যথাযথ সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা পেলে বছরে ৫৫ লাখ মেট্রিক টন সবজি উৎপাদন সম্ভব। সবজির মান উন্নয়ন ও রফতানীতে আমলাতান্ত্রিক জটিলতা দূর করলে আয় হবে লাখো কোটি টাকারও উপরে।সরকার ইচ্ছে করলে এক সবজি খাত দিয়েই দেশের অর্থনীতির চাকা পুরোদমে সচল করতে পারে।

সংখ্যা: ২৭১তম সংখ্যা | বিভাগ:

বাংলাদেশ বর্তমানে বিশ্বে ৩য় সর্বোচ্চ সবজি উৎপাদনকারী দেশ। এক প্রতিবেদনে জানা গেছে, শুধুমাত্র নরসিংদীতে সরকারি হিসেব মতেই বছরে ৩ লাখ মেট্রিক টন সবজি উৎপাদন হচ্ছে। প্রকৃত হিসেবে আরো বেশি।

উল্লেখ্য, সরকারি হিসেবে বর্তমানে দেশে বার্ষিক মোট সবজি উৎপাদন হয় ২২ লাখ টন, তবে প্রকৃত হিসেব মতে আরো বেশি। যেখানে ১৯৭০ সালে উৎপাদন হতো মাত্র ৭ লাখ টন। গত তিন দশকে দেশে সবজির উৎপাদন বেড়েছে কয়েকগুণ। দেশে বর্তমানে প্রায় ৮ লাখ হেক্টর জমিতে বছরে প্রায় ২০ লাখ টনের অধিক সবজি উৎপাদন হচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা, জার্মানি, ডেনমার্ক, সুইডেন, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, জাপান, সউদী আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর, ওমান ও মধ্যপ্রাচ্যসহ বিশ্বের ৭০টি দেশে বাংলাদেশের উৎপাদিত সবজি রফতানী হয়ে থাকে। গত অর্থবছরে ৬৫০ কোটি ৪১ লাখ ২০ হাজার টাকার সবজি বিভিন্ন দেশে রফতানী হয়েছে।

জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার (এফএও) হিসেবে গত ৪০ বছরে বাংলাদেশে সবজি উৎপাদন বেড়েছে পাঁচগুণ। যদিও প্রকৃত হিসাবে আরও বেশি উৎপাদন বেড়েছে। বেড়েছে জমির পরিমাণ, গত এক দশকে দেশে সবজির আবাদি জমির পরিমাণও বেড়েছে ৫ শতাংশ হারে। ২০১৬-১৭ অর্থবছরে রবি মৌসুমে ৫ দশমিক ২৮ লাখ হেক্টর জমিতে সবজি উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। গত বছর এ জমির পরিমাণ ছিল ৫ দশমিক ১০ লাখ হেক্টর।

প্রসঙ্গত, বাংলাদেশের সবজিতে এত সম্ভাবনা এবং সাফল্য থাকার পরও সরকারের উপযুক্ত পৃষ্ঠপোষকতা এবং সঠিক পরিকল্পনা না থাকার কারণে বাংলাদেশে যে পরিমাণ সবজি উৎপাদন এবং আয় হওয়ার কথা ছিলো তা হচ্ছে না। প্রতিবছর দেখা যাচ্ছে, উৎপাদন থেকে ভোক্তা পর্যায়ে পৌঁছাতে প্রায় ৪০ ভাগ সবজি নষ্ট হচ্ছে। আর এর প্রধান কারণ এই সবজি সংরক্ষণের জন্য দেশের মধ্যে তেমন কোনো সংরক্ষণাগার নেই। এতে দেখা যায়, কৃষকরা সবজি ক্ষেত থেকে উঠাতে পারে না। ফলে ক্ষেতেই শত শত কোটি টাকার সবজি নষ্ট হয়ে যায়।

বলতে হয়, মালেশিয়া, চীন, সুইডেন, থাইল্যান্ডসহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে সবজি চাষের উপর সরকারিভাবে ব্যাপক পৃষ্ঠপোষকতা করা হয়। চীনের সরকারের সরাসরি পৃষ্ঠপোষকতায় সেখানে হাইড্রোপোনিক পদ্ধতিতে সবজি উৎপাদন করা হয়। চীন সরকার এ বছর চীনের শউকুয়াং শহরে সবজি মেলার মাধ্যমে সবজিতে বিপ্লব ঘটানোর উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। সেইসাথে চীনে প্রান্তিক পর্যায়ের সবজি চাষীদের জন্য হিমাগার ও ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র সংরক্ষণাগারের ব্যবস্থা রয়েছে। ভারত সরকারও চীনের পাশাপাশি এ উদ্যোগ এবং কর্মসূচি গ্রহণ করতে যাচ্ছে। বাংলঅদেশ সরকার যেহেতু কথায় কথায় অন্যান্য দেশের উদাহরণ দেয়, সেহেতু সরকারের উচিত হবে- এই সবজি খাতের প্রতি উপযুক্ত দৃষ্টি প্রদান করা।

সংরক্ষণের অভাবে সবজি নষ্ট হওয়া রোধ করতে মহান মুজাদ্দিদে আ’যম আলাইহিস সালাম তিনি নির্দেশনা মুবারক দিয়েছেন- ‘সারাদেশে জেলা, বিভাগ এমনকি থানা পর্যায়েও হিমাগার নির্মাণ করতে হবে’। তাই সরকারের উচিত- সারাদেশে বিভাগ, জেলা এমনকি থানা পর্যায়েও হিমাগার তথা সংরক্ষণাগার নির্মাণ করা। সেইসাথে হিমাগারের বিদ্যুৎ বিলে ২০ শতাংশ হারে ছাড় দিতে হবে। হিমাগারে সাধারণ সবজি চাষীদের পূর্ণাঙ্গ অগ্রাধিকার দিতে হবে। সেইসাথে যেসব জেলাগুলোতে সবজি চাষে সম্ভাবনা রয়েছে সেগুলো বিকশিত করার জন্য পদক্ষেপ ও প্রণোদনা প্রদান করা।

সবজি রফতানীতে যেসব আমলাতান্ত্রিক জটিলতা রয়েছে সেগুলো দূর করতে হবে। দেখা যায়, বিদেশে সবজি রফতানীর পর বিদেশী এয়ার লাইনসগুলো অন্য দেশে ট্রানজিট করে। এক্ষেত্রে রফতানীকারকদের ভোগান্তি হয়। কেননা ট্রানজিট পিরিয়ডে সংশ্লিষ্ট দেশ পুনঃস্ক্যান করে, সময় বেশি লাগে। পচনশীল পণ্য হওয়ায় অনেক পণ্য নষ্ট হয়ে যায়। এতে বিদেশী আমদানিকারকরা অনেক সময় পণ্য নেয় না। এ অবস্থায় এদেশের বাজার অন্য দেশে চলে যাচ্ছে। সেইসাথে বাংলাদেশের সবজি উৎপাদনে বেশি সময় লাগায় দেশের সাথে সবজি নেয়ার চুক্তি করা দেশগুলো অন্য দেশগুলোর প্রতি ঝুঁকে যাচ্ছে। এক্ষেত্রে একটাই সমাধান আর সেটা হলো- সবজি চাষে অত্যাধুনিক কৃষি প্রযুক্তির ব্যবহার জোরদার করতে হবে।

এছাড়া এই সবজি খাতে ব্যাপক গবেষণার ব্যবস্থা করতে হবে। বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের বিজ্ঞানীরা গ্রীষ্মকালীন টমেটো, পেঁয়াজ, কদু, করলাসহ বেশ কয়েকটি নতুন জাত উদ্ভাবন করেছে। যদি সরকার কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের আওতায়ই একটি আলাদা সবজি গবেষণা ইনস্টিটিউট তৈরি করতে পারে, তাহলে দেখা যাবে- সেখানে আলাদাভাবে সবজির উপর গবেষণা ব্যাপকহারে বৃদ্ধি পাবে এবং নতুন নতুন দেশীয় সবজির জাতও উদ্ভাবন হবে।

বলাবাহুল্য, গবেষণায় উঠে এসেছে, বর্তমানে স্বাভাবিক পর্যায়ে যে পরিমাণ সবজি উৎপাদিত হচ্ছে, শুধু মানসম্মত ও আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে অতিরিক্ত ৩০ ভাগ সবজি উৎপাদন বৃদ্ধি সম্ভব। আর এজন্য বৃহৎ পরিসরের পাশাপাশি ক্ষুদ্র পর্যায়েও সবজির ফলন নিশ্চিত করতে হবে। দেশের প্রতিটি পরিবার যদি প্রতিদিন এক কেজি করে সবজি উৎপাদন করে, তাহলে দেড় কোটি বসতভিটা থেকে বছরে প্রায় ৫৫ লাখ টন সবজি উৎপাদন সম্ভব। আর এর ফলে সবজি রফতানী খাত থেকে আয় হবে হাজার কোটি টাকারও উপরে।

সঙ্গতকারণেই সরকারের উচিত- সবজির সমৃদ্ধির দেশকে বিশ্বের শীর্ষ ধনী দেশে পরিণত করা এবং সেইসাথে জনগণেরও এ বিষয়ে সম্যক সচেতন ও সক্রিয় হওয়া।

-মুহম্মদ ওয়ালীউর রহমান, ঢাকা।

প্রসঙ্গঃ আমেরিকায় ইহুদী প্রভাব ও নিয়ন্ত্রণ- ২

যুগের আবূ জাহিল, মুনাফিক ও দাজ্জালে কাযযাবদের বিরোধিতাই প্রমাণ করে যে, রাজারবাগ শরীফের হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা মুদ্দা জিল্লুহুল আলী হক্ব। খারিজীপন্থী ওহাবীদের মিথা অপপ্রচারের দাঁতভাঙ্গা জবাব-৩৩

ব্রিটিশ গুপ্তচরের স্বীকারোক্তি এবং ওহাবী মতবাদের নেপথ্যে ব্রিটিশ ভূমিকা-৩৪

চাঁদ দেখা এবং নতুন চন্দ্রতারিখ শুরু নিয়ে প্রাসঙ্গিক আলোচনা- ১

কোকাকোলা ও অন্যান্য কোমল পানীয় সম্পর্কে উন্মোচিত সত্য-১৮