এদেশের তথাকথিত ইসলামপন্থীরা দেশের স্বাধীনতাযুদ্ধে তাদের বিরোধিতার সাঁফাই এখনও গেয়ে থাকে। তারা বলে থাকে যে, ‘যুদ্ধে ইসলামের স্বার্থে তারা দেশের স্বাধীনতার বিরোধিতা করেছিলো। তারা ভেবেছিলো দুই পাকিস্তান এক থাকলে তা ইসলামী হবে।’
বলাবাহুল্য, ইসলামী নামধারী শুধু জামায়াতীরা নয় বরং দেওবন্দী, খারিজী, ওহাবী সবার মাঝেই একই চেতনা বিরাজ করছে। সত্য কথা বলতে গেলে দু’ভাবে এদের চিহ্নিত করা যায়।
১. এরা ইসলামী দাবী করলেও আসলে এরা ইসলাম সম্পর্কে খুবই অজ্ঞ।
২. স্বীয় স্বার্থ হাছিলের জন্য নিজেদের পাশবিক লালসা পূরণার্থে এরা ইসলামকে লেবেল হিসেবে ব্যবহার করছে।
প্রথম ক্ষেত্রে বলতে হয় যে, ‘ইসলাম’ মানে ‘ইনসাফ’। বিদায় হজ্জের খুবায় সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বলেন, ‘আজকের এই দিন যেমন পবিত্র তেমনি প্রতিটি মুসলমানের জান-মাল পবিত্র।’
সেক্ষেত্রে আজকে ইসলামী নামধারী যেসব জামায়াতী, জোটিরা এই ধুয়া তুলেন যে, ইসলামের স্বার্থে তারা পাকিস্তানের অখ-তা চেয়েছিলেন। তাহলে প্রতীয়মান হয় যে, তারা কত নিরেট অন্ধ ছিলেন যে, পাকিরা আমাদেরকে যেরূপ চরমভাবে বঞ্চিত করেছে, নিপীড়ন করেছে তা তারা আদৌ দেখতে পাননি।
মূলত: এ ধারার ধর্মব্যসায়ীদের সম্পর্কেই মহান আল্লাহ পাক তিনি বলেন, “তারা অন্ধ, বধির, বোবা। তাদের দিলে মোহর পড়ে গেছে।” তাদের দিলে মোহর পড়ে গেছে বিধায়ই তারা আদৌ উপলব্ধি করতে পারেনি যে, আইয়ুব খান, ইয়াহিয়া, ভুট্টো গং কেউ ইসলামী ব্যক্তিত্ব নয়। বরং কড়া শরাব আর নিত্য নতুন নর্তকীর সান্নিধ্যেই যাদের দিন গুজরান হতো।
সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সুন্নতের পরিবর্তে স্যুট-কোর্ট আর খ্রিস্টানী ক্রুশ টাইয়েই যারা কেতাদুরস্ত ছিলো। মহান আল্লাহ পাক উনার পরিবর্তে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকেই যারা কার্যত প্রভু বলে মানতো। সুতরঅং এসব খ্রিস্টানভক্ত সাহেবদের ইসলামী দাবীকারী জামাতীরা কি করে ইসলামী নেতৃত্ব বলে গ্রহণ করতে পারলো? এদের নেতৃত্বে চাপিয়ে দেয়া যুদ্ধকে কি করে সমর্থন করতে পারলো, দেশের স্বাধীনতার বিরোধিতা করতে পারলো? তা চিন্তা করে যেন হাবিয়া দোযখও আতঙ্কে শিউরে উঠে।
হাবিয়া দোযখের লালিমা আরো লকলক করতে থাকে যখন তারা এখনও অতীতের সে ভুলের প্রকাশ্য তওবা না করে। ইসলামের স্বার্থেই তারা ’৭১ এ বিরোধীতা করেছিলো ইসলামের নামে’ এ বিকৃত ব্যাখ্যা এখনও দিয়ে চলে।
এখানে উল্লেখ্য যে, ইসলামী দাবীকারী কেবল জামাতীরাই নয় সাথে জোটিরাও তথা ওহাবী, খারিজীরাও কিন্তু একই ক্ষুড়ে মাথা কামানো। ’৭১ এ খারিজীদের নেতা হাফিজ্জী সাহেব এদেশে পাকিস্তানের পতাকা গেড়েছিলো এই মর্মে, এদেশ পাকিস্তানই থাকবে, বাংলাদেশ হবে না। তাই দেখা যাচ্ছে, ইসলামী দাবীকারী জামাতের সাথে সাথে দেওবন্দী, ওহাবী, খারিজীরাও একই সাথে সন্ত্রাসবাদে বিশেষ পারঙ্গম।
এ প্রসঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের ৯/১১ কমিশনের রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে, “মার্কিন ৯/১১ কমিশন দেওবন্দিদের দক্ষিণ এশিয়ার সন্ত্রাসী হিসেবে শনাক্ত করেছে। কমিশনের রিপোর্টে বলা হয়েছে, দেওবন্দিরা ইতিমধ্যে মধ্যপন্থী থেকে চরমপন্থ হয়ে উঠেছে। তারা এখন বিন লাদেনের ক্যাডারে পরিণত হয়েছে এবং মূলত তারাই দক্ষিণ এশিয়ায় আল কায়েদাকে জিইয়ে রাখছে। (ভোরের কাগজ, ২২ ফেব্রুয়ারি/০৫)
ঢাকা থেকে প্রকাশিত ইংরেজি সাপ্তাহিক ‘হলিডের’ ১৮ই ফেব্রুয়ারি/০৫ সংখ্যায় বলা হয়, দেওবন্দিরা আফগানিস্তানের তালেবান আন্দোলনের সঙ্গে সম্পৃক্ত এবং বাংলাদেশে উল্লেখ্যযোগ্য হারে দেওবন্দিদের সম্প্রসারণের ইস্যুতে সমগ্র দক্ষিণ এশিয়ার কথা উল্লেখ করা হয়।
রিপোর্টে বলা হয়েছে, কমিশন দেওবন্দিদের বিস্তার, তাদের প্রশিক্ষণ কার্যক্রম এবং পাকিস্তানের আইএসআই কর্তৃক তাদের নির্দেশনা প্রদানের ব্যাপারে পুরোপুরি ওয়াকিফহাল। সংশ্লিষ্ট সূত্রের বরাত দিয়ে বলা হয়, দেওবন্দি সম্প্রদায়ের আন্দোলন ও তাদের কর্মীদের ইদানীং মার্কিন গোয়েন্দারা গভীর পর্যবেক্ষণে রাখছে।
এতে আরো বলা হয়, ১৯৪৭ সালে পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার পর দ্রুত হারে দেওবন্দি মাদরাসার প্রসার ঘটতে থাকে। (ভোরের কাগজ ২২ ফেব্রুয়ারি/২০০৫)
প্রসঙ্গত: বাংলাদেশেও এই কওমি ধারা যত্রতত্র ব্যাঙের ছাতার মত গজিয়ে উঠেছে। অথচ মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রতি এদের রয়েছে মহা আপত্তিকর আক্বীদা।
সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, মীলাদ শরীফ-এ ক্বিয়াম- এদের ধারনায় শিরক। ইলমে তাছাউফের তরবিয়ত এদের মাঝে নেই বললেই চলে। তাই দ্বীনি সমঝ থেকে ও খোদায়ী রহমত থেকে বঞ্চিত হয়ে এরা ইলমী ধারাবাহিকতা থেকে দূরে সরে গিয়ে এখন ইসলামের নামে সারাদেশে সন্ত্রাসবাদ বিস্তারেই ব্যাপ্ত রয়েছে।
এদেরকে উদ্বুদ্ধ করেছে ইসলামের লেবাছে ইসলাম বিদ্বেষী আন্তর্জাতিক চর, মার্কিনীদের সোল এজেন্ট ওসামা। মূলত: সেই তার কর্মীবাহিনী বিভিন্ন মাদরাসায় পাঠিযে সন্ত্রাসীদের চেতনা দিয়ে সুকৌশলে হাছিলের পথ থেকে মাদরাসা ছাত্রদের ভুল পথে চালিত করছে।
আর দেওবন্দি সিলেবাসে চালিত কওমি মাদরাসাগুলো পতঙ্গের আগুনে ঝাঁপ দেয়ার মত লাফিয়ে ওসামার পাতা ফাঁদে পা দিয়েছে। দেশের কওমি মাদরাসাগুলোর বিরুদ্ধে তাই পত্র-পত্রিকায় সন্ত্রাসবাদ প্রশিক্ষণের ঢালাও অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে।
এ মর্মে “সাপ্তাহিক ২০০০”-এ রিপোর্টে বরঅ হয়, চট্টগ্রামের কওমী মাদরাসা সন্ত্রাসী তৈরির কারখানা :
চট্টগ্রামের লালখান বাজার এলাকার দারুল উলুম মাদরাসা, হাটহাজারীর দারুল উলুম মইনুল মাদরাসা এবং পটিয়ার আল জামেয়াতুল ইসলামিয়া (আল জামেয়া আল ইসলামিয়া এই তিন কওমী মাদরাসার অধীনে দেশজুড়ে পরিচালিত হচ্ছে প্রায় সাত হাজার কওমী মাদরাসা।
এই তিন কওমী মাদরাসা সন্ত্রাসী তৈরির মূল সতিকাগার। গোয়েন্দা সূত্র মতে সন্তাসী সংগঠন ‘হরকতুল জেহাদ’ এই তিন মাদরাসা থেকে চালিয়ে যাচ্ছে তাদের সন্ত্রাসী তৎপরতা। জন্ম দিচ্ছে শত শত ধর্মান্ধ উগ্র সন্ত্রাসী। (সাপ্তাহিক ২০০০, ২৭ আগস্ট/০৪)
২০০২-এর মার্চের দ্বিতীয় সপ্তাহে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের রাজনৈতিক শাখা-১ এর সিনিয়র সহকারী সচিব এমএস হারুন অর রশিদ স্বাক্ষরিত এক সার্কুলারে চট্টগ্রামের পটিয়ার আল জামেয়া আল ইসলামিয়া, হাটহাজারীর দারুল উলুম মইনুল এবং লালখান মাদরাসার তালেবান নেটওয়ার্কের কথা উল্লেক করা হয়। এদের বিরুদ্ধে তালেবান সম্পৃক্ততা ও মুজাহিদ বাহিনী গঠনের মাধ্যমে সশস্ত্র প্রশিক্ষণের অভিযোগ এনে ব্যবস্থা নির্দেশ দেয়া হয়। (সাপ্তাহিক ২০০০, ২৭ আগস্ট/০৪)
পুলিশের তালিকায় সন্ত্রাস প্রশিক্ষণ কেন্দ্র: চট্টগ্রাম অঞ্চলের দায়িত্বপ্রাপ্ত পুলিশ কর্মকর্তারা স্বীকার করেন সন্ত্রাসী প্রশিক্ষণের বিষয়। সে সঙ্গে নিজেদের দুর্বলতা স্বীকার করে বলেন, এসব দুর্গম এলাকার সন্ত্রাসী প্রতিরোধে যেতে হলে সেনা-বিডিআর-এর অনুমতি এবং সহযোগিতা দু’টোই জরুরী। পুলিশের তথ্য মতে গত ১৪-১৬ মে/২০০৪ নাইক্ষ্যংছড়ির গহিন পাহাড়ে রোহিঙ্গা ন্যাশনাল কনভেনশন হয়। এতে ওয়ার্কিং কমিটি গঠনের মাধ্যমে কওমী মাদরাসার নির্বাচিত ছাত্রদের প্রশিক্ষণের সিদ্ধান্ত হয়। প্রশাসন এসব জানে। জেনেও তারা নির্লিপ্ত। এই মাদরাসাকে কেন্দ্র করে বৃহত্তম চট্টগ্রাম হয়ে পড়ছে সন্ত্রাসীদের স্বর্গরাজ্য। চট্টগ্রামের মাদরাসায় প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত সন্ত্রাসীরা সারাদেশে ছড়িয়ে পড়ছে। বাড়ছে সন্ত্রাসী কর্মকা-।
সারাদেশের সন্ত্রাসী আন্দোলনের নেতৃত্বে রয়েছে পটিয়া আল জামেয়াতুল ইসলামিয়া মাদরাসা।
পটিয়া থানা থেকে ৫০০ গজ উত্তর-পূর্বে ১৯৩৮ সালে প্রতিষ্ঠিত। মূল কমপ্লেক্স-১৪ একর জায়গা নিয়ে (অধিকাংশই অস্ত্রের জোরে সন্ত্রাসী হামলার মাধ্যমে দখলের অভিযোগ আছে)। অস্ত্র, তলোয়ার, কংফু, কারাতে প্রশিক্ষণের মাধ্যমে দক্ষতা বৃদ্ধি এবং জিহাদী কর্মকাণ্ডে উদ্বুদ্ধ করা, কালো কমব্যাট পোশাকের সন্ত্রাসীর অবস্থান রয়েছে এ মাদরাসায়।
দাতা: সউদী আরব, লিবিয়া, আরব আমিরাত, মিসরসহ বিভিন্ন মুসলিম দেশের ইসলামী এনজিওসমূহের অনুদানে এ মাদরাসার কার্যক্রম পরিচালিত হয়।
আন্তর্জাতিক ইসলামী সন্ত্রাসী নেতা হিসেবে পরিচিত এ রকম অনেকই নিয়মিত সফরে আসেন। এদের মধ্যে রয়েছে,
১. পাকিস্তানের মুজাহিদ-ই তাহফুজে খতমে নুবুয়্যত নেতা মাওলানা মনজুর আহমেদ চিউনিটি।
২. পাকিস্তানের জমিয়তুল উলমুল ইসলামিয়া নেতা মাওলানা ইউসুফ বিন নূরী।
৩. ভারতের মুফতি তাহেয়্যেবুল ইসলাম কাশ্মিরী।
৪. ওসামা বিন লাদেনের সমর্থক মিয়ানমারের নাগরিক ড. নূরুল ইসরাম। রোহিঙ্গা সলিডারিটি অর্গানাইজেশন ও আরাকান রোহিঙ্গা ইসলামিক ফ্রন্টের সমন্বয়ে গঠিত হুৗ-এর চেয়ারম্যান এবং বিশ্ব মুসলিম সংস্থার তিনি উপদেষ্টা।
ইসলামী ঐক্যজোটের নেতৃত্বাধীন সাত হাজার মাদরাসা থকে ছাত্রদের বাছাই করা হয়। এই সন্ত্রাসী নেতাদের সংগঠন তাদের প্রশিক্ষণ দেয়। এই মাদরাসা কর্তৃপক্ষ নির্ধারণ করে কাদের প্রশিক্ষণ হবে, কোথায় হবে।
চট্টগ্রামের রাউজান, ফুটিকছড়ি, হাটহাজারী, বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি, মিয়ানমারের সীমান্ত এলাকায় চলে প্রশিক্ষণ। দেশি-বিদেশী বিশেষজ্ঞরা প্রশিক্ষণ দেয়। এদের কাছে সব ধরনের আধুনিক অস্ত্র এবং যোগাযোগের ওয়ারলেস সিস্টেম আছে। বাংলাদেশের পোশাকী বাহিনীর সহযোগিতা তারা পায়। (সাপ্তাহিক ২০০০, ২৭ আগস্ট/০৪)
এ বছরের ৪ মে হাটহাজারীর জঙ্গল থেকে অস্ত্রসহ গ্রেফতার করা হয় মীর আনিসকে। আনিস পড়াশোনা করেছে পটিয়ার জামেয়াতুল ইসলামিয়া মাদরাসায়। সেখানে তাকে সন্ত্রাসী প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে। তারপর মাদরাসা কর্তৃপক্ষ উচ্চতর প্রশিক্ষণের জন্য আনিসসহ আরো কয়েকজনকে নির্বাচিত করে। তাদেরকে নিয়ে যাওয়া হয় হাটহাজারীর দারুল উলুম মইনুল মাদাসায়। দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের কওমী মাদরাসার আরো অনেক ছাত্রকে এখানে এনে রাখা হয়। এদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হয় পাহাড়ে। মিয়ানমারের প্রশিক্ষকরা তাদের প্রশিক্ষণ দেয়। প্রশিক্ষণের এক পর্যায়ে গ্রেফতার হয় মীর আনিস। তার কাছে তখন পাওয়া যায় কাঠের তৈরি একে-৪৭ রাইফেল। প্রশিক্ষণের প্রাথমিক পর্যায়ে তাদের কাঠের তৈরি রাইফেল দিয়ে প্রশিক্ষণ দেয় হয়। তারপর আসল অস্ত্রের প্রশিক্ষণ হয়। গ্রেনেড ছোঁড়া বোমা বিস্ফোরণ … সব বিষয়ে তাদের দক্ষ করে তোলা হয়। গ্রেফতার হয়ে এসব কথা স্বীকার করে মীর আনিস।
প্রতিষ্ঠার পর থেকে পটিয়া মাদরাসা জমি দখল শুরু করে এই দখল নিয়ে স্থানীয় অধিবাসীদের সঙ্গে তাদের বারবার বিরোধ সৃষ্টি হয়। জমি দখলকে কেন্দ্র করে রক্তপাতের ঘটনাও ঘটে। (সাপ্তাহিক ২০০০, ২৭ আগস্ট/০৪)
মূলত: এসব নামধারী ইসলামী কওমী, খারিজী, দেওবন্দিরা যেহেতু ইসলামকে খোলশ বা লেবাছ হিসেবে ব্যবহার করে তাই কোন কিছু করতে তাদের আটকায় না।
৭১’এর মত মুসলমান দাবী করে মুসলমানদের শহীদ করা, লুটতরাজ করা, নারীর সম্ভ্রম হরণ করা এদের জাতিগত প্রবৃত্তি।
৭১’-এ এদের উন্মোচিত ঐতিহাসিক চরিত্র সময়ের তালে বদলায়নি আদৌ। বরং এখন তার ক্ষেত্র আরো বেড়েছে অনেক নতুন নতুন কৌশল তারা অবলম্বন করেছে। মাদরাসার নামে অন্যের জমি দখল, ছাত্রদের নামে ব্যবসা, বিদেশ থেকে দান আত্মসাৎ এমনকি ছাত্রদের উপর বলাৎকার থেকে আরম্ভ করে সম্প্রতি ছাত্র পাচারের অভিযোগ বা প্রমাণ তাদের বিরুদ্ধে পাওয়া যাচ্ছে।
শিশু-নারী পাচারের অভিযোগ চট্টগ্রামের কওমী মাদরাসার বিরুদ্ধে:
এই মর্মে “সাপ্তাহিক ২০০”-এ ৩রা সেপ্টেম্বর/২০০৪ ঈসায়ী রিপোর্ট হয়, চিহ্নিত সংঘবদ্ধ চক্রের হাতে গত ৫ বছরে চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, বান্দরবান, নাইক্ষ্যংছড়ি এলাকা থেকে পাচার হয়েছে ৩ হাজারেরও বেশি শিশু। এরা পাচার হচ্ছে মূলত: ইয়াতীমখানা থেকে। এদেশের প্রায় ৭০০০ কওমী মাদরাসার মধ্যে বড় মাদরাসাগুলো অনুদানের বিশাল অংশ আসে ইয়াতীমখানা দেখিয়ে।
ইয়াতীমখানায় অনাথ শিশুদের ধর্ম শিক্ষায় এবং আশ্রয় দেবার নামে প্রবঞ্চিত করা হচ্ছে এসব কওমী মাদরাসায়। একটু বড় হয়ে কেউ সন্ত্রাসী মুজাহিদ, কেউ অনিশ্চিত জীবনযাত্রা, কেউ পাচারকারী চক্রের হাতে পাকিস্তান বা মাধ্যপ্রাচ্যের শেখদের উটের জকির নির্মম ও অমানবিক কাজে নিয়োজিত হচ্ছে। যাদের কথা বলে অর্থ আনা হচ্ছে তাদেরকেই পাচার করা হচ্ছে অমানবিকভাবে। অনুদানপ্রাপ্তি স্বীকার পর্বে অনাথদের আশ্রয়দানের মধ্যেই সীমাবদ্ধ তাদের দায়িত্ববোধ। অভিযোগ রয়েছে, পাচারকারী চক্রের সঙ্গে এসব মাদরাসা কর্তৃপক্ষের গোপন আঁতাত রয়েছে।
কক্সবাজার জেলার ২৫০০ কওমী মাদরাসার মধ্যে প্রায় ২০০টি বড় মাদরাসার ইয়াতীমখানা আছে। প্রতিটিতে গড়ে ১০০ ছাত্র হলেও প্রায় ২০,০০০ শিশু নিয়ে এসব ইয়াতীমখানা। কোনো পরিসংখ্যান কখনো হয়নি। সরকারি বেসরকারি হিসাবে প্রকৃত ইয়াতীমখানার সংখ্যা কেউ জানে না। এরা অনাথদের ছবি দেখিয়ে ইসলামী রাষ্ট্রসমূহের অনুদান এনে নিজেদের আখের গোছায়, বঞ্চিত করে অনাথদের স্বাভাবিক জীবন ব্যবস্থা থেকে হারিয়ে যায় এদের সব স্বপন্নসাধ।
উটের জকি মানেই বাংলাদেশি শিশু:
জাফরের জবানবিন্দি থেকে জানা যায়, দুবাইয়ের রাশেদ শাহ সালেমের ৫২টি উটের জন্য আরো ৫২ বাংলাদেশি শিশু আছে। এদের অনেকেই তার চেনা এলাকার চেনামুখ। আরো প্রায় এক হাজার বাংলাদেশি শিশু অন্যান্য মালিকের উট দেখাশোনার বা জকির দায়িত্বে রয়েছে।
রুটি খেয়ে প্রতিদিন ভোর ৪টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত বিশাল মরুভূমি এলাকা ঘুরে আসতে হতো জাফরকে। তার ধারণা, এ রকম ১ হাজার শিশুকে জকির কাজ করতে হয় যা সে দেখেছে। দাতা সংস্থার অনুদানে চলছে কওমী মাদরাসাসমূহ। যার প্রকৃত পরিসংখ্যান সরকারি হিসাব নেই। এসব মাদরাসাগুলোর বার্ষিক অনুদান কোটি কোটি টাকা। যার অধিকাংশ অনাথ শিশুদের শিক্ষা, বাসস্থান এবং কর্মস্থান বাবদ আসে। এ সুযোগের পূর্ণ সদ্ব্যবহার করে এই বিপুল অর্থ আত্মসাৎ করছে এসব মাদারাস কর্তৃপক্ষ। অন্যদিকে এই শিশুদের মধ্যপ্রচ্যের বিভিন্ন দেশে পাচার করে আদায় করে বিপুল অবৈধ অর্থ পাচার হওয়ার পথে যেসব দল ধরা পড়েছে তাদের স্বীকারোক্তি থেকে নাম বেরিয়ে আসছে পাচারকারী দলের। প্রকাশিত হয়ে পড়ছে কওমী মাদরাসার আসল চরিত্র।”
প্রসঙ্গত: স্মর্তব্য যে, হাদীছ শরীফ-এ ধর্মব্যবসায়ী আলিমদের নিকৃষ্ট প্রাণী বলা হয়েছে। খারাবীর মধ্যে যে শীর্ষে সেই নিকৃষ্ট। যারা কাফির, মুনাফিক, ঘুষঘোর, সুদখোর মানুষ এমনকি চতুস্পদী জন্তুরও অধম।
কাজেই এই অধম শ্রেণীটি যদি ইসলামের নাম ব্যবহার করে হত্যা, লুণ্ঠন, নারী নির্যাতন, শিশু নির্যাতন, শিশু পাচারসহ বোমা, গ্রেনেড হামলা চালায় স্বার্থের জন্য ঈমান বিক্রির সাথে সাথে দেশ বিক্রির জন্য মার্কিনীদেরও সাথে হাত মেলায় তবে হাদীছ শরীফ উনার বর্ণনা মুতাবিক নিকৃষ্ট হিসেবে তা তাদের জন্য অসঙ্গত নয়। বরং সেটাই তাদের আসল পরিচয়।
-মুহম্মদ আরিফুর রহমান, ঢাকা।
বৃটিশ গুপ্তচরের স্বীকারোক্তি এবং ওহাবী মতবাদের নেপথ্যে বৃটিশ ভূমিকা-১১