‘সত্য এসেছে, মিথ্যা দূরীভূত হয়েছে। নিশ্চয়ই নিশ্চয়ই মিথ্যা দূরীভূত হওয়ারই যোগ্য।’ তথাকথিত হাকীমুল উম্মত ও মুজাদ্দিদে যামান থানভী সাহেব থেকে তার বর্তমান অন্ধ অনুসারী পর্যন্ত যারাই রোযাবস্থায় ইনজেকশন নিলে রোযা ভঙ্গ হয় না বলে ফতওয়া দিয়েছেন তাদের সবার ফতওয়াই শুধু ভুল নয় বরং মহাভুল বলে প্রমাণিত।
এ সম্পর্কে মাসিক আল বাইয়্যিনাত-এ বিভিন্ন সংখ্যায় মেডিকেল সাইন্স ও কুরআন সুন্নাহর সমন্বিত দলীল পেশ করা হয়েছে।
থানভী থেকে এ যাবত যারাই রোযাবস্থায় ইনজেকশন নিলে রোযা ভঙ্গ হয় না বলেছে তাদের সে কথা বলার ভিত্তি হলো যে তারা মনে করে ইনজেকশন এমন একটি প্রক্রিয়া যা মস্তিষ্ক বা পাকস্থলীতে কোন ক্রিয়া করে না।
উল্লেখ্য, কোন বস্তু যদি রোযাদারের দেহে প্রবেশ করে মস্তিষ্ক বা পাকস্থলীতে প্রবেশ করে ক্রিয়া করে তবে যে রোযা ভেঙ্গে যাবে এ বিষয়ে তারাও একমত। কিন্তু খুবই আফসোসের কথা হল যে তারা এখনও এতটা অজ্ঞতার মধ্যে নিজেদের আবদ্ধ রেখেছে যে, তারা মনে করে ইনজেকশন রোযাদারের মস্তিষ্কে কোন ক্রিয়া করে না। অথচ যে কোন ওষুধ বা ইনজেকশন যে মস্তিষ্কেই প্রথম ক্রিয়া করে আর মস্তিষ্কে ক্রিয়া না করলে ঐ ওষুধ বা ইনজেকশন দেহেও কোন ক্রিয়া করবে না এ সাধারণ তথ্যটুকু তাদের জানা নেই।
যা একটি পঞ্চম শ্রেণীর বালকমাত্রও জেনে থাকে। দেহের কোন স্থানে আঘাত লাগলে যেমন তা স্নায়ুর মাধ্যমে মস্তিষ্কে পৌঁছে বলেই আমরা অনূভূতি পাই। অর্থাৎ মস্তিষ্কই গোটা দেহকে চালনা করে। কিন্তু রোযাবস্থায় ইনজেকশন জায়িযকারীরা মস্তিষ্কের এই ক্রিয়া সম্পর্কে আদৌ অবগত নয়।
মূলত এধারার নিম মোল্লারা ফতওয়া দিয়েছিল যে অ্যালোপ্যাথিক ওষুধ খেলে কুফরী হবে। কারণ তাতে ইংরেজী লেখা রয়েছে। ইংরেজী শিক্ষা হারাম ইত্যাদি।
স্মর্তব্য যে, মুফতী হতে হলে তার শুধু কুরআন সুন্নাহর আক্ষরিক অর্থগত জ্ঞান থাকলেই চলবেনা বরং তার স্বাস্থ্য, ভূগোল, ইতিহাস, জ্যোতির্বিদ্যা এগুলোর সমন্বিত ইল্মও থাকতে হবে। বিশেষত ইসলামের দু’ভাগে ভাগ করা হয়েছে।
স্বাস্থ্য সম্পর্কিত ইল্মকে বিশেষ প্রাধান্য দেয়া হয়েছে। এমনকি একটি মতে স্বাস্থ্য সম্পর্কিত ইল্মকে, ইল্মের অর্ধেকও বলা হয়েছে।
কিন্তু ব-ক্বদরে নিছাবের মাওলানা অথবা নকল করে সার্টিফিকেট সর্বস্ব মাওলানারা ইসলামের মাহাত্ম্য অনুধাবনের জন্য আদৌ ইল্ম অন্বেষণে ব্রতী নয়। ঠুনকো সার্টিফিকেট প্রদর্শনীর মাধ্যমে মসজিদ, মাদ্রাসা চাকুরী অথবা ধর্ম ব্যবসার পুঁজিবাদী মানসিকতার কারণেই তারা ইল্মের ব্যাপ্তি ও বিকাশে তৎপর নয়। এদেরকে বড়জোড় নামধারী মাওলানা বলা যেতে পারে। কিন্তু হাক্বীক্বী মুফতির কোন যোগ্যতাই তারা হাছিল করতে পারেনি।
রোযার মূল প্রতিপাদ্য বিষয় ক্ষুধার কষ্ট সহ্য করা। ক্ষুধার কষ্ট সহ্য করে প্রবৃত্তিকে দমন করা বা নফ্সকে ইসলাহ করা। এজন্য হাদীছ শরীফে ইরশাদ হয়েছে, রোযা হচ্ছে আত্মরক্ষার ঢাল স্বরূপ। যতক্ষণ রোযাদার নিজেই তা ফুটো করে না দেয়। মূলত রোযাবস্থায় ইনজেকশনবাদীরা ইনজেকশনের সুইয়ের মাধ্যমে রোযারূপী ঢালের গায়ে সে ফুটোটিই করে দিচ্ছে।
বিশেষত গত ২৮শে জুলাই লন্ডনে রয়টার্স পরিবেশিত এক খবরে বিষয়টি আরো সুষ্পষ্ট হয়েছে। খবরে প্রকাশ-
ইনজেকশনে ক্ষুধা কমিয়ে ওজন
কমানোর অভিনব চিকিৎসা
লন্ডন, ২৮ জুলাই, রয়টার্স: ব্রিটিশ বিজ্ঞানীরা মোটা ও অতিরিক্ত ওজনের মানুষের ওজন কমানোর এক নতুন চিকিৎসা উদ্ভাবন করেছেন। এতে তারা নিজেদের ভরপেট বোধ করবে। বিজ্ঞানীরা ২৬ জুলাই মঙ্গলবার একথা জানান।
এ চিকিৎসায় ওক্সাইন্টোমোডিউলিন নামের এক স্বাভাবিক ডায়েজেস্টিভ হরমোন ইনজেকশন করে ক্ষুদ্রান্ত্রে প্রবেশ করানো হয়। এ ইনজেকশন ক্ষুধা হ্রাস করে। ফলে মানুষ ক্ষুধায় কষ্ট পায় না। খাওয়ার অভাব বোধ বা খাওয়ার কথা তার মনে হয় না। খাওয়ার আগ্রহ জাগে না। এ চিকিৎসা বিশ্বে মানুষের মোটা হয়ে যাওয়ার প্রবণতা হ্রাস সহায়ক হবে। ইম্পেরিয়াল কলেজ লন্ডনের গবেষকরা একথা জানান। (জনকণ্ঠ, ২৯শে জুলাই-২০০৫, পৃষ্ঠা নং ৫)
এখন রোযাবস্থায় ইনজেকশনবাদীদের ফতওয়া আমল করলে এ ইনজেকশন নিতেও কোন অসুবিধা নেই। তাতে করে রোযার যে মূল হুকুম ক্ষুধা তৃষ্ণা সহ্য করা বা ক্ষুধা তৃষ্ণা দ্বারা প্রবৃত্তিকে দমন তথা নফ্সকে ইসলাহ করা সে শর্তই আর বাস্তবায়িত হয় না। আল্লাহ পাক ইরশাদ করেন, আমি মু’মিনদের পরীক্ষা করব ক্ষুধা দ্বারা শস্য নষ্টের দ্বারা…। এবং রোযার ক্ষুধা সহ্যকরণের দ্বারাই মহান আল্লাহ পাক-এর সে পরীক্ষায় মুসলমান উত্তীর্ণ হয়। আল্লাহ পাক ইরশাদ করেন, “তোমাদের পূর্ববর্তীদের উপরও রোযা ফরয করা হয়েছিল। আশা করা যায় তোমরা মুত্তাক্বী হতে পারবে।” বলাবাহুল্য মুত্তাক্বী হওয়ার পেছনে রোযার ক্ষুধা-তৃষ্ণা সহ্য করাই মূল কারণসমূহের মধ্যে একটা কারণ।
কিন্তু এখন দেখা যাচ্ছে, কিছু কম ইল্ম কম বুঝের মাওলানারা মুসলমানদেরকে রোযার সে ফযীলত থেকে মাহরূম করে দিচ্ছে। তাদের রোযাগুলোকে নষ্ট করে দিচ্ছে। রোযার মত ফরয আমল বরবাদ করে দিচ্ছে।
বিশেষ করে এ ক্ষেত্রে তথাকথিত এক ইসলামী মাসিকের অর্বাচীন সম্পাদকের ফতওয়া আরো নাজুক। সে বার বার ফতওয়া দিচ্ছে রোযাবস্থায় ইনজেকশন এমনকি স্যালাইন নিলেও রোযার ক্ষতি হয় না। অথচ গ্লুকোজ স্যালাইন নিলে দেহে শক্তি পূরণ হয়ে যায়। যারা অনশন করে তারা এই স্যালাইন নিয়েই বেঁচে থাকে। তাহলে তাতেও রোযার মূল বিষয় ক্ষুধা-তৃষ্ণা সহ্যকরণ, সে হুকুম কিছুই আদায় হয় না।
উল্লেখ্য এ বিষয়টি মাসিক আল বাইয়্যিনাত-এ বহুবার বিস্তারিতভাবে প্রকাশিত হয়েছে।
কিন্তু তারপরেও তারা নছীহত হাছিল করেনি। মূলত ওদের দিল মরে গেছে। চোখে পর্দা পড়ে গেছে, কানে সীসা লেগেছে। ওরা গোমরাহীর উপর দৃঢ় হয়ে আছে। আল্লাহ পাক ইরশাদ করেন, আল্লাহ পাক যাকে হিদায়েত করেন সে হিদায়েত হয় কিন্তু যে গোমরাহীর উপর দৃঢ় থাকে সে কখনও হিদায়েত পায় না।
-মুহম্মদ তারীফূর রহমান, ঢাকা।
বিৃটিশ গুপ্তচরের স্বীকারোক্তি এবং ওহাবী মতবাদের নেপথ্যে বিৃটিশ ভূমিকা-১৫