সম্পাদকীয়

সংখ্যা: ১৩৮তম সংখ্যা | বিভাগ:

সব প্রশংসা মহিমান্বিত আল্লাহ পাক-এর জন্য। যিনি সৃষ্টির শুরু হতে মাসের সংখ্যা বারোটি নির্ধারণ করেছেন।  অসংখ্য ছলাত ও সালাম সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর প্রতি। যিনি আরাফা প্রান্তরে বিদায় হজ্জের খুৎবায় মুর্হরম মাসকে হারাম বা সম্মানিত বলে ঘোষণা করেছেন।  মুর্হরম মুসলমানদের জন্য নতুন বছর তথা হিজরী সনের আগমনী ঘোষণা। মুর্হরমের উপস্থিতি তাই বিগত বছরের আমলের হিসাবের মূল্যায়নের পাশাপাশি নুতন প্রেরণায়, ইসলাহী চেতনায় চলার অবকাশ। কিন্তু বাস্তবে এ অনুভূতির ক্ষীণ বহিঃপ্রকাশও সমাজে পরিলক্ষিত হয়না।  পহেলা জানুয়ারী অথবা পহেলা বৈশাখকে সাড়ম্বরে বরণকারী বাঙ্গালী মুসলমানের কাছে যেন অনাহূতের মতই মুর্হরম মাস। অনাদর আর অবহেলায়ই এটি পার হয়ে যায়।  অথচ ইমাম-মুজতাহিদ, আউলিয়াই কিরামগণ বলেছেন, “অন্য হারাম মাসসহ মুর্হরমকে সম্মান করলে বছরের বাকী মাসগুলোতেও বরকত, রহমত পাওয়া যায়। এর অন্যথায় বিপরীত পরিণতিতেই পর্যবসিত হতে হয়। তাই হারাম মাসসহ মুর্হরমের মূল্যায়নের আবশ্যকতা অনেক বেশী।” প্রথম রহমত বর্ষণ, বৃষ্টি বর্ষণ, পৃথিবী সৃষ্টি, আম্বিয়া আলাইহিমুস্ সালামগণের জীবনের গুরুত্বপূর্ণ ঘটনাসহ নানা তাৎপর্যপূর্ণ ঘটনার সমাহারে দশই মুর্হরম বিশেষভাবে ঐতিহ্যম-িত, ফযীলতপূর্ণ, বরকতযুক্ত। এ দিনে আলোচিত ঘটনাপুঞ্জির মাঝে সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুযূর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর লখ্তে জিগার, নয়নের মণি, বেহেশ্তের যুবকদের সর্দার, হযরত ইমাম হুসাইন রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু-এর হৃদয় বিদারক শাহাদতের ঘটনা বা কারবালার কাহিনী বিশেষভাবে উল্লেখ্য।  স্মর্তব্য, কারবালা প্রান্তরে শহীদদের নিয়ে আলোচনার পরিধি বিস্তৃত হয়েছে অনেক। কিন্তু সহীহ্ মূল্যায়নের অবতারণা হয়েছে খুবই কম।  প্রসঙ্গতঃ যেসব তথাকথিত ইসলামী রাজনীতিক হক্বের জন্য হযরত ইমাম হুসাইন রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু-এর চরম  আত্মত্যাগ তথা শাহাদতের কথা উচ্চারণ করেন আমরা মনে করি সে কথায় তাদের নিজেদের নছীহতের গুরুত্ব অতি বেশী। কারণ হযরত হুসাইন রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু স্বল্প সংখ্যক লোক নিয়ে যখন প্রায় চল্লিশ হাজার সৈন্যের এজিদ বাহিনীর সাথে সন্ধি করেননি সেখানে তার একটিই অর্থ স্পষ্ট হয় যে,  হযরত ইমাম হুসাইন রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু আদর্শচ্যূতিকে গ্রহণ করেননি, নীতির প্রশ্নে আপোস করেননি। অথচ আজ তথাকথিত ইসলামিক দলগুলো মনগড়া অজুহাতে নীতিভ্রষ্ট হচ্ছে, ইসলাম প্রতিষ্ঠার নামে তারা আজ ইসলামকেই বাদ দিয়ে যাবতীয় অনৈসলাম করছে। তারা তথাকথিত ইসলামী রাজনীতির নামে বেপর্দা হচ্ছে, ছবি তুলছে, লংমার্চ করছে, কুশপুত্তলিকা দাহ করছে, মৌলবাদ দাবী করছে, ব্লাসফেমী আইন চাচ্ছে, হরতাল করছে, নির্বাচন করছে, ইসলামের নামে হারাম গণতন্ত্র করছে। অথচ এগুলো সবই ইহুদী-নাছারা তথা বিধর্মীদের দ্বারা প্রবর্তিত। প্রসঙ্গতঃ উল্লেখ্য, বিধর্মীদের সাথে সাদৃশ্যতা থেকে কতদূর পরহেয হওয়া উচিত তার নসীহত আশুরার রোযা রাখার বিধানে বিদ্যমান। হযরত ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হতে বর্ণিত। হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, “তোমরা নয় ও দশ বা দশ ও এগারোই মুর্হরমে রোযা রাখ এবং ইহুদীদের খিলাফ কর।” অর্থাৎ  তাদের মত কেবল একদিনই রোজা রেখোনা। তাদের সাথে মিল রেখোনা। স্মর্তব্য, হযরত ইমাম হুসাইন রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু-এর শাহাদত আমাদের এই শিক্ষাই জোরালোভাবে দেয় যে, আল্লাহ পাক কারো পিঠে সীলমোহর মেরে দেননি যে তাকে ছলে বলে কৌশলে তথা অনাদর্শের সাথে আপোস করে বা নারী নেতৃত্ব মেনে ইসলাম কায়েম করতেই হবে।  বরং আল্লাহ পাক যা চান তাহলো নববী আদর্শের পথে ইসলামী নীতিতে অটল থাকা। তাই দৃশ্যতঃ হযরত ইমাম হুসাইন রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু শহীদ হলেও কার্যতঃ তিনিই কামিয়াব। তার কামিয়াবী আদর্শের, ইসলামের। হযরত সাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণের নববী আদর্শের পথে এরূপ অবিচলতার  বরকতেই ইসলাম সারা পৃথিবীতে বিস্তৃত হয়েছিল। কিন্তু বর্তমানে উলামায়ে ‘ছূ’রাও ওদের যাবতীয় বেশরা-বিদ্য়াতী আমল দ্বারা এই প্রতীয়মান করে যে, ওরা যতই হারাম ও কুফরী কাজ করুক না  কেন, ওদের কৃত কুফরী ও হারাম কাজ সবই ইসলামী বলে বিবেচিত হবে। ইসলামী আন্দোলন বলে মূল্যায়িত হবে। নিশ্চিত ও স্পষ্ট দোযখের আমল করেও ওরা জান্নাতে যাবে। অথচ বিজাতীয় আদর্শকে হালাল, ইসলামী কাজ বলে অভিহিত করার সাথে সাথে ওরা ঈমান হারা হয়ে যাচ্ছে। আল্লাহ পাক বলেন, “যারা একবার মুসলমান হয়ে পুণরায় কাফির হয়েছে, আবার মুসলমান হয়েছে, আবার কুফরীতেই নিয়োজিত ও নিবেদিত হয়েছে, আল্লাহ পাক তাদেরকে না, কখনও ক্ষমা করবেন, না পথ দেখাবেন। সে সব মুনাফিকদের শুনিয়ে দেন তাদের জন্য রয়েছে বেদনাদায়ক আযাব।” (সূরা নিসা) মূলতঃ এসব মুনাফিকদের কারণেই বিশ্বে আজ প্রায় দেড়শ’ কোটি মুসলমান অথর্ব হয়ে পড়ছে। নানা ফেরক্বাবন্দী ও অশুদ্ধ আক্বীদায় আবদ্ধ হয়ে তারা আজ বিভ্রান্তির বেড়াজালে বন্দী। এ বন্দী দশা ঘুচাতে হলে দরকার, ঈমানের নবায়ন ঘটানো, আক্বীদার পরিশুদ্ধি আনানো এবং যাবতীয় বদ দ্বীনি, বেদ্বীনি পরিহার করে পরিপূর্ণভাবে কুরআন-সুন্নাহ্র আদর্শ পালন। স্মর্তব্য, কেবলমাত্র যারা উলামায়ে হক্কানী-রব্বানী তথা মুজাদ্দিদে জামান তাঁদের সংশ্রবেই ছহীহ আক্বীদার বিকাশ সম্ভব।  মহান আল্লাহ পাক আমাদেরকে সকলকে মুজাদ্দিদে আ’যমের সান্নিধ্যে এসে আক্বীদা বিশুদ্ধ করতঃ পবিত্র মুর্হরমুল হারাম ও আশুরার ফযীলত, বরকত নসীব করুন। (আমীন)

সম্পাদকীয় 

সম্পাদকীয়

সম্পাদকীয়

 সম্পাদকীয়

 সম্পাদকীয়