সম্পাদকীয়

সংখ্যা: ১৫০তম সংখ্যা | বিভাগ:

সময়ের মালিক, আল্লাহ্পাকের জন্যই সব প্রশংসা। সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন,খতামুন্নাবীয়্যীন, হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর জন্য সকল সালাত সালাম।

সময়ের পরিক্রমায় মুহাররমের আবর্তনে আরেকটি নতুন হিজরী সন আমাদের মাঝে উপস্থিত।

সৃষ্টির শুরু থেকেই গণনায় মাসের সংখ্যা বারটি বলে, রব তায়ালা নির্ধারিত করে দিয়েছেন। এবং এক্ষেত্রে মুহাররামুল হারাম হিজরী সালের প্রথম মাস বা পয়লা মুহাররম নতূন হিজরী সালের প্রথম দিন। তাই মুহররমের আগমন মুসলমানদের জন্য যেমন বিগত এক বৎসরের জিন্দেগীর মূল্যায়নের অবকাশ রাথে তেমনি প্রেরণা দেয় পরিশুদ্ধ চেতনায় নতূর সালে পদার্পণ করার দীপ্ত অভিপ্রায়ের ও নব চেতনার।

          উল্লেখ্য পবিত্র আশুরার দিবসে সবচেয়ে হৃদয়বিদারক, মর্মস্পর্শী ও ব্যাথাহত বিষয়টি হলো- হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর কলজের টুকরা, নয়নের তারা, প্রাণপ্রিয় দৌহিত্র, হযরত ইমাম হুসাইন (রাঃ)-এর শাহাদাত বরণ। এ শাহাদাতের ঘটনা একদিকে যেমন আমাদের ভারাক্রান্ত করে, ন্যায়ের পথে অটল থাকার ও ত্যাগের মহান আদর্শে উজ্জীবিত করে, তেমনি অপরদিকে কিছু কিছু ফায়দালোভী, বিভ্রান্ত বা জাহেল সম্প্রদায়ের বিকৃত ব্যাখ্যা যারপর নাই বিস্মিত, আহত ও ক্ষুব্ধ করে তোলে। যারা চরম জেহালতের সাথে এই মন্তব্য করে যে, “ইমাম হুসাইন রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু গণতন্ত্রের জন্য শাহাদাত বরণ করেছেন।” (নাউযুবিল্লাহ্)

          বলার অপেক্ষা রাখেনা যে, গণতন্ত্রে জনগণই সকল সার্বভৌাম ক্ষমতার মালিক। যদিও তথাকথিত ইসলামিক দলগুলো প্রকাশ্যে দাবী করে যে, তারা পাশ্চাত্য গণতন্ত্র এবং ‘সকল ক্ষমতার মালিক জনগণ,’ এ কথায় তারা বিশ্বাসী নয়। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে এই বিশ্বাসই তারা তাদের কাজে প্রতিফলিত করে। যার প্রমাণ হচ্ছে- তাদের নির্বাচনে অংশ গ্রহণ। নির্বাচনী প্রক্রিয়ায়, জনগণকে ভোট দানের মালিক করে সে সার্বভৌম ক্ষমতারই অধিকারী করে দেয়া হয়। এ ক্ষমতা অবিভাজ্য যা প্রয়োগে কোন দায়বদ্ধতা তথা জবাবদিহিতা থাকেনা। আর স্বেচ্ছাচারী এই ক্ষমতা প্রয়োগের ফলেই গণতন্ত্রে কোন সরকার গঠিত হয় বা পতিত হয়। এবং এভাবেই গণতন্ত্রে জনগণ, তাদের সার্বভৌম ক্ষমতার প্রয়োগ ঘটিয়ে থাকে। অতএব স্বরণীয়, নির্বাচনে অংশগ্রহণই হচ্ছে- “জনগণই সকল ক্ষমতার উৎস”- এ বিশ্বাসে স্বীকৃতি জ্ঞাপন। ইসলামের দৃষ্টিতে যা কুফরী এবং ঈমান হারাবার প্রত্যক্ষ কারণ।

          বলাবাহুল্য আল বাইয়্যিনাতে এ পর্যন্ত বহুবার গণতন্ত্র নাজায়েয, নির্বাচন নাজায়েয, ভোট দেয়া নাজায়েয, হাদীস শরীফের বরাত সাপেক্ষে প্রার্থী হওয়া নাজায়েয ইত্যাদি বিষয়ে কোরআন-সুন্নাহ্র দলীল সমৃদ্ধ সারগর্ভ আলোচনা করা হয়েছে। এবং তা থেকে বিরত থাকার জন্য বিশেষ করে ইসলামের দোহাই দানকারী দলগুলোকে বার বার আহ্বান জানানো হয়েছে। কিন্তু কোরআন শরীফ-এর সেই আহবানের দিকে তারা মনোযোগী হয়নি।

তাদের সম্পর্কে আল্লাহ্ পাক বলেন, “তার চেয়ে অধিক জালেম আর কে আছে? যাকে তার পালন কর্তার কালাম দ্বারা বোঝানো হয়, অতঃপর সে তা থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়।” (সূরা কাহফ/৫৭)

আল্লাহ্ পাক অন্যত্র বলেন, “আল্লাহ্র পথে চলতে অস্বীকার যারা করেছে, তাদের অবস্থা ঠিক এরূপ যেমন রাখাল পশুগুলোকে ডাকে কিন্তু তারা ঐ ডাকের আওয়াজ ব্যতীত আর কিছুই শুনতে পারেনা, এরা বধির, বোবা, অন্ধ। এজন্য কোন কথা এরা বুঝতে পারেনা।” (সূরা বাক্বারা/১৭১)

প্রসঙ্গতঃ উল্লেখ্য অধুনা ইসলামের নামে গণতন্ত্রীরা এ ধারণা প্রবর্তনে প্রচেষ্টা যে, ইসলামের দোহাই দিয়ে নির্বাচন অস্বীকার করার অর্থ হল জঙ্গীবাদ সমর্থন করা। বিষয়টি যুগপৎ জেহালতি ও প্রতারণা ছাড়া কিছুই নয়। বরং সত্য কথা এই যে, ইসলাম যেখানে নির্বাচন নামক ফাসাদই সমর্থন করেনা সেখানে নির্বাচারে হত্যা, বোমা হামলা, মৌলবাদ তথা জঙ্গীবাদ সমর্থন করে কি করে?

তথাকথিত “ইসলামী দলের নির্বাচনী প্রচারণা” যে কতবড় প্রতারণা তা বোঝার জন্য সামান্য ফিকিরই যথেষ্ট। তারা যদি নির্বাচনে সংখ্যাগরিষ্ঠ আসন লাভ ও করে তবে তাদেরকে প্রথমে বাংলাদেশের প্রচলিত সংবিধানকে সমুন্নত রাখার পক্ষে শপথ নিতে হবে। সেই শপথ নেয়ার পর তা ভঙ্গ করে তথাকথিত ইসলামী খিলাফতের পক্ষে এবং প্রচলিত সংবিধানের বিপক্ষে তারা কাজ করবেন। কিন্তু সৃষ্টি যেমন সৃষ্টিকর্তাকে ধ্বংস করতে পারেনা তেমনি উল্লেখ্য সংবিধানের সৃষ্টি হল পার্লামেন্ট। কাজেই গণতান্ত্রিক ধারনায় পার্লামেন্ট কখনো সংবিধানকে ধ্বংস করতে পারেনা। সে কারণে প্রচলিত গণতন্ত্রের নির্বাচনে কখনই ইসলাম প্রতিষ্ঠা সম্ভব হয়না। যেমনটি সম্ভব হয়নি তুরষ্কে আলজেরিয়ায়।

অতএব, যারা প্রচলিত গণতান্ত্রিক নির্বাচনে সংখ্যাগরিষ্ঠ আসন পেয়ে পরে প্রচলিত গণতন্ত্র মিটিয়ে দিতে চায় তারা স্বঘোষিত, চিহ্নিত, সাক্ষাৎ মুনাফিক তথা উলামায়ে ‘ছু’ বা ঘৃণ্য ধর্মব্যবসায়ী। মুনাফিক তথা ধর্মব্যবসায়ী বলেই এরা ইসলামের নামে হরতাল, লংমার্চ, মৌলবাদ, ব্লাসফেমী, ছবি তোলা, বেপর্দা হওয়া, নারী নেতৃত্ব সমর্থন, জোট সরকারের যবতীয় অনৈসলামী কর্মসূচী সমর্থন ইত্যাদি হারামের লিপ্ত রয়েছে। কুরআন শরীফে ইরশাদ হয়েছে, “হারাম থেকে হারামেরই জন্ম হয়।” কাজেই তাদের দ্বারা ক্বিয়ামত পর্যন্ত ইসলামী খিলাফত কায়েম সম্ভব নয়।

অতএব, আজ নতুন হিজরী সনের শুরুতে এসব মতলববাজ, ব্যবসায়ী, বাঁচাল, মুনাফিক এবং জাহেল, বিদ্য়াতী ও গোমরাহ্ ওলামায়ে ‘ছু’দের সম্পর্কে আমাদের সাবধান ও সচেতন হতে হবে। তাদেরকে প্রতিরোধ করার দীপ্ত শপথ নিতে হবে এবং ওলামায়ে হক্কানী-রব্বানী তথা মুজাদ্দিদে আযমের স্বতঃস্ফূর্ত অনুসারী হতে হবে। তাতে করেই আল্লাহ্ পাক-এর রহ্মতে আমাদের কামিয়াবীর পথ প্রশস্ত হবে ইন্শাআল্লাহ্। (আমীন)

সম্পাদকীয়

 সম্পাদকীয়

সম্পাদকীয়

সম্পাদকীয়

সম্পাদকীয়