“আপনি সব মানুষের চেয়ে মুসলমানদের অধিক শত্রুরূপে ইহুদী ও মুশরিকদের পাবেন।” সূরা মায়িদার ৯২নং আয়াত শরীফের আলোকে ইসলাম ও মুসলমানদের বিরুদ্ধে ইহুদীদের ষড়যন্ত্রমূলক গোপনীয় বই-প্রটোকল’ যা পরবর্তীতে ফাঁস হয়ে যায় তার ছত্রে ছত্রে পাওয়া যায় তাদের জঘন্য ষড়যন্ত্রের বিবিধ কূটকৌশল। যাতে প্রমাণিত হয় যে, আজকের তথাকথিত শাইখুল হাদীছ, খতীব, মুফতি, মাওলানা তথা পীর ছাহেবরা ইসলামের নামে ছবি তোলা, হরতাল, লংমার্চ, মৌলবাদ, ব্লাসফেমী, নির্বাচন, গণতন্ত্র, নারী নেতৃত্ব সমর্থন ইত্যাদি যেসব হারাম কর্মসূচী দ্বারা তথাকথিত ইসলামী আন্দোলন করছে তা মূলতঃ ঐ ইহুদীরা এক শত বছর পূর্বেই তাদের প্রটোকলে লিপিবদ্ধ করেছিল। অর্থাৎ আজকের তথাকথিত ইসলামী আন্দোলনের নামে গৃহীত হারাম কর্মসূচী যথা, ছবি তোলা, লংমার্চ, হরতাল, মৌলবাদ, ব্লাসফেমী, গণতন্ত্র, নির্বাচন ইত্যাদি সব ওদেরই ইচ্ছার প্রতিফলন। কিন্তু নামধারী উলামারা এখনও তা বুঝছেনা।
পাশাপাশি বিশেষভাবে স্মর্তব্য যে, তথাকথিত গণতন্ত্র বা ইসলামের নামে গণতন্ত্রই ইহুদীদের ষড়যন্ত্র বিস্তারের ঊর্বর ভূমিস্বরূপ। কারণ গণতন্ত্র যেহেতু নাকেছ সেহেতু এতে রয়েছে বিস্তর ফাঁক-ফোঁকর। এসব ফাঁকের কারণে যে কোন প্রজাতন্ত্রের বিভিন্ন সেক্টর থেকে তৈরী হয় আন্দোলন। আর এ আন্দোলন কখনও সফল হয়না। এর পেছনে কাজ করে নেপথ্য শক্তি।
বলাবাহুল্য, সেটি আর কেউ নয় বরং চিরকালীন ঘৃণ্য ইহুদী শক্তি। এ ইহুদী শক্তি মুসলিম দেশে গণতান্ত্রিক আবহের সুযোগে মুসলমানদের ঈমানী চেতনা হরণের লক্ষ্যে তাদের মাঝে বস্তুতান্ত্রিক মানসিকতা গড়ে তোলে। এবং এ লক্ষ্যে তারা সংবাদপত্রকে বিশেষভাবে নিয়ন্ত্রণ করে। নিম্নে এ সম্পর্কে তাদের প্রটোকলে বর্ণিত অংশ বিশেষ তুলে ধরা হলো-
প্রতিটি প্রজাতন্ত্রকেই কতকগুলো স্তর অতিক্রম করতে হয়। প্রথমে গণ উন্মাদনার সুচনা হয় এবং জনতা উত্তেজনার বশে অন্ধ হয়ে এদিক-সেদিক ছুটোছুটি করে। দ্বিতীয় স্তরে আসে উত্তেজনা সৃষ্টিকারীদের নেতৃত্ব। এ নেতৃত্ব থেকেই নৈরাজ্যের জন্ম হয়। আর নৈরাজ্যই অনিবার্যরূপে স্বৈরাচারী শাসন ডেকে নিয়ে আসে। এ স্বৈরাচার আইন সঙ্গতও নয় আবার জনগণের চোখে ধরা পড়ার মতও নয়। এটা অদৃশ্য ও গুপ্ত প্রতিষ্ঠানের নিকট দায়ী শাসন ব্যবস্থা। ঐ প্রতিষ্ঠানটিই পর্দার আড়ালে থেকে অত্যন্ত দক্ষতার সাথে তার এজেন্টদের মাধ্যমে সব কাজ করিয়ে নেয়। অপর দিকে ক্রীড়নক সরকার বা এজেন্টদের ঘন ঘন পরিবর্তনের মাধ্যমে আমাদের গুপ্ত প্রতিষ্ঠান নিজের শক্তি মজবুত হতে অধিকতর মজবুত করতে থাকে।
অদৃশ্য শক্তিকে উৎখাত করতে পারে এমন কে বা কোন্ শক্তি আছে? কেউ নেই। প্রধানতঃ এটাই আমাদের শক্তির রহস্য। ভদ্রবেশী ম্যাসনারী দল আমাদের গুপ্ত শক্তির আবরণ হিসাবে কাজ করে। তাই আমাদের গুপ্তশক্তির পরিকল্পনা, এমন কি এর অবস্থান পর্যন্ত সমগ্র জনসাধারণের কাছে একটা অজ্ঞাত রহস্য হয়ে থাকে। কিন্তু স্বাধীনতা সত্যি কল্যাণকর হতে পারে এবং রাষ্ট্রীয় অর্থ-ব্যবস্থা জনগণের ক্ষতি করার পরিবর্তে উপকার করতে পারে, যদি স্বাধীনতা আন্দোলনের ভিত্তি আল্লাহর প্রতি ঈমান ও মানব জাতির পারস্পরিক ভ্রাতৃত্ব বন্ধনের উপর স্থাপিত হয়। সকলের সমানাধিকারের দাবিই হচ্ছে সকল অনর্থের মূল।
কেননা খোদ সৃষ্টিকর্তাই কোন কোন মহলকে কোন কোন মহলের উপর প্রাধান্য দান করেছেন। উপরোল্লিখিত ঈমানের জোরেই মানুষকে ধর্ম নেতাদের অভিভাবকত্বে সহজে শাসন করা সম্ভব। পৃথিবীর উপর আল্লাহর সর্বময় কর্তৃত্ব স্বীকার করে নিয়ে আধ্যাত্মিক ক্ষমতাসম্পন্ন নেতাদের হাতে আত্মসমর্পণ করে মানুষ পরিপূর্ণ তৃপ্তি ও আনুগত্য-সহকারে জীবন যাপন করতে সর্বদাই প্রস্তুত। আমাদের জন্য তাই মানুষের ঈমান দুর্বল করে ফেলা অত্যন্ত জরুরী । গইম তথা মুসলিম জনগণের অন্তর থেকে খোদার অস্তিত্ব সম্পর্র্র্কিত বিশ্বাস ও আধ্যাত্মিকতার ধারণা মুছে ফেলতে হবে এবং সে স্থলে শুধু গণিমতের হিসাবপত্র ও বস্তুতান্ত্রিক চাহিদার অনুভূতি প্রবল করে তুলতে হবে। গইম তথা মুসলিম সমাজের জনগণ যেন চিন্তা ও লক্ষ্য করার কোন সুযোগই না পায়, সে জন্য আমরা তাদের মন-মগজকে শিল্প ও ব্যবসায়ের দিকে ঝুঁকিয়ে দেব। এর ফলে স্বার্থের নেশা গইম তথা মুসলিম জাতিগুলোকে গ্রাস করে ফেলবে এবং পারস্পরিক প্রতিযোগিতায় তারা সম্পূর্ণরূপে অন্ধ হয়ে যাবে। তারা তাদের সকলের অভিন্ন ও একমাত্র শক্রর দিকে চোখ তুলে তাকাবার ফুরসত পর্যন্ত পাবেনা। অন্যদিকে আমরা স্বাধীনতার মারফত জাতিগুলোকে চিরদিনের মত ধ্বংস ও বিক্ষিপ্ত করে দেয়ার উদ্দেশ্যে শিল্প প্রতিষ্ঠানকে ফটকা বাজারের আবর্তে নিক্ষেপ করবো। এর ফলে শিল্প-কারখানা দেশ থেকে যা কিছু সংগ্রহ করবে, ফটকা বাজারের মাধ্যমে তা আমাদের হাতেই এসে পড়বে। পরস্পরের উপর প্রাধান্য বিস্তারের তীব্রতর দ্বন্দ্ব এবং অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে আমাদের বজ্রাঘাত নিরাসক্ত, উদাসীন ও হৃদয়হীন সম্প্রদায়ের জন্ম দেবে এবং ইতিহাসই তা জন্ম দিয়েছে। এ ধরণের সম্প্রদায়গুলো উচ্চতর রাজনীতি ও ধর্মের প্রতি চরম ঘৃণা পোষণ করবে। তাদের একমাত্র আদর্শ হবে স্বার্থ অর্থাৎ সোনা। পার্থিব সুখ ও আরাম-আয়েসের খাতিরে তারা সোনার পূজারী হয়ে যাবে। এ স্তরে পৌঁছার পর গইম তথা মুসলিম সমাজভুক্ত নিম্ন শ্রেণীর লোকেরা আমাদের নেত্বত্বে তাদের বুদ্ধিমান শ্রেণীকে আক্রমণ করবে। এ শ্রেণীটিই প্রকৃতপক্ষে আমাদের প্রচারিত একটানা বিদ্বেষের ফলেই এরা নিজেদের সমাজের উত্তম লোকদের আঘাত করতে এগিয়ে আসবে। সংবাদপত্র সংবাদপত্রগুলোর মধ্য থেকে যাদেরকে আমরা এজেন্ট নিয়োগ করবো, তারা আমাদের নির্দেশে সেসব বিষয়ে আলোচনা করবে, যেসব বিষয়ে সরাসরি আমাদের সরকারী কাজে আলোচনা করা সমীচীন নয়। আমরা আলোচনার মধ্যস্থলে কোন একটি সুবিধাজনক সূত্র ধরে জনগণের সামনে কতিপয় সাজানো তথ্য পেশ করবো। একবার যে বিষয়ে একটা ফয়সালা হয়ে যাবে, তা রদ করার সাহস কেউ করবে না। জনসাধারণের দৃষ্টিতে তা খুব উন্নত বলেই মনে হবে। আর সঙ্গে সঙ্গেই সংবাদপত্র বিষয়টি থেকে জনগণের মনোযোগ অন্যদিকে ঘুরিয়ে দেয়ার কাজ শুরু করবে (আমরা কি সর্বদাই জনগণকে শুধু নতুন বিষয়ের পেছনে ধাওয়া করতে শিক্ষা দেইনি?) সুযোগ-সন্ধানী নির্বোধ (Brainless) লোকেরা নতুন নতুন বিষয়ের আলোচনায় মেতে উঠবে, অথচ এ আহাম্মকের দল আলোচ্য বিষয়টির অন্তর্নিহিত উদ্দেশ্য বুঝতে সম্পূর্ণ অক্ষম। রাজনৈতিক ময়দানের জটিল সমস্যাবলী অনুধাবন করার সাধ্য এদের কারো নেই। শুধু তারাই এ বিষয়ে এগিয়ে যেতে পারে, যারা যুগ-যুগ ধরে রাজনীতিকে নিয়ন্ত্রণ করে এসেছে এবং বিভিন্ন সমস্যা সৃষ্টি করছে।
এ আলোচনা থেকে তোমরা বুঝতে পারবে যে, জনগণের মতামত সংগ্রহের বাহানায় আমরা আমাদের কার্যসিদ্ধির জন্য ক্ষেত্র প্রস্তুত করছি মাত্র। তোমরা বলবে যে, বিভিন্ন বিষয়ে আমরা জনগণের মতামত সংগ্রহের নামে যা যা প্রচার করি, সেগুলো কার্যে পরিণত করা আমাদের উদ্দেশ্য নয়- শুধু প্রচারণাই এর মূল লক্ষ্য। প্রকৃতপক্ষে আমরা শুধু এ কথাই অবিরাম প্রচার করে যাচ্ছি যে, সাধারণের কল্যাণ সাধনই আমাদের উদ্দেশ্য।
রাজনৈতিক প্রশ্নে যেসব লোক আমাদের জন্য কষ্টদায়ক হতে পারে, তাদের অন্যপথে ধাবিত করার জন্য আমরা শিল্প-কারখানার প্রশ্নটি উত্থাপন করেছি। এক্ষেত্রেও নির্বোধের দল ঘুরপাক খাবে। নতুন নতুন চাকুরীর প্রত্যাশায় এক্ষেত্রে জনগণ রাজনৈতিক আন্দোলন থেকে দূরে সরে থাকতে রাজী হয়ে যাবে। তাদের আরও দূরে সরিয়ে নেয়ার জন্য আমরা আমোদ-প্রমোদ, খেলাধূলা এবং সময় অপচয় ও ভাবাবেগ বৃদ্ধির অন্যান্য উপাদান সর্বত্র ছড়িয়ে দেবো। সঙ্গে সঙ্গেই আমাদের পত্রপত্রিকা মারফত খেলাধূলা ও সাহিত্য-সংস্কৃতির প্রতিযোগিতা শুরু করিয়ে দেবো। এসব বিষয় স্বাধীনভাবে চিন্তা-ভাবনা করার অভ্যাস হারিয়ে ফেলার দরুন ওরা অবশেষে আমাদেরই সূরে সূর মিলিয়ে কথা বলতে শুরু করবে। কেননা, চিন্তার নতুন সূত্র নতুন চিন্তাধারা প্রবর্তন করে, যাদের সম্পর্কে জনগণ বিন্দুমাত্রও সন্দেহ পোষণ করবে না যে, আমাদের সাথে এদের কোন যোগাযোগ রয়েছে।
-সাইয়্যিদ মুহম্মদ আলমগীর, ঢাকা।