কাউকেই পরওয়া করেন না। কারো সঙ্গে কোন পরামর্শ করেন না। মনে যা খূশী তাই বলে দেন। নিজের মতের বিরুদ্ধে কিছু বললে তাকে ইসলাম ও মুসলমানদের শত্রু বলে চালিয়ে দেন। দেশ ও জাতির শত্রু বলে চালিয়ে দেন।” (দৈনিক মানবজমিন, ১৩ই আগস্ট-২০০৫)। ইদানিংকালে উবাই এবং তার ঘরানার লোকদের মাঝে বিরোধ হয়ে উঠছিলো একেবারে প্রকাশ্য ও রাখ ঢাকের বাইরে। এমনকি হাটহাজারীর মুহতামিম আহমদ শাফীর মতে- ‘উবাই ছিলো ফাসিক, বিদ্য়াতী ও গুমরাহ।’ (সূত্রঃ মাসিক মুহীনুল ইসলাম, জুন-২০০৫) খতীবকে যারা সর্বজনমান্য বলতে চান তাদের উদাহরণ মুনাফিক ও র্বণচোরা ইনকিলাবের মত। ইনকিলাব বাতাস বুঝে গতকাল খতীবকে জাতীয় মুরুব্বী বলেছে, আবার গত ২৪শে সেপ্টেম্বর-২০০৭ ঈসায়ী তাকে মিথ্যাবাদী ও তার পিছনে নামায হবে না মর্মে প্রতিবেদনও ছাপিয়েছে এবং বিগত বেশকিছুদিন যাবত ইনকিলাবের খতীব বিরোধীতা ছিলো তুঙ্গে । অথচ গতকাল মৃত্যুর পর আবার ইনকিলাব তার দরদী সেজেছে। (খ) কুরআন শরীফে আল্লাহ পাক প্রশ্নের মত করে ইরশাদ করেন, “যে যিকির করে আর যে যিকির করে না তারা কি সমান?” এর পর আল্লাহ পাক নিজেই জবাব দেন, “কক্ষনো নয়।” কুরআন-সুন্নাহয় এরকম বক্তব্য রয়েছে আরো বহু। তবে উদ্ধৃত দু’আয়াত শরীফ থেকেই প্রতিভাত হয় যে, সবার মাসয়ালা সমান নয়। সাধারণভাবে মাসয়ালা রয়েছে যে, “কারো মৃত্যুর পর তার সমালোচনা করো না।” কিন্তু সমূহ ফিক্বাহ্র কিতাবেই আবার বলা হয়েছে, “যারা কুখ্যাত বদ্কার, জালিম তথা ধর্মব্যবসায়ী তাদের দোষত্রুটি তুলে ধরা সম্পূর্ণ জায়িয ও ফযীলতের কারণ।” যেমন, গীবত করা হাদীছ শরীফে মৃত ভাইয়ের গোশ্ত খাওয়ার শামিল বলা হলেও ধর্মব্যবসায়ীদের গীবত করাকে ফরয-ওয়াজিব বলা হয়েছে। প্রসঙ্গতঃ হুজ্জাতুল ইসলাম, হযরত ইমাম গাজ্জালী রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন, “কিছুক্ষণ সময় কোনো ধর্মব্যবসায়ী মাওলানার দোষত্রুটি তুলে ধরা ষাট বছর বে-রিয়া নফল ইবাদতের চেয়েও শ্রেষ্ঠ।” (গ) ধর্মব্যবসায়ী, রাজাকার, আলবদর ঘরানার দৈনিকটি গতকাল প্রথম লিড নিউজ করেছে, “খতীব উবাইদুল হক আর নেই।” ভাবখানা এই যে, খতীব উবাইদুল হক যেন, মহামূল্যবান কিছু ছিলেন। কিন্তু আল্লাহ পাক ইরশাদ করেন, “তোমাদের মধ্যে সেই মর্যাদাবান যে কিনা অধিক পরহিযগার তথা মুত্তাক্বী” আর হাদীছ শরীফে ইরশাদ হয়েছে, “হালাল স্পষ্ট হারামও স্পষ্ট।” কুরআন-সুন্নাহ্র আলোকে স্পষ্ট ও প্রকাশ্যভাবেই ধরা পড়ে খতীব উবাই নিকৃষ্ট ধর্মব্যবসায়ী, মহাভ-, মুনাফিক তথা মুরতাদ ছিলো। (ঘ) জাতিসংঘের বেসরকারি স্থায়ী প্রতিনিধি নুরুল আলম গত ২৪শে সেপ্টেম্বর-২০০৭ ঈসায়ী দৈনিক ইনকিলাবকে জানান, “খতীব উবায়দুল হকের কামিল ডিগ্রীর সনদ, গোপনে রাশিয়া সফরের পাসপোর্ট, ভিসা ও টিকিট ছিলো জালিয়াতিপূর্ণ। সরকারি অনুমোদন তার ক্ষেত্রে আবশ্যক হলেও তা না নিয়ে অতি গোপনে তিনি বোম্বে হয়ে রাশিয়া যান। শুধু তাই নয়, এ সময় মস্কোর হোটেলে পাঁচশ’ মার্কিন ডলারের বিনিময়ে তিনি সাবেক সোভিয়েত বার্তা সংস্থা ‘তাস’কে এক সাক্ষাৎকার দেন। এ সাক্ষাৎকারে তিনি রাশিয়ার মুসলমানদের নিয়ে মিথ্যা তথ্য দেন। সে সময় ৫ কোটি রুশ মুসলিম ছিল কমুনিস্ট নির্যাতনের শিকার। অথচ তার সাক্ষাৎকারে তিনি ‘তারা ভালো আছেন, বলে সার্টিফিকেট দেন। উল্লেখ্য, ঐ সম্মেলনে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের তৎকালীন ডিজি আব্দুস সোবহান ও মুহম্মদ নুরুল আলমকে একই সাথে সরকারি অনুমোদন নিয়ে যেতে হয়েছিল। এই মিথ্যাবাদী খতীবের পিছনে নামায পড়া নাজায়িয। ক্বওমি মাদ্রাসার সনদপত্র নিয়ে তিনি কিভাবে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় সরকারী জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমের খতীব পদে নিয়োগপ্রাপ্ত হন ও ঢাকা আলীয়া মাদ্রাসায় কিভাবে হেড মৌলভীর দায়িত্ব পালন করেন সরকারি লাখ লাখ টাকা বেতন-ভাতা ও পেনশন গ্রহণ করেছেন এই বিষয়টি সঠিক তদন্ত করা উচিত। এই মিথ্যাবাদী খতীবের পিছনে নামায আদায় নাজায়িয।” উল্লেখ্য, কমুনিস্টদের থেকে টাকা খেয়ে তাদের পক্ষে সার্টিফিকেট দেয়া খতীব উবাইর পক্ষে বিচিত্র কিছু নয়। বরং এটা তার মজ্জাগত অভ্যাস। টাকার জন্য সে নিজের বিরুদ্ধেও নিজে কাজ করেছে। ‘শিয়ারা কাফির’-এই ছিলো উবাইদুল হক্বের দীর্ঘদিনের প্রচারণা ও ফতওয়া। এমনকি ‘শিয়ারা কাফির’ এই মর্মে খতীবের লিখিত বইও রয়েছে। কিন্তু তারপর অর্থের জন্য উবাইদুল হক্ব সেই শিয়াদের সাথে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ রেখেছে। তাদের সাথে আঁতাত করে ফায়দা লুটেছে। আর মৃত্যুকালীন সময়ে তার এ বিষয়টি খোলামেলাভাবে প্রকাশ পেয়েছে। উবাই’র পরিবারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে যে, “ইরানী কালচারাল সেন্টারের একটি নৈশভোজ অনুষ্ঠানে খাওয়া-দাওয়ার পর তিনি অসুস্থ পড়েন।” (আমাদের সময়, নয়া দিগন্ত, দিনকাল ০৭/১০/২০০৭ ঈসায়ী)
কিন্তু তা আদৌ সত্য নয়। আসলে শনিবার দিবাগত রাতে ইরানী কালচারাল সেন্টারে কোনো নৈশভোজের অনুষ্ঠান ছিলো না এবং উবাইও ইরানী কালচারাল সেন্টারে যায়নি। তবে সে গিয়েছিল শিয়া মত প্রচারের চর আয়াতুল্লাহ শাহ রখীর কাছে। এ ব্যাপারে ইরানী কালচারাল সেন্টারের সাথে যোগাযোগ করা হলে তারা (কালচারাল সেন্টারের জহীর ছাহেব ও মাহমুদ) তাদের এজেন্ট মদীনাতুল উলূম কামিল মাদ্রাসা, তেজগাঁও-এর উস্তাদ, মাওলানা মাহবুবের মোবাইল নম্বর (০১৭১৮-৫৩৩৩৩১) দিয়ে তার সাথে যোগাযোগ করতে বলে। কিন্তু তাকেও যখন জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়, “উবাই কি খেয়েছেন” কখন খেয়েছেন? কোথায় খেয়েছেন? সাথে কারা ছিলেন? এসব প্রশ্নের জবাবে সে কিছু না বলে জানায় যে, “সেও এসব কিছু জানে না। সে শুধু গাড়ীতে উঠেছে।” হঠাৎ সে কিভাবে গাড়ীতে উঠলো তা রহস্যজনক। আর পত্র-পত্রিকায় ইরানী কালচারাল সেন্টারের কথা বলা হলেও তাদের থেকে কোনো প্রতিবাদ না জানিয়ে তাদের সেন্টারের কর্মচারী নয় এরূপ ব্যক্তির নাম-নম্বর দেয়া রীতিমত রহস্যজনক। মূলতঃ উবাই’র ধর্মব্যবসায়িক লেনদেনই এ রহস্যের জন্ম দিয়েছে। সরকারের গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর উচিৎ অবিলম্বে এ রহস্য উদঘাটন করা।
-মুহম্মদ আরিফুর রহমান, ঢাকা।
ব্রিটিশ গুপ্তচরের স্বীকারোক্তি এবং ওহাবী মতবাদের নেপথ্যে ব্রিটিশ ভূমিকা-৩২