যাত্রাবাড়ীর হযরত পীর ছাহেব ক্বিবলা রহমতুল্লাহি আলাইহি আল্লাহ পাক-এর খালিছ ওলীআল্লাহ হওয়ার কারণে তিনিই হাক্বীক্বীভাবে স্বীয় মুরীদ ও খলীফা রাজারবাগ শরীফের হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা মুদ্দা জিল্লুহুল আলী-এর মর্যাদা-মর্তবা ও মাক্বামাতসমূহ যথাযথভাবে উপলব্ধি করেছিলেন। তিনি যে বর্তমান যামানার মুজাদ্দিদ, ইমামুল আইম্মা, গাউছূল আ’যম, আল্লাহ পাক-এর লক্ষ্যস্থল ওলী তা তিনি খুব ভালভাবেই বুঝতে পেরেছিলেন। বরকত হাছিলের উদ্দেশ্যে স্বীয় মুরীদ ও খলীফাদেরকে রাজারবাগ শরীফের হযরত পীর ছাহেব ক্বিবলা মুদ্দা জিল্লুহুল আলী-এর মুবারক ছোহবত ইখতিয়ার করে ফয়েয হাছিলের নির্দেশ দিতেন। এর আরেকটি অন্যতম কারণ হলো, হাদীছ শরীফে এসেছে, আখিরী রসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন্ নাবিয়্যীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,
من لم يعرف امام زمام زمانه فقد مات ميتة الجا هلية.
অর্থঃ- “যে ব্যক্তি স্বীয় যামানার ইমামকে চিনলোনা সে জাহিলিয়াতের উপরে মারা গেল।” (মুসলিম শরীফ) সুতরাং যিনি যামানার ইমাম হবেন, তাঁকে তা’যীম-তাকরীম করা সে যামানার সকল মানুষেরই দায়িত্ব ও কর্তব্য। আখিরী রসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন্ নাবিয়্যীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর যামানায় যদি পূর্ববর্তী কোন নবী-রসূল আলাইহিমুস্ সালামগণও জীবিত থাকতেন তাঁদের জন্যও ফরয হতো হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর হাতে বাইয়াত গ্রহণ করা এবং তাঁকে ইত্তিবা-অনুসরণ করা। হাদীছ শরীফে ইরশাদ হয়েছে,
لو كان موسى حيا ما وسعه الا اتباعى.
অর্থঃ- “যদি (আমার বর্তমানে) হযরত মুসা আলাইহিস্ সালামও জীবিত থাকতেন তবে তাঁর জন্যও আমাকে অনুসরণ করা ব্যতীত কোন গত্যন্তর ছিলনা।” (মিশকাত) সুতরাং যিনি যামানার ইমাম ও মুজাদ্দিদ তাঁকে মান্য করা, তা’যীম-তাকরীম করা সমসাময়িক সকলের জন্যই অবশ্য কর্তব্য। যাত্রাবাড়ীর হযরত পীর ছাহেব ক্বিবলা রহমতুল্লাহি আলাইহি একথাও বলেছিলেন যে, আমি আল্লাহ পাক-এর কাছে শাহ ছাহেব অর্থাৎ রাজারবাগ শরীফের হযরত মুর্শিদ ক্বিবলাকে পেশ করব। (সুবহানাল্লাহ) সুতরাং ইবলিসের ক্বায়িম-মক্বাম আবূ জাহিলের অনুসারী সকল উলামায়ে ‘ছূ’রা বলে যে, “রাজারবাগ শরীফের হযরত পীর ছাহেব ক্বিবলা মুদ্দা জিল্লুহুল আলী কোন পীর ছাহেব থেকে খিলাফত লাভ করেননি।” তারা নিম্নোক্ত আয়াত শরীফ ও হাদীছ শরীফের মিছদাক। আয়াত শরীফে ইরশাদ হয়েছে,
لعنت الله على الكذبين.
অর্থঃ- “মিথ্যাবাদীদের উপর আল্লাহ পাক-এর লা’নত।” (সূরা আলে ইমরান/৬১) আর হাদীছে কুদসীতে ইরশাদ হয়েছে,
من عاد لى وليا فقد اذنته بالحرب.
অর্থঃ- “যে ব্যক্তি কোন ওলীআল্লাহর সাথে শত্রুতা পোষণ করে আল্লাহ পাক তার বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেন।”(বূখারী শরীফ) সুতরাং যারাই ইমামুল আইম্মা, মুহ্ইস্ সুন্নাহ, মুজাদ্দিদে আ’যম, কুতুবুল আলম, গাউছূল আ’যম, হাকিমুল হাদীছ রাজারবাগ শরীফের হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা মুদ্দা জিল্লুহুল আলী-এর সাথে শত্রুতা পোষণ করে তারা এ যুগের আবূ জাহিল, মুনাফিক, কাফির, রাফেজী ও শিয়াদের অনুসারী ও ইবলিসের ক্বায়িম-মক্বাম। ইতোপূর্বে আলাচনায় জানা গেছে যে, রাজারবাগ শরীফের হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা মুদ্দা জিল্লুহুল আলী ফুরফুরা শরীফ-এর পীর ছাহেব ক্বিবলা ক্বাইয়্যূমুয্ যামান হযরত আব্দুল হাই ছিদ্দীক্বী রহমতুল্লাহি আলাইহি ও সুলতানুল আরিফীন হযরত নজমুস্ সায়াদাত ছিদ্দীক্বী ফুরফুরাবী রহমতুল্লাহি আলাইহিদ্বয়-এর বিশিষ্ট খলীফা, তাজুল মুফাস্সিরীন, রঈসুল মুহাদ্দিসীন, কুতুবুূল আলম হযরতুল আল্লামা আবূল খায়ের মুহম্মদ ওযীহুল্লাহ নানূপুরী (যাত্রাবাড়ীর হযরত পীর ছাহেব ক্বিবলা) রহমতুল্লাহি আলাইহি যিনি ঢাকা আলিয়া মাদ্রাসার মুফাস্সির ছিলেন তাঁর অন্যতম প্রধান খলীফা। অর্থাৎ বাহ্যিকভাবে তিনি যাত্রাবাড়ীর হযরত পীর ছাহেব ক্বিবলা রহমতুল্লাহি আলাইহি থেকে খিলাফত লাভ করেন। মূলতঃ যিনি যামানার মুজাদ্দিদ হন, যিনি গাউছূল আ’যম হন, যিনি মহান আল্লাহ পাক-এর লক্ষ্যস্থল ওলীআল্লাহ হন তিনি বাহ্যিকভাবে সিলসিলার পরিচিতির জন্য কোন হক্কানী-রব্বানী পীর-মাশায়িখ কর্তৃক খিলাফত লাভ করেন। কিন্তু হাক্বীক্বত তাঁর সেই খিলাফত স্বয়ং আল্লাহ পাক এবং আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামই সরাসরি দান করেন। আবার কখনো পীর ছাহেব ক্বিবলাকে তাঁর যোগ্যতম মুরীদকে খিলাফত দানের জন্য নির্দেশ দান করা হয়। কাজেই কুতুবুল আলম যাত্রাবাড়ীর হযরত পীর ছাহেব ক্বিবলা রহমতুল্লাহি আলাইহি স্বীয় সুযোগ্য মুরীদ ইমামুল আ’ইম্মা রাজারবাগ শরীফের হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা মুদ্দা জিল্লুহুল আলীকে যে খিলাফত দান করেছেন, তা তিনি পরিপূর্ণরূপে যোগ্য হওয়ার কারণেই এবং আল্লাহ পাক ও আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর নির্দেশেই। এ ছাড়া যিনি আউলিয়াই কিরামগণের মধ্যে বিশেষ মর্যাদার অধিকারী, যিনি যামানার ইমামুল আ’ইম্মা ও মুজাদ্দিদ হন তাঁকে মহান আল্লাহ পাক ও আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সরাসরি খিলাফত দিয়ে থাকেন। যেমন, এ সম্পর্কে কিতাবে উল্লেখ্য করা হয়েছে আফদ্বালুল আউলিয়া ক্বাইয়্যুমে আউয়াল, ইমামে রব্বানী হযরত মুজাদ্দিদে আলফে ছানী রহমতুল্লাহি আলাইহি স্বীয় ১০৫নং মাকতুবাত শরীফে বলেন, “আমি স্বপ্নে দেখলাম, মাশায়িখ ও বুযূর্গগণ যেরূপ তাঁদের খলীফাদেরকে ইজাযতনামা লিখে দেন, তদ্রুপ আমাকে স্বয়ং সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন্ নাবিয়্যীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইজাযতনামা লিখে দিলেন। অতঃপর তাতে স্বীয় মহরে নুবুওওয়াত মুবারক দ্বারা পরিশোভিত করলেন।” তাতে লিখা ছিল, “পার্থিব ইযাযতনামার পরিবর্তে পারলৌকিক ইজাযতনামা প্রদত্ত হলো। তা দ্বারা সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন্ নাবিয়্যীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাকে শাফায়াতের মাক্বামের অংশ প্রদান করলেন। (সুবহানাল্লাহ) কাজেই ওলীআল্লাহগণের খিলাফত হাক্বীক্বীভাবে মহান আল্লাহ পাক ও তাঁর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামই দান করে থাকেন। মহান আল্লাহ পাক তাঁর কালাম পাকে বলেন,
وعد الله الذين امنوا منكم وعملوا الصلحت ليستخلفنهم فى الارض كما استخلف الذين من قبلهم.
অর্থঃ- “মহান আল্লাহ পাক ওয়াদা করেছেন যে, যারা ঈমান আনবে ও আমলে ছালেহ করবে (হাক্বীক্বী ওলীআল্লাহ হবে) তাঁদেরকে অবশ্যই আল্লাহ পাক খিলাফত দান করবেন যেমন তাঁদের পূর্ববর্তীদেরকে দান করা হয়েছিল।” (সূরা নূর/৫৫) এ আয়াত শরীফে স্বয়ং আল্লাহ পাকই বর্ণনা করেছেন যে, যারা হাক্বীক্বীভাবে ঈমান এনে আমলে ছালেহ করবেন অর্থাৎ যারা খালিছ ওলীআল্লাহ হবেন তথা আল্লাহ পাক ও আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর মতে ও পথে চলবেন স্বয়ং আল্লাহ পাকই তাঁদেরকে খিলাফত দান করবেন। উল্লেখ্য যে, খিলাফত দুই প্রকার (১) জাহিরী খিলাফত বা ইসলামী হুকুমত কায়িম করা, (২) বাতিনী খিলাফত যা বাতিনীভাবে আল্লাহ পাক তাঁর বান্দাদের মধ্যে যাঁকে পছন্দ করেন তাকেই দান করেন। তখন সে ব্যক্তি রূহানীভাবে স্বীয় দায়িত্ব পালন করেন। যাঁরা গাউছ, কুতুব, আবদাল, ইমাম, ক্বাইয়্যুম, মুজাদ্দিদ ইত্যাদি হন তাঁদেরকে বাতিনী খিলাফত দান করা হয় ও তাঁরা রুহানীভাবে সমগ্র জগত পরিচালনা করেন। যা পূর্বের বড় বড় সকল আউলিয়া-ই-কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণকে দান করা হয়েছিল এবং বর্তমান যামানার ইমাম ও মুজাদ্দিদ, গাউছূল আ’যম, ইমামুল আ’ইম্মা, রাজারবাগ শরীফের হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা মুদ্দা জিল্লুহুল আলীকে এবং অন্যান্য যত কুতুব ও আবদালগণ পৃথিবীতে রয়েছেন তাঁদেরকে দান করা হয়েছে। সুতরাং রাজারবাগ শরীফের হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা মুদ্দা জিল্লুহুল আলীকে যে স্বয়ং আল্লাহ পাক ও আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম খিলাফত দিয়েছেন এ চিরসত্য কথাকে যারা অস্বীকার করবে তাঁরা উপরোক্ত আয়াতে কারীমাকে অস্বীকারকারী। আর কুরআন শরীফের কোন আয়াতে কারীমা ও তার হুকুম অস্বীকার করা কুফরী। এ সম্পর্কে বিশেষভাবে উল্লেখ্য যে, কুতুবুল আলম যাত্রাবাড়ীর হযরত পীর ছাহেব ক্বিবলা রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর হায়াতে তইয়্যিবাতে তাঁর দরবার শরীফে একাধিকবার আহলে সুন্নত ওয়াল জামায়াতের বিশুদ্ধ আক্বীদা থেকে প্রত্যাবর্তন করে ওহাবী মতবাদ গ্রহণকারী বাপ-দাদার আদর্শ বাদ দিয়ে শিয়া, রাফিজী ও বিধর্মীদের মত গ্রহণকারী, হক্ব সিলসিলার কলঙ্ক, কাবিল ও কিনানের ক্বায়িম-মক্বামসহ কয়েকজন নামধারী ওহাবী ব্যক্তি যাত্রাবাড়ী দরবার শরীফে গিয়ে রাজারবাগ শরীফের হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা মুদ্দা জিল্লুহুল আলী-এর বিরুদ্ধে কতগুলো ডাহা মিথ্যা কথা বলে খিলাফত কেটে দেয়ার জন্য অনুরোধ করেছিল। কিন্তু কুতুবুল আলম যাত্রাবাড়ীর হযরত দাদা হুযূর ক্বিবলা রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেছেন, “খিলাফত কেটে দেয়া কস্মিনকালেও সম্ভব নয়, কারণ খিলাফত তো আমি দেইনি বরং তাঁকে (রাজারবাগ শরীফের হযরত মুর্শিদ ক্বিবলাকে) স্বয়ং আল্লাহ পাক ও তাঁর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামই খিলাফত দিয়েছেন ও দিতে বলেছেন। (সুবহানাল্লাহ) (চলবে)
-সাইয়্যিদ মুহম্মদ আখতারুজ্জামান, ঢাকা
প্রসঙ্গঃ কমনওয়েলথ ও সি.পি.এ সম্মেলন