মহান আল্লাহ পাক কালামে পাকে ইরশাদ ফরমান,
وكذلك جعلنا لكل نبى عدوا شياطين الانس والجن.
অর্থঃ- “আর আমি প্রত্যেক নবীর জন্য মানুষ ও জীনের মধ্যে যারা শয়তান তাদেরকে শত্রুস্বরূপ করে দিয়েছি।” (সূরা আনআম/১১২) অন্যত্র ইরশাদ হয়েছে,
وكذلك جعلنا لكل نبى عدوا من المجرمين.
অর্থঃ- “আর আমি প্রত্যেক নবীর জন্য গুনাহগারদেরকেই শত্রু হিসেবে বানিয়েছি।” (সূরা ফুরকান/৩১) অর্থাৎ প্রথম মানব, প্রথম নবী ও প্রথম রসূল হযরত আদম আলাইহিস্ সালাম থেকে শুরু করে আখিরী নবী, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন্ নাবিয়্যীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পর্যন্ত একলক্ষ চব্বিশ হাজার মতান্তরে দুইলক্ষ চব্বিশ হাজার নবী-রসূল আলহিমুস্ সালামগণ প্রত্যেকেরই শত্রুতা করা হয়েছে। তথা প্রত্যেকেরই শত্রু ছিল। সেই ধারাবাহিকতায় হযরত ছাহাবা-ই-কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণ, ইমাম-মুজতাহিদ, আউলিয়া-ই-কিরাম তথা যত গাউছ, কুতুব, আবদাল, মুজাদ্দিদ, ইমামগণ দুনিয়াতে এসেছেন তাঁদেরও প্রত্যেকেরই শত্রুতা করা হয়েছে। অর্থাৎ মহান আল্লাহ পাক-এর সাথে তায়াল্লুকধারী যত মানুষই জমিনে তাশরীফ এনেছেন প্রত্যেকেই শত্রু কতৃক আক্রান্ত হয়েছেন। কেবলমাত্র বনী ইসরাঈলরাই সত্তর হাজার নবীকে শহীদ করে ফেলেছে। সীমাহীন জুলুম, নির্যাতন, অত্যাচার নিপীড়ন সহ্য করেছেন অতীতের সকল নবী রসূল আলাইহিমুস্ সালামগণ। তন্মধ্যে সর্বাধিক নির্যাতনের স্বীকার হয়েছেন যিনি সমগ্র সৃষ্টি জগতের মূল উৎস, যাঁর মুবারক নূর দিয়েই আরশ-কুরসী, লওহ-কলম, জামাদাত, শাজারাত, হাজারাত তথা সমগ্র কায়িনাত সৃষ্টি। যিনি স্বয়ং রহমতুল্লিল আলামীন, আখিরী নবী, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। নূরের তৈরী দান্দান মুবারক শহীদ করা হয়েছে শেষ পর্যন্ত বিষ পানের যন্ত্রণায় আল্লাহ্ পাক-এর মহান সান্নিধ্যে চলে গিয়ে শাহাদাতের মাক্বামকে বরকতময় ও ধন্য করেছেন। সেজন্য হাদীছ শরীফে ইরশাদ হয়েছে,
اشد الناس بلاء الانبياء ثم الصالحون ثم الامثل فالامثل.
অর্থঃ- “সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, নবী-রসূল আলাইহিমুস্ সালামগণ সবেচেয়ে বেশী দুঃখ-কষ্ট ভোগকারী। অতঃপর সলেহীন তথা কামালতে রিসালতে উলুল আযম আউলিয়া-ই-কিরামগণ। তারপর তাঁদের নিকটবর্তী (মর্যাদা সম্পন্ন) ব্যক্তিবর্গ।” (ত্ববারানী শরীফ, কিমিয়ায়ে সায়াদাত, ইহইয়াউ উলুমিদ্দীন) শহীদ করা হয়েছে নবী-রসূল আলাইহিমুস্ সালাম-এর পরে আল্লাহ পাক-এর কায়িনাতে যাঁরা সর্ব শ্রেষ্ঠ মাখলুক হযরত খুলাফায়ে রাশেদীন সহ অসংখ্য ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণকে। অকল্পনীয় নির্যাতন, নিপিড়ন, জেল, জুলুম গ্রহণ করতে হয়েছে অতীতের আউলিয়া-ই-কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণকে। অর্থাৎ প্রথম মানব, প্রথম নবী ও প্রথম রসূল হযরত আদম আলাইহিমুস্ সালাম থেকে শুরু করে এ যাবত যত নবী রসূল আলাইহিমুস্ সালাম ও আউলিয়া-ই-কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিম জমিনে তাশরীফ এনেছেন তন্মম্যে একজনও দেখানো যাবে না যাঁর বিরোধিতা বা শত্রুতা করা হয়নি। সেজন্য একটি উছূল রয়েছে,
لكل موسى فرعون ولكل فرعون موسى.
অর্থঃ- “প্রত্যেক হাদীর বিরোধীতার জন্য একজন ফিরআউন রূপী শত্রু ও প্রত্যেক ফিরআউন (গোমরাহ লোক) কে হিদায়েতের জন্য একজন হাদী থাকবে।” তবে কথা হচ্ছে, এসকল বিরোধীতা কারা করছে ও কেন করছে। সর্ব প্রথম মানব হযরত আদম আলাইহিস্ সালাম এর এই বিরোধীতা করেছে একাধিক্রমে ছয় লক্ষ বছর আল্লাহ পাক-এর ইবাদতকারী, মুয়াল্লিমুল মালাকুত বা ফিরেশ্তাগণের ওস্তাদ, চির জাহান্নামী, মালউন ইবলিস। সে ফখর করে, অহংকার করে, ইল্মের বাহাদুরী দেখিয়ে আল্লাহ পাক-এর নবীর বিরোধীতা করে জান্নাত থেকে চির বিতারিত হয়ে কাট্টা কাফির ও চির জাহান্নামী হয়েছে। ইসলামী শরীয়তের একটি উছূল হলো, যে কোন নেক কাজ শুরু করে তার দেখা দেখি পরবর্তীতে যারা তা করে তাদের প্রত্যেকের সমপরিমাণ নেকী প্রথম ব্যক্তির আমল নামায় লিখা হয়। অনুরূপ কেউ কোন অন্যায় কাজের প্রথা জারি করলে পরবর্তীতে তার দেখা দেখি যারা তা করবে তাদের সমপরিমাণ গুনাহ প্রথম ব্যক্তির আমল নামায় বর্তাবে। সেজন্য পৃথিবীতে যত হত্যা হয়েছে, হচ্ছে ও হবে সকলের সমপরিমাণ গুনাহ অবাধ্য সন্তান, ইবলিসের অনুসারী কাবিলের আমল নামায় বর্তাবে। অনুরূপ আরব দেশে কিয়ামত পর্যন্ত যত মুর্তীপুজা হবে সকল মুর্তিপূজক এর সমপরিমাণ গুনাহ আরব দেশের প্রথম মূর্তিপূজারী ইবলিসের অনুসারী আমর বিন লুহাই এর আমল নামায় বর্তাবে। সুতরাং যারাই নবী-রসূল আলাইহিমুস্ সালাম ও আউলিয়া-ই-কিরামগনের বিরোধীতা করেছে করতেছে ও করবে তারা সকলেই চির লা’নতগ্রস্থ, মালউন, জাহান্নামী ও ইবলিসের অনুসারী। আর যাঁদের বিরোধীতা করা হয় অর্থাৎ নবী-রসূল আলাইহিমুস্ সালামগণ ও তাঁদের পরে কায়িম-মক্বামে নবী, ওয়ারাসাতুল আম্বিয়া, হক্বানী-রব্বানী ওলীআল্লাহগণ তাঁরা গোমরাহ, কাফির, ও মুনাফিক কতৃক বিরোধীতার স্বীকার হয়ে জুলুম, নির্যাতন, গালমন্দ সহ্য করে পর্যায়ক্রমে সুন্নাতুল্লাহ, সুন্নাতুল আম্বিয়া ও সুন্নাতে আউলিয়া-ই-কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণের অনুসরণের মাধ্যমে অতিতের নবী-রসূল ও ওলীআল্লাহগণের হক্বীক্বী অনুসারী হন। এই বিরোধীতা যে কত মারাত্মক তা বর্ণনাতীত। এ বিরাধীতার কারণেই খারেজীরা ও রাফিজীরা হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণেকে মুরতাদ ও কাফির বলে আখ্যায়িত করত। অথচ হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণ নবী-রসূল আলাইহিমুস্ সালামগণের পরে আল্লাহ পাক-এর জমিনে সর্বশ্রেষ্ঠ মানুষ ছিলেন। ওহাবীরা তাঁদেরকে নাকেছ, অসম্পূর্ণ, সত্যের মাপকাঠি নয়, অনুসরনীয় নয়, সমালোচনার যোগ্য ইত্যাদি বলে অভিমত ব্যক্ত করে নিজেরা কাফির হয়ে গিয়েছে। অথচ স্বয়ং আল্লাহ পাক হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুগণের শানে কুরআন শরীফে সন্তুষ্টির ঘোষণা দিয়েছেন। আর এসকল ওহাবী, খারেজী, রাফেজী যারা হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণকে গালি দেয়, নাকেছ, সমালোচনার যোগ্য, অনুসরণীয় নয় ইত্যাদি বলে। অথচ তাদের সম্পর্কে, হাদীছ শরীফে ইরশাদ হয়েছে,
فلاتجالسوهم ولاتأكلوهم ولاتشاربوهم ولاتنا كحوهم ولاتصلوا معهم.
“তোমরা তাদের সাথে বসনা, তাদের কিছু খেওনা, পান করনা, তাদের সাথে কোনরূপ আত্মিয়তা করনা এমনকি তাদের সাথে (পিছনে) নামায আদায় করনা।” (কানযুল উম্মাল) এ শত্রুতার কারণেই যিনি ইল্মের দিক থেকে সমস্ত ফকীহদের কাছে পিতৃতুল্য, যিনি দায়েমীভাবে আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর মুবারক দীদারে মশগুল ছিলেন যিনি হাকীমে হাদীছ বা সমস্ত হাদীছ শরীফ আয়ত্বকারী ছিলেন, সারা পৃথিবীর অধিকাংশ লোক যার মাযহাবের অনুসারী, পৃথিবীর সমস্ত ইমামগণ যাকে এক বাক্যে ইমামে আ’যম, ইমামুল আইম্মা হিসাবে মেনে নিয়েছেন হযরত ইমাম আবূ হানীফা রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনিও বিরুদ্ধবাদীদের নিকট বেদয়াতী, মূর্খ, একটা ছহীহ হাদীছও জানেননা, ইসলামকে ছিন্ন বিছিন্নকারী, মনগড়া, বানিয়ে বানিয়ে ফতোয়াদানকারী, হালালকে হারামকারী, হারামকে হালালকারী ইত্যাদি অসংখ্য দোষে দোষী সাব্যস্ত হয়েছেন। এ বিরোধীতার কারণেই ইমামুল আইম্মা হযরত ইমাম মালিক রহমতুল্লাহি আলাইহিকে বেত্রাঘাত করা হয়েছে, ইমামুল মুজতাহিদীন হযরত ইমাম শাফিয়ী রহমতুল্লাহি আলাইহিকেও দেশ থেকে বিতাড়িত করা হয়েছে। এ বিরোধীতার স্বীকার হয়েই ইমামুল আইম্মা, হুজ্জাতুল হাদীছ হযরত ইমাম আহমদ বিন হাম্বল রহমতুল্লাহি আলাইহি খলকে কুরআন এর ফিৎনার কারণে জুলুম নির্যাতন ভোগ করে শেষ পর্যন্ত তাঁর দুই বাহু মুবারক ভেঙ্গে দেয়া হয়েছে। ইমামুল মুহাদ্দীছিন হযরত ইমাম বুখারী রহমতুল্লাহি আলাইহি সহ আরো অনেক ইমামগণও এ বিরোধীতার কারণে অবর্ণনীয় জুলুম নির্যাতন ও গালমন্দ সহ্য করেছেন। (চলবে)
-সাইয়্যিদ মুহম্মদ আখতারুজ্জামান, ঢাকা।
ইরাকের মীরজাফর সাদ্দাম রাশিয়ার বেলারুশ যেতে চায় কেন?
প্রসঙ্গঃ ছবি, অশ্লীল ছবি ইনকিলাব ও হাটহাজারীর আহমক শাফী উপাখ্যান