মুজাদ্দিদে আ’যম, ইমামুল আইম্মাহ, কুতুবুল আলম, মুহ্ইস্ সুন্নাহ, আওলাদে রসূল, রাজারবাগ শরীফের হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা মুদ্দা জিল্লুহুল আলী-এর একটি অনবদ্য ক্বওল শরীফ হচ্ছে, “কিছু লোককে কিছুক্ষণের জন্য ধোঁকা দিয়ে রাখা যায়। কিন্তু সব লোককে সব সময়ের জন্য ধোঁকা দিয়ে রাখা যায়না।” ব্যবসায়ী পীর তথা ধর্মব্যবসায়ী, মাওলানা, মুফতী, মুহাদ্দিছ, শাইখুল হাদীছ- এরা হালে এ প্রচারণা বাজারে চাউর করেছেন যে, বর্তমানে ইসলামের প্রচার-প্রসারের জন্য ছবি তোলাতে অসুবিধা নেই। তাই পেপার-পত্রিকায় তারা হর-হামেশা ছবি ছাপানোর মডেল হচ্ছেন। হরদম তারা সাংবাদিকদের ছবি তুলতে দিচ্ছেন। অহরহ তাদের ছবি পত্রিকায় ছাপা হচ্ছে। ইসলামের দৃষ্টিতে এসব ক্ষেত্রে বাধা না দেয়ায় ছবি ছাপতে তাদের অনুমতি প্রকাশ পাচ্ছে একথা তারা জানেন। এতে করে তারা ছবি তোলার গুনাহ্য় গুনাহ্গার হচ্ছেন- তাও তারা বুঝেন। এবং শত শত হাদীছ শরীফে ছবি তোলার বিরুদ্ধে বলা হয়েছে নিদেনপক্ষে সে হাদীছ শরীফগুলোও তারা অবগত। “যে ঘরে ছবি থাকে সে ঘরে রহমতের ফেরেশ্তা প্রবেশ করে না।” (বুখারী শরীফ) “ক্বিয়ামতের ময়দানে ঐ ব্যক্তির সবচেয়ে বেশী শাস্তি হবে, যে ছবি তোলে বা আঁকে।” (বুখারী শরীফ) এসব হাদীছ শরীফের চেতনা এখনও ধর্মপ্রাণ মানুষের অন্তরে জাগরুক আছে তাও তারা উপলব্ধি করতে পারেন। এবং সে উপলব্ধি বোধই তাদের অন্তরের অন্তঃস্থলে শূল বেদনার উদ্রেক করে, পীড়া দেয়। এবং সে পীড়া মর্মপীড়ার আকার ধারণ করে যখন তারা তাদের কথিত ইসলামী জলসায় হাজির হন। কারণ, ইসলামের একটি মূল বৈশিষ্ট্যই হচ্ছে ছবি না তোলা। ইদানিংকালে তারা ইসলামকে দ্বিখণ্ডিত করেছেন। একটা হলো ঘরের ভেতরে বা মসজিদের ইসলাম আর আরেকটা হলো বাইরের রাজনীতির ইসলাম। তাদের কথা হলো যে, বাইরের ইসলামে সাংবাদিকরা ছবি তুলে নিয়ে যায়। সেটা সাংবাদিকের ব্যাপার। গত ২৪শে নভেম্বর/২০০৪ ঈসায়ী তারিখে চর্মনাই পীরের বরাতে এরূপ কথা দৈনিক ইত্তেফাকেও এসেছে। তাতে বলা হয়েছে, ……… “জোহরের নামাযের পর বয়ানের মাধ্যমে মাহফিলের সুচনা করে চরমোনাইর পীর সাহেব ………। এ সময় তিনি ভক্তদের উদ্দেশ্যে বলেন, ইসলামে ছবি তোলা জায়িয নেই। রাজনৈতিক কারণে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে সংবাদকর্মীদের অনুরোধে ছবি তুলতে বাধ্য হতে হয়।” (দৈনিক ইত্তেফাক ২৪ নভেম্বর/২০০৪) কিন্তু একই দিনে দৈনিক ভোরের কাগজের রিপোর্টে তার হাক্বীক্বত ফাঁস হয়েছে। ভোরের কাগজে ‘অল্পকথা শীর্ষক’ রিপোর্ট হয়, বরিশাল প্রতিনিধিঃ গতকাল মঙ্গলবার থেকে শুরু হওয়া চরমোনাই দরবার শরীফের তিন দিনব্যাপী মাহফিলের ছবি তুলতে গিয়ে তাড়া খেয়েছেন দৈনিক যুগান্তরের বরিশাল ব্যুরোর ফটো সাংবাদিক কাজী মিরাজ। গতকাল আসরের আগে মাহফিলে বয়ান করার সময় চরমোনাইর পীর …….. ইসলামে ফটো তোলা সম্পূর্ণ নাজায়িয বলে ফতওয়া দেন। এরপর পীরের অনুসারী মুজাহিদ বাহিনীর ক্যাডাররা ঐ ফটো সাংবাদিককে ধাওয়া করলে পীর-পুত্রদের সহযোগিতায় তিনি রক্ষা পান। এখন কথা হলো, যে ফটো সাংবাদিকরা তার চরমোনাইতে গিয়ে প্রাণ হারাবার উপক্রম হন। সে ফটো সাংবাদিকরাই চরমোনাইর একটু দুরে বরিশালসহ সারাদেশের সব জায়গায় তথা ঢাকায় চর্মনাই পীরের কোল ঘেষে দাঁড়িয়ে ফটো তোলার সুযোগ পান। প্রচলিত ভাষায় একে ডাবল ষ্টান্ডার্ড, দ্বিমুখী নীতি সোজা বাংলায় ধোঁকা বা প্রতারণা বলা হলেও ইসলামের পরিভাষায় একে বলা যায় স্পষ্ট মুনাফিকী। চর্মনাই পীর বলেছে, “রাজনৈতিক কারণে সংবাদকর্মীদের অনুরোধে ছবি তুলতে বাধ্য হতে হয়।” প্রশ্ন হলো, তিনি তাহলে কোন রাজনীতি করেন? বা কোন রাজনৈতিক কর্মসূচী পালন করেন যা কিনা তাকে নাজায়িয কাজ করতে বাধ্য করে। যে রাজনীতি করতে গেলে হারামের দিকে ধাবিত হতে হয় তাতো ইসলামে জায়িয নয়। মূলতঃ ইসলামে কোন রাজনীতিই জায়িয নয়। ইসলামে রয়েছে, আল্লাহ পাক-এর নীতি, ইসলামের নীতি, খিলাফত আলা মিনহাজিন্ নুবুওয়ার নীতি। কিন্তু তা ছেড়ে তিনি যে নির্বাচনের নীতি করছেন, গণতন্ত্রের নীতি করছেন তার গ্যাঁড়াকলে পড়ে তাকে শুধু ছবি তোলাই নয় আরো হাজারো নাজায়িয কাজই তার দ্বারা হচ্ছে। মূলতঃ যার মূলই হারাম, তা তাকে শুধু ছবি তোলাই নয় আরো হাজারো হারাম তাকে আষ্টে-পৃষ্ঠে জড়িয়ে ধরবে এটাই স্বাভাবিক। কুরআন শরীফে আল্লাহ পাক ইরশাদ করেন, “হারাম থেকে হারামেরই জন্ম হয়।” মূলতঃ তিনি পীর ছাহেব’ দাবী করলেও এখনও নিজের নফসের খাছ মুরীদই হয়ে আছেন। অথচ তিনি ইসলামী শাসনতন্ত্র আন্দোলনের আমীর দাবী করেন। কিন্তু তার মত ব্যক্তির কাছে ইসলামী শাসনতন্ত্র কতটুকু নিরাপদ থাকতে পারে? যে কিনা সাধারণ সংবাদকর্মীর অনুরোধেই নাজায়িয কাজকে জায়িয করতে পারে। অতএব, ইসলামী শাসনতন্ত্র আন্দোলনের আমীর দাবী করার আগে এই ব্যক্তিরই আগে প্রকাশ্যে তওবা করা উচিত। প্রসঙ্গতঃ উল্লেখ্য যে, ইসলামী শাসনতন্ত্র আন্দোলনের আমীর দাবী করে, সামান্য সংবাদকর্মীর অনুরোধে সে যে কত বড় হারাম কাজ করেছে নিম্নোক্ত ঘটনা তারই প্রমাণ বহন করে। ডডড অর্ধ জাহানের খলীফা, আমীরুল মু’মিনীন বিজয়ীর বেশে বাইতুল মুকাদ্দাসে প্রবেশ করলেন। আনুষ্ঠানিকভাবে বাইতুল মুকাদ্দাসের চাবি তাঁর হাতে দেয়া হবে। তাঁর সম্মান করা হয়েছে বিশাল রাজকীয় ভোজ। কিন্তু সে মহা আড়ম্বরপূর্ণ শান-শওকাত ও জৌলুষপূর্ণ মজলিসে বসেও খাওয়া-দাওয়া করার শেষ পর্যায়ে তিনি দস্তরখানায় পড়ে থাকা টুকরো টুকরো রুটিগুলো উঠিয়ে উঠিয়ে খাচ্ছিলেন। পাশে একজন ফিস ফিস করে বললো, “হুযূর! এটা রাজ-রাজাদের দরবার। এখানে টুকে টুকে খাওয়া শোভনীয় নয়।” সাথে সাথে জজবায় আপ্লুত হলেন আমীরুল মু’মিনীন, ফারুকে আ’যম, অর্ধেক দুনিয়ার অধিপতি হযরত উমর বিন খত্তাব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু। জলদগম্ভীর কণ্ঠে হুঙ্কার ছাড়লেন, “আমি কি আমার রসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সুন্নত গুলো ছেড়ে দিব- এইসব আহম্মক, অবিশ্বাসী, কাফিরদের জন্য।” অথচ আল্লাহ পাক-এর হাবীব, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সুন্নত পালনের জন্যই আমরা সম্মানিত হয়েছি। বাইতুল মুক্কাদাস জয় করেছি, কামিয়াব হয়েছি। মূলতঃ এজন্যই তাদের দ্বারা ইসলাম প্রসারিত হয়েছে। খেলাফত কায়িম হয়েছে, বিকশিত হয়েছে। যেহেতু তারা ইসলাম পালন করেই, ইসলামী বিধিনিষেধ অনুসরণ করেই, ইসলামের গণ্ডির ভিতর থেকেই ইসলামের কাজ করেছেন। কোন নাজায়িয কাজ করা তো দূরের কথা বরং রোম-পারস্যের মত শান-শওকতপূর্ণ রাজ দরবারেও, আল্লাহ পাক-এর হাবীব, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর একটা আদনা সুন্নতকেও তাঁরা ছাড়তেন না। এখন সেই খেলাফত প্রতিষ্ঠারই দাবীদার, সেই ইসলামের শাসনতন্ত্র আন্দোলনের আমীর দাবীদার সামান্য সংবাদকর্মীর অনুরোধেই স্ব-স্বীকৃত শক্ত নাজায়িয কাজ প্রকাশ্যে অবলীলাক্রমে করে বসেন। এবং সংবাদকর্মীর অনুরোধে স্ব-স্বীকৃত নাজায়িয কাজ- ছবি তুলছেন বলে প্রকাশ্যে বিবৃতিও দেন। হায়! আখিরী জামানা। কত বড় মিথ্যা বাহানা। কত মিথ্যা প্রচারণা। এই ধরনের লোকই যখন ইসলামী খেলাফত প্রতিষ্ঠার নেতৃত্ব দাবী করে, ইসলামী শাসনতন্ত্র আন্দোলনের আমীর দাবী করে তখন তা কত বড় ধোকা হয়, কত বড় প্রতারণায় পরিণত হয়, কত বড় মিথ্যায় পর্যবসিত হয় তা ভাবতেও আশ্চর্য লাগে। এজন্যই হাদীছ শরীফে ইরশাদ হয়েছে, “আখিরী জামানায় এমন কিছু মিথ্যাবাদী দাজ্জাল বের হবে তারা এমন সব কথা বলবে যা তোমরা শোননি, তোমাদের বাপ-দাদা চৌদ্দপুরুষ শোনেনি। তোমরা তাদের কাছে যেয়োনা। তাদেরকেও তোমাদের কাছে আসতে দিয়োনা। তবে তারা তোমাদের গোমরাহ করতে পারবে না।” (মিশকাত শরীফ)
-মুহম্মদ মাহবুবুর রহমান, ঢাকা।
বৃটিশ গুপ্তচরের স্বীকারোক্তি এবং ওহাবী মতবাদের নেপথ্যে বৃটিশ ভূমিকা-১১