সম্পাদকীয়

সংখ্যা: ১৪১তম সংখ্যা | বিভাগ:

আলীমুল হাকীম আল্লাহ্ পাক-এর জন্যই সমস্ত প্রশংসা। তাঁর পেয়ারা হাবীব সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর প্রতি বেশুমার দরূদ ও সালাম।  আল্লাহ পাক তাঁর ইবাদত-বন্দেগীর জন্য মানুষকে যমীনে প্রেরণ করেছেন। তবে আক্ষরিক অর্থে শুধুই ইবাদত-বন্দেগী নয়। শুধুই ইবাদত বন্দেগী হলে ফেরেশ্তারাই যথেষ্ট ছিল। সে প্রেক্ষিতে খোদা তায়ালার মহব্বত মারিফত হাছীলই জীন-ইনসান প্রেরণের মূল উদ্দেশ্য বলে সমস্ত ইমাম-মুজতাহিদ, আউলিয়ায়ে কিরাম একমত। আশরাফুল মাখলুকাত হিসেবে মানুষের প্রতি খোদা পাক-এর বিশেষ দানটি হলো তার অন্তর, তার দিল বা তার ক্বল্ব। যা মূলতঃ খোদা পাক-এর মহব্বত মারিফত সন্নিবেশ করার স্থল। “মুমেনের ক্বল্ব আল্লাহ্ পাক-এর আরশ” হাদীস শরীফের এই অভিব্যক্তি তারই প্রমাণ। মাখলুক হিসেবে মহান মালিকের জাত পাক-এর পরিচয় স্বীয় ক্বল্বে অনুধাবন, তাঁর সিফত সমূহের সম্যক জ্ঞান আহরণই মানব ক্বল্বের কাঙ্খিত কামিয়াবী, বাঞ্ছিত বিকাশ। এ ধরনের বিকশিত, নূরানী ক্বল্ব সম্পন্ন ব্যক্তিই আল্লাহ্ পাক-এর একান্ত অনুগত। তাঁরাই আরিফ। তাঁরাই আলিম। তাদের শানেই ইরশাদ হয়েছে, “সাবধান! আলিমরাই আল্লাহ্ পাককে সবচেয়ে বেশী ভয় করে।” যোগ্যতার মাপকাঠিতে তারাই উলীল আমর। উল্লেখ্য পৃথিবীর ইতিহাসে সমস্ত উলিল আমরগণের মাঝে গাউসুল আযম, মাহ্বুবে সুবহানী, কুতুবে রব্বানী, বড় পীর হযরত শায়খ সাইয়্যিদ মুহিউদ্দীন মুহম্মদ আব্দুল কাদির জিলানী রহমতুল্লাহি আলাইহি এক বেমেছাল দৃষ্টান্ত। স্বীয় চলার পথে শয়তানের হাজারো ওসওয়াসা,  যাঁকে চুল পরিমাণ বিচ্যুত করতে হয়েছে ব্যর্থ। অথচ শয়তানের নিজস্ব স্বীকারোক্তিতেই বিবৃত হয়েছে যে, সে তার ওসওয়াসার ফাঁদে ফেলে শত শত আলেম দরবেশকে বিভ্রান্ত করেছে। হালাল ছুরতে হারাম মত-পথে পরিচালিত করে তাদেরকে যেমন গোমরাহ্ করেছে তেমনি তাদের হাজার হাজার অনুসারীদেরও একইভাবে পথহারা করেছে।  আমরা মনে করি বর্ণিত বিষয়টি বর্তমান প্রেক্ষাপটে বিশেষ পর্যালোচনাযোগ্য। যেহেতু আমাদের তথাকথিত উলামাদের কার্যকলাপে প্রমাণিত হয় যে, তারা শয়তানের উল্লিখিত ফাঁদটিতেই কানামাছির ন্যায় ঘুরপাক খাচ্ছে। যে কারণে তারা ইহুদী-নাছারা, নাস্তিক ইত্যাদির বিরোধিতা করতে গিয়ে করছে, তাদেরই নাজায়িয ও হারাম পদ্ধতির অনুশীলন। ছবি তোলা, বেপর্দা হওয়া, গণতন্ত্র, নির্বাচন, হরতাল, ব্লাসফেমী, মৌলবাদ ইত্যাদি সেসবেরই প্রমাণ। উল্লেখ্য, রবিউছ ছানী মাসের এগার তারিখ সাইয়্যিদুল আউলিয়া, ইমামুল আয়িম্মা, হযরত বড় পীর সাহেব রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর ওফাত দিবস। ফাতেহায়ে ইয়াজদহম নামে এ দিনটি সকলের নিকট বিশেষভাবে সম্মানিত। স্বভাবতঃই এ দিনের তাৎপর্য হাছিলে আমাদেরকে অনুপ্রাণিত হতে হবে তা হল ক্বল্ব পরিশুদ্ধকরণ তথা ইল্মে তাসাউফ অর্জনে।  বলাবাহুল্য আজ মুসলিম সমাজের আমলের যে করুন অবস্থা তা কেবল হতাশাজনকই নয় বরং গভীর শঙ্কামূলক। গান-বাজনা, সিনেমা, টি. ভি, ভি. সি. আরসহ হাজারো অশ্লীল আর অনৈসলামিক কাজই বর্তমানে মানুষের মনের মূল খোরাক হিসেবে গণ্য হচ্ছে। এসব থেকে ফিরে আসার জন্য সাধারণ উলামাদের পুনঃ পুনঃ আহবান অরণ্যে রোদনে পরিণত হচ্ছে। মূলতঃ ক্বল্ব সংশোধন তথা ইল্মে তাসাউফ অর্জনেই রয়েছে এর সমাধান। প্রসঙ্গতঃ ক্বল্বী যিকিরই এ ইলমের প্রথম সোপান। ক্বলব সহ আরো নয় লতিফা যথা, রূহ, ছের, খফি, আখফা, নফস, আব, আতেশ, খাক, বাদ, মোট দশটি লতিফায়ই যখন যিকির জারী হয়, তখন মাথার প্রতিটা চুল থেকে আরম্ভ করে শরীরের সর্বাংশে আল্লাহ  আল্লাহ যিকির জারী হয়ে যায়। যা সুলতানুল আযকার যিকিরের প্রথম ধাপ। অভিজ্ঞতায় দেখা গেছে, মানুষের পাপ তার পরিবেশের সাথে সম্পৃক্ত। বলাবাহুল্য খাহেশাত আর নফছানিয়াত সম্বলিত প্রবৃত্তি প্রচলিত পাপাচারেই লিপ্ত হতে সদাই উন্মুখ থাকে। কিন্তু ক্বল্বী জিকিরের মাধ্যমে নফসের এই কুপ্রবৃত্তির আমূল পরিবর্তন সম্ভব। জবরদস্তিমুলকভাবে নয়, স্বতঃস্ফুর্তরূপেই নফসের ইসলাহ্ তথা এতমিনান লাভ  সম্ভব। ইরশাদ হয়েছে, “সাবধান আল্লাহ্ পাক-এর যিকির দ্বারাই দিল এতমিনান লাভ করে।” উল্লেখ্য এ সমাধানটি কেবল আম মুসলমানদের জন্যই নয় বরং মাওলানা, মুফ্তী তথা শাইখুল হাদীছদের জন্যও আরো গভীরভাবে প্রযোজ্য। কারণ ক্বল্বী জারী হওয়া ব্যতিরেকে শুধু ইল্ম দ্বারা কেউ ফায়দা হাছিল করতে পারে না। হাদীছ শরীফে ইরশাদ হয়েছে ক্বিয়ামতের দিন সর্বাপেক্ষা কঠিন শাস্তি ভোগ করবে ঐ আলিম তার ইল্ম দ্বারা ফায়দা হাছিল করতে পারে নাই।” মূলতঃ এরা নিজেদের হিদায়েতের ব্যাপারেই পুরো অযোগ্য। এদের নেতৃত্বে, এদের কর্মসুচীতে উম্মাহর গৌরব পুনরুদ্ধারের প্রচেষ্টা নিছক বাতুলতা মাত্র। এরা শাইখুল হাদীস, মাহিউদ্দীন, মাওলানা, খতীব, পীর আমীর, মুফতি ইত্যাদির আবরণে থাকলেও আসলে এদের অন্তরে ক্বল্বী যিকির আদৌ জারী নেই।  আল্লাহ পাক ইরশাদ করেন, “তোমরা ঐ ব্যক্তির অনুসরণ করো না যার কাজগুলো শরীয়তের খেলাফ হওয়ায়, নফসের অনুগামী থাকায়, তার ক্বল্ব যিকির থেকে গাফিল রয়েছে।” (সূরা কাহাফ/২৮) স্মর্তব্য কেবল ব্যক্তিগত ইসলাহই নয়, আল্লাহ পাক-এর মুহব্বত-মা’রিফত লাভ সহ তাঁর সন্তুষ্টির জন্য খিলাফত আলা মিনহাজিন্ নুবুওওয়াহর কাজ করার ক্ষেত্রেও ক্বলবী যিকিরের সমৃদ্ধতাই মূল আঞ্জাম।  মহান আল্লাহ পাক আমাদেরকে যামানার লক্ষ্যস্থল ওলীআল্লাহ তথা মুজাদ্দিদে আ’যমের নেক ছোহবতের মাধ্যমে খুব সহজেই ক্বল্বী যিকির তথা হাক্বীক্বী সুলতানুল আযকার সহ খেলাফত আলা মিনহাজিন্ নুবুওওয়ার নিয়ামত নছীব করুন। (আমীন)

সম্পাদকীয় 

সম্পাদকীয়

সম্পাদকীয়

 সম্পাদকীয়

সম্পাদকীয়