চার’শ হিজরীতে মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পরেও এ যাবত অসংখ্য আওলিয়ায়ে কিরামগণ অতীত হয়েছেন যারা সরাসরি নিয়মতান্ত্রিকভাবে কোন মাদ্রাসায় লেখাপড়া করেননি। অনেকে ব্যক্তিগতভাবে বিভিন্ন উস্তাদগণের কাছ থেকে ইল্ম হাছিল করেছেন। অনেককে স্বয়ং আল্লাহ পাক ইলমে লাদুন্নী বা খোদায়ী ইল্ম দান করেছেন। যেমন, সুলতানুল আরিফীন, কুতুবুল আলম, হযরত আবুল হাসান খারকানী রহমতুল্লাহি আলাইহি। যিনি জীবনের প্রথমদিকে ছিলেন একজন কৃষক। সারাদিন ক্ষেতে-খামারে কৃষি কাজ করতেন আর গভীর রাতে সুলতানুল আরিফীন হযরত বাইজিদ বোস্তামী রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর মাজার শরীফে গিয়ে যিকির-ফিকির,নামায-কালাম, ইবাদত-বন্দিগী তথা রিয়াজত-মুশাক্কাত করে তাঁর ওসীলা দিয়ে আল্লাহ পাক-এর কাছে দোয়া করতেন। যার বদৌলতে মহান আল্লাহ পাক তাঁকে কবুল করেছেন, ওলী আল্লাহ, সুলতানুল আরিফীন, কুতুবুল আলম করেছেন ও খাছ ইলমে লাদুন্নী দান করেছেন । বর্ণিত হয়েছে যে, তৎকালীন সারাবিশ্বে আল্লাহ পাক তাঁকে সমস্ত আলিমদের চেয়ে বেশী ইল্ম, মা’রিফাত-মুহব্বত ও নৈকট্য দান করেছিলেন। স্বয়ং হযরত আবুল হাসান খারকানী রহমতুল্লাহি আলাইহি মহান আল্লাহ পাক-এর শুকরিয়া আদায় করে একবার বলেছিলেন যে, আমি মহান আল্লাহ পাক-এর শুকরিয়া আদায় করি এজন্য যে, তিনি আমাকে তার সমস্ত ইল্ম দান করেছেন। তৎকালীন বিশ্বে শ্রেষ্ঠতম আলিমগণের মধ্যে একজন হচ্ছেন ইলমে তাছাউফের উপরে সর্বপ্রথম লিখিত কিতাব রেছালায়ে কোশায়রিয়া-এর লিখক হযরত ইমাম আবুল কাশিম কোশায়রী রহমতুল্লাহি আলাইহি। তিনি একবার খারকান শহরে প্রবেশ করার সময় বলেছিলেন যে, এই শহরে অবস্থান করেন আল্লাহ পাক-এর লক্ষ্যস্থল ওলী হযরত আবুল হাসান খারকানী রহমতুল্লাহি আলাইহি। আল্লাহ পাক তাঁকে এমন ইল্ম ও বেলায়েত দান করেছেন যে তাঁর ইলমের দাপটে ও বেলায়েতের প্রভাবে আমি আবুল কাশিম কোশায়রীর সমস্ত ইল্ম ছলব হয়ে যায়। সেই আবুল হাসান খারকানী রহমতুল্লাহি আলাইহি যখন স্বীয় ছাত্রদেরকে দরস দিতেন এবং মুরীদদেরকে তা’লীম দিতেন তখন তিনি স্বয়ং আখিরী নবী, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে তাঁর সামনে দেখতে পেতেন। আল্লাহ পাক-এর হাবীব, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে জিজ্ঞাসা করে করে তিনি দরস ও তা’লীম দিতেন। (সুবহানাল্লাহ) কাজেই ওলীআল্লাহ হওয়ার জন্য মাদ্রাসায় নিয়মতান্ত্রিকভাবে লেখাপড়া করতে হবে- একথা সম্পূর্ণরূপে ভুল, অশুদ্ধ, মনগড়া অজ্ঞতাপ্রসূত ও কুফরীমূলক। মূলতঃ হক্কানী-রব্বানী ওলী আল্লাহ হওয়ার জন্য মাদ্রাসায় পড়া কোন শর্ত নয়। বরং ইলম্ থাকা শর্ত। আর তা যে কোনভাবেই হাছিল হোক না কেন। এ প্রসঙ্গে আরো উল্লেখ্য যে, পাক ভারত উপমহাদেশে প্রসিদ্ধ সকল সিলসিলা তথা ফুরফুরা, জৌনপুরী, দেওবন্দী ইত্যাদি সকল সিলসিলার যিনি মূল, হিজরী ত্রয়োদশ শতকের মুজাদ্দিদ, শহীদে আ’যম, ছাহিবে ইলমে লাদুন্নী ও ইলমে গাইব, হযরত সাইয়্যিদ আহমদ বেরেলভী রহমতুল্লাহি আলাইহি এক বিশেষ অবস্থায় স্বীয় যবান মুবারকেই একথা ঘোষণা করেছেন যে, “আমি যখন কুরআন শরীফ থেকে বা আল্লাহ পাক সম্পর্কে কোন কিছু বর্ণনা করি তখন স্বয়ং আল্লাহ পাককে দেখে দেখে তা বর্ণনা করি। আবার যখন কোন হাদীছ শরীফ বা আখিরী রসূল, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সম্পর্কে কোন কিছু বর্ণনা করি তখন স্বয়ং আল্লাহ পাক-এর হাবীব, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে দেখে দেখেই তা বর্ণনা করি। এবং যখন কোন মাসয়ালা-মাসায়িল বা ইজমা-ক্বিয়াস সম্পর্কে কিছু বর্ণনা করি তখন তা স্বয়ং ইমামুল মুজতাহিদীন, ইমামুল আ’যম, হযরত ইমাম আবু হানীফা রহমতুল্লাহি আলাইহিকে দেখে দেখে বর্ণনা করি।” (সুবহানাল্লাহ) অথচ মুজাদ্দিদুয্ যামান, হযরত সাইয়্যিদ আহমদ শহীদ বেরেলভী রহমতুল্লাহি আলাইহি নিয়ম-তান্ত্রিকভাবে কোন মাদ্রাসায় তেমন লেখাপড়া করেননি। মূলতঃ এরূপ ইতিহাস পৃথিবীতে একটি দু’টি নয় বরং হাজার হাজার। সুতরাং “মাদ্রাসায় নিয়মতান্ত্রিকভাবে লেখাপড়া না করলে আলিম হওয়া যায়না” জাহিল, গোমরাহদের একথা সম্পূর্ণরূপে ভুল, অশুদ্ধ, মনগড়া, জিহালতিপূর্ণ ও অবস্থা বিশেষে কুফরীমূলক। কারণ, কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, ইজমা ও ক্বিয়াসের কোথাও এসব কোন বর্ণনা কেউ দেখাতে পারবে না। (চলবে)
-সাইয়্যিদ মুহম্মদ আখতারুজ্জামান, ঢাকা।
‘ইসলামের দৃষ্টিতে প্রাণীর ছবি তোলা, রাখা, আঁকা, দেখা হারাম’ মুজাদ্দিদে আ’যমের অনবদ্য তাজদীদ