وَاللهُ يَـخْتَصُّ بِرَحْـمَتِهٖ مَنْ يَّشَاءُ
অর্থ: মহান আল্লাহ পাক তিনি যাকে ইচ্ছা রহমত দ্বারা খাছভাবে মনোনীত করেন। সুবহানাল্লাহ! (পবিত্র সূরা বাক্বারাহ শরীফ, পবিত্র আয়াত শরীফ ১০৫)
বলার অপেক্ষা রাখেনা, রঊফুর রহীম, নূরে মুজাস্সাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি রহমতুল্লিল আলামীন। আর উনার ছোহবত মুবারক, নিসবত মুবারক এবং খিদমত মুবারকে আনযাম প্রদানের জন্য মহান আল্লাহ পাক তিনি উনার বান্দাহদের মধ্য হতে কতিপয় বান্দাহকে বিশেষভাবে মনোনীত করেন। তারই ধারাবাহিকতায় রঊফুর রহীম, নূরে মুজাস্সাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বেমেছাল খিদমতে আখাছ্ছুল খাছভাবে মনোনীত সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মে আয়মন আলাইহাস সালাম। সুবহানাল্লাহ।
জনসাধারনের মাঝে সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মে আয়মন আলাইহাস সালাম উনার মুবারক আলোচনা তেমন লক্ষ্য করা যায়না। কিন্তু তিনি যে বেমেছাল ফাযায়িল-ফযীলতের অধিকারিণী, তা সাধারণ মানুষের বোধগম্যের বাহিরে। সঙ্গতকারণেই উনার মুবারক আলোচনা অতীব জরুরী।
সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মে আয়মন আলাইহাস সালাম তিনি আস্সাবিকুনাল আউওয়ালুন তথা প্রাথমিক যুগে সম্মানিত দ্বীন ইসলাম গ্রহণকারিণী উনাদের অন্তর্ভূক্ত। তিনি মুহাজির তথা হিজরতকারিণী উনাদের অন্তর্ভূক্ত। তিনি বড় বড় অনেক জিহাদে অংশগ্রহণকারিণী। সর্বপোরি তিনি রঊফুর রহীম, নূরে মুজাস্সাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বেমেছাল খিদমতে সুদীর্ঘ সময় ধরে যে আনযাম দিয়েছেন, এরূপ দীর্ঘ সময় ধরে খিদমতে আনযাম প্রদানকারী দ্বিতীয় কাউকে ইতিহাসে পাওয়া যায়না।
কিতাবে উল্লেখ করা হয়-
اُمُّ اَيْـمَنَ الْـحَبَشِيَّةِ عَلَيْهَا السَّلَامُ اِسْـمُهَا بَرَكَةُ
অর্থ: হযরত উম্মে আইমান হাবশিয়্যাহ আলাইহাস সালাম উনার নাম মুবারক বারাকাহ।
অর্থাৎ, হযরত উম্মে আইমান আলাইহাস সালাম উনার মূল নাম মুবারক হযরত বারাকাহ আলাইহাস সালাম। তবে উনার সন্তান হযরত আয়মন রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার সাথে নিসবত করে কুনিয়াত বা উপনাম হয়েছে হযরত উম্মে আয়মন আলাইহাস সালাম। আর এ নাম মুবারকেই তিনি কায়িনাতে প্রসিদ্ধি লাভ করেছেন।
বর্তমান ইথুপিয়ার প্রাচীন নাম আবিসিনিয়া। আর আবিসিনিয়ার অধিবাসীদের হাবশী বলা হয়। হযরত উম্মে আয়মান আলাইহাস সালাম তিনি আবিসিনিয়ার অধিবাসী ছিলেন। আবিসিনিয়াতেই তিনি পবিত্র বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশ করেন। সে সময় কিছু লোক বিভিন্ন কাফেলাতে হামলা করে কাফেলার শিশুদেরকে ধরে নিয়ে বিভিন্ন বাজার বা মেলাতে গোলাম-দাসী হিসেবে বিক্রয় করে দিতো। এমনি একদল ডাকাত সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মে আয়মন আলাইহাস সালাম উনাকে উনার শিশু বয়সে ধরে এনে দাসী হিসেবে বিক্রয় করে দেয়। সাইয়্যিদুনা হযরত জাদ্দু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মে আয়মন আলাইহাস সালাম উনাকে ক্রয় করে নেন ।
সাইয়্যিদুনা হযরত জাদ্দু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মে আয়মন আলাইহাস সালাম উনাকে আবূ রসূলিনা সাইয়্যিদুনা হযরত যাবীহুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার গোলামীতে নিয়োগ করেন। নূরে মুজাস্সাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মহাসম্মানিত হযরত ওয়ালিদাইন শরীফাইন আলাইহিমাস সালাম উনাদের পবিত্র নিসবাতুল আযীমাহ শরীফ সংঘটিত হওয়ার পর হতে তিনি দায়েমীভাবে খিদমত মুবারকে আনযাম দেন। সুবহানাল্লাহ!
কিতাবে উল্লেখ করা হয়, আবূ রসূলিনা, সাইয়্যিদুনা হযরত যাবীহুল্লাহ আলাইহিস সালাম তিনি উনার পবিত্র নিসবাতুল আযীমাহ শরীফ উনার কয়েকদিন পরেই ব্যবসায়িক কাজে সিরিয়ায় গমন করেন। সিরিয়া হতে ফিরার পথে পবিত্র মদীনা শরীফে তিনি মারিদ্বী শান মুবারক গ্রহণ করেন এবং সেখানেই তিনি পবিত্র বিছালী শান মুবারক গ্রহণ করেন। অর্থাৎ, সাইয়্যিদুনা হযরত যাবীহুল্লাহ আলাইহিস সালাম তিনি পবিত্র নিসবাতুল আযীমাহ শরীফ উনার পর প্রায় মাত্র দুই মাস সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মু রসূলিনা আলাইহাস সালাম উনাকে ছোহবত মুবারক দিয়েছেন। বাকি পুরো সময় সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মু রসূলিনা আলাইহাস সালাম উনার নিরবিচ্ছিন্ন খিদমতে আনযাম দিয়েছেন সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মে আয়মন আলাইহাস সালাম তিনি। সুবহানাল্লাহ!
নূরে মুজাস্সাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি উনার মহাসম্মানিতা আম্মাজান আলাইহাস সালাম উনার খিদমত মুবারকে অবস্থানকালীন সময়ে প্রকাশিত বিভিন্ন মুবারক ঘটনাবলী সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মু রসূলিনা আলাইহাস সালাম উনার কাছ থেকে সরাসরি শুনার সৌভাগ্য লাভ করেছেন একমাত্র হযরত উম্মে আয়মন আলাইহাস সালাম। সুবহানাল্লাহ! একইভাবে তিনি ছিলেন নূরে মুজাস্সাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার দুনিয়ার যমীনে সম্মানিত তাশরীফ মুবারক গ্রহণের সময়ে সংঘটিত মুবারক ঘটনাবলীর প্রত্যক্ষদর্শী। এমনকি নূরে মুজাস্সাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি দুনিয়ার যমীনে সম্মানিত তাশরীফ মুবারক গ্রহণের পর উনাকে কোল মুবারকে তুলে নিয়ে আখাছ্ছুল খাছ ছোহবত মুবারক লাভের সৌভাগ্য সর্বপ্রথম হযরত উম্মে আয়মন আলাইহাস সালাম তিনিই লাভ করেন। সুবহানাল্লাহ!
পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত রয়েছে, নূরে মুজাস্সাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার দুনিয়াবী হায়াত মুবারক যখন ছয় বছর, তখন উনাকে নিয়ে সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মু রসূলিনা আলাইহাস সালাম তিনি পবিত্র মক্কা শরীফ হতে পবিত্র মদীনা শরীফে গমন করেন। তখন উনাদের সার্বিক খিদমতের আনযাম দেন একমাত্র হযরত উম্মে আয়মন আলাইহাস সালাম তিনি। এমনকি সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মু রসূলিনা আলাইহাস সালাম উনার কাফন মুবারক এবং রওযা শরীফ স্থাপনসহ সার্বিক আনজামে মহান আল্লাহ পাক হযরত ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম উনাদেরকে প্রেরণ করেন। হযরত ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম উনারাই সবকিছুর আনজাম মুবারক দেন। যার প্রত্যক্ষদর্শী ছিলেন হযরত উম্মে আয়মন আলাইহাস সালাম তিনি। সুবহানাল্লাহ!
অপর বর্ণনায় রয়েছে, পবিত্র মদীনা শরীফে সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মু রসূলিনা আলাইহাস সালাম তিনি পবিত্র মারিদ্বী শান মুবারক গ্রহণ করার পর উনার খিদমত মুবারক করা এবং সেখানে তিনি পবিত্র বিছালী শান মুবারক প্রকাশ করার পর উনার কাফন মুবারক ও উনার রওযা শরীফ স্থাপনসহ সামগ্রিকভাবে আনযাম দেয়ার সুযোগ লাভ করেছেন হযরত উম্মে আয়মন আলাইহাস সালাম তিনি। সুবহানাল্লাহ!
সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মু রসূলিনা আলাইহাস সালাম তিনি পবিত্র মদীনা শরীফে পবিত্র বিছালী শান মুবারক প্রকাশ করার পর নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে পবিত্র মক্কা শরীফে নিয়ে যাওয়ার বিষয়েও হযরত উম্মে আয়মন আলাইহাস সালাম তিনি এককভাবে আনযাম দেন। এমনকি সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মু রসূলিনা আলাইহাস সালাম তিনি পবিত্র বিছালী শান মুবারক প্রকাশ করার পর নূরে মুজাস্সাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সাথে উম্মুল মু’মিনীন হযরত আল ঊলা কুবরা আলাইহাস সালাম উনার পবিত্র নিসবাতে আযীমাহ শরীফ অনুষ্ঠিত হওয়া পর্যন্ত সুদীর্ঘ প্রায় ১৯ বছর মুবারক গোলামীতে আনযাম দেন। যদিও এ সময়ে সাইয়্যিদুনা হযরত জাদ্দু রসূল আলাইহিস সালাম তিনি এবং আবূ ত্বালিব উনারা সার্বিকভাবে আনযাম দিয়েছেন। তথাপি নূরে মুজাস্সাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মুবারক গোলামীতে ছায়ার মতো লেগে ছিলেন হযরত উম্মে আয়মন আলাইহাস সালাম তিনি। সুবহানাল্লাহ!
নূরে মুজাস্সাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সাথে উম্মুল মু’মিনীন হযরত আল ঊলা কুবরা আলাইহাস সালাম উনার পবিত্র নিসবাতে আযীমাহ শরীফ অনুষ্ঠিত হওয়ার পর নূরে মুজাস্সাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মুবারক নির্দেশনা অনুযায়ী হযরত আবীদ ইবনে হারিছ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার সাথে হযরত উম্মে আয়মন আলাইহাস সালাম উনার শাদী মুবারক অনুষ্ঠিত হয়। উহুদ জিহাদে শাহাদাতবরণকারী ছাহাবী হযরত আয়মন রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু সে ঘরে বিলাদত শরীফ গ্রহণ করেন। সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার প্রাথমিক যুগে হযরত আবীদ ইবনে হারিছ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বিছাল শরীফ গ্রহণ করার পরের অবস্থা সম্পর্কে পবিত্র হাদীছ শরীফে বর্ণিত রয়েছে-
عَنْ حَضْرَتْ شَقِيْقِ بْنِ عُقْبَةَ رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ قَالَ كَانَتْ أُمُّ أَيْـمَنَ عَلَيْهَا السَّلَامُ تُلَطِّفُ رَسُوْلَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَتَقُوْمُ عَلَيْهِ فَقَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهِ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مَنْ سَرَّه أَنْ يَّتَزَوَّجَ اِمْرَأَةً مِّنْ أَهْلِ الْـجَنَّةِ فَلْيَتَزَوَّجْ أُمَّ أَيْـمَنَ عَلَيْهَا السَّلَامُ فَتَزَوَّجَهَا زَيْدٌ رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ فَوَلَدَتْ لَه أُسَامَةَ رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ
অর্থ: হযরত শাক্বীক্ব ইবনে উক্ববাহ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, হযরত উম্মে আয়মন আলাইহাস সালাম তিনি নূরে মুজাস্সাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মুবারক ছোহবতে যাতায়াত করতেন এবং উনার মুবারক গোলামীতে আনযাম দিতেন। নূরে মুজাস্সাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, জান্নাতী মহিলাকে বিবাহ করতে যে আনন্দবোধ করে, সে যেন হযরত উম্মে আয়মন আলাইহাস সালাম উনাকে বিবাহ করে। তখন হযরত যায়েদ বিন হারীসাহ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি হযরত উম্মে আয়মন আলাইহাস সালাম উনাকে শাদী মুবারক করেন। সে ঘরেই হযরত উসামা বিন যায়েদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু পবিত্র বিলাদত শরীফ গ্রহণ করেন। সুবহানাল্লাহ! (আবূ নুয়াইম, আনসাবুল আশরাফ)
বর্ণিত পবিত্র হাদীছ শরীফে হযরত উম্মে আয়মন আলাইহাস সালাম উনাকে জান্নাতী মহিলা হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। তাছাড়া হযরত উম্মে আয়মন আলাইহাস সালাম উনাকে নূরে মুজাস্সাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি এত মুহব্বত মুবারক করতেন, যার কারণে উনার লখতে যিগার হযরত উসামা বিন যায়েদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনাকে হুব ইবনে হুব বলতেন অর্থাৎ মুহব্বতের সন্তান মুহব্বত। এ ব্যাতীত ‘হুব্বে রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম’ তথা নূরে মুজাস্সাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মুহব্বত মুবারকের পাত্র নামে অভিহিত করা হতো। সুবহানাল্লাহ!
হযরত উম্মে আয়মন আলাইহাস সালাম তিনি পবিত্র মক্কা শরীফ হতে পবিত্র মদীনা শরীফে একাকি হিজরত মুবারক করেন। উনার হিজরত মুবারক সম্পর্কে পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত আছে-
عَنْ حَضْرَتْ عُثمَانَ بْنِ الْقَاسِمِ رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ قَالَ لَمَّا هَاجَرَتْ اُمُّ أَيْـمَنَ عَلَيْهَا السَّلَامُ أَمْسَتْ بِالْـمُنْصَرِفِ دُوْنَ الرَّوْحَاءِ فَعَطَشَتْ وَلَيْسَ مَعَهَا مَاءٌ وَهِيَ صَائِمَةٌ وَجَهَدَتْ فَدَلّٰـى عَلَيْهَا مِنَ السَّمَاءِ دَلْوٌ مِّنْ مَّاءٍ بِرِشَاءَ اَبْيَضَ فَشَرِبَتْ وَكَانَتْ تَقُوْلُ مَا أَصَابَنِـيْ بَعْدَ ذٰلِكَ عَطَشٌ
অর্থ: হযরত উছমান ইবনুল কাসিম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, হযরত উম্মে আয়মন আলাইহাস সালাম তিনি রোযা অবস্থায় বাহন ব্যতিত পায়ে হেটে হিজরত মুবারক করছিলেন। তখন উনার কাছে কোন পানি ছিলনা। এমন অবস্থায় তিনি পিপাসা অনুভব করলেন। তখন আসমান হতে সাদা রশিতে বাধা বালতি ভরতি পানি উনার নিকট প্রেরণ করা হয়। আর তিনি বলতেন, আসমানী সেই কুদরতী পানি পান করার পর আমি কখনো পিপাসা অনুভব করিনি। সুবহানাল্লাহ! (সিয়ারু আ’লামিন নুবালা)
হযরত উম্মে আয়মন আলাইহাস সালাম উনার মুবারক শানে পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত রয়েছে-
كَانَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُوْلُ أُمُّ أَيَـمَنَ عَلَيْهَا السَّلَامُ أُمِّيْ بَعْدَ أُمِّيْ
অর্থ: নূরে মুজাস্সাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, হযরত উম্মে আয়মন আলাইহাস সালাম তিনি আমার মহাসম্মানিতা আম্মাজান আলাইহাস সালাম উনার পর আমার মহাসম্মানিতা আম্মাজান। সুবহানাল্লাহ! (তারীখে ইবনে আবী খাইসামাহ)
অন্য পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত রয়েছে-
اِنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ كَانَ يَقُوْلُ لِـحَضْرَتْ أُمِّ أَيَـمَنَ عَلَيْهَا السَّلَامُ يَا اُمَّهْ
অর্থ: নিশ্চয়ই নূরে মুজাস্সাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি হযরত উম্মে আয়মন আলাইহাস সালাম উনাকে ‘ইয়া উম্মাহ’ বা হে আমার মহাসম্মানিত আম্মাজান বলে সম্বোধন মুবারক করতেন। সুবহানাল্লাহ! (সিয়ারু আ’লামিন নুবালা)
পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে আরো বর্ণিত রয়েছে, নূরে মুজাস্সাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি হযরত উম্মে আয়মন আলাইহাস সালাম উনাকে ইশারা মুবারক করতেন-
هٰذِهٖ بَقِيَّةُ اَهْلِ بَيْتِـيْ
অর্থ: ইনি আমার হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের অন্যতম ব্যক্তিত্বা। সুবহানাল্লাহ! (সিয়ারু আলামুন নুবালা)
অন্য পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত রয়েছে-
عَنْ حَضْرَتْ أَنَسٍ رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ قَالَ قَالَ حَضْرَتْ أَبُوْ بَكْرٍ عَلَيْهِ السَّلَامُ بَعْدَ وَفَاةِ رَسُوْلِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لِعُمَرَ عَلَيْهِ السَّلَامُ اِنْطَلِقْ بِنَا إِلٰى أُمِّ أَيَـمَنَ عَلَيْهَا السَّلَامُ نَزُوْرُهَا كَمَا كَانَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَزُوْرُهَا
অর্থ: হযরত আনাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নূরে মুজাস্সাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি পবিত্র রওজা শরীফে তাশরীফ মুবারক গ্রহণের পর সাইয়্যিদুনা হযরত ছিদ্দীক্বে আকবর আলাইহিস সালাম তিনি (সম্মানিত খিলাফত উনার দায়িত্ব মুবারক গ্রহণ করে) হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম উনাকে বললেন, আমাদেরকে হযরত উম্মে আয়মন আলাইহাস সালাম উনার কাছে নিয়ে চলুন।
আমরা উনার দীদার মুবারক নিবো, যেমনভাবে নূরে মুজাস্সাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি উনাকে ছোহবত মুবারক দিতেন। সুবহানাল্লাহ! (মুসলিম শরীফ)
অর্থাৎ, প্রায়ই উনার হুজরা শরীফে তাশরীফ মুবারক রাখতেন এবং উনাকে ছোহবত মুবারক দিতেন। পরবর্তীতে হযরত খুলাফায়ে রাশেদীন আলাইহিমুস সালাম উনারাও সেই সুন্নত মুবারক জারী রেখেছেন। তিনি যতদিন দুনিয়ার জমীনে অবস্থান মুবারক করেছেন, হযরত খুলাফায়ে রাশেদীন আলাইহিমুস সালাম উনারা উনার যাবতীয় খিদমতে মুবারকের আনজাম দিয়েছেন। সুবহানাল্লাহ!
বিভিন্ন পবিত্র হাদীছ শরীফ উনাদের মধ্যে দেখা যায়, নূরে মুজাস্সাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি হযরত উম্মে আয়মন আলাইহাস সালাম উনার জন্য অত্যধিক মুহব্বত মুবারক প্রকাশ করতেন। বিভিন্নভাবে উনাকে আনন্দ দিতেন। উনার জন্য হাদিয়া মুবারক পাঠাতেন। উনার যে কোন আরজী মুবারক তৎক্ষণাত পূরণ করতেন। সুবহানাল্লাহ! হযরত উম্মে আয়মন আলাইহাস সালাম তিনি অহুদ ও হুনাইনসহ কয়েকটি জিহাদে শরীক হয়েছেন। মুহাদ্দিছগণ উনার কাছ থেকে পাঁচখানা পবিত্র হাদীছ শরীফ সংকলনের সুযোগ পেয়েছেন। সুবহানাল্লাহ!
কিতাবে উল্লেখ করা হয়-
قَالَ الْوَاقِدِيُّ رَحْـمَةُ اللهِ عَلَيْهِ مَاتَتْ فِـيْ خِلَافَةِ عُثْمَانَ عَلَيْهِ السَّلَامُ
অর্থ: হযরত ওয়াক্বেদী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, হযরত উম্মে আয়মন আলাইহাস সালাম তিনি সাইয়্যিদুনা হযরত যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম উনার খিলাফতকালে পবিত্র বিছালী শান মুবারক প্রকাশ করেন। সুবহানাল্লাহ! (সিয়ারু আ’লামিন নুবালা)
বলা বাহুল্য যে, নূরে মুজাস্সাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি দুনিয়ার যমীনে তাশরীফ মুবারক গ্রহণের পূর্ব হতে পবিত্র বিছালী শান মুবারক প্রকাশ তথা পবিত্র রওজা শরীফে তাশরীফ মুবারক গ্রহণের পর পর্যন্ত একটানা এ সুদীর্ঘ সময় হযরত উম্মে আয়মন আলাইহাস সালাম একমাত্র তিনিই গোলামীতে আনযাম দিয়েছেন। সুবহানাল্লাহ। কাজেই, তিনি কায়িনাতবাসীর জন্য উসওয়াতুন হাসানাহ। সুবহানাল্লাহ!
মহান আল্লাহ পাক তিনি ছহিবে ছমাদ, ছহিবে সাইয়্যিদিল আ’ইয়াদ শরীফ, সাইয়্যিদুনা মামদূহ হযরত মুরশিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম উনার উসীলায় হযরত উম্মে আয়মন আলাইহাস সালাম উনার মুবারক শান জানার এবং উনার প্রতি পরিপূর্ণ হুসনে যন পোষণ করার তাওফীক্ব দান করুন। আমীন।
-আহমদ নুছাইর