সব প্রশংসা মহান আল্লাহ পাক উনার। যিনি সকল নিয়ামত, রাজত্ব ও ক্ষমতার মালিক। সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রতি অসংখ্য দরুদ ও সালাম। যিনি বলেছেন, ইসলাম ধর্ম পাঁচটি মূল ভিত্তির উপর প্রতিষ্ঠিত। কলেমা, নামায, যাকাত, রোযা ও হজ্জ।
হজ্জের মাস সুবিদিত। শাওয়াল শরীফ, যিলক্বদ ও যিলহজ্জ এ তিনটি হজ্জের মাস হিসেবে নির্দিষ্ট। শাওয়াল শরীফ উনার থেকে হজ্জের প্রস্তুতি পর্ব শুরু হয়। যিলহজ্জের দশ তারিখ তা শেষ হয়।
মুহাক্বিকগণ অভিমত ব্যক্ত করেন যে, যিনি বা যাদের হজ্জ কবুল হয় তার লক্ষণ এই যে, হজ্জ থেকে ফিরে আসার পর আমল ধীরে ধীরে ভাল হতে থাকে। পর্যায়ক্রমে তারা নেককার, পরহিযগার, মুত্তাকী ব্যক্তিতে পরিণত হন। অন্যদিকে যাদের হজ্জ কবুল হয়না হজ্জ থেকে ফিরার পর তাদের আমল আরো খারাপ হতে থাকে। পর্যায়ক্রমে তারা ফাসিক ফুজ্জারের অন্তর্ভুক্ত হয়।
অতএব, শুধু গাতানুগতিকভাবে করাই নয় বরং যথাযথভাবে হজ্জ করার উপর গুরুত্ব আরোপ করতে হবে। উদাহরণঃ বলা যায় যেনোতেনোভাবে নামায আদায়কারীর প্রতি মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, “ঐ মুছল্লীর জন্য জাহান্নাম যে একাগ্রতা বা হুজরী ক্বলবের সাথে নামায আদায় করেনা।” (সূরা মাউন) অর্থাৎ ঠিকঠাক মত না হলে নামায পড়ার পরও জাহান্নামে যেতে হবে।
পাশাপাশি হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে আরো ব্যক্ত হয়েছে, “এমন অনেক রাত জাগরণকারী আছে যাদের রাত জেগে থাকাই সার হয়। এমন অনেক রোযাদার আছে ক্ষুধার্ত থাকাই সার হয়।” (ইবনে মাজাহ, মিশকাত শরীফ) অর্থাৎ তারা শুধু না খেয়েই থাকে। কিন্তু রোযার পবিত্রতা তথা হক্ব তারা আদায় করেনা।
অন্য হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বলা হয়েছে, “যে ব্যক্তি মিথ্যা কথা এবং অশ্লীলতা ছাড়তে পারেনি তার খাওয়া-দাওয়া ত্যাগ করাতে বা রোযা রাখতে কোন কল্যাণ নেই।” (বুখারী শরীফ)
কাজেই স্মর্তব্য যে ইবাদত যখন ইসলামের আলোকে করা না হয় তখন তা আচার সর্বস্ব প্রথায় পরিণত হয়। ধর্মীয় অনুভূতি ও আদর্শের প্রতিফলন তখন হয়না। ফলতঃ ধর্ম পালনের সুফল তখন বিকশিত হয়না। সে জন্য আজ নামাযী, যাকাতী, হাজী নামধারীদের দেখা যায় দিব্যি পাপাচারে লিপ্ত থাকতে।
বিশেষত, নামায, রোযা পালনে ত্রুটি সম্পর্কে সাধারণ মুসলমান কিছুটা অবগত থাকলেও হজ্জ করতেও যেসব শুন্যতা, গাফলতি তথা ত্রুটি রয়েছে সেগুলো সম্পর্কে মানুষ নিতান্তই বেখবর।
কোন কোন তাফসীরকারকদের মতে হজ্জ সম্পর্কে কুরআন শরীফ উনার মধ্যে ৮টি আয়াত শরীফ রয়েছে। যেমন বলা হয়েছে, “আপনার নিকট তারা জিজ্ঞেস করে নতুন চাঁদের বিষয়ে। আপনি বলে দিন যে, এটি মানুষের জন্য সময় নির্ধারণ এবং হজ্জের সময় ঠিক করার মাধ্যম।” (সূরা বাক্বারা/১৮৯)
এ আয়াত শরীফ থেকে প্রতিভাত হয়, সময় নির্ধারণ এবং নতুন চাঁদ দেখা হজ্জের ক্ষেত্রে প্রধান গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। কিন্তু অভিযোগ রয়েছে যে সউদী কর্তপক্ষ এ বিষয়টি যথাযথভাবে করছেনা। চাঁদ দেখার শরয়ী হিসাব সম্পর্কে তারা সচেতন নন। সঙ্গতঃকারণেই বিষয়টি নিয়ে তাই ব্যাপক আলোড়ন ও সমাধান হওয়া অতি জরুরী।
চাঁদ এর হিসেবের পর হজ্জের ক্ষেত্রে বিশেষ বিবেচ্য হল ‘পাথেয়’। মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক ফরমান, “হজ্জের কয়েকটি মাস আছে সুবিদিত। এসব মাসে যে লোক হজ্জের পরিপূর্ণ নিয়ত করবে তার পক্ষে স্ত্রীর নিকবর্তী হওয়া জায়িয নয়। কোন অশোভন কাজ করা, ঝগড়া বিবাদ করা জায়িয নয়। আর তোমরা যা কিছু সৎ কাজ কর মহান আল্লাহ পাক তিনি তা জানেন। আর তোমরা পাথেয় সঙ্গে নিয়ে যাও। নিঃসন্দেহে সর্বোত্তম পাথেয় হচ্ছে তাক্বওয়া।” (সূরা বাক্বারা/১৯৭)
আলোচ্য আয়াত শরীফ উনার মধ্যে সাব্যস্ত হয় যে, হজ্জের জন্য শুধু জৈবিক পাথেয় থাকাই যথেষ্ট নয়। পাশাপাশি হজ্জের প্রস্তুতি থেকে ফেরা পর্যন্ত পুরো প্রক্রিয়া তথা পথ পরিক্রমাতেই ত্বাকওয়ার নিশ্চয়তা অনিবার্য।
বলাবাহুল্য, বর্তমানে ছবি তোলা, বেপর্দা সহ বিবিধ নাজায়িয অনুষঙ্গ সর্বোত্তম পাথেয় ত্বাকওয়ার ক্ষেত্রে বিশেষ বাধা। অতএব, যা কাঙ্খিত ছিল আলিম সমাজ এ ব্যাপারে আওয়াজ তুলবেন। উচ্চকিত কণ্ঠে প্রতিবাদ জানাবেন। এজন্য কোশেশ করবেন। উচ্চকিত কণ্ঠে প্রতিবাদ জানাবেন। এজন্য কোশেশ করবেন। কিন্তু না, এ বিষয়ে তাদের দিল মুর্দা হয়ে আছে। বরং তারা এখন সক্রিয় আছেন মাওসেতুং এর লংমার্চ, গান্ধীর হরতাল, খ্রিস্টান প্রোটেস্ট্যান্টদের মৌলবাদ, ইহুদী-খ্রিস্টানদের ব্লাসফেমী আইন, গণতন্ত্র, নির্বাচন ছবি তোলা, বেপর্দা হওয়া, নারী নেতৃত্ব সমর্থন ইত্যাদি হাজারো বিজাতীয় নিধর্মীয় ও বেদাতীয় কাজে।
উত্তম পাথেয় তাক্বওয়ার সাথে হজ্জ করার জন্য যেসব বিষয় আবশ্যকীয় যথা ছবি না তোলা, বেপর্দা না হওয়া, আকাশে চাঁদ যথাযথ ভাবে দেখে হজ্জের সময় নির্ধারণ করা- এসব বিষয়ে কুরআন শরীফ, সুন্নাহ শরীফ উনাদের অভিমত তাদের প্রচার করার দরকার ছিলো। কিন্তু সম্পূর্ণ চুপ থেকে এ বিষয়ে তারা বোবা শয়তানের ভূমিকা পালন করছে। এদের প্রসঙ্গে কুরআন শরীফ উনার মধ্যে মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, “নিশ্চয়ই যারা গোপন করে আমি যেসব বিস্তারিত তথা এবং হেদায়েত নাযিল করেছি মানুষের জন্য কিতাবের মধ্যে বিস্তারিত বর্ণনা করার পরও, সে সমস্ত লোকের প্রতি মহান আল্লাহ পাক উনার অভিসম্পাত এবং অন্যান্য অভিসম্পাতকারীগণেরও।” (সূরা বাক্বারা/১৫৯) এসব লা’নতগ্রস্ত মাওলানা নামধারীরাই উলামায়ে ‘সূ’। হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে এদেরকেই নিকৃষ্ট বলা হয়েছে।
মূলত, এদের বদ তাছিরেই সাধারণ মানুষ ইবাদতকে ইবাদতের মত তথা ইসলামের আলোকে ইবাদত করতে অনুপ্রণিত হচ্ছেনা। নামায রোযা, যাকাত, হজ্জ সবক্ষেত্রেই আজ যুক্ত হচ্ছে হাজারো অনৈসলামী অনুষঙ্গ। আর সত্যিকার ইবাদত থেকে ব্যর্থ মুসলিম সমাজ স্বভাবতঃই মহান আল্লাহ পাক উনার রহমত থেকে হচ্ছে বঞ্চিত।
স্মর্তব্য যে, কেবলমাত্র হক্ব ওলীআল্লাহ তথা যামানার মুজাদ্দিদ মুজাদ্দিদে আ’যম উনার নেক ছোহবতের মাধ্যমেই ইবাদতের মত ইবাদত করা তথা মহান আল্লাহ পাক উনার রহমত হাছিল ও কামিয়াবী লাভ সম্ভব। সম্ভব পবিত্র শাওয়াল শরীফ মাসে হজ্জে মাবরূর তথা মকবুল হজ্জের জন্য যথাযথ প্রস্তুতি নেয়া।