আরেক পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বলা হয়েছে-
عَنْ حَضْرَتْ اِبْنِ عُمَرَ رَضِيَ اللهُ تعالٰى عَنْهُ قَالَ سَأَلَ النَّبِـىَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَا رَسُوْلَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، يَا حَبِيْبَ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ! ومَا السَّبِيْلُ؟ قَالَ زَادٌ وَّ رَاحِلَةٌ
হযরত ইবনে উমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, একজন ব্যক্তি এসে জিজ্ঞাসা করলেন, ইয়া রসূলাল্লাহ, ইয়া হাবীবাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! মহান আল্লাহ পাক তিনি পবিত্র কুরআন শরীফ উনার মধ্যে যে বলেছেন সাবীলার কথা
مَنِ اسْتَطَاعَ إِلَيْهِ سَبِيْلًا
এর অর্থ কি? নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খতামুন নাবিয়্যীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-
زَادٌ وَّ رَاحِلَةٌ
পাথেয় এবং বাহন। অর্থাৎ একটা লোকের যাতায়াতের খরচসহ তার বাড়ীর খরচসহ সমস্ত খরচ যদি থাকে, পথের বাহনের ব্যবস্থা থাকে, জান-মাল এবং ঈমানের নিরাপত্তা যদি থাকে। অর্থাৎ ঈমানের নিরাপত্তা, মালের নিরাপত্তা, জানের নিরাপত্তা যদি থাকে তখন তার জন্য পবিত্র হজ্জ ফরয হয়ে যায়। সেটাই বলা হয়েছে সাবীলা।
পবিত্র হজ্জ উনার মাস সম্পর্কে মহান আল্লাহ পাক তিনি নিজেই ইরশাদ মুবারক করেছেন-
اَلْـحَجُّ أَشْهُرٌ مَّعْلُوْمَاتٌ
হজ্জের মাসগুলো হচ্ছেন চিহ্নিত, সুবিদিত মাস। যেটা সকলেরই জানা রয়েছে, মশহূর।
قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ شَوَّالٌ وَّ ذُو الْقَعْدَةِ وَذُو الْـحِجَّةِ
সে মাসগুলো হচ্ছেন- পবিত্র শাওওয়াল শরীফ, পবিত্র যিলক্বদ শরীফ এবং পবিত্র যিলহজ্জ শরীফ। এ তিনটি হজ্জের মাস।
পবিত্র হজ্জ ফরয হবে যখন এ সময় তার পাথেয় থাকবে এবং এ সময় তার যাতায়াতের সমস্ত ব্যবস্থা থাকবে, ঈমানের, আমলের, মালের, জানের নিরাপত্তা থাকবে তখন পবিত্র হজ্জ ফরয হবে।
আর বিশেষ করে পবিত্র হজ্জের মাসগুলোকে আলাদা একটা সম্মান দেয়া হয়েছে যেটা হারাম মাস হিসেবে মাহান আল্লাহ পাক তিনি উল্লেখ করেছেন। পবিত্র কুরআন শরীফ উনার মধ্যে বলে দিয়েছেন। একদিক থেকে পবিত্র হজ্জ উনার সম্মান রয়েছেন এবং তার সাথে সাথে পবিত্র কুরবানী উনারও সম্মান রয়েছেন।
মহান আল্লাহ পাক তিনি সেটা ইরশাদ মুবারক করেছেন-
اِنَّ عِدَّةَ الشُّهُوْرِ عِنْدَ اللهِ اثْنَا عَشَرَ شَهْرًا فِـيْ كِتَابِ اللهِ يَوْمَ خَلَقَ السَّمٰوَاتِ وَالْأَرْضَ مِنْهَا أَرْبَعَةٌ حُرُمٌ.
নিশ্চয়ই যিনি খলিক্ব যিনি মালিক মহান আল্লাহ পাক উনার কাছে আসমান ও যমীন সৃষ্টির শুরু থেকে মহান আল্লাহ পাক উনার কিতাবের মধ্যে মাসের সংখ্যা বারোটি করা হয়েছে। তারমধ্যে চারটি মাস হচ্ছেন পবিত্র।
اِنَّ عِدَّةَ الشُّهُوْرِ عِنْدَ اللهِ اثْنَا عَشَرَ شَهْرًا
নিশ্চয়ই গণনা হিসেবে মহান আল্লাহ পাক উনার নিকট মাসের সংখ্যা হচ্ছেন বারোটি।
فِـيْ كِتَابِ اللهِ يَوْمَ خَلَقَ السَّمٰوَاتِ وَالْأَرْضَ
আসমান ও যমীনের সৃষ্টির শুরু থেকে মহান আল্লাহ পাক তিনি উনার সম্মানিত কিতাবে তা লিপিবদ্ধ করেছেন।
مِنْهَا أَرْبَعَةٌ حُرُمٌ.
তারমধ্যে চারটি হচ্ছেন পবিত্র। এটা মহান আল্লাহ পাক তিনি সরাসরি পবিত্র কুরআন শরীফ উনার মধ্যে উল্লেখ করেননি। নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, সাইয়্যিদুল মরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খতামুন নাবিইয়ীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি এর ব্যাখ্যা করেছেন।
قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ ثَلاَثَةٌ مُتَوَالِيَاتٌ ذُو الْقَعْدَةِ وَذُو الْـحِجَّةِ وَالْمُحَرَّمُ وَوَاحِدٌ فَرْدٌ وَهُوَ رَجَبُ
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, হারাম মাসের মধ্যে যে চারটি মাস তারমধ্যে তিনটা হচ্ছেন একসাথে, একটা হচ্ছেন আলাদা। যেটা আমরা বাংলায় বলে থাকি, পবিত্র যিলক্বদ শরীফ, পবিত্র যিলহজ্জ শরীফ, পবিত্র মুহররম শরীফ। আর আলাদা হচ্ছেন পবিত্র রজবুল হারাম শরীফ।
এখন পবিত্র হজ্জ করতে মানুষ যাবে। পবিত্র শাওওয়াল শরীফ মাসে প্রস্তুতি নিবে। পবিত্র যিলক্বদ শরীফ মাসে যাবে, পবিত্র যিলহজ্জ শরীফ মাসে হজ্জ করবে এবং পবিত্র মুহররম শরীফ মাসে প্রত্যাবর্তন করবে। যার কারণে মহান আল্লাহ পাক তিনি এই মাসগুলোকে হারাম বা সম্মানিত করে, এই মাসের মধ্যে সমস্ত মারামারি কাটাকাটি নিষিদ্ধ করে দিয়েছেন। শাওওয়াল শব্দের অর্থ এবং ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ অনেক রয়েছে। তবে আমভাবে যেটা অর্থ সেটা হচ্ছে, যে বাহন তার মুনিবকে বহন করতে পারে না। যে শাওওয়াল মাসে মানুষ ঘরে বসে থাকতেন, উনারাই ছফর করে, শিকার করে, ব্যবসা বাণিজ্য করে উনাদের রিযিকের ব্যবস্থা করতেন। যে শাওওয়াল মাসে ঘরে বসে খাবারের কোন ব্যবস্থা ছিল না। অর্থাৎ ঘরে বসে থেকে রিযিকের ব্যবস্থা করা যেত না। তাই কামাই রোযগার করে, ছফর করে, শিকার করে সে ব্যবস্থা করতে হতো। সেজন্য বলা হয়, শাওওয়াল শব্দের অর্থ হচ্ছে যে মাস মানুষের রিযিকের ভার বহন করতে অক্ষম। যুলক্বা’দাহ শব্দের অর্থ হচ্ছে, বসে থাকা। যে মাসে মানুষ বসে থাকে। অর্থাৎ যে মাসটা পবিত্র হজ্জ উনার জন্য নির্দিষ্ট করা হয়েছে। অন্যান্য কাজ থেকে বিরত থেকে এই মাসে পবিত্র হজ্জ উনার ব্যবস্থা করা। এ মাসে মারামারি কাটাকাটি যুদ্ধ বিগ্রহ নিষিদ্ধ। যুলহিজ্জাহ হজ্জ উনার মাস। আলাদাভাবে এ মাস উনার নামই দেয়া হয়েছে যুলহিজ্জাহ। হজ্জ উনার মাস, যে মাসে পবিত্র হজ্জ করতে হয়। এ মাসেও মারামারি কাটাকাটি যুদ্ধ বিগ্র নিষিদ্ধ। কাজেই মাসগুলোকে মহান আল্লাহ পাক তিনি আলাদাভাবে সম্মানিত করেছেন, ফযীলত দিয়েছেন, বুযুর্গী দিয়েছেন। আর হজ্জ, হজ্জ যে শব্দ, উনার অর্থ অনেক রয়েছেন। ইচ্ছা করা, ইরাদা করা, ক্বছদ্ বা নিয়ত করা। আরেকটা অর্থ হচ্ছেন প্রবল মুহব্বত প্রকাশ করা। যা আভিধানিক অর্থ বা লুগাতী অর্থ। আর ইস্তেলাহী তথা শরীয়াহ অর্থ বলা হয়, পবিত্র হজ্জ করা। পবিত্র হজ্জ হচ্ছে, নির্দিষ্ট মাসে, নির্দিষ্ট তারিখে, নির্দিষ্ট স্থানে, নির্দিষ্ট সময়, নির্দিষ্ট শর্ত শারায়িতসহ নির্দিষ্ট কিছু ইবাদত বন্দেগী করা। আমলগুলি হচ্ছেন ফরয ওয়াজিব নফল মুস্তাহাব ইত্যাদি। যেমন ইহরাম বাঁধা, ওকূফে আরাফাহ, মুজদালিফায় অবস্থান করা, মিনাতে আসা, রমী করা, কুরবানী করা, হলক করা, তাওয়াফে যিয়ারত করা, সায়ী করা, রমল ইত্যাদি করা। প্রত্যেকটা বিষয় নির্দিষ্ট মাসে, নির্দিষ্ট স্থানে, নিদিষ্ট সময়, নির্দিষ্ট শর্ত-শারায়িতসহ, নির্দিষ্টভাবে করতে হবে। ইহাই হচ্ছে প্রকৃত হজ্জ। আর উমরাহ অর্থ হচ্ছে, যিয়ারত, দিদার লাভ করা, সক্ষাত লাভ করা। এটা হচ্ছে লুগাতি অর্থ। আর ইস্তেলাহি অর্থ হচ্ছে, হজ্জের মতোই। তবে পবিত্র হজ্জে ওকূফে আরাফাহ রয়েছে। আর উমরাহতে ওকূফে আরাফাহ নেই। আর নির্দিষ্ট যে সময় বলা হয়ে থাকে, হজ্জের জন্য হজ্জের মাস। পবিত্র উমরার জন্য যদিও কোন মাস নির্দিষ্ট নেই তারপরও যিলহজ্জ মাসের ৯ তারিখ থেকে ১৩ তারিখ পর্যন্ত উমরাহ করা মাকরূহ। যদি কেউ পূর্বে ইহরাম বেঁধে থাকে উমরাহ করার জন্য তাহলে সেটা করতে পারবে। অন্যথায় এই পাঁচ দিন উমরাহ করার জন্য ইহরাম বাঁধা মাকরূহের অন্তর্ভুক্ত। এছাড়া বৎসরের সব দিনে উমরাহ করা যাবে। তবে উমরাহর জন্য শর্ত-শারায়িত রয়েছে। তাওয়াফে যিয়ারত, হজ্জের অন্যান্য যে হুকুম বিশেষ করে রমী, ওকূফে আরাফাহ এই শর্ত শারায়িতগুলো যা রয়েছে সেগুলো উমরাহর মধ্যে থাকবে না। এছাড়া তাওয়াফে যিয়ারত, পবিত্র কা’বা শরীফ উনার যিয়ারত, সায়ী সাফা-মারওয়া ইত্যাদি যে হুকুমগুলো রয়েছে সেটা উমরাহর জন্য বলবৎ রয়েছে। এজন্য লুগাতি অর্থ ও ইস্তেলাহী অর্থের মধ্যে পার্থক্য রয়েছে। তবে হজ্জ পালন করা যাদের জন্য সামর্থ থাকবে তাদের জন্য হজ্জ ফরয হবে। আর যাদের সামর্থ থাকবে না তাদের জন্য হজ্জ ফরয হবে না। এখন পবিত্র হজ্জ উনার বিষয়টা জানতে হলে, বুঝতে হলে অর্থাৎ হজ্জ করতে হলে প্রথম যে বিষয়টা প্রশ্ন আসবে সেটা হলো চাঁদের বিষয়টা। চাঁদের বিষয়টা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। যেটা আমরা সবসময় বলে থাকি। আমাদের পত্রিকায় সেটা লিখে থাকি। সেটা দৈনিক আল ইহসান শরীফ হোক বা মাসিক আল বাইয়্যিনাত শরীফ হোক আমরা চাঁদের বিষয়টা গুরুত্ব দিয়ে থাকি। এজন্য রু’ইয়াতে হিলাল মাজলিস করা হয়েছে। একটা আমাদের দেশ ব্যাপী, আরেকটা আন্তর্জাতিকভাবে করা হয়েছে। কাজেই চাঁদের উপর নির্ভর করবে পবিত্র হজ্জ করা ও পবিত্র উমারাহ করার বিষয়টা। কারণ চাঁদ যদি সঠিকভাবে দেখা না যায় বা দেখা না হয় তাহলে পবিত্র হজ্জ করা অত্যন্ত কঠিন হবে। এ সম্পর্কে মহান আল্লাহ পাক তিনি পবিত্র কালামুল্লাহ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক করেছেন-
يَسْأَلُوْنَكَ عَنِ الْأَهِلَّةِ ۖ قُلْ هِيَ مَوَاقِيْتُ لِلنَّاسِ وَالْـحَجِّ
মহান আল্লাহ পাক তিনি নিজেই ইরশাদ মুবারক করেছেন, আমার সম্মানিত হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আপনাকে জিজ্ঞাসা করা হচ্ছে-
يَسْأَلُوْنَكَ عَنِ الْأَهِلَّةِ ۖ
নুতুন চাঁদ সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হচ্ছে-
قُلْ هِيَ مَوَاقِيْتُ لِلنَّاسِ وَالْـحَجِّ
আপনি বলে দিন চাঁদটাকে নির্দিষ্ট করা হয়েছে, সময় নিরূপণকারী হিসেবে মানুষের জন্য এবং হজ্জের জন্য।