লক্বব মুবারকের সংখ্যা নিরূপণ করা সম্ভব নয়। কারণ, লক্ববের উৎস হলো গুণাবলী। সুতরাং যিনি যত গুণের অধিকারী তিনি তত লক্ববের অধিকরী। আর যিনি যে গুণের অধিকারী নন কিংবা যে গুণ যার মধ্যে দেখতে পাওয়া যায়না সে গুণে তাকে সম্বোধন করা বা লক্বব দেয়া সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির সাথে উপহাস বা তাচ্ছিল্যের নামান্তর। যা নাজায়িয ও হারাম। কেননা, আল্লাহ্ পাক ইরশাদ করেন,
يا يها الذين امنوا لايسخر قوم من قوم عسى ان يكونوا خيرا منهم.
অর্থঃ- “হে ঈমানদারগণ! তোমাদের কেউ যেন কারো উপহাস না করে। হয়তো তারা আল্লাহ্ পাক-এর নিকট তাদের (উপহাসকারীর) চেয়ে শ্রেষ্ঠ।” (সূরা হুজুরাত/১১) উল্লেখ্য যে, দোষে-গুণে মানুষ। সাধারণ অসাধারণ সকলেরই মধ্যে ভাল-মন্দের সমাবেশ ঘটে। যার যে দিকটা প্রবল হয় তার সে অনুপাতে লক্বব হয়। দুনিয়াতে এরূপ লোকের সন্ধান পাওয়া মুশকিল যে, সে কোন না কোন লক্ববে সম্বোধিত নয়। সবাই লক্বব ব্যবহার করে। চোর, ডাকাত, সন্ত্রাসী, বদমাইশ, বখীল ইত্যাদি লক্ববধারী ব্যক্তিবর্গ বদ খাছলতের অধিকারী। বদ আমলের কারণেই তাদেরকে ঐরূপ লক্ববে সম্বোধন করা হয়। আবার সেই সমস্ত ব্যক্তিই যদি কোন আউলিয়ায়ে কিরামের ছোহবত ইখতিয়ার করে আউলিয়ায়ে কিরামের সৎ গুণাবলীর পুরোপুরি অংশই তার স্বভাবে পরিণত হয়। তখন তাঁরা ‘আউলিয়া’ লক্ববে পরিচিত হয়। অনুরূপ হাফিয, ক্বারী, মাওলানা, মুফতী, মুহাদ্দিছ, মুফাস্সির, ফক্বীহ, মাস্টার, ডাক্তার, উকিল, মোক্তার ইত্যাদি লক্ববের অধিকারীগণও স্ব-স্ব গুণাবলীর সাথে সংশ্লিষ্ট। তবে কেউ একটা-দু’টা, কেউবা দশ-বিশটা। আর কেউবা অসংখ্য-অগণিত লক্ববের অধিকারী হয়ে থাকেন। লক্ববের এই সংখ্যাধিক্যের কারণ জানার জন্য গভীর চিন্তা-গবেষণার প্রয়োজন নেই। সামান্য একটু আক্বল-বুদ্ধি খাটালেই তার জাওয়াব বেরিয়ে আসবে। স্মর্তব্য যে, আল্লাহ্ পাক জিন, ইনসান সকলকেই ফিত্রাত তথা উত্তম স্বভাবে সৃষ্টি করেছেন। হাদীছ শরীফে ইরশাদ হয়েছে,
كل مولود يولد على الفطرة.
অর্থঃ- “প্রত্যেক সন্তানই ফিত্রাত তথা উত্তম স্বভাব নিয়ে জন্ম গ্রহণ করে।” (মিশকাত শরীফ) অতঃপর সেই ফিত্রাতের বিপরীত যে কাজ বা আমল সেটাই হচ্ছে বদ খাছলত। মূলতঃ সৎ স্বভাবের বিপরীত অবস্থাই হচ্ছে বদ স্বভাব। আর বদ স্বভাবের বিপরীত অবস্থাই হচ্ছে সৎ স্বভাব। সুতরাং যখন কোন ব্যক্তি কোন সৎ স্বভাবের অধিকারী ব্যক্তি তথা কোন আউলিয়া-ই-কিরামের ছোহবত ইখতিয়ার করে, উত্তম পরিবেশে বড় হয় তখন সে ব্যক্তির সৎ স্বভাব বা উত্তম গুণাবলী প্রবল হয়। আর যে স্বভাব প্রবল হয় সেইরূপ লক্ববেই সে পরিচিত হয়। আবার যখন কেউ বদ লোকের ছোহবত ইখতিয়ার করে কিংবা খারাপ পরিবেশে বেড়ে উঠে তখন সে ব্যক্তির বদ খাছলত বা দোষাবলী প্রবল হয়, সে খারাপ হিসেবে সমাজে পরিচিতি লাভ করে। এই ফিত্রাত তথা সৎ স্বভাবকে অক্ষুণœ রাখতে এবং বিকাশ ঘটাতে আল্লাহ্ পাক নবী-রসূল আলাইহিমুস্ সালামগণকে দুনিয়ায় পাঠিয়েছেন। তাঁরা ছিলেন সর্বপ্রকার গুণাবলীর অধিকারী। তাঁদের ছোহবত ইখতিয়ার করে জ্বিন-ইনসান সকলেই স্ব-স্ব ফিত্রাতকে অক্ষুণœ রাখবে, বিকাশ ঘটাবে এটাই ছিল আল্লাহ পাক-এর অভিপ্রায়। আর সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হচ্ছেন সকল গুণের পূর্ণতা বিধানকারী। হযরত ছাহাবা-ই-কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণ সকলেই হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর ছোহবত ইখতিয়ার করে ছাহাবী হয়েছেন। তাই এই লক্বব মুবারক ক্বিয়ামত পর্যন্ত আর কেউ লাভ করতে পারবে না।