-হযরত মাওলানা মুফতী সাইয়্যিদ মুহম্মদ আব্দুল হালীম
পীরে কামিল-এর পরিচয়ঃ
আউলিয়ায়ে কিরামগণ সূর্যের মত উদার। সমূদ্রের মত দানশীল। মাটিরমত বিনয়ী। তাঁদেরকে দর্শনকারী সবার অন্তরে আল্লাহ পাক এবং তাঁর হাবীব, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর মারিফাত-মুহব্বতের বীজ অঙ্কুরিত হয়। কিছুদিন তাঁদের ছোহবত ইখতিয়ারের ফলে পাথরের মত কঠিন অন্তর বিশিষ্ট মানুষও তুলার মত কোমল হয়ে যায়। সে কারণেই ইমাম-মুজতাহিদ, আউলিয়ায়ে কিরামগণ, কামিল পীর ছাহেব চেনার আলামত সম্পর্কে বলেছেন, “যার ছোহবত ইখতিয়ার করলে- দুনিয়ার মুহব্বত দূর হয়। আল্লাহ পাক এবং তাঁর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর মুহব্বত ও তায়াল্লুক পয়দা হয়। সুন্নত পালনের প্রতি মন অনুরাগী হয়। দুনিয়া থেকে মন হয় উদাসীন।”- তিনি অবশ্যই ওলীআল্লাহ। আর তাঁরই ছোহবত ইখতিয়ার করতে হবে।
পক্ষান্তরে যারা বিপরীত চরিত্রের অধিকারী তাদের ছোহবত ইখতিয়ার করা তাদের নিকট বাইয়াত হওয়া জায়িয নেই বরং হারাম। আর বাইয়াত হয়ে থাকলে তাদেরকে পরিত্যাগ করতঃ অন্য কোন হক্কানী পীর ছাহেব-এর নিকট বাইয়াত হওয়া ফরয। এরূপ ব্যক্তি পীর ছাহেব নয়। বরং সে ধোঁকাবাজ, প্রতারক। এদের সাথে সম্পর্ক রাখা কাফির-মুশরিকদের সাথে সম্পর্ক রাখার চেয়েও খারাপ এবং ক্ষতিকারক।
মাহবুবে ইলাহী, হযরত নিজামুদ্দীন আউলিয়া রহমতুল্লাহি আলাইহি স্বীয় বিশ্বখ্যাত “রাহাতুল কুলূব” কিতাবে উল্লেখ করেছেন, শাইখুল আলম, হযরত বাবা ফরীদুদ্দীন মাসউদ গনজে শকর রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেছেন, “পীর ছাহেবকে এমন ক্ষমতাবান ও অন্তর্দৃষ্টি সম্পন্ন হওয়া আবশ্যক, যখন কোন ব্যক্তি মুরীদ হওয়ার জন্য আসে তখন সে পীর ছাহেব একটি মাত্র দৃষ্টি নিক্ষেপের মাধ্যমে তার অন্তরের সমস্ত দুনিয়ার মোহ ও আবর্জনা এমনভাবে বের করে দিবেন যেন অন্তর স্বচ্ছ আয়নার মত হয়ে যায়। যদি তাঁর মাঝে এমন ক্ষমতা না থাকে তাহলে তাঁর মুরীদ করা উচিত নয়। যদি করে তাহলে অপরকে গোমরাহ (বিভ্রান্ত) করার অপরাধে অপরাধী হবে।”
সেক্ষেত্রে পূর্ববর্তী দু’একজন আউলিয়ায়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর নাম মুবারক উল্লেখ করা প্রয়োজন বোধ করছি।
আল্লামা ইমাম আব্দুর রহমান জাওযী রহমতুল্লাহি আলাইহি প্রাথমিক জীবনে ইল্মে তাছাউফ স্বীকার করতেন না। জাহিরী ইল্মকেই প্রকৃত ইলম্ মনে করতেন। সেক্ষেত্রে জাহিরী ইল্মের দিক থেকে তাঁর সমকক্ষ খুব কম লোকই ছিলেন। জাহিরী ইল্মের ফখর (গৌরব) থেকে মুক্ত থাকা তাদের পক্ষে সম্ভব যারা ইলমে তাছাউফ হাছিল করেছেন। অন্যথায় এ ইলম্ই তাকে আল্লাহ পাক ও তাঁর হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর মারিফাত-মুহব্বত হাছিলের পথে প্রধান অন্তরায় হয়ে দাঁড়ায়। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে করে তোলে আত্মপূজারী, নফসের আজ্ঞাবহ দাস, শিরকে খফী বা গুপ্ত শিরক অধিকারী মুশরিক। হযরত ইমাম জাওযী রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর প্রাথমিক জীবনটা তাঁর ব্যতিক্রম ছিলো না। তবে তাঁর সু-নছীব।
একদিন তিনি ঘটনাক্রমে সাইয়্যিদুল আউলিয়া, মাহবুবে সুবহানী, গাউছূল আ’যম, হযরত বড় পীর ছাহেব রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর ওয়াজ শরীফের মাহফিলে হাজির হলেন। যদিও তিনি কারো ওয়াজ শোনার প্রয়োজন বোধ করতেন না। কিন্তু সেদিন মাহফিলে গাউছূল আ’যম, হযরত বড় পীর ছাহেব রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর এক দৃষ্টিতে ফয়েজ-তাওয়াজ্জুহ পেয়ে তাঁর কদম মুবারকে লুটে পড়লেন।
অনুরূপ ঘটনা, যামানার ইমাম ও মুজতাহিদ সাইয়্যিদুনা ইমাম রাজারবাগ শরীফের হযরত পীর ছাহেব ক্বিবলা মুদ্দা জিল্লুহুল আলী-এর জীবন মুবারকে একটা দু’টা নয় বরং হাজার-হাজার রয়েছে। তাঁর নেক দৃষ্টি কোন ব্যক্তির উপর পতিত হওয়ার সাথে সাথে অন্তরের সমস্ত ময়লা-আবর্জনা দূরীভূত হয়ে অন্তর স্বচ্ছ আয়নার মত পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন হয়েছে। আর বেলায়েত বা ওলীত্বের সর্বোচ্চ মাকামে উন্নতি হয়েছে কত মানুষ তার হিসাব করা কঠিন। (চলবে)