শ্রেষ্ঠত্ব ও শুকরিয়া মহান আল্লাহ পাক-এর জন্যই। সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর প্রতি বেশুমার দুরূদ ও সালাম।
আল্লাহ পাক মানুষের কাছে রিযিক চাননা। শুধু ইবাদতের জন্যই মানুষের সৃষ্টি। ইবাদতের আহবান জানিয়ে আল্লাহ পাক বলেন, “হে ঈমানদারগণ! তোমাদের উপর সিয়াম (রোজা) ফরয করা হয়েছে, যেমন তোমাদের পূর্ববর্তীদের ওপর ফরয করা হয়েছিল। সন্দেহ নেই যে, তোমরা মুত্তাক্বী হতে পারবে।” মূলতঃ তাছাউফপন্থীগণ বা ওলীআল্লাহরাই হাক্বীক্বী তাক্বওয়াধারী। তাই তাঁরা যে আল্লাহ পাক-এর কাছে কত প্রিয় সে সম্পর্কে হাদীছে কুদসীতে আল্লাহ পাক ইরশাদ ফরমান, “সাবধান! যারা আমার ওলীর বিরোধীতা করে, আমি স্বয়ং আল্লাহ পাক তাদের বিরুদ্ধে জিহাদ ঘোষণা করি।’ (বুখারী) সমসাময়িককালেও এর উদাহরণ প্রত্যক্ষ ও স্পষ্ট। আসাদুল্লাহ, হযরত আলী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু এবং গাউসুল আযম, সাইয়্যিদুল আউলিয়া, মাহবুবে সুবহানী হযরত বড় পীর ছাহেব রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর মূল্যায়ণ এবং তাঁদের মাজার শরীফের প্রতি তা’যীম-তাকরীমের ঘাটতির কারণেই সে দেশের জনগণ আজ মার্কিনী আগ্রাসন এবং পাশবিক নির্যাতন ও নিপীড়নের শিকার।
ঠিক আমাদের দেশেও, মাজার বিদ্বেষী ইসলামের নামধারী চিহ্নিত ব্যবসায়ী জামাত, ওহাবী এবং খারিজীদের অপতৎপরতায় আযাব-গযব নিকটবর্তী প্রায়। এ মহলগুলো এ ধারণা প্রতীয়মানে প্রচেষ্ট যে, মাজার শরীফে শায়িত ওলীআল্লাহর রূহানী শক্তি যদি থাকবে তাহলে তাঁর মাজার শরীফ প্রাঙ্গণে দুর্ঘটনা ঘটবে কেন? কিন্তু এরা ভুলে যায় যে, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আঙ্গুলের ইশারায় চাঁদ দু’টুকরো করেছেন। কিন্তু উহুদের প্রান্তরে তাঁরই দাঁত মুবারক শহীদ হয়েছে। হাদীছে কুদসীতে আল্লাহ পাক ইরশাদ করেন, “নিশ্চয়ই আমার ওলীগণ আমার কুদরতী জুব্বার ভিতরে। আমি এবং আমার অন্য ওলীগণ ব্যতীত তাঁদের কেউ চেনেনা।” উল্লেখ্য, বিদেশী অপশক্তি দ্বারা স্বাধীনতা হরণ এবং নির্যাতন ও শোষণ কোন জাতির উপর খোদাতায়ালার খাছ গযব তথা খোদায়ী গযব বলেই কুরআন-সুন্নাহ্র অভিমত। প্রসঙ্গতঃ আমাদের দেশেও বর্তমানে এফ.বি.আই, ইন্টারপোল সি.আই.এ-এর আনাগোনা এবং দেশের অবস্থা ও ব্যবস্থা সম্পর্কে মার্কিনীদের অনধিকার মন্তব্য প্রকাশ মূলতঃ এ ধারারই অন্তর্ভুক্ত। বিশেষতঃ বিশ্বব্যাঙ্ককে ইম্যুনিটি ক্ষমতা প্রদান (যার অর্থ বিশ্বব্যাঙ্ক যা ইচ্ছা তা করবে বাংলাদেশ বিচার করতে পারবে না। মার্কিন এফ.বি.আই-এর বিষয়টিও একই পর্যায়ভুক্ত) সাপেক্ষে বাংলাদেশের স্বাধীনতা আজ কতটুকু নিরঙ্কুশ তা গভীর প্রশ্নের সম্মুখীন।
উল্লেখ্য, বোমা হামলার তদন্তে দোষী ব্যক্তিদের সরকারিভাবে চিহ্নিত করা না গেলেও, মহান আল্লাহ পাক-এর দরবারে কিন্তু তারা অচিহ্নিত নয়। পাশাপাশি আল্লাহ পাক-এর নাযিলকৃত দ্বীন ইসলামও হামলাকারীদের সম্পৃক্ততা ও প্রকৃতি নির্ধারণে অক্ষম নয়। প্রচলিত আইনের নিকটবর্তী ও দূরবর্তী বা প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ বিষয় সম্পর্কে ইসলামে প্রজ্ঞাসম্পন্ন ধারণা দেয়া আছে। ইসলামের পরিভাষায়- যে, যে ধারণা বা কাজের সূচনা করলো, তার সম্পৃক্ততা ও ধারাবাহিকতায় সে ধরণের কাজ যত সম্পন্ন হবে সবগুলোর দায়-দায়িত্ব তার উৎস বা প্রবর্তকের দিকে ধাবিত হবে। যেমনটি বলা হয়, পৃথিবীর কোথাও কোন হত্যাকা- হলে প্রথমে তার গুনাহ্ কাবীলের আমলনামায় পৌঁছে। কারণ, সেই প্রথম হত্যাকারী। ঘাতকরা তার থেকেই হত্যার ধারণা পেয়েছে। তদ্রুপ যারা মনে করে, হাত-পায়ের রগ কেটে, মাজার শরীফে বোমা মেরে, সমাবেশে বোমা মেরে, ক্যাডার পুশে, অস্ত্র আমদানী করে, তালেবানী বা লাদেন কায়দায়, ছলে বলে, ইসলামের নামে ক্ষমতার মসনদে আরোহন করবে, আলোচিত সব বোমা হামলা বা নাশকতার সম্পৃক্ততাও তারা ইসলামের দৃষ্টিতে কোনভাবেই এড়াতে পারে না। কারণ, হাত-পায়ের রগ কাটা তথা সন্ত্রাসী কায়দায় কাজ করার ধারণা প্রচলনের প্রবর্তক তারাই।
মূলতঃ আখিরী রসূল, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর ইসলাম বাদ দিয়ে ব্যক্তি বিশেষের ইসলাম, মন্ত্রী, এম.পি হওয়ার ইসলাম করার প্রেক্ষিতে তথা বেপর্দা হওয়া, ছবি তোলা, হরতাল, লংমার্চ, মৌলবাদ, ব্লাসফেমী আইন, গণতন্ত্র, নির্বাচন ইত্যাদি বিজাতীয় ও বিদ্য়াতীয় কাজ করার কারণেই ইসলামের নামে তাদের এ অনৈসলামী অবস্থান। আল্লাহ পাক ইরশাদ করেন, “অতএব, আপনার পালনকর্তার কছম, কোন লোক ততক্ষণ পর্যন্ত ঈমানদার হবে না যতক্ষণ না তাদের মধ্যে উদ্ভুত বিষয়ে আপনাকে পথপ্রদর্শক ও ফয়সালাকারী হিসেবে গ্রহণ না করে। (সূরা নিসা/৬৫) স্মর্তব্য, তায়েফের ময়দানে জালিমরা রহমতুল্লিল আলামীণ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে পাথর নিক্ষেপে রক্তাক্ত করেছিলো। তদপ্রেক্ষিতে হযরত জিব্রাঈল আলাইহিস্ সালাম যখন আরজ করলেন, ইয়া রসূলাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আপনি অনুমতি দিন, আমি দু’দিক থেকে পাহাড়ের চাপে তায়েফবাসীকে পিষ্ট করে ফেলি। জবাবে রসূলে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছিলেন, এরা যদি এভাবে মারা যায় তবে আমি ইসলাম প্রচার করবো কার কাছে? এরা না হোক এদের বংশধরা তো ইসলাম কবুল করতে পারে।” এজন্য ইসলামের ফতওয়া হলো, কাফির-মুশরিক যাই হোক কাউকেই নির্বিচারে বোমা হামলা বা কোন নাশকতা দ্বারা হত্যা করা জায়িয নেই। মূলতঃ এরূপ বোমা হামলা বা নাশকতাপূর্ণ তৎপরতা অসংযম আর অসহিষ্ণু মনোভাব থেকে তৈরী। এই অসংযমী মনোভাব দ্বারা ইসলামের কাজ করলে তা আল্লাহ পাক-এর দরবারে কবুল হবে না।
কুরআন শরীফে ইরশাদ হয়েছে, ‘দ্বীনের উপর কোন জবরদস্তি নেই।’ হাদীছ শরীফে ইরশাদ হয়েছে, ‘তোমরা দ্বীন নিয়ে বাড়াবাড়ি করোনা। কেননা, এটা অতীতের অনেক জাতিকে ধ্বংস করেছে।’ মূলতঃ যারা হাত-পায়ের রগ কেটে অথবা তালেবানী কায়দায় চলছে তারা মূলতঃ এ দেশ, এ জাতিকে ধ্বংসের দিকেই ধাবিত করছে, পরাধীনতার দিকে নিয়ে যাচ্ছে। এরা অসংযত, অশালীন ও অধার্মিক। রোযার শিক্ষা যে সংযম, সে সম্পর্কেও এরা অজ্ঞ।
পবিত্র রমযান শরীফ উপলক্ষে আমরা তাদের হিদায়েত কামনা করি। মূলতঃ আল্লাহ পাক-এর খাছ রহমতে, যামানার মুজাদ্দিদ, মুজাদ্দিদে আ’যমের নেক ছোহবতেই সে হিদায়েত প্রাপ্তি যথাযথভাবে সম্ভব।