সৃষ্টির শুরু হতে আল্লাহ পাক মাস হিসেবে বারোটি এবং দিন হিসেবে সাতদিন তৈরী করেছেন। তন্মধ্যে শুক্রবারকে মুসলমানদের জন্য করেছেন সম্মানিত। এটি জুমুয়াবার হিসেবে সম্মানিত। বিশ্বের অন্যান্য মুসলমান দেশের মত বাংলাদেশেও শুক্রবার জুমুয়াবার হিসেবে ছুটি চালু রয়েছে। কিন্তু অতি সম্প্রতি কতিপয় মহল শুক্রবার সাপ্তাহিক ছুটি বাতিলের পাঁয়তারা করছে। খ্রিস্ট্রীয় ধর্ম বিশ্বাসের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে রোববার সাপ্তাহিক ছুটি ধার্য করার জন্য উঠে পড়ে লেগেছে। বাংলাদেশকে পশ্চিমাদের ধাঁচে পরিচালিত করাই তাদের উদ্দেশ্য। আশির দশকে সাপ্তাহিক ছুটি শুক্রবার করার ব্যাপারে বিভিন্ন মহল থেকে দাবি উঠে। নানা দিক বিচার বিবেচনা শেষে ১৯৮২ সালে রোববারের সাপ্তাহিক ছুটি বাতিল করে শুক্রবার ও শনিবার দু’দিন সাপ্তাহিক ছুটি নির্ধারণ করা হয়। ১৯৮৪ সালে একদিন কমিয়ে ফেলা হয়। ফলে সাপ্তাহিক ছুটি নির্ধারিত হয় শুধু শুক্রবার। তবে বৃহস্পতিবার ছিল একবেলা কর্মদিবস। ১৯৯১ সালে আবার কিন্তু শুক্রবার সাপ্তাহিক ছুটি বহাল হয়। ১৯৯৭ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় এসে সাপ্তাহিক ছুটি শুক্র-শনি দু’দিনে নিয়ে যায়। ২০০১ সালের নির্বাচনে বিএনপি ক্ষমতায় এসে প্রথমে শুক্রবারেই একদিনের সাপ্তাহিক ছুটি ঘোষণা করে। সরকারি কর্মকর্তাদের দাবির কারণে কিছুদিন পর পুনরায় শনিবারও সাপ্তাহিক ছুটি ঘোষণা করা হয়। এখন আবার বলা হচ্ছে শুক্রবার সাপ্তাহিক ছুটি বাতিলের কথা। জেনারেল এরশাদের সাপ্তাহিক ছুটি শুক্রবার করার পদক্ষেপ দেশবাসীর কাছে সমাদৃত হয়েছিল। ১৯৯১-এর খালেদা জিয়া সরকার, ১৯৯৬-এর শেখ হাসিনা সরকার এবং ২০০১-এর বিএনপি’র নেতৃত্বাধীন চারদলীয় ঐক্যজোট সরকার কেউই সাপ্তাহিক ছুটি শুক্রবার বাতিলের ব্যাপারে ঘাঁটাঘাঁটি করেনি। কিন্তু বর্তমান তত্ত্বাবাবধায়ক সরকার আসার পরে কিছু মহল সাপ্তাহিক ছুটি শুক্রবার বাতিল করে রোববার ধার্য করার ব্যাপারে তৎপর হয়েছে। তারা খোঁড়াযুক্তি উপস্থাপন করছে, শুক্রবার সরকারি ছুটি থাকলে আমরা অর্থনৈতিকভাবে পিছিয়ে পড়ব, কারণ ইউরোপ ও আমেরিকার দেশগুলোতে সরকারি ছুটি শনিবার ও রোববার। তাদের হিসেবে শুক্রবার ছুটি থাকলে আমরা তিন দিন পিছিয়ে পড়ছি। এর জবাবে প্রথমঃ ব্যবসায়িক দৃষ্টিকোণ থেকে শুক্রবার সাপ্তাহিক ছুটি বাতিলের পক্ষে তাদের প্রতি কয়েকটি বিষয় উল্লেখ করা যায়। প্রথমতঃ বলতে হয়, আমাদের ব্যবসা-বাণিজ্য কি শুধু ইউরোপ ও আমেরিকার সাথে যুক্ত? ইসলামী সম্মেলন সংস্থার (ওআইসি)’র সভায় সর্ব সম্মতিক্রমে মুসলিম দেশগুলোতে সাপ্তাহিক ছুটি শুক্রবার করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছিল। যে অনুসারে অধিকাংশ মুসলিম দেশে সরকারি ছুটি শুক্রবার (পাকিস্তান, ইন্দোনেশিয়া ও মালয়েশিয়া বাদে)। সৌদি আরব, মিশর, ইরাক, ইরান, কুয়েত, কাতার, সংযুক্ত আরব আমিরাতসহ ওআইসিভুক্ত ৫০টির বেশি সদস্য দেশ এখনো সরকারি ছুটি শুক্রবার ভোগ করছে। এ দেশগুলোর সাথে বাংলাদেশের অর্থনীতির গভীর সম্পর্ক রয়েছে। তাহলে রোববার সরকারি ছুটি করলে তো এই ৫০টি দেশের সাথে রোববার আমাদের ব্যবসা-বাণিজ্যে সমস্যা হবে। আর যে কথা না বললেই নয়, উপরোক্ত দেশগুলো তো শুক্রবার ছুটি সত্ত্বেও উন্নতি করছে। উপরোক্ত দেশগুলো কি আমাদের চেয়ে গরীব? তারা বলছেন, ইউরোপ ও আমেরিকায় শুক্রবার কর্ম দিবস বলে আমাদের দেশেও শুক্রবার কর্ম দিবস করা দরকার। কিন্তু আমরা জানি আমেরিকা ও কানাডার সাথে আমাদের সময়ের ব্যবধান ১২-১৩ ঘণ্টা। বাংলাদেশে যখন দিন আমেরিকায় তখন রাত। তাহলে কি আমাদের দেশের মানুষের আমেরিকা ও ইউরোপের সাথে তুলনা করে দিনের বেলায় ঘুমানো এবং রাতের বেলায় কাজ করা উচিত? তারা বলেছেন, জুমুয়ার নামাযের ২ ঘণ্টা কর্ম বিরতি দেয়ার জন্য। কিন্তু এই ২ ঘণ্টার মধ্যে ওজু করা, মসজিদে যাওয়া, নামায আদায় করা, দুপুরের খাবার গ্রহণ ইত্যাদিতে মনোযোগ দেয়া কি সম্ভব? স্কুলে-কলেজে কি সুন্দরভাবে ক্লাস করানো সম্ভব? রোববার যদি সরকারি ছুটি হয় তাহলে তো জুমুয়ার নামায স্কুল-কলেজে, অফিস-আদালতে, ব্যাংক প্রতিষ্ঠানে আদায় করতে হবে। তাতে তো প্রত্যেকটি স্কুল-কলেজ, অফিস-আদালতে, ব্যাংক প্রতিষ্ঠানে জামে মসজিদ, ওজুখানা, টয়লেট ইত্যাদি নতুন করে তৈরী করতে হবে। এগুলো তৈরী করতেও কোটি কোটি টাকার প্রয়োজন সে টাকার যোগানের নিশ্চয়তা কোথায়? এর চেয়ে শুক্রবার সরকারি ছুটি কি যুক্তিযুক্ত নয়? বাংলাদেশের প্রায় সব মুসলমান শুক্রবার জুমুয়ার নামায আদায় করে থাকে। আর যোহরের নামাজের চেয়ে জুমুয়ার নামাজে বেশি সময় প্রয়োজন। বাংলাদেশের মানুষ এই কারণে শুক্রবার সাপ্তাহিক ছুটি ভোগ করে আসছে। এটা পরিবর্তন করার কোনো উদ্যোগ নেয়া হলে তা মুসলমানের ধর্মীয় সেন্টিমেন্টে আঘাত হানবে এবং তা ইসলামের জন্য আঘাত বলেও বিবেচিত হবে। কারণ বুখারী ও মুসলিম শরীফের হাদীসে উল্লেখ করা হয়েছে, কুরআন শরীফ নাজিল করার পূর্বে অন্যান্য কিতাবধারীদের জন্যও আল্লাহ পাক শুক্রবার দিনকেই বিশেষ মর্তবা দিয়ে তাদের জন্য ধার্য করেছিলেন। কিন্তু তারা এ দিনটি নিয়ে মতভেদ করলো। ইহুদীরা শনিবারকে এবং নাসারা খ্রিস্টানরা বেছে নিলো রোববারকে তাদের উপাসনার দিন হিসেবে। ফলে আল্লাহ পাক তাঁর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলইহি ওয়া সাল্লামকে শুক্রবারের নেয়ামত দিলেন। তাই এই শুক্রবার দিনটি সকল মুসলমানের জন্যই বিশেষ মহিমান্বিত এবং খাছ ইবাদতের দিন হিসেবে পরিচিত। তদুপরি জুমুয়ার দিন হলো মুসলমানদের জন্য সাপ্তাহিক ঈদ। এই দিনটি আল্লাহ পাক-এর কাছে ঈদুল আযহা এবং ঈদুল ফিতর থেকে উত্তম। প্রসঙ্গতঃ মুসলমান হিসেবে আমাদের আরো স্মর্তব্য যে, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর আদর্শই ছিল ইহুদী-নাসারাদের আদর্শ ও কার্যকলাপের বিপরীত করা। তাই আমাদের কোনভাবেই উচিত হবে না তাদের সাপ্তাহিক ছুটির দিনটি আমাদেরও ছুটির দিন হিসেবে বিবেচনা করা। কার্য দিবস বাড়াবার জন্য আমরা দু’দিনের পরিবর্তে একদিন ছুটির দিন করতে পারি তারপরেও তা শুক্রবারের বিনিময়ে নয়। মূলতঃ আমাদের আদর্শে এমনভাবে আমাদের অবিচল থাকতে হবে যেন তারাই আমাদের অনুসরণ করতে বাধ্য হয়। আজ যদি আমরা মহান আল্লাহ রব্বুল আল আমীন কর্তৃক মনোনীত জুমুয়াবারের মান, মর্যাদা রক্ষা না করি, তবে নিজেরাই নিজেদের ঈমান ও আক্বীদায় আঘাত হানব। যেখানে ইহুদী ও খ্রিস্টানরা মুসলমানদের ধর্মীয় অনুভূতি ও সভ্যতায় প্রতিনিয়ত আঘাত হানছে, সেখানে যদি আমরা ব্যবসা-বাণিজ্য প্রসারের স্বার্থে তাদের সাথে তাদের ধর্মীয় দিনকে আমাদের ছুটির দিন হিসেবে মেনে নেই, তবে তাদের ঔদ্ধত্য উত্তরোত্তর বৃদ্ধিই পাবে। ফলতঃ আমাদের লাঞ্ছনা, গঞ্জনা, অবনতি আরো বাড়বে। হাদীছ শরীফে ইরশাদ হয়েছে, “তোমরা ততক্ষণ পর্যন্ত কামিয়াবীর শীর্ষে থাকবে যতক্ষণ কুরআন-সুন্নাহ্ আঁকড়ে থাকবে। আর যখনই কুরআন-সুন্নাহ ছেড়ে দিবে তখনই লাঞ্ছিত ও পদদলিত হবে।” এ প্রসঙ্গে আরো উল্লেখ্য যে, ইহুদী-নাছারা তো শুক্রবার কে ছুটির দিন পালন করেনা তাহলে মুসলমানরা কেন ইহুদী নাছারাদের ধর্মীয় দিনকে ছুটির দিন হিসেবে পালন করবে। এটা মানা বা পালন করা কাট্টা কুফরী।
কাজেই, সাপ্তাহিক ছুটি শুক্রবারের পরিবর্তে রোববার কোন মুসলমানই মেনে নিতে পারে না। এবং কোনো মুসলমান সরকারও তা দেশ ও জাতির প্রতি চাপিয়ে দিতে পারে না।
-মুহম্মদ আলম মৃধা, ঢাকা।
ব্রিটিশ গুপ্তচরের স্বীকারোক্তি এবং ওহাবী মতবাদের নেপথ্যে ব্রিটিশ ভূমিকা-৩২