পাঠক! পূর্বের আলোচনা দ্বারা অকাট্যভাবেই প্রমাণিত হলো যে, পৃথিবীতে যত হক্কানী আউলিয়া-ই-কিরাম আগমন করেছেন তাঁদের প্রত্যেকেরই বিরোধিতা করা হয়েছে, তাদের প্রতি মিথ্যা তোহ্মত দেয়া হয়েছে, তাঁদের প্রাণ নাশের চেষ্টা করা হয়েছে এমনকি তাঁদেরকে কাফির ফতওয়া পর্যন্ত দেয়া হয়েছে। কিন্তু কেন এ বিরোধিতা? এ বিরোধিতার কারণ আর কিছুই নয়, এ বিরোধিতার কারণ একটাই, আর তা হচ্ছে- হক্কানী উলামা-ই-কিরাম তথা আউলিয়া-ই-কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণ হক্ব কথা বলেন, শরীয়তকে পরিপূর্ণ অনুসরণ করেন, জনসাধারণকে কুফরী, শিরেকী ও বিদ্য়াতী আক্বীদা ও আমল থেকে হিফাযতের কোশেশ করেন, দ্বীনের সঠিক প্রচার-প্রসার করেন এবং আক্বীদা ও আমলে আহ্লে সুন্নত ওয়াল জামায়াতের মত ও পথকেই পূর্ণরূপে অনুসরণ করেন। যার ফলে বাতিল, গোমরাহ্ ও দাজ্জালে কয্যাবদের আঁতে ঘা লাগে। কারণ তাঁদের কুফরী আক্বীদা ও বিদ্য়াত আমলগুলো জনসম্মুখে প্রকাশ পেয়ে যায়, তাদের জালিয়াতী ও ধর্মব্যবসায়ী চেহারা সুস্পষ্ট হয়ে উঠে, তারা তাদের কুফরী আক্বীদা ও বিদ্য়াত আমলগুলোকে মজবুত দলীল দ্বারা ছাবিত করতে ব্যর্থ হয়ে সমাজ থেকে হয় বিতাড়িত এবং তাদের দ্বীন ধ্বংস করার সকল কুপ্রচেষ্টা হয়ে যায় নিস্ফল। সঙ্গতঃ কারণেই তারা তখন হক্কানী উলামা-ই-কিরাম তথা আউলিয়া-ই-কিরামগণকে নিজেদের প্রাণের শত্রু মনে করে, তাঁদের প্রতি মিথ্যা তোহ্মত, অশালীন, মনগড়া ও দলীলবিহীন যতসব আজগুবী বক্তব্য প্রদান করে জনসাধারণকে নিজেদের দিকে আকৃষ্ট করার অপচেষ্টা চালায়। এ প্রসঙ্গে ইমামে আ’যম হযরত আবু হানীফা রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর জীবদ্দশায় ঘটিত একটি ঘটনা বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। কিতাবে উল্লেখ আছে যে, আওলাদে রসূল, হযরত ইমাম বাকের রহমতুল্লাহি আলাইহি ও হযরত ইমামে আ’যম আবু হানীফা রহমতুল্লাহি আলাইহি একবার একই বৎসর হজ্জে যান। হজ্জ উপলক্ষে হযরত ইমাম আবু হানীফা রহমতুল্লাহি আলাইহি যখন তাওয়াফ করছিলেন, তখন কোন এক ব্যক্তি আওলাদে রসূল, হযরত ইমাম বাকের রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর নিকট হযরত ইমাম আ’যম আবূ হানীফা রহমতুল্লাহি আলাইহিকে ঈঙ্গিত বা ইশারা দিয়ে দেখিয়ে বললো যে, “হে আওলাদে রসূল, হযরত ইমাম বাকের রহমতুল্লাহি আলাইহি! এই সেই ইমাম আ’যম কুফী যিনি আপনার নানাজানের (হাদীছ শরীফ-এর) বিরুদ্ধে ফতওয়া দেন। আল্লাহ্ পাক প্রদত্ত খোদায়ী ইল্ম ও সূক্ষ্ম সমঝের কারণে হযরত ইমাম আ’যম রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর বিষয়টি বুঝতে বাকী রইল না। তাই হজ্জের কাজ সমাধা করে হযরত ইমাম আয’ম আবূ হানীফা রহমতুল্লাহি আলাইহি আওলাদে রসূল, হযরত ইমাম বাকের রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর নিকট আসলেন এবং তাঁকে সালাম দিলেন। কিন্তু আওলাদে রসূল, হযরত ইমাম বাকের রহমতুল্লাহি আলাইহি সালামের জবাব দিলেন না বরং চেহারা মুবারক ফিরিয়ে নিলেন। বিনয় ও আদবের সাথে এর কারণ জানার আরজু পেশ করলে তার জবাবে আওলাদে রসূল, হযরত ইমাম বাকের রহমতুল্লাহি আলাইহি বললেন, “আপনিই কি সেই ইমাম আবূ হানীফা কুফী রহমতুল্লাহি আলাইহি, যে আমার নানাজানের (হাদীছ শরীফ-এর) বিরুদ্ধে ফতওয়া দেয়। জবাব শুনে হযরত ইমাম আ’যম আবু হানীফা রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন, “আমি যদি সত্যিই সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর হাদীছ শরীফের বিরুদ্ধে ফতওয়া দিতাম, তবে হাদীছ শরীফে রয়েছে, মেয়েদের অসুস্থতার সময়ের নামায কাযা করতে হয়না কিন্তু রোযার কাযা করতে হয়। অথচ নামাযের গুরুত্ব রোযা থেকে অনেক বেশী। যদি আমি হাদীছ শরীফ-এর বিরোধিতা করতাম, তবে ফতওয়া দিতাম, নামায কাযা করতে হবে, রোযা কাযা করতে হবেনা কিন্তু আমি তা বলিনা। আবার সম্পত্তির ব্যাপারে কুরআন শরীফ ও হাদীছ শরীফের ফতওয়া হলো, মেয়েরা সম্পত্তির একভাগ পাবে। আর ছেলেরা দু’ভাগ পাবে। যদি আমি কুরআন শরীফ ও হাদীছ শরীফের বিরুদ্ধেই ফতওয়া দিতাম, তবে ফতওয়া দিতাম, মেয়েরা সম্পত্তির দু’ভাগ পাবে, আর ছেলেরা পাবে একভাগ। কারণ মেয়েরা দূর্বলা ও অবলা। কিন্তু আমি তা বলি না। আর লটারীকে আমি নাজায়িয ফতওয়া দেই, যা শরীয়তেরই ফতওয়া। অথচ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ছফরে যাওয়ার সময় উম্মুল মু’মিনীন রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুন্নাগণ থেকে একজনকে নিয়ে যেতেন, তা ফয়সালা করতেন লটারীর মাধ্যমে, আমি সে লটারীকে জায়িয ফতওয়া দেই। যদি তাই হয়ে থাকে, তবে আমি হাদীছ শরীফের বিরুদ্ধে ফতওয়া দিলাম কোথায়?” একথা শুনে আওলাদে রসূল হযরত ইমাম বাকের রহমতুল্লাহি আলাইহি হযরত ইমাম আ’যম রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর কপাল মুবারকে চুমু খেলেন এবং বললেন, “হে ইমাম আ’যম! আপনার গভীর ইল্ম ও সূক্ষ্ম সমঝই আপনাকে সকলের নিকট শত্রু বানিয়েছে।” মুলতঃ যুগে যুগে মিথ্যাবাদী আর মুনাফিকের দলেরাই হক্বের বিরোধিতা করেছে, হক্বের বিরুদ্ধে মিথ্যা অপপ্রচার করেছে। তাই মহান আল্লাহ পাক রব্বুল আলামীন পবিত্র কালামুল্লাহ শরীফে মুনাফিকদেরকে ‘কায্যাব’ বা মিথ্যাবাদী বলে উল্লেখ করেছেন। যেমন, পবিত্র কালামুল্লাহ শরীফে ইরশাদ হয়েছে,
والله يشهد ان المنافقين لكاذبون.
অর্থাৎ “আল্লাহ পাক সাক্ষ্য দিচ্ছেন যে, নিশ্চয়ই মুনাফিকরা মিথ্যাবাদী।” উক্ত আয়াত শরীফ দ্বারা এটাই প্রমাণিত হয় যে যারা মুনাফিক তারা অবশ্যই মিথ্যাবাদী। আবার যারা মিথ্যাবাদী তারাই মুনাফিক। কেননা হাদীছ শরীফে মুনাফিকের যে আলামত বা লক্ষণ উল্লেখ করা হয়েছে তন্মধ্যে একটি হলো মিথ্যা কথা বলা।” রাজারবাগ শরীফের হযরত পীর ছাহেব ক্বিবলা মুদ্দা জিল্লুহুল আলী-এর যারা বিরোধিতাকারী তারা উক্ত আয়াত শরীফ ও হাদীছ শরীফেরই পূর্ণ মিছদাক। অর্থাৎ তারা একই সাথে মুনাফিক ও কাট্টা মিথ্যাবাদী, তাই তারা মানুষদেরকে বিভ্রান্ত করার জন্যে স্মরনীকা বার্ষিকী, পত্র-পত্রিকা ও বক্তৃতার মাধ্যমে মিথ্যা ও প্রতারণার আশ্রয় নেয়। যেমন, যুগের আবূ জাহিল, মুনাফিক, কায্যাবদেরও একটি মিথ্যা প্রচারণা হচ্ছে, (১) তারা যখনই রাজারবাগ শরীফ সম্পর্কে কিছু লিখে, তখন প্রতারণামূলকভাবে সেখানে দেওয়ানবাগের কথাও উল্লেখ করে। এর দ্বারা তারা সাধারণ মানুষদেরকে এটাই বুঝতে চায় যে, দেওয়ানবাগ ও রাজারবাগ এক ও অভিন্ন। আবার কোন কোন ক্ষেত্রে এই মিথ্যাবাদী ও মুনাফিকের দল মানুষদেরকে বিভ্রান্ত করার উদ্দেশ্যে রাজারবাগ শরীফকে ‘দেওয়ানবাগ’ বলে প্রচার করে থাকে। অথচ দেওয়ানবাগের সাথে রাজারবাগ শরীফের কোন দিক থেকে কোন সম্পর্ক নেই। দেওয়ানবাগের সিলসিলা হলো এনায়েতপুরী। আর রাজারবাগ শরীফের হযরত পীর ছাহেব ক্বিবলা মুদ্দা জিল্লুহুল আলী-এর সিলসিলা হলো ‘ফুরফুরা শরীফ’। কেননা রাজারবাগ শরীফের হযরত পীর ছাহেব ক্বিবলা মুদ্দা জিল্লুহুল আলী-এর পীর ছাহেব হচ্ছেন ঢাকা আলীয়া মাদ্রাসার (অবসরপ্রাপ্ত) মুমতাজুল মুফাস্িসরীন, উস্তাযুল আসাতিযা, শাইখুল মাশায়িখ, মুহ্ইস্ সুন্নাহ, কুতুবুল আলম হযরতুল আল্লামা মাওলানা শাহ ছূফী আবূল খায়ের মুহম্মদ ওয়াজীহুল্লাহ নানুপুরী রহমতুল্লাহি আলাইহি। পীর ছাহেব ক্বিবলা দক্ষিণ যাত্রাবাড়ী, খানকা-ই মুহম্মদিয়া, ঢাকা। তিনি খিলাফত লাভ করেছেন গত শতকের মুজাদ্দিদ ইমামুল হুদা, কুতুবুল আলম হযরত আবূ বকর ছিদ্দীক্বী ফুরফুরাবী রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর দুই ছাহেবজাদাহ (১) সুলতানুল আরিফীন হযরত নাজমুস্ সায়াদাত ছিদ্দীকী ও (২) ক্বাইয়্যূমুয্ যামান হযরত আবদুল হাই ছিদ্দীক্বী ফুরফুরাবী রহমতুল্লাহি আলাইহিমা থেকে। রাজারবাগ শরীফ থেকে প্রকাশিত ‘শাজরা শরীফ’ পাঠ করলেই তার সুস্পষ্ট প্রমাণ পাওয়া যাবে। মূলতঃ যুগের আবূ জাহিল, মুনাফিক, কায্যাব, প্রতারক ওহাবী, খারিজীরা মানুষদেরকে বিভ্রান্ত করার উদ্দেশ্যে প্রতারণার আশ্রয় নিয়ে মিথ্যা অপপ্রচার করে নিজেদেরকে ডাহা মিথ্যাবাদী ও প্রতারক বলে সাব্যস্ত করে। (চলবে)
-মুফতী ইবনে ইসহাক, বাসাবো, ঢাকা।
ইরাকের মীরজাফর সাদ্দাম রাশিয়ার বেলারুশ যেতে চায় কেন?
প্রসঙ্গঃ ছবি, অশ্লীল ছবি ইনকিলাব ও হাটহাজারীর আহমক শাফী উপাখ্যান