মহান আল্লাহ পাক তিনি পবিত্র কুরআন শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক করেন, “ওই ব্যক্তি সফলতা অর্জন করেছে, যে ইছলাহ লাভ করেছে। আর ওই ব্যক্তি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, যে কলুষিত হয়েছে।”
অর্থাৎ পথ দুটি- সত্যের পথ ও অন্যায়ের পথ। মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, “তোমরা সত্যের সাথে মিথ্যাকে মিশ্রিত করো না।”
কিন্তু বর্তমান সমাজব্যবস্থা তথা রাষ্ট্রীয় আইন তা-ই করেছে। দেশে প্রায় ১২শ’ আইন রয়েছে। তার মধ্যে কয়েকটি আইন ইসলামী। বাদ বাকী সবই অনৈসলামী। কিন্তু এ অনৈসলামী আইন সমাজে কোনো সুফল বয়ে আনতে পারেনি। বরং সমাজের সর্বত্র অরাজকতা, অনাচার আর অনিয়ম। প্রতিদিনই পেপার পত্রিকায় এসবেরই অধিকাংশ খবর।
প্রশ্ন হচ্ছে- সমাজে খাদ্যদ্রব্যে ভেজাল থেকে আরম্ভ করে চিকিৎসা ক্ষেত্রে প্রতারণা, রাস্তা-ঘাটে দুর্ঘটনা, স্বামী-স্ত্রী প্রতারণা, বাবা কর্তৃক ছেলেকে হত্যা, পরকীয়ার কারণে মা কর্তৃক সন্তান হত্যা, সেনাবাহিনী-পুলিশ-মন্ত্রী কর্তৃক দুর্নীতি- এসবের পিছনে মূল কারণ কী?
কারণ হলো- ভয়হীনতা অথবা সঠিক শক্তিকে ভয় না করা। উপরিল্লিখিত যত অপরাধ আছে এবং সে অপরাধে জড়িত যত মানুষ, তারা ভয় পাওয়ার মতো কাউকে দেখে না। এসব অপরাধ থেকে বিরত থাকার জন্য যে শক্তির বর্ণনা দরকার, তা তাদের সামনে নেই।
প্রসঙ্গত, উপরিল্লিখিত অপরাধীদের ভয়ের বিষয় হলো রাষ্ট্র। আর রাষ্ট্রের মালিক হলো জনগণ। সংবিধানে রাষ্ট্র বা প্রজাতন্ত্রের সব ক্ষমতার মালিক জনগণ। অর্থাৎ উপরিল্লিখিত অপরাধীদের যদি ভয় পেতে হয়, তাহলে তাদের মতো জনগণকেই ভয় পেতে হবে। তারা সব ক্ষমতার মালিক জনগণের পক্ষে ক্ষমতা প্রয়োগকারী, পুলিশ, বিচারক ইত্যাদিকে ভয় পাবে। অথচ এরা অপরাধীদের মতোই অনুভূতি, প্রবৃত্তিগত ও প্রকৃতিগতভাবে প্রায় একই ধরনের মানুষ।
সেক্ষেত্রে সঙ্গতকারণেই অপরাধীরা তাদেরকে খুব একটা ভয় পায় না। বরং ম্যানেজ করার অবকাশ পায়। অথবা মন্ত্রী থেকে বিচারক তারাও অপরীদের মতোই অন্যভাবে অপরাধই করে যায়। এ কারণে স্বাধীনতাউত্তর এ প্রজাতন্ত্রে অদ্যাবধি দুর্নীতি ও অপরাধ কমার পরিবর্তে উল্টো বেড়েছে। আর সব অঘটনের পিছনে এই একই বিষয়।
কারণ যে লঞ্চ দুর্ঘটনা ঘটে, যে সড়ক দুর্ঘটনা হয় তাতে সংশ্লিষ্টের মনে যদি জনগণের প্রতি জবাবদিহিতার পরিবর্তে মহান আল্লাহ পাক উনার ভয় থাকতো, তাহলে সে এত ঢিলেঢালা ডিউটি করতো না। সমাজের কোথাও এত অনাচার হতো না। এখন যেটা হচ্ছে সংবিধান মোতাবেক প্রজাতন্ত্রের মালিক, সার্বভৌম ক্ষমতার মালিক জনগণ। কাজেই জনগণ কতটুকু ক্ষমতার মালিক হতে পারে অথবা কতটুকু ভয়ের কারণ হতে পারে- সেটা সংশ্লিষ্ট অপরাধীরা ভালো করে বুঝেই অনাচার বা অনিয়মে গা ভাসিয়ে দেয়। আর এ কারণেই সমাজ আজ অন্যায় আর অনিয়মের স্রোতে ভেসে যাচ্ছে।
অথচ রাষ্ট্রধর্ম পবিত্র দ্বীন ইসলাম উনার এদেশে পবিত্র কুরআন শরীফ, পবিত্র সুন্নাহ শরীফ উনাদের আইন অনুযায়ী আমাদের সর্বাগ্রে বিশ্বাস করতে হয়- ‘সব সার্বভৌম ক্ষমতার মালিক মহান আল্লাহ পাক তিনি।’ পবিত্র কুরআন শরীফ উনার মধ্যে অনেক পবিত্র আয়াত শরীফ উনার মধ্যে মহান আল্লাহ পাক তিনি তা ইরশাদ মুবারক করেছেন। মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, “তুমি কি জান না যে, আল্লাহ পাক উনার জন্যই নভোম-ল ও ভূম-লের সার্বভৌমত্ব? মহান আল্লাহ পাক তিনি ব্যতীত তোমাদের কোনো বন্ধু ও সাহায্যকারী নেই।” (পবিত্র সূরা বাক্বারা শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ১০৭)
“বলুন ইয়া আল্লাহ পাক! আপনিই সার্বভৌম শক্তির অধিকারী। আপনি যাকে ইচ্ছা রাজ্য দান করেন এবং যার কাছ থেকে ইচ্ছা রাজ্য নিয়ে নেন এবং যাকে ইচ্ছা সম্মান দান করেন আর যাকে সম্মান দান করেন না, সে অপমানিত হয়। আপনারই হাতে রয়েছে যাবতীয় কল্যাণ। নিশ্চয়ই আপনি সর্ববিষয়ে ক্ষমতাশীল।” (পবিত্র সূরা আল ইমরান শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ২৬)
“আর মহান আল্লাহ পাক উনার জন্যই হলো আসমান ও যমিনের বাদশাহী। মহান আল্লাহ পাক তিনিই সর্ববিষয়ে ক্ষমতার অধিকারী।” (পবিত্র সূরা আল ইমরান শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ১৮৯)
উল্লেখ্য, সার্বভৌমত্ব ক্ষমতার মালিক যেমন মহান আল্লাহ পাক তিনি, একমাত্র ভয় করার হক্বদারও মহান আল্লাহ পাক উনি। এ বিষয়েও পবিত্র কুরআন শরীফ উনার মধ্যে অনেক পবিত্র আয়াত শরীফ রয়েছে। মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, “হে ঈমানদারগণ! মহান আল্লাহ পাক উনাকে যেমন ভয় করা উচিত, ঠিক তেমনিভাবে ভয় করতে থাকুন এবং অবশ্যই মুসলমান না হয়ে মৃত্যুবরণ করো না।” (পবিত্র সূরা আল ইমরান শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ১০২)
“এরা যে রয়েছে, এরাই হলো শয়তান, এরা নিজেদের বন্ধুদের ব্যাপারে ভীতি প্রদর্শন করে। সুতরাং তোমরা তাদেরকে ভয় করো না। তোমরা যদি ঈমানদার হয়ে থাকো, তবে আমাকে ভয় করো।” (পবিত্র সূরা আল ইমরান শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ১৭৫)
হে মুমিনগণ! মহান আল্লাহ পাক উনাকে ভয় করো, উনার নৈকট্য হাছিলে উছিলা অন্বেষণ করো এবং উনার পথে জিহাদ করো, যাতে তোমরা সফলকাম হও।” (পবিত্র সূরা মায়িদা শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ৩৫)
বলাবাহুল্য, সার্বভৌমত্ব ক্ষমতার মালিক মহান আল্লাহ পাক তিনি এবং একমাত্র মহান আল্লাহ পাক উনাকেই ভয় করতে হবে- এ দুটো মূল্যবোধ যদি আমাদের থাকে এবং আমাদের আইন, শিক্ষা, বিচার ব্যবস্থায় যদি সর্বাত্মক ফলিত হয়, তবে সমাজ থেকে খুব সহজেই সব অনাচার-অনিয়ম-অন্যায় ইত্যাদি দূর হয়ে যাবে, সমাজে ইসলামী মূল্যবোধ প্রতিষ্ঠা পাবে।
-আল্লামা মুহম্মদ আরিফুল্লাহ
প্রসঙ্গঃ আমেরিকায় ইহুদী প্রভাব ও নিয়ন্ত্রণ- ২
ব্রিটিশ গুপ্তচরের স্বীকারোক্তি এবং ওহাবী মতবাদের নেপথ্যে ব্রিটিশ ভূমিকা-৩৪
চাঁদ দেখা এবং নতুন চন্দ্রতারিখ শুরু নিয়ে প্রাসঙ্গিক আলোচনা- ১