পূর্ব প্রকাশিতের পর
সেটাই মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-
هُوَ الَّذِيْ خَلَقَ لَكُمْ مَّا فِـي الْأَرْضِ جَمِيْعًا
সেই মহান আল্লাহ পাক তিনি সৃষ্টি করেছেন সমস্ত কায়িনাতকে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খতামুন নাবিয়্যীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার খিদমত মুবারক করার জন্য।
এখন উনার উম্মত হওয়ার কারণে সেই খিদমত মুবারক উনার হিসসা উম্মতরাও লাভ করে থাকে।
কাজেই এখন সূর্যের এবং চাঁদের খিদমতের বিষয়টা উল্লেখ্য। মহান আল্লাহ পাক তিনিতো পবিত্র কুরআন শরীফ উনার মধ্যে বলেছেন পবিত্র নামায উনার বিষয়টা। সরাসরি পবিত্র কালামুল্লাহ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-
إِنَّ الصَّلَاةَ كَانَتْ عَلَى الْمُؤْمِنِيْنَ كِتَابًا مَّوْقُوْتًا
নিশ্চয়ই পবিত্র নামাযকে ফরয করা হয়েছে মু’মিনদের জন্য, নির্দিষ্ট সময়ে। এখন পবিত্র যুহরের ওয়াক্তে বা জুমুয়ার ওয়াক্তে আছর মাগরিব ফজর নামায পড়লে চলবে না, কারণ নির্দিষ্ট সময় রয়েছে। প্রত্যেক পবিত্র নামায উনার জন্য নির্দিষ্ট সময় রয়েছে। সে বিষয়টাও মহান আল্লাহ পাক তিনি পবিত্র কুরআন শরীফ উনার মধ্যে বলে দিয়েছেন।
মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-
أَقِمِ الصَّلَاةَ لِدُلُوْكِ الشَّمْسِ إِلٰى غَسَقِ اللَّيْلِ وَقُرْاٰنَ الْفَجْرِ ۖ إِنَّ قُرْاٰنَ الْفَجْرِ كَانَ مَشْهُوْدًا
এ আয়াত শরীফ উনার মধ্যে, পাঁচ ওয়াক্ত পবিত্র নামায উনার বর্ণনা দেয়া হয়েছে।
أَقِمِ الصَّلَاةَ لِدُلُوْكِ الشَّمْسِ إِلٰى غَسَقِ اللَّيْلِ
তোমরা নামায ক্বায়িম করো সূর্য যখন ঢলে যাবে। সূর্য ঢলে যেয়ে যুহর, আছর, মাগরিব রাত্রির অন্ধকার হওয়া পর্যন্ত, ইশার নামায।
وَقُرْاٰنَ الْفَجْرِ ۖ إِنَّ قُرْاٰنَ الْفَجْرِ كَانَ مَشْهُوْدًا
আর কুরআনাল ফার্জ হলো ফজর নামায। ফজর নামায তোমাদের জন্য সাক্ষী হবে।
মহান আল্লাহ পাক তিনি যুহর, আছর, মাগরিব, ইশা এবং ফজর পাঁচ ওয়াক্ত নামায উনাদের কথা পবিত্র কুরআন শরীফে বলে দিলেন। সেটা কখন? এ নামাযের সময় কিন্তু চাঁদের সাথে নয়, সূর্যের সাথে সংশ্লিষ্ট। সূর্য ঢললে পবিত্র যুহর ওয়াক্ত শুরু, দুই কাঠি পর্যন্ত পবিত্র যুহরের নামায। এরপর আছর নামায। যখন সূর্য ডুবে যাবে তখন মাগরিব হবে। তারপর যখন শাফাকে আবইয়াদ্ব হয়ে অন্ধকার হয়ে যাবে তখন ইশার নামায পড়তে হবে। আবার ছুবহি ছাদিক্ব যখন হবে তখন থেকে ফজর নামায সূর্য উঠার পূর্ব পর্যন্ত। এটা মহান আল্লাহ পাক তিনি পবিত্র কালামুল্লাহ শরীফ উনার মধ্যে বলে দিয়েছেন। সূর্য অনুযায়ী নামাযের ওয়াক্তগুলো নির্দিষ্ট করা হয়েছে। আবার রোযা উনার কথা যদি বলা হয়, তাহলে বলতে হবে পবিত্র রোযা উনার মাসটা চাঁদের সাথে সম্পৃক্ত।
মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-
فَمَنْ شَهِدَ مِنْكُمُ الشَّهْرَ فَلْيَصُمْهُ
তোমরা যারা পবিত্র রমদ্বান শরীফ উনার মাস পাবে তাদেরকে অবশ্যই পবিত্র রোযা রাখতে হবে। ওটা সূর্যের সাথে না, চাঁদের সাথে সম্পৃক্ত। যেটা পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-
عَنْ حَضْرَتْ أَبِيْ هُرَيْرَةَ رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى الله عَلَيْهِ وَسَلَّمَ صُوْمُوْا لِرُؤْيَتِهٖ، وَأَفْطِرُوْا لِرُؤْيَتِهٖ، فَإِنْ غُمَّ عَلَيْكُمْ، فَأَكْمِلُوا الْعِدَّةَ شَعْبَانَ ثَلَاثِيْنَ،
হযরত আবূ হুরাইরা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খ¦তামুন নাবিইয়ীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, চাঁদ দেখে রোযা রাখো, চাঁদ দেখে ঈদ করো। যদি উনত্রিশ তারিখে চাঁদ না দেখা যায়, তাহলে ত্রিশ দিন পুরা করো।” এটা প্রতি মাসেরই একই হুকুম। এখানে চাঁদ দেখার সাথে সংশ্লিষ্টতা রয়েছে। কিন্তু পবিত্র রোযা যে রাখতে হবে, ইফতার, সাহরী করতে হবে সেটা কিন্তু চাঁদের সাথে নয়, সূর্যের সাথে।
মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-
وَكُلُوْا وَاشْرَبُوْا حَتّٰى يَتَبَيَّنَ لَكُمُ الْخَيْطُ الْأَبْيَضُ مِنَ الْخَيْطِ الْأَسْوَدِ مِنَ الْفَجْرِ ۖ ثُمَّ أَتِـمُّوا الصِّيَامَ إِلَى اللَّيْلِ
মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-
وَكُلُوْا وَاشْرَبُوْا
তোমরা খাও ও পান করো।
حَتّٰى يَتَبَيَّنَ لَكُمُ الْـخَيْطُ الْأَبْيَضُ مِنَ الْـخَيْطِ الْأَسْوَدِ
সেটা হচ্ছে, ছুবহি কাযিব থেকে ছুবহি ছাদিক্ব যাহির হওয়া পর্যন্ত। ছুবহি ছাদিক হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত। ছুবহি ছাদিকের পূর্ব পর্যন্ত খাওয়া যাবে। এরপর
ثُمَّ أَتِـمُّوا الصِّيَامَ إِلَى اللَّيْلِ
পবিত্র রোযা পূর্ণ করবে কোন পর্যন্ত। রাত্র হওয়া পর্যন্ত। অর্থাৎ মাগরিব হওয়া পর্যন্ত। সূর্য ডুবে গেলে তখন পবিত্র রোযা শেষ হবে, ইফতার করতে হবে। পবিত্র রোযা উনার মাসটা হচ্ছে চাঁদের সাথে, অর্থাৎ সূর্য ও চাঁদ উভয়ের সংশ্লিষ্টতা রয়েছে একসাথে। আবার সাহরী ইফতারী হচ্ছে সূর্যের সাথে। আবার পবিত্র যাকাতের যে বিষয়টা রয়েছে, সেটা হচ্ছে-
اٰتُوا الزَّكَاةَ
পবিত্র যাকাত আদায় করো। কখন আদায় করবে? মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-
حَالَ عَلَيْهِ الْـحَوْلُ
যখন বৎসর পূরা হবে। কোন বৎসর হবে? সূর্যের বৎসর না, চাঁদের বৎসর। এখানে চাঁদের বৎসর হবে। সৌর বৎসর অনুযায়ী কেউ যদি যাকাত দেয় সেটা আদায় হবে না। এটা ভুল হবে। চন্দ্র বৎসর অনুযায়ী তাকে পবিত্র যাকাত আদায় করতে হবে।
সেটা পবিত্র হাদীছ শরীফে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-
عَنْ حَضْرَتْ اِبْنِ عُمَرَ رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللّٰهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مَنِ اسْتفَادَ مَالًا، فَلَا زَكَاةَ عَلَيْهِ حَتّٰى يَـحُوْلَ عَلَيْهِ الْـحَوْلُ.
হযরত ইবনে উমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিয়্যীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, যে ব্যক্তি কোন মাল লাভ করেছে তার সেই মালে (যাকাত) হবে না যতক্ষণ পর্যন্ত উক্ত মালের উপর এক বৎসর অতিবাহিত না হবে।
অর্থাৎ এক বৎসর পুরা না হলে যাকাত দিতে হবে না। এখন সে বৎসরটা হচ্ছে চাঁদের বৎসর। সেটা পুরা হতে হবে, তখন যাকাত ফরয হবে। কাজেই এখানে যাকাতটা চাঁদের সাথে সংশ্লিষ্ট। কিন্তু ছদাক্বাতুল ফিতর। এখন ছদাক্বাতুল ফিতর পবিত্র রমাদ্বান শরীফ মাসের সাথে সংশ্লিষ্ট। যেটা পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-
فَرَضَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى الله عَليْهِ وسَلَّمَ صَدَقَةَ الْفِطْرِ
নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খ¦তামুন নাবিইয়ীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি পবিত্র ছদাক্বাতুল ফিতরকে ওয়াজিব করে দিয়েছেন উম্মতের জন্য। পবিত্র ছদাক্বাতুল ফিতর হচ্ছে-
حَقٌّ وَّاجِبٌ عَلٰى كُلِّ مُسْلِمٍ صَغِيْرٍ أَوْ كَبِيْر حُرٍّ أَوْ مَـمْلُوْكٍ ذَكَرٍ أَوْ أُنْثٰى
পবিত্র ছদাক্বাতুল ফিতর হচ্ছে ওয়াজিব, যেটা বলা হচ্ছে ছোট-বড়, আযাদ-গোলাম, পুরুষ-মহিলা সকল মুসলমানের জন্য। এতে চাঁদের মাসয়ালার সাথে সংশ্লিষ্টতা রয়েছে। কিন্তু ওয়াজিব হয় কখন? তা সূর্যের সাথে সংশ্লিষ্ট। পবিত্র রমাদ্বান শরীফ মাসের পূর্বে কেউ যদি পবিত্র ছদাক্বাতুল ফিতর আদায় করে সেটা আদায় হবে না। পবিত্র রমাদ্বান শরীফ মাস উনার চাঁদ উঠার পরে আদায় করতে হবে। কিন্তু ওয়াজিব হবে কখন সেটা হচ্ছে, ঈদের দিন ছুবহে ছাদিক্বের সময়। পবিত্র শাওওয়াল শরীফ মাসের পহেলা তারিখে ছুবহে ছাদিক্বের সময় ছদক্বাতুল ফিতর ওয়াজিব হয়। এখন কেউ যদি ছুবহে ছাদিক্বের পরে জন্ম গ্রহণ করে তাহলে তার উপর পবিত্র ছদাক্বাতুল ফিতর ওয়াজিব হবে না। মহান আল্লাহ পাক তিনি না করুন যারা ছুবহি ছাদিকের আগে ইন্তিকাল করবে তাদেরও ছদক্বাতুল ফিতর ওয়াজিব হবে না। এটা পবিত্র রমাদ্বান শরীফের সাথে সংশ্লিষ্ট, কিন্তু ওয়াজিব হওয়ার বিষয়টি সূর্যের সাথে সংশ্লিষ্ট। আবার পবিত্র নামায, পবিত্র কুরবানী, বিশেষ করে পাঁচ ওয়াক্ত নামাযতো সূর্যের সাথেই সংশ্লিষ্ট। কিন্তু পবিত্র ঈদের নামায ও ছলাতুত তারাবীহর নামায, পবিত্র কুরবানী এসমস্ত কিন্তু মাস হিসেবে চাঁদের সাথে সংশ্লিষ্ট। (অসমাপ্ত)