সব প্রশংসা মহান রব্বুল আলামীনের জন্য। যিনি রমযান মাসের মালিক। রমযান রহমত, মাগফিরাত ও নাজাতের মাস। সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাস্সাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর প্রতি অফুরন্ত দুরূদ ও সালাম। রমযান শরীফের খুৎবায় যিনি বলেছেন, ‘হে মানবজাতি! একটি মহান ও বরকতপূর্ণ মাস তোমাদের উপর ছায়া বিস্তার করার জন্য হাজির হয়েছে।’ চান্দ্র মাসের পরিক্রমায় রমযান শরীফ আবারও আমাদের মাঝে সমাগত। রোজা ইসলামের পাঁচ ভিত্তির একটি। অর্থাৎ রোজার মধ্যে রয়েছে ইসলামের বুনিয়াদী শিক্ষা। আল্লাহ পাক ইরশাদ ফরমান, “হে ঈমানদারগণ! তোমাদের উপর রোজা ফরজ করা হয়েছে। যেমন তোমাদের পূর্ববর্তীদের উপর ফরজ করা হয়েছিলো। সন্দেহ নেই যে, তোমরা মুত্তাক্বী হতে পারবে।” প্রতিভাত হয়, রোজার মূল প্রতিপাদ্য বিষয় তাক্বওয়া। যারা কাফির, রোজার শিক্ষা যাদের মাঝে নেই তারা চতুস্পদ জন্তুর মত। আল্লাহ পাক বলেন, “যারা অবিশ্বাসী তারা ভোগ-বিলাস ও পানাহারে ডুবে আছে। যেমন চতুস্পদ জন্তু পানাহারে লিপ্ত থাকে। জাহান্নামই তাদের শেষ মঞ্জিল।” মূলত: রোজার শিক্ষা-সংযম ও তাক্বওয়ার বোধ না থাকায় কাফিরদের প্রবৃত্তি সব সময়ই থাকে পাশবিক। একটু সুযোগ পেলেই তা হিংস্ররূপে প্রকাশ পায়। অতি সম্প্রতি হ্যারিকেন ক্যাটারিনায়ও দেখা গেলো একই চিত্র। হ্যারিকেনের আগাম পূর্বাভাস জানা সত্ত্বেও বুশ প্রশাসন সেখানে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেয়নি অধিবাসীরা কৃষ্ণাঙ্গ বা দরিদ্র বলে। এমনকি ক্যাটারিনা যখন আঘাত হানছে বুশ তখন গীটার বাজাচ্ছেন। হ্যারিকেন ক্যাটারিনায় তথাকথিত সভ্যতার আড়ালে আমেরিকানদের পৈশাচিক প্রবণতা উন্মুক্ত হয়ে পড়েছে। ক্যাটারিনার শিকার ৬৮ বছর বয়সী ইযাফ ব্লার্ক বলেন, ‘আমরা এখানে পশুর মত বেঁচে থাকি।’ কেউ কেউ পানিবেষ্টিত শহরকে নরকের ভেনিস বলছেন। এর পিছনে মূল কারণ হলো এত বিপদের মাঝেও মানুষ হিসেবে মানুষের যে ন্যূনতম সহমর্মিতা বাঞ্ছনীয় ছিলো তার উল্টো জঘন্য পৈশাচিক নির্মমতা দেখিয়েছে, তথাকথিত আমেরিকান সভ্যতার সন্তানরা। যে সুযোগ পেয়েছে সেই মহিলাদের উপর হায়েনার মত ঝাঁপিয়ে পড়ছে। কোন দুর্গত মহিলার হেল্প হেল্প আর্তচিৎকারে উদ্ধারকারী দল কাছে গিয়ে তাকে বিবস্ত্র হতে বলেছে, উপহাস করেছে। এহেন নিপীড়ন থেকে শিশুরাও রেহাই পায়নি। সমানে চলেছে লুটতারাজ। আশ্রয় শিবিরের অবস্থাও ছিল খুবই সঙ্গীন। বিবিসির প্রতিবেদককে ডানিয়েল এডওয়ার্ড (৪৭) কান্নাজড়িত কণ্ঠে, হুইল চেয়ারে বসা অর্ধমৃতা এক বৃদ্ধার দিকে আঙ্গুল তুলে বলেন, ‘এর সঙ্গে যে আচরণ করা হয়েছে তা আমি আমার কুকুরের সঙ্গেও করিনা।’ আজ দুর্গত মার্কিনীরা মর্মে মর্মে বুঝতে পারছে যে, সভ্যতা আর পরাশক্তির খোলসের অন্তরালে তারা কতটুকু পশুবৎ হয়ে আছে। পর্দা পালন, গান-বাজনা নিষিদ্ধ ইত্যাদি ইসলামী মূল্যবোধের প্রচার-প্রসারে যারা মধ্যযুগের দিকে প্রত্যাবর্তন বলে নাক সিঁটকান তারা আসলে কোন্ অগ্রগামী বলয়ে অবস্থান করছেন, ক্যাটারিনার ঘটনায় তারা তা মূল্যায়ন করতে পারেন। ক্যাটারিনার এসব বিষয়ের বিপরীতে দ্বিতীয় খলীফা হযরত উমর ফারুক রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু-এর একটি স্বগোতক্তি মন্তব্য। তিনি বলেন, “ফোরাতের তীরে একটি কুকুরও যদি না খেয়ে থাকে তবে আমি হযরত উমর বিন খত্তাব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুকে তার জবাব দিতে হবে।” (সুবহানাল্লাহ) উল্লেখ্য, এর পিছনে কারণ যে, রোজার প্রতি তারা যতœশীল ছিলেন। যথাযথ রোজা পালনের পরও রোজার হক্ব ঠিকভাবে আদায় হয়েছে কিনা ঈদের দিনে সে ভয়ে কেঁদে কেঁদে বুক ভাসিয়েছেন। রোজার শিক্ষা-তাক্বওয়া তারা পূর্ণরূপে হাছিল করেছিলেন। আর সে কারণেই শুধু মানুষই নয় পশুর প্রতিও পূর্ণ মমত্বাবোধ তাদের মাঝে জাগরিত ছিলো। মূলত: রোজার শিক্ষা শুধু রমযান মাসেই সীমাবদ্ধ নয়। বরং এর নছীহত আমাদের গোটা ব্যক্তি তথা জাতীয় জীবনকেই সুপথে চালিত করে। সকল প্রকার বাদানুবাদ, ফিৎনা-ফাসাদ থেকে হেফাজতে থাকা রোজার আবেদন। হাদীছ শরীফে ইরশাদ হয়েছে, “রোজাবস্থায় তোমাদের কেউ যেন অশালীন ও অর্থহীন কথাবার্তায় লিপ্ত না হয়। কেউ যদি বাদানুবাদে অথবা ফাসাদে লিপ্ত হতে চায় তবে সে যেন এ কথা বলে দেয় যে, আমি রোজাদার।” (বুখারী)“ উল্লেখ্য মৌখিক ফিৎনা থেকে বিরত থাকাই যেখানে রোজার বিশেষ তাকীদ সেখানে আহলে হাদীছ নামধারী লা-মাযহাবীরা আজ বোমা হামলার দ্বারা সারাদেশে কত গভীর ফিৎনা তৈরী করেছে তা বলার অপেক্ষা রাখে না। এদের সাথে ধর্মব্যবসায়ী তথাকথিত ইসলামী দলগুলোরও খাছ সম্পর্ক দিন দিন উন্মোচিত হচ্ছে। মূলত: রসুন কোয়া কোয়া হলেও গোড়া যেমন এক তেমনি তথাকথিত ইসলামী দলগুলো আলাদা আলাদা নামে হলেও এদের চিন্তা, চেতনা ও উদ্দেশ্য একই। এদের আসল উদ্দেশ্য ইসলাম নয়। বরং ইসলামের নামে ক্ষমতা দখল। সেক্ষেত্রে ইসলামী আদর্শের খেলাফ যথা ছবি, বেপর্দা, নারী নেতৃত্ব মানা, লংমার্চ, হরতাল, মৌলবাদ, ব্লাসফেমী, ইসলামের নামে গণতন্ত্র, ভোট, নির্বাচনে তথা জঙ্গীবাদ, সন্ত্রাসবাদ বা বোমাবাজিতেও এরা অগ্রগামী। ইহুদী-নাছারার আদর্শে তথা হারাম পথে পরিচালিত এসব তথাকথিত ইসলামী দলের আন্দোলন মূলত: ঐরূপই হয়, যেমনটি হয় সারাদিন রোযা রেখে হারাম মাল দ্বারা সেহ্রী ও ইফতারী করলে। অথবা সুব্হে সাদিকের পরে খেয়ে, এশার সময় ইফতার করার মত খেয়াল-খুশী অনুযায়ী চললে। যেমন হাদীছ শরীফে বলা হয়েছে, “অনেক রোযা পালনকারী এমন, যাদের ক্ষুধার্ত ও পিপাসার্ত থাকাই সার হয়। তদ্রুপ অনেক ইবাদতকারী এরূপ যাদের রাত কাটানোই সার হয়।” (বুখারী, আবু দাউদ, তিরমিযী) স্মর্তব্য, রোযার মূল শিক্ষা হচ্ছে- তাক্বওয়া। তাক্বওয়া তাছাউফের সাথে অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত। যা হক্ব ওলী আল্লাহ্গণের ছোহ্বতের দ্বারাই অর্জন সম্ভব। মহান আল্লাহ্ পাক আমাদের সকলকে মুজাদ্দিদে আ’যম, হাবীবে আ’যম, ইমামে আ’যম, আওলাদে রসূল, রাজারবাগ শরীফের হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা মুদ্দা জিল্লুহুল আলী-এর ছোহ্বতের মাধ্যমে রোজার নির্যাস, তাক্বওয়া তথা তাছাউফ হাছিল করার তৌফিক দান করুন। (আমীন)