“সরকারগঠিত জাকাত বোর্ডে জাকাত প্রদান করলে তা আদার হবে না”- যাকাত বোর্ডের জন্মলগ্ন সাল (১৯৮২-১৯৮৩) অর্থবছরেই রাজারবাগ শরীফ থেকে এ ফতওয়া জোরদারভাবে উচ্চারণ করা হয়েছিলো। উল্লেখ করা হয়েছিলো, ‘যাকাত বোর্ড যেসব খাতে যাকাতের অর্থ প্রদান করে তা শরীয়ত নির্দেশিত আটটি খাতের মধ্যে পড়ে না। তারপরেও একদল অতি উৎসাহী লোক যাকাত বোর্ডেই যাকাত দিতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন।
অবশ্য এজন্য ব্যাপক সরকারী প্রচারণাও চালনা হয়। এবং সরকারী মাওলানারাও সে উদ্দেশ্যে আওয়াজ তুলে। সম্প্রতি পত্রিকায় প্রকাশিত এক খবর যাকাত বোর্ড সম্পর্কিত রাজারবাগ শরীফের ফতওয়ারই সত্যতা সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণ করলো ।
গত ১৮ই অক্টোবর/২০০৬ ঈসায়ী দৈনিক যায়যায়দিনে পত্রস্থ হয়ঃ
হাসানুল কাদির: সরকারি যাকাত বোর্ডের টাকাও এখন আর সঠিক জায়গায় যাচ্ছে না। দুস্থদের টাকা খরচ হচ্ছে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে। ধর্ম প্রতিমন্ত্রী নিজে এবং যাকাত বোর্ড কমিটির লোকজন নিজেদের হাতে গড়া বিভিন্ন সংগঠনের মধ্যে দুস্থদের জন্য আসা এ টাকা ভাগবাটোয়ারা করে নিচ্ছেন। রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে কমিটির বাইরেরও অনেকে এ টাকায় ভাগ বসাচ্ছেন। গত অর্থবছরে যাকাত ফান্ডের প্রায় এক কোটি সত্তর লাখ টাকা এভাবেই ভাগবাটোয়ারা হয়ে গেছে। বরাদ্দ টাকা নির্দিষ্ট খাতে খরচ করার অভিযোগে ৪৫ লাখ টাকার একটি প্রকল্পের কাজ বন্ধ করার নির্দেশ দিয়েছে যাকাত বোর্ড। সংশ্লিষ্ট প্রকল্প বাস্তবায়নকারী সংস্থার প্রধানকেও
যাকাত কমিটি থেকে বাদ দেয়া হয়েছে। এ ধরনের নানা কারণে খোদ প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়াও যাকাত বোর্ডের কাজ নিয়ে অসন্তুষ্ট। যাকাত বোর্ড থেকে পাওয়া বিভিন্ন সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
জানা গেছে, গত ২০০৪-০৫ অর্থবছরে এক কোটি ৬৯ লাখ ৩২ হাজার ৮২ টাকা ধর্ম প্রতিমন্ত্রী নিজের খুশিমতো বরাদ্দ দিয়েছেন। এর মধ্যে নিজের গড়া সংগঠন বন্ধুজন পরিষদের নামে বরাদ্দ নিয়েছেন সর্বোচ্চ ৫০ লাখ টাকা। কমিটির সাবেক সদস্য মাওলানা আবুল কালাম আজাদের সংগঠন মসজিদ কাউন্সিল ফর কমিউনিটি অ্যাডভান্সমেন্টকে দিয়েছে ৪৫ লাখ, ধর্ম মন্ত্রণালয়ের সাবেক সচিব রফিকুল ইসলামের অনুরোধে দিয়েছে ১৩ লাখ, ধর্ম মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব চৌধুরী জিয়াউল হকের সংগঠন মোস্তাক হাবিবা গুলশান ওয়েলফেয়ার ফান্ড চট্টগ্রামের নামে বরাদ্দ দিয়েছেন ১৩ লাখ, বোর্ডের পরিচালক লুৎফর হকের সংগঠন দারুল কারার সোসাইটিকে দিয়েছেন আর্ট লাখ, ইসলামী ঐক্যজোটের (আমিনী) সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান মাওলানা মুহিউদ্দীন খানের সংগঠন তওহিদ মিশনকে দিয়েছে ৮ লাখ ৬৫ হাজার টাকা। বাকি টাকা তিনি কমিটির সদস্যদের সুপারিশে যাকাত বোর্ডের বিভিন্ন প্রকল্পে বরাদ্দ দিয়েছেন। …..
*
উপরের বর্ণনায় মন্ত্রী, সচিবদের বিভিন্ন সংগঠনের নামে যাকাতের অর্থ বরাদ্দ যেমন হঠকারীতামূলক পাশাপাশি তাওহীদ মিশনের নামে মাওলানা মুহিউদ্দীনের পাঁচ লাখ টাকা যাকাত নেয়াও তেমনি প্রতারণামূলক। আর এটা সাধারণ নয় বরং ধর্মের নামে প্রতারণা।
মূলত: যাকাত বোর্ডের অর্থ ধর্মানুযায়ী যেহেতু ব্যয়িত হয়না সেহেতু এ নামে ধর্মব্যবসায়ীদের পকেটস্থ হবে তাই স্বাভাবিক বটে। অতএব, তথাকথিত জাকাত বোর্ডে যাকাত প্রদানকারীরা সচেতন হোন।
-মুহম্মদ তারীফুর রহমান
ব্রিটিশ গুপ্তচরের স্বীকারোক্তি এবং ওহাবী মতবাদের নেপথ্যে ব্রিটিশ ভূমিকা-৩২