সব প্রশংসা আল্লাহ পাক-এর জন্য। যিনি পবিত্র মহামহিম। সর্বোত্তম আখলাকের অধিকারী আখিরী রসূল, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর প্রতি অনন্তকালের জন্য অফুরন্ত ছলাত ও সালাম। যিনি স্বীয় উম্মতকে ফিৎনা সম্পর্কে নসীহত করেছেন। আল্লাহ পাক যুগে যুগে নবী-রসূল ও আউলিয়ায়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহি প্রেরণ করে দুনিয়াকে ফিৎনা মুক্ত করেন। কিন্তু মানুষ কালক্রমে বার বার দুনিয়াতে ফিৎনা-ফাসাদের অবতারণা করে। আল্লাহ পাক বলেন, “পৃথিবীকে কুসংস্কার মুক্ত ও ঠিক করার পর তাতে ফিৎনা তৈরী করো না।” উল্লেখ্য, ফিৎনা তৈরী করা আল্লাহ পাক-এর কাছে খুবই অপছন্দের বিষয়। আল্লাহ পাক বলেন, “ফিৎনা-ফাসাদ করা, দাঙ্গা-হাঙ্গামা সৃষ্টি করা আল্লাহ পাক-এর কাছে হত্যার চেয়েও বেশী অপরাধ।” (সূরা বাক্বারা) “পৃথিবীতে ফাসাদ সৃষ্টি করতে প্রয়াসী হয়োনা। নিশ্চয়ই আল্লাহ পাক ফিৎনা-ফাসাদ সৃষ্টি কারীকে পছন্দ করেননা।” (সূরা কাসাস) হালে এক নতুন ফিৎনা ভয়ঙ্কররূপে দেখা দিয়েছে। এটি ইসলামের নামে মৌলবাদী, জঙ্গীবাদী, সন্ত্রাসবাদী ফিৎনা। এরা বিভিন্ন স্থানে এমনকি মাজার শরীফেও বোমা-গ্রেনেড হামলা করে দেশ, জাতি ও ধর্মের ক্ষতি সাধনে লিপ্ত রয়েছে। এরা দেশকে ব্যর্থ বা অকার্যকর প্রতিপন্ন করতে চায়। দেশকে সাম্রাজ্যবাদী ইহুদী-খ্রীষ্টানদের দখলের সুযোগ করে দিতে চায়। ইরাক-আফগানিস্তান দখলের পর শুধু বাংলাদেশ নয় বিশ্বের অপরাপর মুসলিম দেশগুলোর উপরও সাম্রাজ্যবাদীদের লোলুপ দৃষ্টি পড়েছে। মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা এন.আই.সি এবং সি.আই.এ’র মূল্যায়ণ রিপোর্টে বলা হয়েছে, “পাকিস্তান ২০১৫ সালের মধ্যে একটি ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত হবে। তখন পাকিস্তানে গৃহযুদ্ধ, রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ, দ্বন্দ্ব ও লড়াই জমে উঠবে।” মূলতঃ বাংলাদেশে সাম্রাজ্যবাদী ইহুদী-খ্রীষ্টানরা এ অবস্থাটা প্রায় এখনই তৈরী করতে সক্ষম হয়েছে। বলতে গেলে বাংলাদেশকে তারা এখনই অকার্যকর বা ব্যর্থ রাষ্ট্র ঘোষণা করতে উদ্যত। রাষ্ট্র বিজ্ঞানের ভাষায় রাষ্ট্র ব্যর্থ বা অকার্যকর হলে তা সহজেই জাতিসংঘের অধীন বা বিদেশী শক্তির করায়ত্ত হতে পারে। স্মর্তব্য, হাদীছ শরীফে ইরশাদ হয়েছে, “দেশকে মুহব্বত করা ঈমানের অঙ্গ।” দেশের স্বাধীনতা রক্ষা করা ফরয। সেক্ষেত্রে দেখা যায়, যাদের ঈমানে ত্রুটি রয়েছে, যাদের আক্বীদা শুদ্ধ নয় অথবা যারা ঈমানদারই নয় তারাই দেশের স্বাধীনতা বিরোধী হয় অথবা দেশ বিক্রির ষড়যন্ত্রে লিপ্ত থাকে। ৭১-এ, এ ধারারই নামধারী ইসলামী দল দেশের স্বাধীনতা চায়নি। এখনও এদের সমগোত্রীয় মাযহাব বিদ্বেষী- লা-মাযহাবী, সালাফী নামধারী আহলে হাদীছ তথা খারিজী, ওহাবীগোষ্ঠীই দেশকে অকার্যকর বা ব্যর্থ প্রতিপন্ন করতে প্রচেষ্ট। দেশে বর্তমান জঙ্গীবাদ, সন্ত্রাসবাদ বিস্তারের নেপথ্য নায়ক সিদ্দিকুল ইসলাম তথা উমর আলী ওরফে বাংলা সন্ত্রাসী, আব্দুর রহমান, ডা. গালিব এরা সবাই স্বতঃসিদ্ধ ইসলামী মাযহাব বা আহলে সুন্নত ওয়াল জামায়াত বিরোধী- লা-মাযহাবী, সালাফী তথা নামধারী আহলে হাদীছপন্থী। এরা চরম-পরম ওলীআল্লাহ বিদ্বেষী। প্রতিভাত হয়, হযরত শাহজালাল রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর মাযার শরীফে এরাই বোমা হামলাকারী। মূলতঃ এরা যেহেতু মাযহাব মানে না তাই কুরআন-সুন্নাহ্র সমন্বিত ইল্ম এদের নেই। এরা আয়াত শরীফের ছহীহ্ অর্থ গ্রহণে অক্ষম হয়ে মনগড়াভাবে চলে। এরা তাই এদের নিজেদেরকে ছাড়া অন্য মুসলমানকেও কাফির মনে করে। তাদেরকেও হত্যা করে, মাল-সম্পদ লুটপাট করে। মুসলমান মেয়েদের সম্ভ্রম কেড়ে নেয়া হালাল মনে করে। সরকারী প্রেসনোটেও বাংলা সন্ত্রাসী তথা আহলে হাদীছ নামধারী, মাযহাব বিদ্বেষী লা-মাযহাবীদের এহেন তৎপরতার কথা বলা হয়েছে। অথচ ইসলাম কাফিরদের উপরেও নির্বিচারে হত্যা সমর্থন করেনা। আল্লাহ পাক ইরশাদ ফরমান, “আমি বণী ইস্রাঈলের প্রতি লিখে দিয়েছি, যে কেউ প্রাণের বিনিময়ে প্রাণ অথবা পৃথিবীতে অনর্থ সৃষ্টিকারী ছাড়া কাউকে হত্যা করে, এরকম লোক সে যেন সব মানুষকেই হত্যা করে।” (সূরা মায়েদা/৩২) “কারো প্রতি বাড়াবাড়ি করোনা। নিশ্চয়ই আল্লাহ পাক সীমালঙ্ঘনকারীকে পছন্দ করেন না।” (সূরা বাক্বারা) “ধর্মের ব্যাপারে যারা তোমাদের বিরুদ্ধে লড়াই করেনি এবং তোমাদের দেশ থেকে বার করেনি তাদের প্রতি সদাচারণ ও ইনসাফ করতে আল্লাহ পাক তোমাদের নিষেধ করেননা।” (সূরা মুমতাহিনা) হাদীছ শরীফে ইরশাদ হয়েছে, “হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যুদ্ধে নারী-শিশুদের হত্যা করতে নিষেধ করেছেন।” (বুখারী, মুসলিম) উদ্বৃত আয়াত শরীফ ও হাদীছ শরীফের প্রেক্ষিতে পারমানবিক বোমা, জীবানু অস্ত্র তথা বোমা ও গ্রেনেড হামলা তথা সন্ত্রাসবাদ ইত্যাদি নাজায়িয হয়ে যায়। কারণ ইসলামের আদর্শে কখনও নির্বিচারে হত্যা, আক্রমণের কথা নেই। তায়েফের ঘটনা আমরা সবাই অবগত। হযরত জীব্রাঈল আলাইহিস সালাম যখন আল্লাহ্ পাক-এর রসূল হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে আঘাতকারীদের দু’পাহাড় একত্র করে পিষ্ট করার অনুমতি চাইলেন তখন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পরম দরদের সাথে বলেছিলেন, ‘এদেরকে যদি এভাবে মেরে ফেল তবে কাদের প্রতি আমি ইসলামের দাওয়াত পৌঁছাব? এরা না হোক, এদের বংশধররাও তো ইসলাম গ্রহণ করতে পারে।’ অতএব ইসলামের এ আদর্শ যদি আজ উচ্চকিতভাবে তুলে ধরা হত তাহলে ইসলামের নামে টুইনটাওয়ারে হামলা থেকে দেশেও বোমা-গ্রেনেড হামলাও চলতে পারতো না। মূলতঃ এক্ষেত্রে নামধারী আহলে হাদীছরা ছাড়া আলিম নামধারীদের ভূমিকাও দায়ী। তারা লংমার্চ, হরতাল, মৌলবাদ, ব্লাসফেমী, গণতন্ত্র, নির্বাচন ইত্যাদি বিজাতীয় আদর্শের বুলি যতটা কপচায়, ইসলামের ছহীহ মূল্যবোধ প্রচারে তার চেয়ে ঢের বেশী নিস্ক্রিয় ও অজ্ঞ থাকে। মূলতঃ সম-সাময়িক জঙ্গীবাদ, সন্ত্রাসবাদ বিস্তারে এদের অনেকেরই রয়েছে সরাসরি সম্পৃক্ততা। কারো বা রয়েছে প্রচ্ছন্ন সহযোগিতা। এদের ফিৎনা হতে রক্ষা পেতে হলে যামানার মুযাদ্দিদ, মুজাদ্দিদে আ’যম-এর নেক ছোহবত ব্যতীত বিকল্প নেই। কারণ খোদায়ী মদদগার ও ইল্মে লাদুন্নী সমৃদ্ধ হবার বদৌলতে তিনিই উম্মাহকে সঠিক নির্দেশনা দিচ্ছেন।