হযরত মাওলানা মুফতী সাইয়্যিদ মুহম্মদ আব্দুল হালিম
লক্বব মুবারকের সংখ্যা নিরূপণ (ধারাবাহিক)
সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামূল মুরসালীন, খাতামুন্ নাবিয়্যীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, “যে ব্যক্তি সৎ কাজে আদেশ করেন এবং অসৎ কাজে নিষেধ করেন সে ব্যক্তি খলীফাতুল্লাহি ফিল আরদ্, খলীফাতু কিতাবিল্লাহ এবং খলীফাতু রসূলিল্লাহ্ লক্ববের অধিকারী হন।” (মুকাশাফাতুল কুলুব/৪৮) হাদীছ শরীফে আরো বর্ণিত আছে, “কোন ব্যক্তি যখন সত্য কথা এবং কাজ করতে থাকেন তখন সে ব্যক্তি আল্লাহ পাক-এর নিকট ‘বাররুন’ (নেক্কার) লক্ববে ভূষিত হন।” (শরহে আল্লামাতিয যুরকানী ৪ খ- ১৭১ পৃষ্ঠা)
তিনি আরো বলেন, “আমার উম্মতের মধ্যে ঐ ব্যক্তি “আফযালুশ শুহাদা” লক্ববের অধিকারী, যে ব্যক্তি কোন জালিম বাদশাহকে সৎ কাজে আদেশ দান করেন এবং অসৎ কাজ হতে বিরত থাকতে বলেন। আর সে বাদশাহ এ কাজের জন্য তাকে শহীদ করে।”(মুকাশাফাতুল কুলুব/ ৫০)
এমনিভাবে অপরাপর গুণাবলী যখন কারো মধ্যে এমন প্রবল আকার ধারণ করে যা স্বভাবে পরিণত হয় তখনই তিনি সেই লক্ববের অধিকারী হন। কাজেই একথা সহজেই অনুধাবণীয় যে, যিনি যত গুণাবলীর অধিকারী তিনি তত লক্ববের অধিকারী। আর আমরা ইতোপূর্বেই উল্লেখ করেছি যে, ইমামুল আইম্মা, মুহইস্ সুন্নাহ, কুতুবুল আলম, মুজাদ্দিদুয্ যামান, সাইয়্যিদূনা, ইমাম রাজারবাগ শরীফের হযরত পীর ছাহেব ক্বিবলা মুদ্দা জিল্লূহুল আলী, নবী-রসূল এবং ছাহাবায়ে কিরাম ব্যতীত যত লক্বব আছে, সমস্ত লক্ববেরই তিনি অধিকারী। (সুবহানাল্লাহ) অন্যকথায় একজন কামিল মানুষের উম্মত হিসেবে যত গুণাবলী থাকতে পারে সমস্ত গুণাবলীই তাঁর মধ্যে সম্যকভাবে পূর্ণরূপে বিরাজমান। সুতরাং তাঁর লক্বব মুবারকের সংখ্যা নিরূপণ করা ব্যর্থ কোশেশ বৈ কিছুই নয়। মূলতঃ আউলিয়া-ই-কিরামগণ হচ্ছেন, আল্লাহ্ পাক এবং তাঁর হাবীব, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর গুণে গুণান্বিত। কাজেই আল্লাহ পাক এবং তাঁর হাবীব সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর মহান গুণাবলীর যেমন বর্ণনা দেয়া সম্ভব নয় তেমনি তাঁর নায়িব তথা আউলিয়া-ই-কিরামগণের গুণাবলীর বর্ণনা দেয়া কিংবা সংখ্যা নিরূপণ করাও সম্ভব নয়। আল্লাহ পাক স্বীয় গুণাবলী তথা নিয়ামত সম্পর্কে বলেন, “যদি তোমরা আল্লাহ পাক-এর নিয়ামতের সংখ্যা নিরূপণ করতে চাও তবে তা শেষ করতে পারবে না।” (সূরা নহল/১৮) আর আল্লাহ্ পাক-এর হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে আল্লাহ পাক সমস্ত গুণাবলী তথা কল্যাণ দান করেছেন। আল্লাহ পাক বলেন, “আমি আপনাকে কাওছার দান করেছি।” (সূরা কাওছার/১)
কাওছার শব্দের লক্ষ-লক্ষ, কোটি-কোটি অর্থ আছে। তন্মধ্যে মুফাস্সিরীন-ই-কিরামগণ দু’টি অর্থকে প্রাধান্য দিয়েছেন। একটি হচ্ছে, ‘হাউজে কাওছার।’ কিয়ামতের কঠিন দিন সেই হাউজে কাওছার হতে যে ব্যক্তি পানি পান করতে পারবেন সে ব্যক্তি জান্নাতে পৌঁছা পর্যন্ত আর পিপাসার্ত হবেননা। কাওছার শব্দের আর একটি অর্থ হচ্ছে ‘খইরে কাছীর’ বা সর্বপ্রকার কল্যাণ। অর্থাৎ আল্লাহ্ পাক আখিরী রসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে দুনিয়া ও আখিরাতের যত রকম কল্যাণ আছে সমস্ত কল্যাণেরই অধিকারী করেছেন। সূতরাং যত প্রকার লক্বব আছে সমস্ত লক্ববেরই তিনি জামে বা অধিকারী। সহজ কথায় ‘আল্লাহ পাক’ ব্যতীত যত লক্বব আছে সমস্ত লক্ববের অধিকারী হচ্ছেন, আখিরী রসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। কাজেই আল্লাহ পাক যেমন লক্ষ-লক্ষ, কোটি-কোটি লক্ববের অধিকারী তেমনি আল্লাহ্ পাক-এর হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামও লক্ষ-লক্ষ, কোটি-কোটি লক্ববের অধিকারী। আর তাঁর নায়িব তথা আউলিয়া-ই-কিরামগণ তাঁরই অংশ পেয়ে থাকেন। তবে আল্লাহ পাক এবং তাঁর হাবীব সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইহসান বা দয়া করতঃ যতটুকু জাহির বা প্রকাশ ঘটাতে চান আউলিয়া-ই-কিরামগণের লক্বব ঠিক সেই পরিমাণই জাহির বা প্রকাশিত হয়। (অসমাপ্ত)